নাইকো দুর্নীতি মামলা : খালেদার বিরুদ্ধে ফের সাক্ষ্য দেবেন কানাডার দুই পুলিশ কর্মকর্তা

আগের সংবাদ

নৌকা এবার জিতবেই > যাকেই নমিনেশন দেব, ঐক্যবদ্ধভাবে তাকেই বিজয়ী করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার ও সম্ভাবনা

প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিদ্যুৎ উৎপাদনে বৈদেশিক নির্ভরশীলতা হ্রাস করে নবায়নযোগ্য শক্তি উৎসের প্রসার ঘটানো দরকার। গত দুই-তিন বছর ধরে বিশ্বে জ্বালানি তেলের বাজারে যে অস্থিরতা চলছে এবং এর সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে যে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে, তা মোকাবিলা করার অন্যতম উপায় হচ্ছে বৈদেশিক নির্ভরশীলতা হ্রাস করা। ডলার-সংকটের কারণে আমরা একদিকে যেমন বিভিন্ন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করছি, তেমনি জ্বালানি পরিস্থিতির সামাল দিতে লোডশেডিংসহ প্রায় সব জ্বালানির দামের উল্লম্ফন দেখতে পাচ্ছি। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো বহুলাংশে গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল, যদিও বাংলাদেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উৎপাদনক্ষমতা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। এমতাবস্থায় নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত না হলে আমাদের আমদানি করা তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ওপর নির্ভর করতে হবে, যা বিশ্বের বর্তমান মূল্যের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যয়বহুল। নীতিনির্ধারণী মহলের অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আগামী দশকের মধ্যে জ্বালানি তেলের আমদানি প্রায় দ্বিগুণ বাড়বে। এসব বিষয় নিয়ে ইতোমধ্যেই বহু লেখালেখি চোখে পড়েছে এবং প্রায় সব লেখকেরই মত হচ্ছে, নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসার ঘটানো। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস হচ্ছে সৌরশক্তি। গত এক দশকে সোলার প্যানেল এবং আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির দাম যেভাবে কমে এসেছে, তাতে বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুতের মূল্য ইউনিটপ্রতি ৭ টাকার নিচে নেমে এসেছে, যেখানে বাংলাদেশের বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদনের গড় খরচ ইউনিটপ্রতি ১০ টাকার ওপরে উন্নীত হয়েছে। সুতরাং সৌরবিদ্যুতের প্রসারের প্রস্তাবগুলোকে যৌক্তিক মনে করার যথেষ্ট উপাত্ত রয়েছে। কিন্তু সৌরবিদ্যুতের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে কিছু সমস্যার প্রতি নজর দেয়া প্রয়োজন। প্রথমত, সৌরবিদ্যুৎ তৈরি হবে দিনের বেলা যখন সূর্যের আলো বিদ্যমান থাকে। সন্ধ্যার পর সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন যখন শূন্যের কোটায় নেমে আসবে এবং যখন বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ থাকবে, তখন এই চাহিদা মেটানোর জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরশীল বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতার প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্বাভাবিকভাবে সারা দিন বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে না, শুধু সন্ধ্যা থেকে রাত ৯-১০টা পর্যন্ত চালু থাকবে। এদের বলা হয় পিকিং পাওয়ার প্লান্ট। মাত্র তিন-চার ঘণ্টা চালানোর কারণে এসব প্লান্টের ওভারহেড খরচ অত্যন্ত অধিক হয় এবং বর্তমান জ্বালানি মূল্যের বাজারে এদের উৎপাদিত বিদ্যুতের খরচ হবে ইউনিটপ্রতি (২২ থেকে ২৫) টাকা, যা আমাদের গড় বিদ্যুৎ খরচের প্রায় দ্বিগুণ। অন্যদিকে সৌরবিদ্যুৎ যেহেতু সূর্যের আলোর ওপর নির্ভরশীল, তাই মেঘ, বৃষ্টি, কুয়াশা প্রভৃতির কারণে এর বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থিতিশীল রাখা সম্ভব নয়। তাই সৌরবিদ্যুতের দ্রুত উত্থান-পতনের কারণে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে। সুতরাং সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে আমরা যে আর্থিক সাশ্রয় হওয়ার কথা চিন্তা করছি, তা পেতে হলে সমস্যাগুলোর সঠিক সমাধান চিন্তা করা প্রয়োজন।
নবায়নযোগ্য শক্তির সম্ভাবনার বিচারে বাংলাদেশের স্থান ৪১তম, এর প্রধান কারণ হলো অনভিজ্ঞতা ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সীমিত সম্ভাবনা। তবে বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুতের উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে। এছাড়া বায়োগ্যাস, বায়োমাস, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও বায়ুবিদ্যুতের সম্ভাবনাও কম নয়। বিষুবরেখার সন্নিকটে হওয়ায় বাংলাদেশ প্রতিদিন ৪ দশমিক ০ থেকে ৬ দশমিক ৫ কিলোওয়াট আওয়ার/বর্গমিটার সৌর বিকিরণ লাভ করে। অনুমান করা হয় যে ছাদের ওপর, নদী, হাওর, পুকুরের মতো জলাশয়ে, চা-বাগানের অনাবাদি জমি ও ভূমিতে স্থাপিত সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেম থেকে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ২৪০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। বাংলাদেশের খসড়া জাতীয় সৌরশক্তি রোডম্যাপে ২০৪১ সাল নাগাদ নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে ৪০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার লক্ষ্যমাত্রার কথা বলা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের এসম্যাপ প্রস্তুতকৃত বাংলাদেশের সৌরসম্পদের ম্যাপ থেকে দেখা যায় যে, দেশের দক্ষিণাঞ্চল, উপকূলীয় দ্বীপগুলো ও পার্বত্য এলাকায় সৌর বিকিরণ অধিক বিধায়, সেসব এলাকা সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অধিকতর উপযোগী। আগে ধারণা করা হতো, বাংলাদেশে বায়ুবিদ্যুতের তেমন সম্ভাবনা নেই। সম্প্রতি মার্কিন জাতীয় নবায়নযোগ্য শক্তি পরীক্ষাগার পরিচালিত মূল্যায়ন থেকে বাংলাদেশের বায়ুবিদ্যুৎ সম্ভাবনা অতীতের অনুমিত পরিমাণ থেকে বেশি বলে জানা যায়। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলো এ জন্য বিশেষ উপযোগী। বাংলাদেশে বায়ুর সর্বোচ্চ গতিবেগ ৭ দশমিক ৭৫ মিলি/সেকেন্ড, যা দিয়ে ৩০ গিগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব হতে পারে। সমীক্ষা থেকে দেখা যায়, দেশের মোট জমির ৪ শতাংশ ব্যবহার করে নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে সম্পূর্ণ জ্বালানি চাহিদা মেটানো সম্ভব। নদীর অবিচ্ছিন্ন ধারা ও জলপ্রপাত (রান অব দ্য রিভার) বা জলাধার সৃষ্টি- এই দুই প্রক্রিয়ায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। আমাদের দেশে রান অব দ্য রিভার ও জলপ্রপাত ব্যবহার করে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা সীমিত। আবার পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব, জটিল ও ব্যয়বহুল পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার কারণে নদীতে বাঁধ দিয়ে কাপ্তাইর মতো জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব নয়। তবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঝরনা (ক্ষুদ্র জলপ্রপাত) ব্যবহার করে ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সুযোগ আছে। দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে সীমিত পরিমাণে ভূ-তাপীয় (জিও থার্মাল) জ্বালানি সম্ভাবনা আছে। ধারণা করা হয়, বায়োমাস থেকে বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ মেটানো হয়ে থাকে। বায়োমাস ও বর্জ্য ব্যবহার করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জ্বালানি গ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশের জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য শক্তিতে উত্তরণের তিনটি অনিবার্য কারণ আছে; এক. আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত ফুরিয়ে আসছে। জ্বালানি বিভাগের তথ্যের ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে যে বড় কোনো নতুন প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত না হলে (ক্ষীণ সম্ভাবনা) ও বর্তমান হারে ব্যবহার অব্যাহত থাকলে ২০২৫-২০৩১-এর মধ্যেই আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত ফুরিয়ে যাবে। দুই. জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানির অর্থনৈতিক, আর্থিক ও রাজস্বের ওপর বিরূপ প্রভাব। জীবাশ্ম জ্বালানির মূল্যের অস্থিরতা, ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস, ভর্তুকি বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছে। তা মোকাবিলা করতে গিয়ে সরকার বারবার এবং বিপুলভাবে জ্বালানি গ্যাস, তেল ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। এ ধরনের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ব্যবসা ও জীবনযাত্রার ব্যয়, মূল্যস্ফীতি ঘটিয়ে অর্থনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত করেছে। তিন. জলবায়ুর ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া।
জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য শক্তিতে উত্তরণের ফলে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আর্থিক সাশ্রয়, জনস্বাস্থ্যের ওপর অনুকূল প্রভাব, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, ভর্তুকি হ্রাস প্রভৃতি সুবিধা রয়েছে। কেবল দুই গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য শক্তি স্থাপন করা হলে বছরে জ্বালানি আমদানি বাবদ ১ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সাশ্রয় হবে। হিসাব করে দেখা গেছে, জলবায়ু সমৃদ্ধ পরিকল্পনা অনুযায়ী সৌরশক্তির প্রসার ঘটলে ২০২২-২৪ সালের মধ্যে এলএনজির চাহিদা ২৫ শতাংশ কমবে এবং এতে ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত সাশ্রয় হতে পারে। নবায়নযোগ্য শক্তি বাস্তবায়নে হতাশার মাঝে আশার ক্ষীণ আলো হচ্ছে ইডকলের নবায়নযোগ্য শক্তি কর্মসূচি। ইডকল নির্ধারিত সময়ের আড়াই বছর আগে বরাদ্দ অপেক্ষা ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কমে ৫০ হাজার সোলার হোম সিস্টেম অর্থায়ন ও স্থাপন করে সবাইকে চমকে দেয়। বিশ্বের সবচেয়ে সফল এ সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্পের অধীনে বিদ্যুৎ-সুবিধা নেই এমন বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৪ দশমিক ১৩ মিলিয়ন হোম সিস্টেম স্থাপন করা হয়। এর মাধ্যমে প্রায় ২ কোটি মানুষ মৌলিক বিদ্যুৎ-সুবিধা লাভ করে। সৌরবিদ্যুৎ ছাড়াও ইডকল ৬৭ হাজার বায়োগ্যাস প্লান্ট, ৯টি বায়োগ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও ৪ দশমিক ১৫ মিলিয়ন উন্নত চুলা ইডকলের অর্থায়নের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছে। নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্প ও জ্বালানি ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রকল্পগুলোয় ইডকলের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, কেএফডবিউ, জাইকা প্রভৃতি সংস্থা সরকারের মাধ্যমে ইডকলকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। ইডকলের সাফল্যের পেছনের উল্লেখযোগ্য কারণগুলোর মধ্যে সযতœ পরিকল্পনা, প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা, অংশীজনদের সহযোগিতা, সহযোগিতার আইনি কাঠামো, আর্থিক প্রকৌশল, ব্যাপক প্রচার, সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ, সরকারি সহায়তা ও অনুকূল পরিবেশ অন্যতম। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল দূর পল্লী অঞ্চলে ন্যূনতম বিদ্যুতের বুভুক্ষাকে ইডকল মেটাতে সক্ষম হয়েছিল।
টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) তৈরি ‘ন্যাশনাল সোলার এনার্জি রোডম্যাপ ২০২১-৪১’ অনুযায়ী, ২০৪১ সালের মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে বাংলাদেশ। স্রেডার মতে, নদী-তীরবর্তী এবং পরিত্যক্ত জমির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে সৌরবিদ্যুতের সক্ষমতা ৩০ হাজার মেগাওয়াটেও উন্নীত করার বাস্তবতা রয়েছে। টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) ও ইউএনডিপির তত্ত্বাবধানে তৈরি ‘ন্যাশনাল সোলার এনার্জি রোডম্যাপ ২০২১-৪১’-এর মতে, জমির স্বল্পতা সত্ত্বেও সৌর বিদ্যুতায়নের মধ্যমানের কৌশলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ২০ হাজার মেগাওয়াট সবুজ বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। অন্যদিকে নদী অববাহিকা উন্নয়নের ৫ শতাংশ ভূমি, শিল্পাঞ্চলের রুফটপসহ অপরাপর অব্যবহৃত ভূমি নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের সৌর মডেলে এই সক্ষমতা ৩০ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছানো সম্ভব। জ্বালানি আমদানির নির্ভরতা থেকে বেরোতে হলে সরকারকে ‘ন্যাশনাল সোলার এনার্জি রোডম্যাপ ২০২১-৪১-কে আলোতে আনতে হবে। এবং তা দুর্নীতিমুক্তভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। বিদ্যুতের মাস্টারপ্ল্যান পিএসএমপি-২০১৬-এর মতে, ২০২১ সালের মধ্যেই নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ মোট সক্ষমতার অন্তত ১০ শতাংশ হওয়ার কথা ছিল। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এসডিজি-৭ মতে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মোট ব্যবহৃত বিদ্যুতের ১২ শতাংশ নবায়নযোগ্য করার শর্ত আছে। বাংলাদেশ এলডিসি উত্তরণের প্রার্থী বিধায় নিম্নমধ্য আয়ের দেশের ব্যবহৃত বিদ্যুতের ১৭ শতাংশ নবায়নযোগ্য রাখার শর্তটাই মানা সুবিবেচনাপ্রসূত। ভাসানচর, চরফ্যাশন, ভোলা, মনপুরা, বরিশাল, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলোতে খরুচে সঞ্চালনের বিকল্প হিসেবে সৌর-বায়ুবিদ্যুতের সমন্বয়ে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন ও কমিউনিটি গ্রিডের টেকসই ও সাশ্রয়ী মডেল দাঁড় করানো সম্ভব। এ অঞ্চলে সৌর এবং বায়ুশক্তির পটেনশিয়াল দেশের অপরাপর অঞ্চলের চেয়ে ভালো প্রমাণিত। স্থানীয়ভাবে বিতরণকৃত বিকেন্দ্রীভূত সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত একটি জ্বালানিব্যবস্থা জলবায়ু পরিবর্তনের ঘন ঘন ঝুঁকি ও ধাক্কার বিপরীতে অনেক বেশি অনুকূল এবং স্থিতিশীল। সৌরবিদ্যুতের জমি সমস্যার বিষয়টি সত্য, তবে বিকল্প সমাধান আছে বিধায় সেগুলোকে কাজে লাগানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা অনুপস্থিত। সৌরশক্তির স্টোরেজ সক্ষমতা বাড়াতে মানসম্পন্ন সাশ্রয়ী স্থানীয় ব্যাটারি উৎপাদন ও আমদানি নিশ্চিত করা চাই, দরকার উচ্চমান ও সাশ্রয়ী সোলার-প্যানেল, কনভারটার ও ডিসি সামগ্রীর নিশ্চয়তা। ভবিষ্যতে মাঝারি ও বৃহৎ পরিসরের বিদ্যুৎ স্টোরেজ নিয়েও ভাবতে হবে। সরকার ভুল অদূরদর্শী এবং অ-টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদন মডেলে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অপচয় করেছে। সবুজ বিদ্যুৎ তেল-গ্যাস আমদানির বিকল্প বিধায়, এখানে সরকারকে মনোযোগ দিতেই হবে। কিন্তু দুর্নীতিপ্রবণ সবুজ বিদ্যুৎ মডেলও হয়ে উঠবে গলার কাঁটা। সবুজ বিদ্যুৎ মিক্সে সৌর-বায়ু বর্জ্য হাইড্রোজেন জলবিদ্যুৎ ইত্যাদি কতটুকু থাকবে, তার আগাম রোডম্যাপ দরকার। ভবিষ্যৎ জ্বালানি নিরাপত্তার সমাধানে একদিকে মেধাবী ও দূরদর্শী, অন্যদিকে স্বচ্ছ সাশ্রয়ী এবং পরিবেশগত দায়বদ্ধ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দরকার।

রেজাউল করিম খোকন : সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ও কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়