পুলিশ হত্যা মামলা : রিজভী-সোহেলসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু

আগের সংবাদ

নির্বাচন পর্যন্ত সংস্কারে ছাড় : আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি নিশ্চিত, ঋণ চুক্তির ছয়টি শর্তের মধ্যে চারটি পূরণ হয়েছে

পরের সংবাদ

গাজার রক্তাক্ত শিশু ছিন্নভিন্ন দেহের চিত্র আমাদের ব্যথিত করে

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৯, ২০২৩ , ১২:১৭ পূর্বাহ্ণ

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মানুষকে হত্যা করা যায়? বর্বর যুগেও যুদ্ধের নীতি ছিল। হত্যার ধর্ম ছিল। বেসামরিক নাগরিক তথা শিশু, নারী, বৃদ্ধ এবং অসুস্থরা কখনোই প্রতিপক্ষ নয়। অথচ বোমা মেরে একটি হাসপাতালকে গুঁড়িয়ে দেয়া হলো। পাঁচ শতাধিক চিকিৎসাধীনকে হত্যা করা হলো। কুকুর-বিড়ালের প্রতি যে মায়া তাও কি গাজাবাসীর জন্য বিশ্ববাসীর নেই? মানবতার এমন নগ্ন অবক্ষয় ধরাবাসী আর কবে দেখেছিল? মানুষ এমন নৃশংসভাবে মানুষকে হত্যা করতে পারে? বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে। মুসলিম বিশ্বের চুপ থাকার কৈফিয়ত একদিন না একদিন দিতেই হবে। পশ্চিমাদের মদদে যে পাশবিকতা ইসরায়েলিরা চালাচ্ছে তা মানব ইতিহাসের জঘন্যতম অধ্যায়ের সূচনা করেছে। যাদের সঙ্গে যুদ্ধ তাদের হত্যা করা হোক, কিন্তু হাসপাতালের বিছানায় কাতরানো বিপন্ন মানুষগুলোকে কেন হত্যা করা হলো? বিশ্বের তাবত মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নীরবতায় প্রমাণ করছে সেগুলোর মধ্যে মানুষের উপস্থিতি নেই। স্বার্থের জন্য, তোষামোদির জন্য, নিজেদের ভোগের পুঁজি পুঞ্জীভূতের জন্যই এরা কাজ করছে। নয়তো ইসরায়েলের যে আগ্রাসন তা থেকে তাদের বিরত থাকতে বাধ্য করার ক্ষমতা জাতিসংঘের ছিল।
গাজা-ফিলিস্তিনের ইতিহাস রক্তামাখা ইতিহাস। পবিত্র ভূমিতে ইহুদিদের চাপিয়ে দেয়ার পরে ফিলিস্তিনিদের ওপর তাদের আগ্রাসন মানব-ইতিহাসের নৃশংসতম অধ্যায় সূচিত করেছে। মানুষ হত্যার মহোৎসব পশ্চিমারাও সমানভাবে রক্তে হাত রাঙিয়েছে। জেরুজালেমের বায়তুল আকসাকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার মুসলিমকে হত্যা করেছে। মুসলিমদের হত্যার সময় পশ্চিমারা রহস্যজনকভাবে নীরব থাকে, তাদের মদদপুষ্ট মিডিয়া সত্য সেন্সর করে, মুসলিমদের একাংশ পশ্চিমাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য উদাস থাকে। অথচ ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষে মানবিক কারণে দাঁড়ানো দায়িত্ব ছিল। ইমানের দাবিতে তাদের পক্ষে সোচ্চার থাকার কথা ছিল। ভ্রাতৃত্বের দাবিতে ভাইয়ের রক্তের প্রতিশোধ নেয়া উচিত ছিল। নিশ্চয়ই ইতিহাস একদিন এমন গাদ্দারির প্রতিশোধ নেবে! আজ যারা চুপ করে আছে তাতের জন্য সত্যের পথও রুদ্ধ হবে।
ইসরায়েলের আক্রমণে গাজার রক্তাক্ত শিশু, ছিন্নভিন্ন দেহের চিত্র আমাদের ব্যথিত করে। গাজায় যে গণহত্যা চালানো হচ্ছে তাতে বিশ্বের বিবেকবান প্রত্যেকটা মানুষকে ইতিহাস দায়ী করবে। যারা স্বার্থের কারণে ইসরায়েলকে সমর্থন দিচ্ছে তাদের কৈফিয়তের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে। ফিলিস্তিনে যদি হত্যার হাত থেকে একজন মানুষও রক্ষা না পায় তবে তাদের শরীর পোড়া ছাইগুলো একদিন না একদিন জেগে উঠবে। দিন দিন নির্যাতন-নিপীড়নের মুখোমুখি হওয়ার চেয়ে একবারে মোকাবিলা করে হয় মরো না হয় বাঁচো- এটা উত্তম।
আরব বিশ্বের মৌনতা তাদের পৌরুষকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও ইসরায়েলকে হত্যাকাণ্ড থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করার হাতিয়ার তাদের কাছে আছে। আমেরিকার ইসরায়েল প্রীতি বন্ধ না হলে অচিরেই তাদের মোড়লিপনায় ধস নামবে- তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট হচ্ছে। ইসরায়েলের চরম বাড়াবাড়ি মনোভাব যে তাদের অধঃপাতের পথ উন্মুুক্ত করছে তা যত দ্রুত বুঝতে পারবে সেটা তাদের জন্য মঙ্গলের।
ইসরায়েল দিন দিন আন্তর্জাতিক যুদ্ধনীতি ভঙ্গ করছে। হাসপাতালে হামলা করে মানুষকে হত্যা করা, স্কুলে বোমা ফেলা, সাধারণ মানুষকে হত্যা করা, শিশুদের রক্তাক্ত করা- এসব পাশবিকতার নিকৃষ্টতর উদাহরণ। অবিলম্বে এটা বন্ধ না হলে খেসারত দিতে হবে। মানুষ হত্যা করে, স্থাপনা পুড়িয়ে দিয়ে যুদ্ধে জয়লাভ করা যায় না। বরং ইসরায়েল যা করছে তাতে সাধারণ মানুষের ঘৃণা কুড়াচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের জন্য ভালোবাসা মানুষের মনের মণিকোঠায় স্থান পেয়েছে।

রাজু আহমেদ : কলামিস্ট।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়