৪৮ ঘণ্টার অবরোধ সফল করার আহ্বান বিএনপির

আগের সংবাদ

বাদ পড়ার শঙ্কায় ঘুম হারাম : রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে নৌকার মনোনয়ন চূড়ান্ত, টিকেট পাচ্ছেন না অনেক এমপি

পরের সংবাদ

নতুন শিক্ষাক্রমের অসঙ্গতি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নতুন শিক্ষাক্রমে বড় একটি ভালো দিক হচ্ছে, অতীতে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষাকেন্দ্রিক যে অসহনীয় চাপ ও অসুস্থ প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতো; সেই চাপ ও অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে শিক্ষার্থীরা মুক্তি পাচ্ছে। ‘শিক্ষা যখন প্রতিযোগিতানির্ভর হয় তখন শিক্ষা একটি নির্দিষ্ট স্থানে, নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে আবদ্ধ থাকে। শিক্ষাকে প্রসারিত করতে হলে, শিক্ষাকে আধুনিক ও উচ্চতরভাবে সমৃদ্ধ করতে চাইলে- শিক্ষা থেকে প্রতিযোগিতা পদ্ধতি বাদ দিতে হবে, শিক্ষাকে সর্বজনীন ও একধারার পদ্ধতি করতে হবে।’
কিন্তু এই শিক্ষাক্রমে থাকা মূল্যায়ন পদ্ধতি ও পরীক্ষা পদ্ধতি অতীতের চেয়ে খুব কষ্টসাধ্য শিক্ষার্থীদের কাছে। শিক্ষার্থীরা মূল্যায়ন পদ্ধতির মুখোমুখি হয়ে আরো তীব্রভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে, অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান করার পরিকল্পিত কোনো পদ্ধতি না থাকায় শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে মোবাইলের দিকে ঝুঁকছে। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে মোবাইল আশক্তি বেড়ে যাবে। বলা যায় শিক্ষার্থীরা এখনো এই পদ্ধতির জন্য প্রস্তুত নয়। শিক্ষকরাও মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে পুরোপুরি প্রশিক্ষিত নয়। পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করে শিক্ষকদের কাছে ৬০ শতাংশ নম্বর থাকায় দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির আশঙ্কা করছেন অভিভাবকরা। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের প্রাত্যহিক অ্যাসাইনমেন্ট পেপার ব্যয় অভিভাবকদের জন্য অসহনীয়। গত দুই বছরে শিক্ষা সামগ্রীর দাম চারবার বেড়েছে। এমনিতেই শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা সামগ্রী ক্রয় করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে অভিভাবকরা। এরপর ৪-৫ দিন পর পর অ্যাসাইনমেন্ট পেপার, রঙিন পেন্সিল ও কলম ক্রয় করা মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত অভিভাবকদের ওপর ভীষণ রকম চাপ।
বিজ্ঞান শিক্ষার সংকোচন :
এ অভিযোগটি দেশের অধিকাংশ শিক্ষাবিদ বেশি করছেন, নতুন শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞান শিক্ষাকে সঙ্কুচিত করে নামমাত্র একটি বিজ্ঞান বই রাখা হয়েছে। নবম-দশম শ্রেণিতে এখন আর রসায়ন, জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞানের আলাদা কোনো বই বা পরীক্ষা থাকবে না। এই তিনটি বইকে সমন্বিত করে একটি বই ও একটি পরীক্ষা হবে। এতে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান শিক্ষা থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান চর্চা থেকে বিচ্ছিন্ন হবে এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও কাল্পনিক চিন্তা, কুসংস্কারের বিপরীতে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে অবগত হওয়া থেকে বঞ্চিত হবে।
শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান :
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এখনো দেশের অধিকাংশ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অবকাঠামোগতভাবে অনুন্নত। শিক্ষকদের বেতন-ভাতা খুবই সামান্য পরিমাণে দেয়া হয়। শিক্ষকদের অর্থনৈতিক অস্বচ্ছতা থাকার ফলে, শিক্ষকরা প্রাইভেট, কোচিং করাতে ব্যস্ত থাকেন। এতে শ্রেণিকক্ষে ভালোভাবে মনোনিবেশ করতে পারেন না। অর্থাৎ শিক্ষকদের শিক্ষার পরিবেশ এখনো নিশ্চিত নয়। খণ্ডকালীন কিছু প্রশিক্ষণ দেয়া হলেও পরিকল্পনামাফিক প্রশিক্ষণ দিতে কৃপণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। পাশাপাশি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলিং কিংবা শিক্ষার্থীদের শারীরিক, মানসিক পরিচর্যার জন্য আলাদা কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। রাষ্ট্র শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উপযোগী করে গড়ে না তোলে, তাহলে আদৌ কি শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি সম্ভব হবে? শিক্ষাক্রম নিয়ে দেশের সব শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, অভিভাবকদের পরামর্শ নিয়ে নতুন শিক্ষাক্রমের বিতর্ক, ত্রæটি, অপরিপক্বতা পরিহার করে একটি নতুন, আধুনিক, বৈজ্ঞানিক ও একই ধারার শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা এবং শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী করে গড়ে তুলে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

মারুফ হাসান ভূঞা : লেখক ও শিক্ষার্থী, ফেনী।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়