নাইকো দুর্নীতি মামলা : খালেদার বিরুদ্ধে ফের সাক্ষ্য দেবেন কানাডার দুই পুলিশ কর্মকর্তা

আগের সংবাদ

নৌকা এবার জিতবেই > যাকেই নমিনেশন দেব, ঐক্যবদ্ধভাবে তাকেই বিজয়ী করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

প্রেসিডেন্ট হত্যা : নিরাপত্তা মহড়া

প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

৩ মে ১৯৮৫, তখনকার বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র সচিব যা লিখেছেন বিশেষ কৌতূহলোদ্দীপক বিবেচনা করে তা হুবহু উদ্ধৃত করা হচ্ছে :
আজ সকাল ১০টায় পুলিশের বেতার যন্ত্রে শোনা গেল রাষ্ট্রপতি সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এক রোগীকে দেখতে যাবেন আধাঘণ্টার মধ্যে। পুলিশ সর্বত্র সাবধান হয়ে গেল। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থলে সার্জেন্টগণ অবস্থান নিয়েছেন। ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (নিরাপত্তা) নবী চৌধুরী হন্তদন্ত হয়ে তার কর্মস্থলে উপস্থিত। দুই-তিন দিন আগে রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ইব্রাহিম ও মওলানা মান্নানকে দেখে গেছেন ওই হাসপাতালে। আজ ছুটির দিন তিনি কেন যাচ্ছেন- এ প্রশ্ন অনেকের মনে এসেছে। সকাল সাড়ে ১০টায় রাষ্ট্রপতির গাড়ির কনভয় রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিল। সহসা কয়েকটি গুলি ছুটে এলো কনভয়ের দিকে। রাস্তার লোকজন শঙ্কিত হয়ে উঠল। অনেকে ছুটে পালিয়েছে। গাড়ি ও রিকশা থেমে গেছে। পুলিশ কমিশনার আজ ছুটির দিনে শেরেবাংলা নগরে তার বাসায় অবকাশ যাপন করছিলেন। গুলির শব্দে কোনোমতে পোশাক পরে তিনি ছুটে গেলেন হাসপাতালের দিকে। বেতার যন্ত্র ক্ষণিকের জন্য নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। সবার ধারণা হয়তো রাষ্ট্রপতি এরশাদ বেঁচে নেই। পুলিশ কমিশনার হাসপাতালে পৌঁছার পর নবী চৌধুরী বলেন, অবস্থা আয়ত্তের মধ্যে। তিনি সান্ত¡না দেন তার কমিশনারকে।
কিন্তু আসলে কী ঘটেছে? রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব পরীক্ষা করেছেন- রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কতটুকু সজাগ। এজন্য তিনি এ মহড়ার ব্যবস্থা করেছেন। গাড়িতে রাষ্ট্রপতি ছিলেন না। সেখানে বসেছিলেন তার এডিসি। গুলি গাড়িতে করা হয়নি। এটা ফাঁকা আওয়াজ ছিল। পরীক্ষা করা হলো, এটা ভালো। কিন্তু জনাকীর্ণ সড়কের ওপরে মহড়া করায় ঢাকা শহরে বহু গুজব ছড়িয়ে পড়েছে, কেউ বলছেন এরশাদ বেঁচে নেই। কেউ বলেছেন যে তার ওপর আক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। আর বেশিদিন আয়ু নেই ইত্যাদি।
এটা সত্যি রাষ্ট্রপতি এরশাদের স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে। কিন্তু দেশের দুজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রপতি নিহত হয়েছেন তাদেরই হাতে বৃহদার্থে যাদের দায়িত্ব ছিল তাদের জীবন রক্ষা করা। পরিসংখ্যান তাই বলে, রক্ষকই ভক্ষণ করে থাকে।
***
কাজী আজাহার আলী স্বরাষ্ট্র সচিব জীবনের আরো কিছু কথা খোলামেলা বলেছেন, নিজের ভূমিকা তেমন আড়াল করেননি। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের বিরোধী দুই প্রধান দল- আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তবে দুই দলের ‘ছুট’ নেতাদের কেউ কেউ এসে প্রেসিডেন্ট বা তার প্রতিনিধির কাছে তাদের সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছেন। ১৯৮৫-এর ৮ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় রাষ্ট্রপতি তার বাসভবনে কেবিনেট সচিব মাহবুবুজ্জামান, সেনাপ্রধান জেনারেল আতিকুর রহমান এবং স্বরাষ্ট্র সচিবকে ডাকলেন এবং জানালেন- শাহ আজিজ, কাজী জাফর প্রমুখ নির্বাচনের বিরুদ্ধে; কিন্তু রাষ্ট্রপতি তাদের গুরুত্ব দিচ্ছেন। কারণ তারা রাষ্ট্রপতির দলে যোগ দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। শাহ আজিজ দাবি করেছেন তার সঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারসহ অনেকেই যোগ দেবেন। এদিকে জনদল তার কাছে কয়েকটি মন্ত্রীর পদ দাবি করে বসেছে। খন্দকার মোশতাকও এসেছিলেন, তবে তিনি উপজেলা নির্বাচন চাচ্ছেন নাকি চাচ্ছেন না তা স্পষ্ট নয়; মিজানুর রহমান চৌধুরী নির্বাচন চাচ্ছেন আর রাষ্ট্রপতির মতে, ‘সামরিক বাহিনীর প্রতিটি লোক উপজেলা নির্বাচনের জন্য বদ্ধপরিকর। এটা না হলে তাদের তিনি কী জবাব দেবেন?’
সেনাবাহিনীর কাছে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে জবাব দেয়ার বাধ্যবাধকতা তার কী- এটা রাষ্ট্রপতি স্পষ্ট করেননি। তবে স্বরাষ্ট্র সচিব এবং কেবিনেট সচিব দুজনে নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন। তারা মনে করছেন চেয়ারম্যানের অভাবে প্রতিষ্ঠানটি কার্যকর হতে পারছে না।
পরদিনই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলো ১৬ ও ২০ মে ১৯৮৫ দুভাগে সারাদেশে উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার তারিখ ২৩ এপ্রিল।
আওয়ামী লীগ এর বিরোধিতা করে প্রচারপত্র ছেড়েছে, তাতে বলা হয়েছে গণভোটে শতকরা ২ ভাগ ভোটারও কেন্দ্রে আসেনি। প্রহসনের নির্বাচন ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার হাতিয়ার। বিরোধী নেতৃবৃন্দের কেউ কেউ আটক আর কেউ কেউ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ১৪ এপ্রিল উৎসবমুখর নববর্ষ। রমনা বটমূলের মূল অনুষ্ঠান কিছুক্ষণ চলার পর আওয়ামী লীগ কর্মীরা স্টেজ দখল করে নেয় এবং এরশাদবিরোধী সেøাগান দিতে থাকে। গান শুনতে আসা দর্শক দ্রুত রমনা ছেড়ে বেরিয়ে যায়। ১৫ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি জানান উপজেলা নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি নমনীয়, দলের কিছু সাবেক এমপি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস, ১৯৭১-এর এ দিন বৈদ্যনাথতলার আমবাগানে সরকার গঠিত হয়েছিল। মুজিবনগরের পরিবর্তে কর্মসূচি ৩২ নম্বর সড়কের বাসভবন ঘিরে। সরকার মনে করে এই জমায়েত এবং সরকারবিরোধী সম্ভাব্য সেøাগানে সামরিক শাসন বিধির অবমাননা ঘটবে- সুতরাং যেসব গৃহীত সিদ্ধান্ত পুলিশকে বাস্তবায়ন করতে হবে তার মধ্যে রয়েছে সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, জোহরা তাজউদ্দীন এবং আবদুল মালেক উকিলকে তাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে ৩২ নম্বরের দিকে যেতে না দেয়া। বিশেষ শাখার লোক তাদের বাড়িতে যায়, মালেক উকিল বিশেষ শাখার ডিআইজি আজিজুল হককে নিজেই ফোন করে জানান তিনি অসুস্থ, বাড়ি থেকে বের হবেন না। মতিয়া চৌধুরী বের হলে তাকে উঠিয়ে স্পেশাল ব্রাঞ্চের অফিসে এনে বসিয়ে রাখা হয় এবং সন্ধ্যায় বাড়ি পৌঁছে দেয়া হয়। অপর দুজন বেরই হননি। সালাহউদ্দিন ইউসুফসহ আড়াইশ লোক ৩২ নম্বর সড়কের কাছে জমায়েত হলে পুলিশের বাধায় এবং ধাওয়ায় তারা সরে যান। জামায়াতে ইসলামীর সভা থেকে ভারপ্রাপ্ত আমির আব্বাস আলী খানসহ চারজনকে প্রেস ক্লাবের সভা থেকে তুলে এনে সন্ধ্যা পর্যন্ত আটকে রেখে ছেড়ে দেয়া হয়।
১ মার্চ থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। বুয়েট ও মেডিকেল কলেজেও। স্বরাষ্ট্র সচিব লিখেছেন, বহু কষ্ট করে মেডিকেল কলেজ খোলার ব্যবস্থা করেছেন। শিক্ষার্থীদের বলা হয়েছে, কোনো গোলযোগ করলে আবার বন্ধ করে দেয়া হবে, তারা প্রতিশ্রæতি দিয়েছে সাবধান থাকবে।
২০ মে উপজেলা নির্বাচন শেষ হওয়ার আগে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে না। এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেনি, অনেকেই আবেদন ফরমও পায়নি। ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ আছে। এখানে খুব ভালো ছাত্রছাত্রী পড়ে। ভিসি পাটোয়ারী সাহেবকে (অধ্যাপক আবদুল মতিন পাটোয়ারী) বলেছিলাম যদি তিনি দায়িত্ব নেন যে তার প্রতিষ্ঠানে সামরিক আইনবিরোধী কাজকর্ম ছাত্ররা করবে না তাহলে সবাইকে অনুরোধ করব এ বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার জন্য। কিন্তু ভিসি সাহেব দায়িত্ব নিতে অপারগতা জানিয়েছেন। শিক্ষা সচিব (কাজী জালালউদ্দিন) এ সময় কোনো বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিরোধী। জালাল সাহেব সাবধানী লোক। তিনি উপজেলা নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখতে চান। আসলে বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে রমজান ও ঈদ পেরিয়ে যাবে, এর মধ্যেই একটি টার্ম নষ্ট হলো, শিক্ষিতজন সরকারের সমালোচনা করছেন, শিক্ষকরা বিবৃতি দিচ্ছেন, যাদের চাকরির বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে, তারা সরকারকে দায়ী করছে। স্বরাষ্ট্র সচিব বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় এখন খোলা থাকলেই পড়াশোনা হবে- এ নিশ্চয়তা কোথায়? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতির আখড়া। সব রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার ছাত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলে এতদিন রক্তারক্তি হতো। সেসব হৈ-হুল্লোড় না থাকায় ঢাকা তথা বাংলাদেশ শান্তিতে আছে। কিন্তু এভাবে শিক্ষিত যুবসমাজকে ধ্বংস করে যে শান্তি তাও কি দেশ ও সমাজের জন্য কাম্য?
২১ এপ্রিল পতিতা সমস্যা নিয়ে জরুরি সভা, তখন যৌনকর্মী শব্দটি চালু হয়নি। নারায়ণগঞ্জের প্রাচীন পতিতালয় টানবাজারে শারীরিক অত্যাচারে শবমেহের হত্যার ঘটনায় সরকারের টনক নড়েছে, পুলিশের তল্লাশিতে উদ্ধার হয়েছে ১৩৪ জন কিশোরী। নারায়ণগঞ্জবাসী এবার তাদের শহর থেকে পতিতালয় উচ্ছেদে মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু এখানে কর্মরত ৩-৪ হাজার নারী যাবে কোথায়- সরকার এত বেশিসংখ্যক নারীর পুনর্বাসন করতে পারবে না। রাষ্ট্রপতি এরশাদ ফোন করে স্বরাষ্ট্র সচিবকে বললেন, পতিতা উৎখাত নতুন সমস্যার সৃষ্টি করবে।
নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার সৃষ্টি ১৮৭৬ সালে, তারও অনেক আগে থেকেই টানবাজার ও কালীবাজারে পতিতালয় সুপ্রতিষ্ঠিত। অনেক পতিতার জন্মও এখানেই, তারা বাইরের পৃথিবী চেনে না। এক সর্দারনির বয়স ১০৬ বছর। টানবাজার থেকে যাদের মিরপুর পুনর্বাসন কেন্দ্রে আনা হয়েছে তারা এখানে থাকতে রাজি নয়। তাদের জীবনে প্রাচুর্য ছিল। এখানে সকালের নাশতায় এক ডিমে সন্তুষ্ট নয়, তারা ৩-৪টা ডিমে অভ্যস্ত। ওদিকে টানবাজার পুলিশ প্রহরাধীন, খদ্দের তেমন ঢুকছে না। আর্থিক টানাপড়েনের ভেতরেই বিক্ষোভ দানা বেঁধে উঠেছে। অন্যদিকে শবমেহের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল এটাকে ইস্যু বানিয়ে রংপুর, যশোর, কোটচাঁদপুর ও গোয়ালন্দে পতিতা উচ্ছেদ অভিযান চালাতে চাচ্ছে। সব মিলিয়ে সরকারের জন্য একটি বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। শবমেহের হত্যাকাণ্ড ছিল সমাজের চক্ষু উন্মোচক- আই ওপেনার। পাকিস্তান আমলে খুলনার একটি পুরনো পতিতালয় উচ্ছেদ করে কিছুকাল পর তখনকার মুসলিম লীগ নেতা সবুর খান বলেছিলেন উচ্ছেদে সম্মতি দেয়া ছিল তার রাজনৈতিক জীবনের একটি ভুল সিদ্ধান্ত। আমার কর্মজীবনের শুরুতে উত্তরবঙ্গের একটি জেলায় ১৭ জন ভাসমান পতিতাকে সমাজসেবা দপ্তরের হেফাজতে পুনর্বাসনের জন্য দেয়া হয়েছিল। পুনর্বাসনের প্রকল্প তাদের আকৃষ্ট করতে পারেনি বলে প্রথম সপ্তাহেই তাদের ১৫ জন পালিয়েছিল।
১৯ এপ্রিল ১৯৮৫ শুক্রবার। হাফেজ্জি হুজুর মওলানা মাহমুদুল্লা বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজের পর সমাবেশের ডাক দেন, সেখানে মেজর (অব.) জলিলও যোগ দেবেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভোর বেলাতেই দুজনকে জানিয়ে দেয়া হয় এই মসজিদে আসতে দেয়া হবে না। ইউনিফর্মধারী ও সাদা পোশাকের পুলিশ দুজনকে বাড়ির বাইরে মোতায়েন করা হয়। সে দিন খুলনা সমিতির সচিব আবদুল ওয়াহাবের মৃত্যু হলে জুমার পর বায়তুল মোকাররমে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। স্বরাষ্ট্র সচিবও খুলনার, তিনি জানাজায় যোগ দেন। নামাজ শেষে ২০০ লোকের একটি সমাবেশ ‘সামরিক আইন’ ও ‘খুনি এরশাদের’ বিরুদ্ধে সেøাগান দিলে পুলিশ রয়ে-সয়ে এক পর্যায়ে লাঠিচার্জ করে। অপর একজনকে টার্গেট করা পুলিশের লাঠির আঘাত স্বরাষ্ট্র সচিবের ডান বাহুতে পড়ে।
বিরোধিতার মুখে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ৪৬০ উপজেলায় ৩ হাজার ১৪২টি মনোনয়ন জমা হয়। দলীয় পরিচয়ে না এলেও আবেদনকারীদের কেউ কেউ দুই প্রধান দলের উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতা।
৬ মে ১৯৮৫ রাষ্ট্রপতি স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইজিপিকে জানালেন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ফারুক দু-একদিনের মধ্যে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছেন। ভিন্ন একটি মাধ্যমে কর্নেল (অব.) ফারুকের অবস্থান কোথায় তিনি জেনে গেছেন। তিনি বিষয়টি ডিজি এনএসআই ও ডিজিএফআই দুজনকে বলেছেন, তারা উত্তরায় একটি চার তলা বাড়ি অবরোধ করে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছেন। সেখান থেকে কুরআন শরিফ, ভিসিআর, পর্নোগ্রাফি, গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকের ১৫-১৬ লাখ টাকার পাস বই, কিছু আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক, মোবাইল ফোন, কয়েকটি মোটরসাইকেল ও দুটি গাড়ি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ১৯৮৪ সালে তার ক’জন সহকর্মী ধরা পড়লেও তিনি ফসকে যান, ৬ মাস ধরে সরকারের সব এজেন্সি তাকে আটক করার চেষ্টা করে যাচ্ছিল। তিনি এর মধ্যে তার স্ত্রী ও ছেলেকে লিবিয়া পাঠিয়ে দিয়েছেন। তিনি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। তিনি ও তার সহকর্মীগণ শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছিলেন। শেখ হাসিনা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে নিজের জন্য ও দেহরক্ষীদের জন্য রিভলবার লাইসেন্স নিয়েছেন।
কলকাতা হাইকোর্টে কুরআন শরিফ বাজেয়াপ্ত করার জন্য দুজন ভারতীয় নাগরিক মামলা করেছেন, এই নিয়ে ঢাকা উত্তপ্ত। ১০ মে কড়া পুলিশ প্রহরায় ধানমন্ডি ২ নম্বর সড়কে ভারতীয় দূতাবাসে বিক্ষোভকারীরা স্মারকলিপি দেয়। পরদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জে একই ঘটনা প্রশাসন সামলাতে ব্যর্থ হলে পুলিশের গুলিতে ৩ জন নিহত ও ২১ জন আহত হয়। ধর্মগ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করার মামলা গত হাজার বছরে ঘটেছে কিনা স্বরাষ্ট্র সচিব সন্দিহান। দীর্ঘ ও উত্তপ্ত শুনানির পর কলকাতা হাইকোর্ট মামলাটি খারিজ করে দেয়ায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি দুদেশেই প্রশমিত হয়। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা আরো একটি বিষয় জানায় যে, মামলার দুই বাদী যে ঠিকানা ব্যবহার করেছেন সে ঠিকানায় তাদের নামের কোনো লোকই বাস করেন না।
১৫ মে কালীগঞ্জের নেতা ময়েজউদ্দিন হত্যা মামলার আসামি আজম খান আদালত থেকে দুদিনের জন্য প্যারোল মুক্তি লাভ করলে সরকারবিরোধী আলোচনা শুরু হয়ে যায়- রাষ্ট্রপতির আশীর্বাদ ছাড়া তা সম্ভব ছিল না বলে মন্তব্য করা হয়।
১৬ ও ২০ মে ১৯৮৫ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এই নির্বাচনে সহিংসতার কিছু ঘটনা ঘটেছে। মোট ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাষ্ট্রপতি এরশাদ তার কেবিনেট সচিব মাহবুবুজ্জামান এবং স্বরাষ্ট্র সচিব কাজী আজাহার আলীকে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সাফল্যের জন্য অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানান। কৃতজ্ঞতার একটি অভিব্যক্তি- মাহবুবুজ্জামান এরশাদের মন্ত্রী হয়েছেন।
বড় দু’দল আনুষ্ঠানিকভাবে অংশগ্রহণ করেনি। তবুও তাদের কিছু প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। রাষ্ট্রপতি সমর্থিত জনদল জিতেছে ২২৩, নির্দলীয় ৯৮, আওয়ামী লীগ ৪১, বিএনপি ৪৩, জাসদ (রব) ২১, মুসলিম লীগ ৭, ন্যাপ (মোজাফফর) ৬, বাকশাল ৫, ইউনাইটেড পিপলস পার্টি ২ এবং অন্যান্যের দখলে যায় ৪টি পদ। ২৫ মে চেয়ারম্যানদের শপথ অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি মনে করলেন, তার রাজনীতির একটি শক্তিশালী বেসামরিক ভিত্তিও প্রতিষ্ঠিত হলো। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আইয়ুব খানও পাকিস্তানের দুই অংশে ৮০ হাজার বেসিক ডেমোক্র্যাট চেয়ারম্যান জিতিয়ে এনে ভেবেছিলেন, এরাই তার বেসামরিক ভিত্তি।
যখন ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে যায় সামরিক বেসামরিক দুটোই টলতে থাকে। আইয়ুব টেকেননি, এরশাদও না।

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়