র‌্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু : কমিটির প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট নন হাইকোর্ট

আগের সংবাদ

রাজপথে ফের শক্তির মহড়া : নাশকতা মোকাবিলায় সতর্ক পাহারায় আ.লীগ, মহাসমাবেশের ঘোষণা দেবে বিএনপি

পরের সংবাদ

অক্টোবর ট্র্যাজেডি এবং রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পথ চলতে চলতে কত অভিজ্ঞতাই সঞ্চিত হয় আমাদের জীবনে। সে অভিজ্ঞতা কখনো বেদনার, কখনো আনন্দের, কখনো দুখের, কখনো সুখের, কখনো বা তীব্র যন্ত্রণার। ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবরের জগন্নাথ হল ট্র্যাজেডি বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে তেমনি একটি বেদনার ও মর্মান্তিক দুর্ঘটনার ইতিহাস হয়ে আছে। স্বাধীন বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, যা ছিল কল্পনারও অতীত।
মানুষের বয়স বিচারে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনকে সবচেয়ে সম্ভাবনার এবং মধুর অধ্যায় বলা যেতে পারে। কত স্বপ্ন, কত কল্পনা, কত আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে সবাই এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে থাকে। উচ্চশিক্ষা নিয়ে জীবনকে সমৃদ্ধভাবে বিকশিত করে তুলবে এমনটা হওয়াইতো স্বাভাবিক ব্যাপার। মানুষের ক্ষুদ্র জীবনকে জ্ঞানই পারে অসামান্য করে তুলতে। কর্ম ও জ্ঞানের সমন্বয়ে মানুষ নিজের জীবনকে জগতের মাঝে সাফল্যমণ্ডিত করে তুলে ধরতে পারে। আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের শিক্ষার্থীদের দারিদ্র্যক্লিষ্ট, সংস্কারে নিমজ্জিত জীবনে আলোর মতো জ্ঞানই বেঁচে থাকার সঠিক পথ দেখাতে পারে। এছাড়া ভিন্ন পথই বা কী আছে আমাদের কাছে? কিন্তু হায়, আমাদের সেই পথেও বুঝি আশা পূরণ হওয়ার নয়! বহু কষ্টে, অনেক আশা নিয়ে বুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার পরেও নিষ্ঠুর নিয়তি যেন আমাদের পিছু ছাড়তে চায় না। এ দেশের সাধারণ মানুষের জীবনের মূল্য যে কত তুচ্ছ এবং অনিশ্চিত হতে পারে তার প্রকৃত উদাহরণ হয়ে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবরের ট্র্যাজেডি। সদ্য স্বাধীন দেশে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ড, কারবালার চেয়েও মর্মান্তিক ঘটনা, যা সমগ্র জাতিকে হতবাক করে দিয়েছিল। এর ঠিক ১০ বছর পরে ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবরের ঘটনাও শিক্ষাঙ্গনের ইতিহাসে ছিল নজিরবিহীন বেদনার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ট্র্যাজেডি সেদিন সংবাদমাধ্যমে সারা বিশ্বে ঝড়ের বেগে ছড়িয়ে পড়েছিল। তৃতীয় বিশ্বের শিক্ষার্থীদের জীবন যে কত অবহেলিত এবং উপেক্ষিত হতে পারে, সে বার্তাও দুঃসংবাদের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছিল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে রয়েছে বহু শতাব্দীর লড়াই, সংগ্রাম ও ত্যাগের ইতিহাস। সবশেষে রক্তক্ষয়ী গণযুদ্ধের মধ্য দিয়ে, বহু লাখ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। স্বাধীন বাংলাদেশের উত্থান এ উপমহাদেশের মধ্যে অন্য জাতিসমূহের তুলনায় এক অনন্য এবং নজিরবিহীন ঘটনা বলা চলে। কেননা, বাঙালির সাংস্কৃতিক জাগরণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের যে বিজয়গাথা সাধিত হয়েছিল, তার কোনো তুলনা নেই। আবার একইভাবে অর্জিত বিজয়ের মহিমা অতিদ্রুত যেভাবে মøান হতে শুরু করে, বিশ্বের ইতিহাসে তেমনটি ঘটতেও খুব কমই দেখা গেছে। ব্রিটিশকে খেদিয়ে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গণযুদ্ধে জয় লাভের পর স্বাধীন বাংলাদেশে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় যে বীভৎস নারকীয় হত্যাকাণ্ড ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে সংঘটিত হয়েছিল তাও ছিল মর্মান্তিক ঘটনা। সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাঙালির জাতিগত যে বিজয়, তা শুধু অপহরণ করেই ষড়যন্ত্রকারীরা ক্ষান্ত হয়নি, জনতার প্রাণভোমরাসম বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা এবং রাজনৈতিক জাতীয় নেতাদেরও হত্যা করে তারা। তারপর থেকে ধীরে ধীরে অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে যে অধঃপতন শুরু হয়েছিল, তা থেকে এ জাতি আজো বেরিয়ে আসতে পারেনি। সব মানুষের জন্য মানবিক সমাজ গড়ার আকাক্সক্ষা নিয়ে এ দেশের সাধারণ মানুষ যে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল, সেসব আকাক্সক্ষা বাংলাদেশে বাস্তবায়িত না হয়ে কতিপয় মানুষের অবারিত সুবিধা ভোগের দেশে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, অসাম্প্রদায়িকতা, অর্থনৈতিক মুক্তি এবং সুশিক্ষা অর্জনের মধ্য দিয়ে উন্নত জাতিসমূহের মতো বর্তমান বিশ্ব সভ্যতার দুয়ারে জাতিগতভাবে আমরা এখনো হাজির হতে পারিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একসময় জাতিগত মুক্তি চেতনার ক্রমাগত সম্প্রসারিত হয়ে স্বাধীনতার মন্ত্রে এ জনপদের মানুষকে উদ্দীপ্ত করে তুলেছিল। জাতিগত উন্নতির অভিযাত্রা স্তব্ধ করে দিতে তাই বহু অপকৌশলের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস করার অপচেষ্টা নানা সময়ে করেছে ক্ষমতালোভীরা। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের সংকটে পড়তে হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছিল একসময়ে। আবাসিক হলগুলোতে থাকার আসন সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় বড় বড় রুমগুলোতে মেঝেতে পাটি পেতে থাকতে হয়েছে অনেককেই। এই রুমগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুম হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রথম বর্ষে ভর্তির পর বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকে কারো না কারো সঙ্গে যৌথভাবে থাকতে হয়েছে। হলের কেন্টিনের খাবার খুব একটা ভালো মানের ছিল না। সুতরাং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের থাকার ও খাবারের সমস্যার মধ্য দিয়ে তাদের জ্ঞান লাভের চেষ্টা করতে হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আমি প্রথম পা ফেলেছিলাম ১৯৮৪ সালে, এসএসসি পাসের পর। মাধ্যমিক পাস করে আজিমপুরে আমার বড় বোনের বাসায় উঠেছিলাম তখন। সেখানে আমাদের অঞ্চলের আরো অনেকেই ছিলেন। আমার ভগ্নিপতি অনন্ত বাবু বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে খুবই ব্যস্ত মানুষ ছিলেন। তখন ঢাকা ঘুরে দেখার সঙ্গী হিসেবে আমি পেয়েছিলাম শ্রী কর্ণধার সরকার প্রভাতকে। তিনি তখন বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করছিলেন। তার সঙ্গে আমি ঢাকা এয়ারপোর্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, লালবাগের কেল্লাসহ বেশ কিছু জায়গা ঘুরে দেখেছিলাম। আমার মনে আছে, একদিন সন্ধ্যার দিকে জগন্নাথ হলের আলোচিত ঐতিহাসিক টিভি রুমটিতে ঢুকে আমরা টিভিও দেখেছিলাম। এই টিভি রুমটির সঙ্গে যে আরো অনেক ইতিহাস জড়িয়ে আছে, সে সময় আমার তা জানা ছিল না। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নে এ ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এটি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসেম্বলি ভবন ছিল। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত এটি পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদ ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। নতুন সংসদ ভবন তৈরি হওয়ার পর এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে হস্তান্তর করা হয়। এই অ্যাসেম্বলি হলের মধ্যে বসার গ্যালারি এবং আরো কী কী ব্যবস্থা ছিল, তখন তা খুব কৌতূহল নিয়ে দেখা হয়নি আমার। ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর রাতে ধারাবাহিক নাটক শুকতারা চলার সময় শিক্ষার্থী ও অনেক কৌতূহলী দর্শক এখানে টিভি দেখার জন্য সমবেত হয়েছিলেন। তখন আকাশে বৃষ্টি এবং ঝড় বইছিল। পুরনো এ ভবনটির ছাদে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় হঠাৎ করে দর্শকদের মাথায় ভেঙে পড়ে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। তখন তো সারা পৃথিবীতে দুঃসংবাদ হিসেবে এর পরিচিতি সামনে উঠে আসে। আমি সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার সময় ঢাকায় ছিলাম না। কর্ণধার সরকার জগন্নাথ হলের টিভি রুমের বিয়োগান্তক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিলেন। আমি দেশ-বিদেশের রেডিও, টিভি এবং সংবাদপত্রের মাধ্যমে আহত-নিহতদের খবর ও স্বজন হারানোর হাহাকার জানতে পেরেছিলাম। দেশের শিক্ষার প্রতি সরকারের অবহেলা, বৈষম্য এবং উপেক্ষার কারণে যারা প্রাণ হারিয়ে ছিলেন এবং যারা ভয়ানকভাবে আহত হয়েছিলেন তাদের পাশে সমগ্র দেশের সাধারণ মানুষ এসে দাঁড়িয়েছিলেন। তারা তাদের সব ধরনের সাহায্যের হাত তখন বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। মানবিকতার পরশে সে দুঃসময়কে সবাই মিলে মোকাবিলা করেছিলেন। হারানোর তীব্র বেদনার মাঝে মানবিকতার, যা ছিল এক উজ্জ্বল উদাহরণ। পরবর্তী সময়ে আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হই এবং ১৯৮৭ সালে হলে উঠি তখন ১৫ অক্টোবরের দুর্ঘটনায় যারা গুরুতর আহত হয়েছিলেন, তাদের অনেকের সঙ্গেই পরিচিত হয়েছিলাম। যে ৩৮ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন ঘটনাস্থলে এবং একজন পরে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছিলেন তাদের কারো কারো পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা হয়েছে আমার। আমাদের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের অসীম সরকার এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন। তিনি পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন। হলের চাকরিজীবী সত্যরঞ্জন শীলের ভাই সুধাংশুর কুমার শীল সেদিন একইভাবে নিহত হয়েছিলেন। তিনি পটুয়াখালী জেলার দশমিনা থেকে হলে বড় ভাইয়ের বাসায় এসেছিলেন। নিহত ৩৯ জনের মধ্যে ১৪ জন কর্মজীবী এবং অতিথি ছিলেন। প্রায় ২০০ জনের মতো এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন। হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী এতই আহত ছিলেন, তাদের এখনো সে দিনের দুর্ঘটনার যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। একজনকে আমরা চোখের সামনেই হারিয়ে যেতে দেখেছি। হলের আহত শিক্ষার্থীদের প্রসঙ্গ এলে প্রথমতো আমার স্মৃতিতে উজ্জ্বলভাবে যার ছবি ভেসে ওঠে তিনি রবীন্দ্রনাথ বাড়ৈ। তাকে আমরা রবিনদা নামেই ডাকতাম। কী দুর্বিষহ জীবন নিয়ে বেঁচে ছিলেন তিনি শেষের কয়েকটি বছর। তার কথা বলার আগে আরো কয়েকজন হলের আহত বড় ভাই এবং ছাত্রের কথা স্মরণ করতে চাই, যারা এখনো কর্মক্ষেত্রে সুনামের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। আমার বিভাগের দুজন বড় ভাই হলের দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন। ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ প্রকাশ চন্দ্র অধিকারী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেপুটি কন্ট্রোলার হিমাদ্রী শেখর চক্রবর্তী ছিলেন সংস্কৃত বিভাগের গুরুতর আহত সে সময়ের শিক্ষার্থী। তাদের দুজনই তিন থেকে চার মাস ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। জগন্নাথ হলের প্রশাসনিক ভবনে বর্তমানে প্রিন্সিপাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার সনজিৎ কুমার দত্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির উপ-গ্রন্থাগারিক দিলীপ চন্দ্র বিশ্বাস, তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার মোহন নারায়ণ কুণ্ডু, উপ-রেজিস্ট্রার বিপুল কুমার সাহা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মুকেশ চন্দ্র বিশ্বাস জগন্নাথ হলের ১৫ অক্টোবরের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন। তবে রবীন্দ্রনাথ বাড়ৈয়ের মতো এমন যন্ত্রণার জীবনযাপন করতে আমি কাউকে দেখিনি। তার সঙ্গে কথা বলার মধ্য দিয়ে আমি ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবরের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় যারা শিকার হয়েছিলেন এবং নিহত হয়েছিলেন, তাদের করুণ আর্তনাদ অনুধাবন করতে পেরেছিলাম। রবিনদা সঙ্গে যখনই কথা বলেছি, তখনই চোখ ছলছল করে অনেক সময় আমাদের দিকে কেবল তাকিয়ে থাকতেন। তিনি হাঁটতেন খুবই কষ্ট করে, এক পা বাড়ালে আরেক পা সামনে টেনে আনতেও কষ্ট হতো তার। সে সময়ে দুর্ঘটনার পর আহত রবিদাকে মেডিকেলে নেয়ার পর মৃত মনে করে ফেলে রাখা হয়েছিল অন্য মৃতদেহের সঙ্গে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তার নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস ফিরে এলে আইসিউতে নিয়ে ভর্তি করা হয় তাকে। বাংলাদেশের চিকিৎসা শেষে তাকে উন্নতর চিকিৎসার জন্য দিল্লিতেও পাঠানো হয়েছিল। তিনি প্রায় এক বছর চিকিৎসা শেষে জীবন ফিরে পেয়েছিলেন বটে, কিন্তু সে জীবন নিয়েও তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারতেন না। এমন গুরুতর আহত জীবন নিয়ে মাত্র ৯ বছর বেঁচে ছিলেন তিনি।
রবীন্দ্রনাথ বাড়ৈয়ের বাড়ি ছিল বরিশালে, বানারীপাড়া উপজেলার লবণসাড়া গ্রামে। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্সের ছাত্র ছিলেন তখন। যে আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে তরুণ মেধাবী ছাত্র হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে তা পূরণ হওয়ার পূর্বেই অসময়ে চিরকালের মতো হারিয়ে গেলেন তিনি। ১৯৯৪ সালের ২৪ মার্চ তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। রবিনদার মতো জগন্নাথ হলের দুর্ঘটনায় যারা দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছিলেন এবং শহীদ হয়েছিলেন, সবাইকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।

ড. চিন্ময় হাওলাদার : সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়