৪৮ ঘণ্টার অবরোধ সফল করার আহ্বান বিএনপির

আগের সংবাদ

বাদ পড়ার শঙ্কায় ঘুম হারাম : রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে নৌকার মনোনয়ন চূড়ান্ত, টিকেট পাচ্ছেন না অনেক এমপি

পরের সংবাদ

চালু করা হোক মধ্যবিত্তের রেশন কার্ড

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘ কোভিড আক্রান্ত বিশ্বের অগ্রসরমান দেশ বাংলাদেশ। এ দেশের প্রান্তিক মানুষ আজ অর্থনৈতিক মন্দাগ্রস্ত। সেটি মাথায় রেখে সরকার কোভিডের শুরু থেকেই টিসিবির মাধ্যমে ট্রাক দিয়ে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিতরণের কাজ শুরু করেছে, যা এখন উপজেলা পর্যায়েও চালু করা হয়েছিল। অভিযোগ ছিল ডিলাররা নির্দিষ্ট এলাকার জন্য বরাদ্দ পণ্য থেকে বেশ কিছু পরিমাণ কালোবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। অন্যদিকে নির্দিষ্ট কিছু মানুষ সিন্ডিকেট করে লাইনে দাঁড়িয়ে প্রতিদিন এসব পণ্য কিনে কালোবাজারি করেছে। দ্বিতীয়ত ছুটির দিনে অর্থাৎ শুক্র ও শনিবার টিসিবির কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ফলে সাধারণ মানুষ ন্যায্যমূল্যে পণ্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। ফলে পরবর্তীতে কার্ডের মাধ্যমে টিসিবি এই কার্যক্রম চালু অব্যাহত রেখেছে, যা থেকে মধ্যবিত্তরা বঞ্চিত। মধ্যবিত্তদের কাছে ন্যায্যমূল্যে সরকারি এই পণ্য পৌঁছার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে রেশন কার্ড প্রথা পুনঃপ্রবর্তন করা। ভারতে এখনো রেশন কার্ড/আধার কার্ড প্রথা চালু আছে। সরকারি মূল্যে মানুষ প্রতি সপ্তাহ/মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য এই কার্ডের মাধ্যমে সংগ্রহ করে। পাকিস্তানি আমলে ও মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়েও বাংলাদেশে এই প্রথা চালু ছিল। সময়ের পরিবর্তনে যা আর নেই। এই রেশন কার্ড প্রথায় মধ্যবিত্তরা অনেক উপকৃত হয়েছিল।
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস কোভিডকালে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বিনামূল্যে সাধারণ মানুষকে রেশন প্রদানের কথা ঘোষণা করে জনপ্রিয় হয়েছিল। কোভিড ১৯-এর দ্বিতীয়/তৃতীয়/চতুর্থ ঢেউয়ের পর ইউক্রেন যুদ্ধ, মুদ্রাস্ফীতি, সিন্ডিকেট বাণিজ্য ইত্যাদির কারণে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী আজ অসহায়। ২০২০ সালের মার্চ মাসে যখন বাংলাদেশে করোনা শনাক্ত হয়, সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয় ঠিক সেই সময় থেকে অদ্যাবধি সরকার টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, ডাল, চিনি, তেল বিক্রির কার্যক্রম চালাচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় ট্রাকের মাধ্যমে টিসিবির এই বিক্রয় কার্যক্রম চলছে। নিম্ন আয়ের মানুষ এর সুফল পাচ্ছে, যার জন্য সরকারকে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হবে। কিন্তু দেশের মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী টিসিবির এই কার্যক্রমের সুবিধা পাচ্ছে না। মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক মানুষ আজ বেকার। এই জনগোষ্ঠী না পারে বলতে না পারে সইতে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে এই শ্রেণি আজ দিশাহারা। মুক্তিযুদ্ধের পর অধিকাংশ মধ্যবিত্ত ও সাধারণ মানুষ রেশন কার্ডের ওপর নির্ভরশীল ছিল। অন্তত জীবনের অত্যাবশ্যক পণ্য ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি তখন নিশ্চিত ছিল। বৈশ্বিক অর্থনীতি আজ ক্রমশ স্থবির হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের মতো দেশ আজ এই অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে। মোদ্দাকথা, এই দেশের মানুষ আজ কোভিড মন্দা, বিশ্বমন্দা অর্থনীতি মোকাবিলা করছে। বেসরকারি পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানের মালিকরা কেউ বাস্তব অবস্থার কারণে কেউ সুযোগ নিয়ে কর্মচারীদের বেতন পর্যন্ত কমিয়ে দিয়েছে। ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। এই পরিস্থিতির শিকার মানুষগুলো চাকরি ছাড়তেও পারছে না আবার টিসিবির সুবিধাও পাচ্ছে না। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য তাদের ক্রয় করতে হচ্ছে দ্বিগুণ মূল্যে। আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য থাকছে না। মুখ বুজে জীবনযাপন করছে। ফলে তাদের কষ্টার্জিত সঞ্চয় কমে যাচ্ছে। অনাগত ভবিষ্যৎ দেখছে অন্ধকার। এই কোভিড বিশ্বমন্দা কবে দূর হবে কেউই ধারণা দিতে পারছে না।
আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনে সেøাগান ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’, যদিও ইশতেহার এখনো প্রকাশিত হয়নি। তাই ২০২৪-এর নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ অংশগ্রহণকারী দলগুলোর ওয়ার্ড অনুযায়ী পরিবারভিত্তিক সাপ্তাহিক/মাসে রেশন কার্ড প্রথা চালু করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। কারণ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পেছনে মধ্যবিত্তরা বিশেষ অবদান রাখবে অতীতের যে কোনো অর্জনের ন্যায়। নির্বাচন-পরবর্তী সরকার ওয়ার্ডভিত্তিক রেশন কার্ড প্রথা চালু করলে সাধারণ মানুষ ভোগ্যপণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে। মাথা থেকে সীমিত আয়ের অসীম ব্যয়ের দুশ্চিন্তা কিছুটা হলেও কমবে। অন্যদিকে এই প্রথা চালু করলে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য অনেকাংশে কমে যাবে, হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে মানুষ। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার এই সময়ে সাধারণ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বার্থে রেশন কার্ড চালু করা এখন সময়ের দাবি বলে মনে করি।

আ ফ ম মোদাচ্ছের আলী : শিশু সাহিত্যিক, চট্টগ্রাম।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়