পুলিশ হত্যা মামলা : রিজভী-সোহেলসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু

আগের সংবাদ

নির্বাচন পর্যন্ত সংস্কারে ছাড় : আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি নিশ্চিত, ঋণ চুক্তির ছয়টি শর্তের মধ্যে চারটি পূরণ হয়েছে

পরের সংবাদ

মাছের মায়ের পুত্র শোক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৯, ২০২৩ , ১২:১৭ পূর্বাহ্ণ

ছোটবেলায় পড়া মাছের মায়ের পুত্র শোক নামক প্রবাদ প্রবচনটির অর্থ হলো মিথ্যা শোক। এর ভাবসম্প্রসারণও আসত পরীক্ষায়। পরীক্ষা পাসের জন্য অনেক কষ্টে ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে পরীক্ষায় লিখে পাসও করেছিল কিন্তু তার মর্মার্থ তখন বুঝে আসেনি। সময়ের হিসাবে আজ অনেককাল অতিবাহিত করে ফেলেছি। স্কুলজীবন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিও প্রায় শেষের দিকে। এখনকার সিলেবাসে সেই প্রবাদ-প্রবচনগুলো আর নেই। নেই জীবনধর্মী গল্প উপন্যাস বা ভাবসম্প্রসারণ। এর পরিবর্তে এখন পড়ি প্লাজমা, সলিড স্টেট ম্যাটেরিয়াল, ফটোনিক্সের মতো বিষয়গুলো। কিন্তু আজ শিক্ষাজীবনের শেষের দিকে এই প্লাজমা পড়তে পড়তেই কেন জানি ছোটবেলার সেই প্রবাদ-প্রবচনগুলোর মর্মার্থ বুঝতে পারছি।
ছোটবেলার সেই সময়গুলোতে মিথ্যার আশ্রয় বা বাস্তব অভিনয় পরিবেশে খুব কম প্রকাশ পেত। তখন মিথ্যা শোক বুঝতে পারতাম না, আজ বুঝি যে আমাদের চারপাশে ওত পেতে আছে মিথ্যা শোকে কাতর হাজারো ব্যক্তি। একটু লক্ষ করে দেখলাম সেই হাজারো ব্যক্তির মধ্যে তো আমিও আছি। আজকাল বন্ধুত্ব, আত্মীয়তা, প্রতিবেশীর প্রতি সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কগুলোর মধ্যে কেমন জানি যান্ত্রিকতা ভর করেছে। সম্পর্কগুলোতে এখন আর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সম্পর্কগুলোতে দেনা-পাওনার হিসাব যেন প্রতিনিয়তই টুকতে হয়। দেনা-পাওনা ছাড়া সম্পর্কগুলো কেন জানি আর সামনে এগোতে পারে না। আর যতটুকু আগায় যেখানেও যেন ভর করে দাম্ভিকতা, লোভ আর মিথ্যা শোক। অফলাইনের মধুর সম্পর্কগুলো কেমন জানি প্রতিনিয়ত অনলাইনে রূপান্তরিত হচ্ছে। বন্ধুত্বের সাধারণ প্রয়োজনে সরাসরি দেখা করা তো দূরে যাক, মোবাইলে কথা বলাও এখন বিলাসিতার পর্যায়ে চলে গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধুত্বের খোঁজ নেয়াটাই এখন স্বাভাবিক ঘটনা। হোক সেটা ফেসবুক, টুইটার বা অন্য কোনো অ্যাপ। প্রিয়জনের ভালো কিছু মুহূর্ত যখন মোবাইলের স্কিনে ভেসে উঠে তখন এর নিচে ফরমালি একটা মন্তব্যই যেন সব লেটা চুকে যায়। আলাদা করে তার মজার মুহূর্তগুলোতে ভাগ বসানো যেন অন্যায়ের পর্যায়ে চলে গেছে।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন শ্রেণির প্রিয়জনের জন্য থাকে বিভিন্ন গ্রুপ বা শ্রেণি। স্কুলের বন্ধুদের জন্য একটা, কলেজের বন্ধুদের জন্য একটা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের জন্য একটা, এলাকার প্রিয়জনদের কাছে রাখার জন্য আরেকটা; এমনি কত গ্রুপ যে তৈরি হয় তার ইয়ত্তা নেই। এই গ্রুপগুলোতে মাঝেমধ্যেই ভেসে উঠে কোনো এক বন্ধু বা প্রিয়জনের কাছের কারো মৃত্যু বা দুঃখের সংবাদ। তখন সেই গ্রুপে উপস্থিত সবাই সেই পোস্টে স্যাড রিয়েক্টের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে। গ্রুপের সবাই যেন সেই আজ শোকে স্তব্ধ। কিন্তু সহজেই অনুমেয় স্তব্ধতা শুধুই মিথ্যা শোক। কেননা অন্য গ্রুপের মজার সংবাদগুলোতে সেই ব্যক্তিটিই অন্য এক উদ্যমে হাজির হয়েছে। সেখানে চলছে হাজারো জোকসের কথোপকথন।
আর প্রক্রিয়াটি যেন আজ সারাদেশের প্রায় সব মানুষের কাছেই ব্যাপ্তি লাভ করেছে। আজ সবাই যেন এই নিয়মেই আবদ্ধ। স্যাড পোস্টে স্যাড রিয়েক্ট দিয়ে সমবেদনা প্রকাশ অবশ্যই পায়। কিন্তু সমবেদনাটুকু কি প্রকৃত সমবেদনা নাকি সামাজিকতা রক্ষার ছলনা? এই ছলনা আজ সমাজের প্রতি ধাপে ধাপে ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের প্রাণের স্পন্দনে মায়ের বাঁধনে গড়া স্বার্থহীন সম্পর্কগুলোর যথেষ্ট ব্যবহার আজ সময়ের দাবি। যখনই এই সম্পর্কগুলো আবারো নতুন করে দানা বাঁধবে তখন দেখা যাবে আমাদের যাত্রাপথগুলো আরো সুগম হচ্ছে। মিথ্যা শোক ভেঙে যখন প্রকৃত প্রকাশ পাবে তখন দেখা যাবে আমাদের প্রিয়জনের থেকে প্রকৃত ভালোবাসা ফিরে পাচ্ছি। যার মধ্য দিয়ে আমাদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করা বিষণ্নতা, লোভ, অহংকারগুলো সহজেই বিনষ্ট হচ্ছে। যার মাধ্যমে আত্মহত্যা, মানসিক অবসাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ দেয়াল উঠে যাবে। তৈরি হবে প্রাণ এবং প্রাচুর্যের সমন্বয়ে তৈরি আধুনিক সমাজ। তবে হ্যাঁ, এখন অফলাইনের মধুর সেই সম্পর্কগুলো চিরতরে বিনষ্ট হয়নি। চলতি পথে মাঝেমধ্যেই উঠে আসে সেই সম্পর্কগুলোর সৌন্দর্য। সেই সৌন্দর্যে অবগাহন করাও অনেক মধুর এক বিষয়। এখনো প্রকাশ পায় স্বার্থহীন বন্ধুত্ব। লোভ, অহংবোধ ছাড়া আত্মীয়তার সম্পর্ক। যে সম্পর্কগুলোর মুগ্ধতায় মুগ্ধ হয় স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা। নতুন সমাজ বিনির্মাণে সেই সম্পর্কগুলোই হতে পারে আমাদের অনুপ্রেরণা এবং পথপ্রদর্শক। মিথ্যা শোকের দিন শেষে পৃথিবী হোক নির্মল ভালোবাসার জগৎ। এই হোক আমাদের আজকের কামনা।

মো. আফসারুল আলম মামুন : শিক্ষার্থী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়