পুলিশ হত্যা মামলা : খসরু-স্বপনের জামিন শুনানি ২৯ নভেম্বর

আগের সংবাদ

নাশকতা ঠেকাতে হার্ডলাইন : আগুনসন্ত্রাস মোকাবিলায় কঠোর পুলিশ, সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে নির্দেশ আ.লীগের

পরের সংবাদ

নির্বাচনী ট্রেনে বাংলাদেশ > রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির সাক্ষাৎ, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে হবে : রাষ্ট্রপতি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের দফা ৩ অনুযায়ী, মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে; কিংবা অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। একাদশ সংসদের শেষ দিকে রাজনীতির মাঠে সংঘাত আর সহিংসতার মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ৯০ দিনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে গেছে গত ১ নভেম্বর। নির্বাচন আয়োজনের সব প্রস্তুতি এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি রেওয়াজ অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে সার্বিক বিষয়ে অবহিত করে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন। এর মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হলো দ্বাদশ নির্বাচনী ট্রেনের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৪ সালের মতো এবারো ভোটের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক মতপার্থক্য এবং পরিবেশ প্রতিকূল হলেও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় ভোট করা ছাড়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হাতে কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। এক্ষেত্রে বিএনপি ও সমমনা মিত্রদের তাদের দাবিদাওয়া নিয়েই ভোটে অংশ নেয়া উচিত বলে পরামর্শ বিশ্লেষকদের।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ৩০ জানুয়ারি। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বিধান অনুযায়ী, ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেজন্য নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই তফসিল আসতে পারে বলে এর আগে কমিশনের তরফ থেকে আভাস দেয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনের প্রস্তুতি অবহিত করার জন্য ৪৪টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছে ইসি। এদিকে নির্বাচনে প্রার্থীদের অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া সংক্রান্ত নির্বাচনী অ্যাপ চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। এর আলোকে অ্যাপটি আগামী রবিবার (১২ নভেম্বর) উদ্বোধনের কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচনের প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে ইসি। অমোচনীয় কালি ও স্ট্যাম্প প্যাড ছাড়া অন্যান্য নির্বাচনী সরঞ্জামের বেশির ভাগ ইতোমধ্যে জেলা নির্বাচন কার্যালয়গুলোতে পাঠানো হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আওয়াল জানিয়েছেন, নির্বাচনের জন্য পরিস্থিতি অনুকূল হোক বা প্রতিকূল হোক- নির্বাচন করতেই হবে। পরিস্থিতি প্রতিকূল হলে নির্বাচন হবে না- এ ধরনের কোনো ভুল ধারণা জনগণের মধ্যে যেন না থাকে, সেজন্য স্পষ্ট করে বলতে চাই- নির্ধারিত সময়ে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল ঘোষণার বিষয়ে ইসি সচিব মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নভেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করে জানুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি রয়েছে।
গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখার আহ্বান রাষ্ট্রপতির : ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তফসিলের আগে সার্বিক বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করার আনুষ্ঠানিকতা সারতে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবন থেকে রওয়ানা দেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং চার নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর এবং মো. আনিছুর রহমান। বেলা ১২টায় তারা বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন এবং প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তাদের বৈঠক চলে।
বঙ্গভবনের তরফ থেকে বৈঠকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে বলা হয়েছে, সাক্ষাৎকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন। এ সময় সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন নির্বাহী বিভাগসহ জনগণের সক্রিয় সহযোগিতা। নির্বাচন হচ্ছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণের মতামত প্রতিফলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেন এবং প্রতিনিধির মাধ্যমেই জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়ে থাকে। সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন একসঙ্গে চলে। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হলে দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে। নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন নির্বাহী বিভাগসহ জনগণের সক্রিয় সহযোগিতা। রাজনৈতিক দলগুলোকে এ লক্ষ্যে এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আশা করেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সরকার নির্বাচন কমিশনক সার্বিক সহযোগিতা করবে। তিনি নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সাংবিধানিক রীতি-নীতি ও বিধি-বিধান অনুসরণপূর্বক কমিশনকে সাহসিকতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে ‘বদ্ধপরিকর’ ইসি : সাংবিধানিক দায়িত্ব অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে ইসি ‘বদ্ধপরিকর’- আবারো জানিয়েছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর পৌনে ১টার দিকে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সিইসি ও অন্য নির্বাচন কমিশনাররা। সম্ভাব্য সময়সূচি নির্ধারণ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে কোনো মূল্যে আমাদের ২৯ জানুয়ারির আগেই নির্বাচন করতে হবে। কমিশন বসে দিন তারিখ চূড়ান্ত করলেই গণমাধ্যমকে সেটা জানানো হবে। বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কিনা- সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এ বিষয়ে আলোচনা হয়নি। সংলাপ নিয়েও কোনো কথা হয়নি। আমরা শুধু আমাদের কথা বলেছি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে যাতে নির্বাচন হয় সে ব্যাপারে সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছি। সিইসি জানান, রাষ্ট্রপতিকে তারা অবহিত করেছেন, সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নির্বাহী বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আসন্ন নির্বাচন বিষয়ে যে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে তা শুনে রাষ্ট্রপতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। রাষ্ট্রপতি আশা ব্যক্ত করেছেন, আসন্ন নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, সুন্দর ও সুষ্ঠু হবে এবং সুশৃঙ্খলভাবে হবে। এ ব্যপারে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
নির্বাচনী ট্রেনের যাত্রা শুরু : নির্বাচনকে ঘিরে সংলাপ-সমঝোতার আশার আলোর বিপরীতে সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ও সমমনাদের ডাকে সারাদেশে অবরোধ চলছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের বিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। এ অবস্থায় নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
নির্বাচনী ট্রেনে বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করেছে মন্তব্য করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ ভোরের কাগজকে বলেন, যতই সহিংসতা করুক বিএনপির সামনে নির্বাচন ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই। দেশ এখন নির্বাচনমুখী। এখন তফসিল ঘোষণা হবে। নির্বাচন ছাড়া বিএনপির কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন ছাড়া তাদের লক্ষ্য অর্জিত হবে না। তারা তাদের দাবি-দাওয়াসহই নির্বাচনে যেতে পারে।
এদিকে নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা আর সহিংসতার মধ্যে জনমনে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। পশ্চিমা কূটনীতিকরা ছাড়াও বিভিন্ন মহল থেকে সংলাপের আহ্বান জানানো হচ্ছে, কিন্তু পরস্পরবিরোধী কোনো পক্ষই তাতে সাড়া দেয়নি। এক্ষেত্রে দেশের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজন ছাড়া নির্বাচন কমিশনের আর করার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, নির্বাচনী ট্রেনের যাত্রা শুরু হলো। আমাদের দেশের সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন হবে। নির্বাচনের জন্য কিছু আইন রয়েছে। এর বাইরে কেউ যেতে পারবে না। যদি কোনো দল নির্বাচনে অংশ না নেয়, সেটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অন্তরায়- এটি সত্য। সত্যিকার অর্থে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ভালো। কিন্তু যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো দল না আসে তাহলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা ছাড়া ইসির কোনো উপায় থাকবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়