সংসদ নির্বাচনের কোনো প্রস্তুতি নেই বিএনপির : রেলপথমন্ত্রী

আগের সংবাদ

জোট নাকি মহাজোট? একক ও জোটগত ভোটের প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের > জাতীয় পার্টির সিদ্ধান্ত স্পষ্ট নয়

পরের সংবাদ

‘অনেক কিছু এখনো করার বাকি’

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

১৮টি ভাষায় গান গেয়েছেন সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। ১৭ নভেম্বর ছিল তার জন্মদিন। এবার ৭১ বছরে
পা রেখেছেন তিনি। জন্মদিন, মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান অবস্থা ও বিভিন্ন প্রসঙ্গে আলাপ করেছেন
উপমহাদেশের বরেণ্য এই শিল্পী। সাক্ষাৎকার মেলা প্রতিবেদক

জন্মদিনের শুভেচ্ছা। এবারের জন্মদিন কীভাবে কাটল?
ধন্যবাদ। আমি কলকাতায় এসেছি। কোক স্টুডিওর কনসার্টে গান গাইবো। আগে থেকেই এ অনুষ্ঠান নিয়ে কথা হয়ে ছিল, তাই আসতেই হলো। তবে চ্যানেল আইয়ের জন্য জন্মদিন উপলক্ষে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান রেকর্ড করে রেখে এসেছি। পরিবার, পরিজন, কাছের মানুষ, সংগীতাঙ্গনের অনেকের শুভেচ্ছা পেয়েছি। ভালো লেগেছে। কলকাতাতেও কয়েকজন শিল্পী কেক কেটে ঘরোয়াভাবে জন্মদিন পালন করেছে।

ছোটবেলার জন্মদিনকে ঘিরে উল্লেখযোগ্য স্মৃতির গল্প যদি শোনাতেন…
জন্মদিনকে ঘিরে সবার মতোই আমারও একই রকম স্মৃতি। প্রতিবারই জন্মদিনে নতুন জামা, নতুন জুতা পেতাম। ক’দিন আগে থেকেই একটা প্রতীক্ষা থাকত কখন পাব, কখন পরব! ছোটবেলায় জন্মদিন এলেই মা নিজের হাতে জামা বানিয়ে দিতেন। তারপর একটু বড় হলে বড় বোন বানিয়ে দিতেন। তাদের হাতের ছোঁয়ায় তৈরি এই উপহারটা মিস করি। এছাড়াও জন্মদিনে মা রান্না করতেন। আমরা পরিবারের সবাই মিলে আনন্দ করতাম।

আপনি যখন সংগীত জগতে এসেছিলেন, সেই থেকে বর্তমানে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটেছে। এর মধ্যে কোন বিষয়গুলো ইতিবাচক বলে মনে হয়?
আমরা যখন কোনো গান করতাম, তখন তা লাইভ গেয়ে রেকর্ড করতে হতো। একটা গান তৈরির পর কয়েকদিন সবাই মিলে রিহার্সেল করতাম। এরপর একটানা গানটি স্টুডিওতে রেকর্ডিং হতো। সেখানে সিনেমার পরিচালক, গীতিকার-সুরকার-কণ্ঠশিল্পী; এমনকি যারা গানে সাইড ভোকাল ছিলেন তারাও থাকতেন। ফলে সিনেমার সিক্যুয়েন্স বা দৃশ্য বুঝে, সেই অনুভব-আবেগের সঙ্গে গানটির রেকর্ডিং হতো। এমনো হতো একটা গানের রেকর্ডিং শেষ করতে করতে রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে যেত। তবু গানটি একটানা রেকর্ড করা হতো। কিন্তু এখন প্রযুক্তি এসে সবকিছু সহজ করে দিয়েছে। খণ্ড খণ্ড ভাগে একটি গানের রেকর্ডিং হয়।
ডুয়েট গানে আমাদের সময়ে একসঙ্গে দুজনে লাইভ গানে অংশ নিতে হতো। এখন একজন আজ কণ্ঠ দিল, অন্যজন দিল আরো কিছুদিন পর; এভাবে দেখা যায়, গানটির মূল যে অনুভূতি ছিল তার কিছুটা পরিবর্তন হয়ে যায়।
একটানা একটি গান রেকর্ডিয়ে গাইলে আমার মনে হয় অনুভূতি একই থাকে।

এ প্রজন্মের শিল্পীদের সঙ্গেও কাজ করছেন, তাদের নিয়ে আপনি কতটুকু আশাবাদী?
আমি সবসময়ই আশাবাদী। তাদের নিয়েও আশাবাদী। অনেক প্রতিভাবান শিল্পী রয়েছেন, যারা নিজেদের প্রকাশ করার সুযোগ পেলে অনেক দূর যাবে বলে আমার বিশ্বাস। তবে তাদের অবশ্যই প্যাশেন্স ধরে রাখতে হবে। শিল্পী হতে হলে গানের রেওয়াজ চালিয়ে যেতে হবে। গান করে টাকাপয়সা আসছে না, এমন করে বাদ দিয়ে দিলে হবে না। টাকা এক সময় আসবে।

ছোটবেলায় যাদের গান শুনে বড় হয়েছেন, তাদের প্রভাব আপনার ওপর কতটুকু?
আমরা তো তখন পাকিস্তানের নূরজাহান, ভারতের লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে; তাদের গান শুনে বড় হয়েছি। তাদের মতো করে গাইতেও চেষ্টা করেছি। আমি এখনো অনেক কিছু শিখছি বলা যায়। এখনো বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষার গান শুনি। অনেক কিছু এখনো শেখার বাকি, করার বাকি। তরুণদেরও প্রচুর গান শোনা উচিত।
আপনি নিজেও প্রায় ১৮টি ভাষায় গান গেয়েছেন। অন্য ভাষায় গান গাওয়া চ্যালেঞ্জিং মনে হয় না?
আমি ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন ভাষা শেখার প্রতি আগ্রহী ছিলাম। কিছু কিছু শিখেছিও; যেমন উর্দু-হিন্দি-ইংরেজি বলতে পারি। পাঞ্জাবি ভাষা জানি। একটু একটু ফ্রেঞ্চও বলতে পারি। আর গানের বেলায় লিরিকের শব্দগুলোর উচ্চারণ যেন সঠিক হয়, তার জন্য সেই ভাষায় কথা-বলা কারো সাহায্য নিই।

আপনি বলছিলেন, অনেক কিছু করার বাকি! নিজে গান গেয়েছেন, সুর করেছেন। কখনো কি নিজে লিরিক লেখার চেষ্টা করেছেন?
লিরিক লেখা অনেক কঠিন কাজ, সে আমার দ্বারা সম্ভব নয়। সুর করব এটাও কোনোদিন ভাবিনি, হঠাৎ করেই হয়ে গেছে।

যদি সংগীতশিল্পী না হতেন, তবে কী হতেন?
গান ছাড়া আমি কোনোদিন কিছুই ভাবিনি। গানই আমার জীবন। ছোট থেকে গান নিয়ে ছিলাম, এখনো আছি।

জীবনে কী পেয়েছেন বা পাননি; এমন অপূর্ণতা কিছু রয়েছে?
গান গেয়ে প্রচুর মানুষের ভালোবাসা-শ্রদ্ধা পেয়েছি। এর চেয়ে বড় পাওয়া আমার জীবনে আর কিছু হতে পারে না। তবে আমার একটা ইচ্ছে ছিল, আমার বড় বোন দিনা লায়লার স্মরণে একটি ক্যান্সার হাসপাতাল বা ফাউন্ডেশন করব। সেটা বোধহয় করাটা খুব কঠিন হয়ে যাবে। তবু দেখা যাক!
আপনার অনেক গান রিমেক হয়েছে, সেগুলো শোনেন?
কখনো কখনো শোনা হয়। তবে মূল গানের যে স্বাদ সেটাই আমার বেশি ভালো লাগে। নতুন রিমেকও ভালো হচ্ছে, তবে নতুন গানগুলোতে মূল গানের যে ভাব সেটা ঠিক থাকলে শুনতে ভালো লাগে।

পরিবারের কাউকে ঘিরে কোনো স্মৃতি আছে যা আপনাকে মাঝে মাঝে আবেগে আপ্লুত করে তোলে?
স্মৃতি তো অনেক আছে। তবে যখন বড় কোনো কাজ করি তখন আমার বাবা-মা আর বড় বোনের কথা খুব মনে পড়ে। তারা আমাকে অনেক সাপোর্ট করত, আমাকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করত। তো ওরা নেই এখন, যার ফলে ওদের শূন্যতা খুব অনুভব করি।

শিল্পীদের অনেকেই সংগীত নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজ করছেন। আপনার এমন কোনো পরিকল্পনা আছে?
আমি মূলত একজন শিল্পী। এখনো নিজেই নিজের গান নিয়ে ব্যস্ততা থাকে। এখনো প্লেব্যাক করতে পছন্দ করি, কনসার্টে গাইতে ভালোবাসি।
আপাতত সংগীত নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তেমন কোনো কাজ করার ইচ্ছে নেই।

জীবনের এত এত প্রাপ্তির ভিড়ে কোনো অপ্রাপ্তি আছে কি?
আমার জীবনে কোনো অপ্রাপ্তি নেই। আমি এখন পর্যন্ত যা পেয়েছি, যতটুকু পেয়েছি আমি মনে করি অনেক বেশি পেয়েছি।
মানুষের কাছ থেকে যে ভালোবাসা, যে শ্রদ্ধা পেয়েছি তা আমার কাছে পুরস্কারের চেয়েও অনেক বড়। শুধু দেশেই নয় দেশের বাইরেও যখন যাই তখন যে ভালোবাসা পাই তা দেখে আমি মাঝে মাঝে বিস্মিত হই, মুগ্ধ হই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়