৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে জাতীয় পার্টি : গাইবান্ধায় জি এম কাদের

আগের সংবাদ

শারদীয় দুর্গোৎসব : শুভ চেতনা সঞ্চারিত হোক সবার মনে

পরের সংবাদ

সামরিক শাসনকাল : স্বরাষ্ট্র সচিবের ১৯৮৫

প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

১৯৮৫ সালের বছরের প্রথম দিনই নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর পরপরই প্রেসিডেন্ট এরশাদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বললেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কোনো দলকে মাইক ব্যবহারের অনুমতি দেয়া যাবে না। কেবল ধর্মীয় কাজে মাইক ব্যবহার করতে দেয়া হবে। রাস্তাঘাটে ধর্মীয় সভা করা যাবে না। কেবল বায়তুল মোকাররমেই মাইক ব্যবহার করে এ ধরনের সভা করার অনুমতি পাওয়া যাবে।
ঢাকা শহরে সভা ও মাইক ব্যবহারের অনুমতি প্রদান কিংবা প্রত্যাখ্যান মেট্রোপলিটন পুলিশ আইনের আওতায় হয়ে থাকে। প্রেসিডেন্টের আদেশ স্বরাষ্ট্র সচিব পুলিশ কমিশনারকে জানিয়ে দিলেন। প্রেসিডেন্ট তার বিজয় দিবস ভাষণে প্রদত্ত প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী জেলা ও আঞ্চলিক সামরিক আইন প্রশাসকের পদ এবং সামরিক আইন আদালতের বিলুপ্তি ঘোষণা করেছেন। স্বরাষ্ট্র সচিব জানেন, মেজর ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল পর্যায়ের কর্মকর্তারা এসব দায়িত্বে থেকে ক্ষমতার ব্যাপক অপব্যবহার করেছেন এবং তাতে রাষ্ট্র ও সেনাবাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। রাষ্ট্রপতির প্রতিশ্রæতি পূরণ জনগণকে সন্তুষ্ট করেছে। স্বরাষ্ট্র সচিব লিখেছেন, ‘হাসিনা ওয়াজেদ আজ (১ জানুয়ারি ১৯৮৫) কক্সবাজার গেছেন। অতএব তিনি ফিরে না আসা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও ১৫ দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না, আন্দোলন চালিয়ে যাবে তা বোঝা যাচ্ছে না।’
তখন স্বরাষ্ট্র সচিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞানের এমএসসিতে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট এবং সাবেক প্রভাষক ও ১৯৫৮ ব্যাচের সিএসপি (সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান) কাজী আজাহার আলী (১৯৩৪-২০০৯)। তিনি দিনের ঘটনাগুলো লিখে রেখেছেন, তার কিছুটা দিনলিপি, কিছুটা রিপোর্টিং ধাঁচের। ১৯৮৫-এর যেসব ঘটনাপ্রবাহে তিনি জড়িত, তা উঠে এসেছে তার ‘ঝড়ো হাওয়ার মাঝে’ গ্রন্থে। এই লেখাটি মূলত এই গ্রন্থনির্ভর।
বছরের দ্বিতীয় দিন প্রেসিডেন্ট ফোন করে স্বরাষ্ট্র সচিবকে বললেন, নির্বাচনে তাকে অন্তত ২০০ আসন পেতেই হবে (সামরিক কি কথিত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সব শাসকের এটাই চাওয়া) এ নিয়ে তাকে চিন্তাভাবনা (নাকি পরিকল্পনা?) করতে হুকুম দিলেন। প্রেসিডেন্ট বললেন, রাজনৈতিক দলগুলো যতক্ষণ না নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রতিশ্রæতি দিচ্ছে, ততক্ষণ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে না। স্বরাষ্ট্র সচিব তাকে স্মরণ করিয়ে দিলেন বিজয় দিবসের ভাষণে যেহেতু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন, কথাটা রাখাই উত্তম হবে তাতে প্রেসিডেন্টের ওপর মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস বাড়বে। তিনি প্রেসিডেন্টকে আরো বললেন, একটি সাধারণ দাবি হচ্ছে সামরিক আইনে সাজাপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। প্রেসিডেন্ট তা গ্রহণযোগ্য মনে করলেন না; বললেন, তাতে সেনাবাহিনীতে অসন্তোষ ও বিদ্রোহ দেখা দিতে পারে বলে তিনি মনে করেন। প্রেসিডেন্টের মনে করাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, সচিবের পক্ষে তাতে পরিবর্তন আনা সহজ নয়।
৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি ফোনে তাকে জানালেন, নির্বাচনই হবে এবং তার দলকে জিতিয়ে এনে দেশের কাজ করার জন্য তাকে সাহায্য করতে হবে। তার মাথায় উন্নয়নের অনেক আইডিয়া। কাজটা ছোট হলেও সেদিনই তিনি সচিবালয়ে লাগোয়া পশ্চিমে একদা ছাপড়া মার্কেট হিসেবে দখল হয়ে থাকা জায়গাটিতে রাস্তা উদ্বোধন করেছেন। তার আগে এই ‘আইডিয়া’ অন্য কোনো সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের মাথায় আসেনি। সুফলা আইডিয়ার কথা গর্ব করেই তিনি বললেন।
পুলিশ সপ্তাহের শুরু ১২ জানুয়ারি ১৯৮৫। সে উপলক্ষে স্মরণিকা বের করেছেন ইন্সপেক্টর জেনারেল ই এ চৌধুরী, কিন্তু স্বরাষ্ট্র সচিবের বাণী না নেয়ায় স্পষ্টতই তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন (ক্ষোভের কথা যদিও লিখেননি, তা অনুমেয়)। প্রেসিডেন্ট পুলিশ অফিসারদের নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষতা আশা করে এটা বললেন ১৯৭৩-এর ব্যাচ তো আবার বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি সহানুভূতিশীল। রাজনীতিবিদদের যে মিথ্যাচার জনগণ দেখতে অভ্যস্ত তিনিও তার ব্যতিক্রম নন। বলেছেন, বাংলাদেশের মতো সমস্যাসঙ্কুল দেশে তিনি এর মধ্যে ৩ বছর শাসন করেছেন; জনগণ যদি তাকে না চায় এটাকে তিনি মনে করবেন খোদার ইচ্ছা এবং নির্বাচনের রায় তিনি মেনে নেবেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আওয়ামী লীগ প্রধানের সঙ্গে আলাপ করেছেন তার দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, কিন্তু শরিক দলগুলোর চাপে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারছেন না বলে তাকে জানিয়েছেন। বিএনপিপ্রধান স্পষ্ট কিছু বলেননি।
১৫ জানুয়ারি ১৯৮৫ প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল ইসলাম সাধারণ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন- ৬ এপ্রিল সারাদেশে নির্বাচন। ২৪ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। ১৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় নতুন মন্ত্রিপরিষদে ৭ জন যোগ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক (বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ ও নৌবাহিনীপ্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল সুলতান আহমেদ), ৫ জন মেজর জেনারেল- আবদুল মান্নান সিদ্দিকী, শামসুল হক, মহব্বতজান চৌধুরী, মাহমুদুল হাসান এবং মোহাম্মদ আবদুল মুনএম। শুরুতে কেবল সামরিক কর্মকর্তাদের মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করানো নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রদান প্রতিশ্রæতির একটি কৌশল। প্রেসিডেন্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিজের হাতে রাখতে চেয়েছেন, কিন্তু স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন তাতে প্রেসিডেন্টের নিত্যদিনের ব্যস্ততা আরো বেড়ে যাবে, প্রেসিডেন্ট তখন পুলিশ সার্ভিসের একজন সাবেক কর্মকর্তাকে মন্ত্রী করতে চাইলে স্বরাষ্ট্র সচিব বললেন জেনারেল আবদুল মান্নান সিদ্দিকী এতদিনে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তাকে সরানো ঠিক হবে না। তিনি স্বরাষ্ট্রেই থাকলেন।
পনেরো দলীয় জোট নির্বাচনে অংশগ্রহণের ৭ শর্ত দিয়েছে- সামরিক শাসন প্রত্যাহার, নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন, রাষ্ট্রপ্রধানের অরাজনৈতিক ও নিরপেক্ষ আচরণ, নিরপেক্ষ প্রশাসন, আস্থাভাজন নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনের আগে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনোনয়ন প্রদান বন্ধ রাখা, রাজবন্দি মুক্তি ও শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির বাস্তবায়ন।
সামরিক শাসনই যেখানে ক্ষমতা ধরে রাখার হাতিয়ার প্রেসিডেন্ট তা কেন প্রত্যাহার করবেন আবার তিনি নিজেই যেখানে ৩০০-এর মধ্যে ২০০ আসন চাচ্ছেন তার অরাজনৈতিক আচরণের গ্যারান্টি কে দেবে? তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে সরানো সম্ভব। একাত্তরে তার ভূমিকার জন্য বিচারপতি নুরুল ইসলাম চাকরিচ্যুত ও সাজাপ্রাপ্ত হন। স্বরাষ্ট্র সচিবের কথার প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট বললেন, ‘ওদের কথায় আমি অফিসারদের সরাব বা বসাব, তা হতে পারে না।’
১৯ জানুয়ারি ৪ জন বেসামরিক ব্যক্তি মন্ত্রীর শপথ নেন- ড. আবদুল মজিদ খান, ড. টি আই এম ফজলে রাব্বি, ব্যারিস্টার এ আর ইউসুফ এবং ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। বাদ পড়লেন অরাজনৈতিক মন্ত্রী শফিউল আজম।
স্বরাষ্ট্র সচিব লিখছেন- দুই সপ্তাহ আগে এরশাদ সাহেবকে বলতে শুনেছি যে শফিউল আজম তার সরকারকে হেয় করেছেন। তাকে নিয়োগপত্র দেয়ার পর ২০০ ডলারের জন্য আমেরিকায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত পদে যেতে অস্বীকার করেছেন। এছাড়া গত ডিসেম্বরে তার আপসহীন মনোভাবের জন্য তেল কোম্পানিগুলো হরতাল করেছে। তখন নাকি তিনি শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। তিনি বলেছেন যে তিনি রাজনীতি করেন না, অতএব তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না।’
শফিউল আজম পাকিস্তানের প্রথম প্রশাসনিক ব্যাচের, ১৯৪৯ সালের সিএসপি। যোগ্য-দক্ষ হিসেবে পরিচিতি থাকলেও ১৯৭৩-এ পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তনের পর ‘ইসলামী ও পাকিস্তানপন্থি’ পরিচয়ের কারণে ‘মুজিব সরকার’ তাকে চাকরি দেয়নি। স্বরাষ্ট্র সচিব লিখেছেন, ‘১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে সরকার পরিবর্তন হলে আমি রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদকে শফিউল আজমকে আবার চাকরিতে বহাল করার জন্য রাজি করিয়েছিলাম। ১৮ আগস্ট তাকে নিয়ে আমি মোশতাক সাহেবের সঙ্গে বঙ্গভবনে সাক্ষাৎ করেছিলাম। ওই দিন তাকে ক্যাবিনেট সচিব পদে নিয়োগ করা হয়। কয়েক মাস পর তাকে পরিকল্পনা কমিশনে উপ-চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করা হয়। এ সময়ে পরিকল্পনামন্ত্রী ডক্টর হুদার সঙ্গে তার সদ্ভাব না থাকায় বেশ অসুবিধার মধ্যে সময় কাটে।
শফিউল আজম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও প্রেসিডেন্ট এরশাদের সময় একাধিক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও মন্ত্রীর মর্যাদায় উপদেষ্টা ছিলেন। কাজী আজহার আলী মনে করেন ক্ষমতাপ্রিয় শফিউল আজম আঞ্চলিক প্রভাব থেকে মুক্ত হননি, চট্টগ্রামের কোনো বিষয় হলে আইনের প্রতিবন্ধকতা মানতে রাজি হতেন না।’
জানুয়ারির শেষ দিন বিএনপিপ্রধান খালেদা জিয়া বলেন তার দলের সাজাপ্রাপ্ত ১০ জন সাবেক মন্ত্রীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দিলে তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অক্ষমতা প্রকাশ করেছেন- কারণ তা সামরিক বাহিনী মেনে নেবে না। তাদের ওপর ৫ বছরের নির্বাচনী নিষেধাজ্ঞা বলবৎ হবে।
৩ ফেব্রুয়ারি ছিল বহুপক্ষীয় ধর্মঘট। প্রকৌশলী কৃষিবিদ ও চিকিৎসক (প্রকৃচি) সমাজের ধর্মঘটের কারণ তাদের নিয়ন্ত্রণ রহিত করতে সচিবালয়ের বিলুপ্তি, সুপিরিয়র সার্ভিস পুলের বিলুপ্তি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার খবরদারি থেকে মুক্তি। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ধর্মঘটের কারণ যাই বলা হোক ব্যাপারটা রাজনৈতিক আর আইনজীবীদের দাবি আদালত বিকেন্দ্রীকরণ বাতিল করে ১৯৮৩-এর পূর্বাবস্থায় ফিরে যাওয়া।
হাফেজ্জী হুজুরের ঘন ঘন জিহাদের ডাকে প্রেসিডেন্ট এরশাদ বিরক্ত, জনসভায় তিনি প্রশ্ন তোলেন জিহাদ কার বিরুদ্ধে? জিহাদ তো হয় বিধর্মীদের বিরুদ্ধে তিনি ইসলামের অনেক খেদমত করেছেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছেন, বায়তুল মোকাররমের অনেক উন্নতি সাধন করেছেন- তার বিরুদ্ধে হুজুর কেমন করে জিহাদের কথা বলেন?
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য থেকে ডাক্তার কাশেম এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ে সচিব এমএফএ সিদ্দিকীকে রাজনীতি সম্পৃক্ত থাকার কারণে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫ শেখ হাসিনা বলেছেন, এরশাদের নীলনকশার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করলে এরশাদ তার বেআইনি সরকারের আইনি স্বীকৃতি পেয়ে যাবেন, অন্যদিকে খালেদা জিয়া বলেছেন, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলে নির্বাচনে যাবে না।
স্বরাষ্ট্র সচিব ৯ ফেব্রুয়ারি লিখেছেন- কয়েক দিন ধরে পুরান ঢাকার মালিটোলা, আরমানীটোলা, নলগোলা- এসব এলাকায় জগন্নাথ কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে স্থানীয় সাধারণ জনগণের সহিংস বিরোধ হচ্ছে। প্রায় এক বছর ধরে ছাত্র নামধারী গুণ্ডাপাণ্ডারা অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। পতিতালয় এলাকাতে ছাত্রনেতা তিব্বত ছুরির আঘাতে নিহত হলে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। বহু ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়, দোকানপাট লুটপাট হয়। অতিষ্ঠ জনগণ ছাত্রদের হোস্টেলে আক্রমণ চালায়। একজন ছাত্রকে দোতলার ছাদ থেকে নিক্ষেপ করে। হোস্টেলে আগুন লাগায়। অত্যাচারী লুটেরা ছাত্রদের বিরুদ্ধে দল-মত নির্বিশেষে জনতা একাত্ম হয়ে যায়। ছাত্রদের অনাচার শহরে ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও তিতুমীর কলেজের ছাত্রদের অত্যাচারে এলাকাবাসী সর্বদা উত্ত্যক্ত হচ্ছে। তারা প্রতিরোধের প্রস্তুতিও নিয়েছে, বড় ধরনের দাঙ্গা বেঁধে যেতে পারে।
১২ ফেব্রুয়ারি কাউন্সিল অধিবেশনের পর বিএনপি প্রহসনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র সচিব লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগ এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় মতপ্রকাশ করেছে, বিএনপি তাদের একমাত্র উল্লেখযোগ্য বিরোধী দল। অতএব বিএনপির ভাঙনের পর তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। তাহলে অধিক সংখ্যক আসন তারা পাবে। এ জন্য হাসিনা চান, খালেদা নির্বাচনে যোগদান করে হেরে গেলে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ শেষ হয়ে যাবে।
১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫ কাজী আজহার আলী যা লিখেছেন তার সারসংক্ষেপ হচ্ছে, গত রাতে ১২টার পর প্রেসিডেন্ট এরশাদের লাল টেলিফোনের রিং শুনে ঘুম ভাঙে। প্রেসিডেন্ট জানালেন বাংলা ছাত্র সমাজের নেতা হাফিজ তাকে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন ছাত্র মারা গেছে, আহত ৩-৪ জন।
তিনি খবর জানলেন নিহত ছাত্র এমএ শেষ বর্ষ সমাজবিজ্ঞানের রাওফুন বসুনিয়া, তিনি বাকশাল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। পরদিন পরিস্থিতি উত্তপ্ত। নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি থেকে তিনি জেনেছেন সম্ভবত নতুন বাংলা ছাত্র সমাজের কোনো কর্মীর গুলিতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ভিসির সঙ্গে আলোচনায় শিক্ষা সচিব জেনেছেন গুলি করেছে ছাত্র সমাজের কাইয়ুম আর ১৭ ফেব্রুয়ারি স্বয়ং প্রেসিডেন্ট স্বরাষ্ট্র সচিবকে জানালেন ছাত্রদলের নেতা নীরু গুলি করেছে, তার কাছে ফোনের কথাবার্তার টেপ আছে। অবিলম্বে নীরু, বাবলু, মনির ও অন্য ছাত্রদল নেতাদের আটকের নির্দেশ তিনি দিলেন।
১৭ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের দাবি মেনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি নুরুল ইসলামকে সরিয়ে দেয়া হলো। তবে তাকে আইনমন্ত্রী করা হলো, বিচারপতি মাসুদকে করা হলো প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তারপরও নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয় রয়ে গেল- ‘আমাদের এখন একমাত্র আশ্রয় হাসিনা ও তার দল নির্বাচনে অংশ নিলে সংসদ নির্বাচন হবে, তা না হলে নির্বাচন করা যাবে না। তারপরও নির্বাচন করলে দেশে ও বিদেশে এ নির্বাচন প্রহসন বলে গণ্য হবে।’
নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ভেতরের কোন্দল থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি আসাদ গেটে মঈদুল ইসলামের বাড়িতে বিকট শব্দের গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটে। নির্বাচনপন্থিরা অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনবিরোধীরা এই অপকর্মটি করেছেন। বিস্ফোরণের সামান্য আগে এ বাড়ি থেকে চীনের রাষ্ট্রদূত বেরিয়ে গেছেন। (আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়