র‌্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু : কমিটির প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট নন হাইকোর্ট

আগের সংবাদ

রাজপথে ফের শক্তির মহড়া : নাশকতা মোকাবিলায় সতর্ক পাহারায় আ.লীগ, মহাসমাবেশের ঘোষণা দেবে বিএনপি

পরের সংবাদ

এ নীরব ঘাতক থেকে মুক্তি চাই

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শব্দদূষণ শুধু ঢাকায় নয়, সারাদেশে এ ঘাতকের ছড়াছড়ি। বেসরকারি এক জরিপের মতে, ঢাকা শহরের শব্দদূষণের অন্যতম উৎস যানবাহন ও মোটরবাইকের হর্ন। ২০১৭ সালে বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক দেশের ৮টি বিভাগীয় শহরের শব্দদূষণের ওপর করা এক জরিপ বলছে, ৮টি শহরেই ৮০ শতাংশ শব্দদূষণ করে যানবাহনের হর্ন। ২০ শতাংশ বাকিগুলো। শব্দদূষণ রোধে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাও কাজ করছে। কোনোটাই ফলপ্রসূ হচ্ছে না। গত রবিবার রাজধানীর বাসাবো বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে শব্দদূষণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আয়োজিত বিশেষ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত ও ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, আমরা আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশ রেখে যেতে চাই। আসুন আজ থেকে আমরা শপথ গ্রহণ করি, আমরা সবাই মিলে শব্দদূষণ রোধ করব। শব্দদূষণ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। আমরা বিভিন্ন সময় আইন প্রণয়ন করি, জরিমানার কথা বলি, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছাড়া আমাদের কোনো কর্মসূচি বা পরিকল্পনা সফল হবে না। আমরা মানুষকে সচেতন করতে চাই। অযথা হর্ন বাজানো বন্ধ করতে হবে। তার বক্তব্য প্রাসঙ্গিক এবং সময়োপযোগী। বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণের কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে নগরবাসী। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ঢাকার বাতাসের যে চিত্র পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে এটি এখন লাল ক্যাটাগরির। অর্থাৎ স্বাস্থ্যের জন্য তা ‘মারাত্মক ক্ষতিকর’। অন্যদিকে শব্দদূষণের কারণেও মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। একটি গবেষণাপত্রে জানা যায়, ঢাকায় ৫৬ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশ কানে কম শোনে। শব্দদূষণে প্রতি বছর প্রায় আড়াই থেকে ৩ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। থাইরয়েড রোগী বাড়ছে। যাদের অধিকাংশ ৪০ বছরের নারী। পরিবেশদূষণ, বায়ুদূষণ এবং শব্দদূষণের কারণে বন্ধ্যত্ব বাড়ছে। এটি উদ্বেগের বিষয়। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালায় স্পষ্ট বলা আছে কোনো এলাকায় দিনের কোন সময়ে, কী ধরনের শব্দদূষণ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু তা কোনোভাবেই মানা হয় না। ‘শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬’ হলো একমাত্র আইনি হাতিয়ার, যা অনেক পুরনো এবং এতে আইনের অনেক ফাঁকফোকরও আছে। তবুও এটাই একমাত্র লিগ্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট। বিদ্যমান এই আইনের ব্যাপারে সচেতন গড়ে ৫০ শতাংশ মানুষ। আর আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে ঢাকা (প্রয়োগ হার ৩.৬ শতাংশ)। ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি শব্দদূষণের জন্য দায়ী হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার বন্ধের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়ে দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই বছর ৫ নভেম্বর সারাদেশে যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধের নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে সারাদেশে নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি শব্দ হচ্ছে কিনা, তা নির্ধারণের জন্য একটি মনিটরিং টিম গঠনের নির্দেশ দেয়া হয় এবং শব্দদূষণকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। ইতোমধ্যে দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে তেমন উদ্যোগ নেই। আমরা মনে করি, আইনের কঠোর বাস্তবায়নের সময় এসেছে। পাশাপাশি নীতিনির্ধারকদেরও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশেষ করে শব্দদূষণের অপকারিতা ও ক্ষতি সম্পর্কে চালক, মালিক ও জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রচারপত্র, সামাজিক, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে সচেতনতামূলক তথ্য প্রচার করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়