নব্বইয়ের ছাত্রনেতা সাইফুদ্দিন আহমেদ মনির মৃত্যু

আগের সংবাদ

সংলাপসহ পাঁচ দফা সুপারিশ : বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রশংসা মার্কিন পর্যবেক্ষক দলের

পরের সংবাদ

রাজনৈতিক সমঝোতার লক্ষণ নেই, নির্বাচনের প্রস্তুতি ইসির : ডিসি এসপিদের নিয়ে ইসির বৈঠক > ভোটের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কায় মাঠ প্রশাসন

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে না- এমন অবস্থান বিএনপির। অন্যদিকে সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন- এমন অবস্থানে অবিচল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক সমঝোতার উদ্যোগ বা লক্ষণ দৃশ্যমান নয়; তবে যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, কোন দল এলো, আর কোন দল এলো না সেটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। যেটা গুরুত্বপূর্ণ হবে তা হলো- ভোট যদি ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ হয়, যদি ভোটারদের উপস্থিতি ভালো থাকে, তারা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে, সে ব্যবস্থা আপনার করবেন। তাহলেই ‘গ্রহণযোগ্য নির্বাচন’ হয়েছে বলা যাবে; নির্বাচনের একটি বড় সফলতা আমরা অর্জন করতে পারব। গতকাল শনিবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বিভাগীয় কমিশনার, উপমহাপুলিশ পরিদর্শক, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্বাচনসংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা অনুষ্ঠানে এই নির্দেশনা দেন তিনি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের দায়িত্ব পালনে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দলীয় চিন্তাভাবনার ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, প্রশাসনে বা সরকারে পুলিশ ও নির্বাহী পরিষদের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম। সরকার বলতে আমরা পুলিশ ও ডিসিকেই বুঝি। কাজেই আপনারাই সরকারকে প্রতিনিধিত্ব করছেন, আপনাদের চিত্তে তা ধারণ করতে হবে। নির্বাচন খুব ঘনিয়ে এসেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নির্বাচন আয়োজন কঠিন একটি কর্মযজ্ঞ, চাইলাম হয়ে গেল, এ রকম নয়। যেহেতু নির্বাচনের দায়িত্ব আপনাদেরও, সেহেতু নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
সিইসি বলেন, গ্রহণযোগ্য হওয়ার অর্থ হচ্ছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। সুষ্ঠু নির্বাচন এবং নির্বিঘেœ সবাই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে- এটা নিশ্চিত করতে হবে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারেন সেটা নিশ্চিত করতে হবে আপনাদের, নির্বাচন কর্মীদের।

সিইসির প্রারম্ভিক বক্তব্যের পর বিভাগীয় কমিশনার, উপমহাপুলিশ পরিদর্শক, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে ইসি। সেখানে বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা থেকে আসা কর্মকর্তারা তাদের কথা তুলে ধরেন।
ইসির এই রুদ্ধদ্বার বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, এ অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার, উপমহাপুলিশ পরিদর্শক, ডিসি ও এসপিরা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে বলেন, কোনো একটি বড় দল অংশ না নিলে নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতা হতে পারে। তারা ভোট বয়কট করার নামে নানা ধরনের সহিংসতা, গণ্ডগোল করে, ভোটারদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করতে পারে এবং ভোট আয়োজনে বাধাও দিতে পারে। এ সময় তারা ২০১৪ সালে বিএনপির ভোট বয়কটের নামে অগ্নিসন্ত্রাস, ভাঙচুর, নাশকতা সৃষ্টির কথা তুলে ধরেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ইসির পক্ষ থেকে কোনো বিশেষ নির্দেশনা আছে কিনা জানতে চান তারা।
বৈঠকে এ সময় ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়, আমাদের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সব সময় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। পরিস্থিতি কি হতে চলছে তা নজরে রাখতে হবে। ভোটের আগে আবারো আমরা আইন শৃঙ্খলা নিয়ে বৈঠক করব, তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্দেশনা দেবে ইসি। তবে কোনো দল বা পক্ষ যদি ভোট নিয়ে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে বা ভোটারদের ভোটদানে বাঁধা দেয় তাহলে কঠোর হাতে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে তা দমন করারও নির্দেশনা আসে ইসির পক্ষ থেকে। সিইসি এ সময় ডিসি, এসপিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যদের জাতীয় নির্বাচনী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখার নির্দেশনা দেন।
ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ঘোষণা দিয়ে রেখেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বা নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে ভোট না হলে তারা অংশ নেবে না। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলে আসছে, সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার থাকা অবস্থাতেই ভোট হবে। রাজনীতির এই দ্বা›িদ্বক পরিস্থিতির মধ্যে কী হলে নির্বাচন ‘গ্রহণযোগ্য হবে’- সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অবস্থানও এ অনুষ্ঠানে ব্যাখ্যা করেন সিইসি হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, গ্রহণযোগ্য হওয়ার অর্থ নির্বাচনটা অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। জনগণকে দেখতে হবে নির্বাচনটা ফেয়ার ছিল এবং নির্বিঘেœ সবাই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে। এটুকু যদি নিশ্চিত করা যায়- নির্বাচনে কে এলো, কে এলো না সেটা ভাবার দরকার নেই। জনগণ যদি ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, তাহলেই নির্বাচনে একটি বড় সফলতা আসবে। তবে কোন পক্ষ ভোটে না এসে ভোটের সময় যদি নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে, তা কঠোর হাতে দমন করতে হবে। সে অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত থাকবে হবে, গোয়েন্দা বাহিনীকে তৎপর থাকতে হবে।
প্রশাসন ও পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান বলেন, আমার দৃষ্টিতে আপনারাই হচ্ছেন নির্বাচন কমিশনের মাঠ পর্যায়ের বিশ্বস্ত সহায়তাকারী এবং আপনারাই আমাদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। আমাদের শপথ নেয়ার পর সহ¯্রাধিক নির্বাচনে শতভাগ নিরপেক্ষতা বজায় রেখে আন্তরিকতার সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারকে সহযোগিতা করেছেন। যার ফলশ্রæতিতে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিটি নির্বাচন কোনো প্রকার সহিংসতা ছাড়াই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। তিনি বলেন, অতীত নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করা আমি পছন্দ করি না। তবে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে চলুন, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন। আমরা সবাই মিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের এমন উদাহরণ সৃষ্টি করি, যা অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।
নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট হওয়ার কথা। সাধারণত ৪৫ দিন আগে তফসিল দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে নভেম্বরের প্রথমার্ধে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানান এ কমিশনার। তিনি বলেন, নির্বাচন একা ইসির ওপর নির্ভর করে না। আপনাদের ওপর নির্ভর করে। আপনারা আইনানুগ ও কঠোরভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবেন।
নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, আপনাদের ভোটের সব চেয়ে মুখ্য দায়িত্ব পালন করতে হবে। আইনের মধ্যে থেকে আপনারা আপনারা দায়িত্ব পালন করবেন। কোনোভাবেই দলীয় প্রভাবে প্রভাবিত হবেন না। মনে রাখতে হবে, সবাই মিলে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেয়া আমাদের সবারই দায়িত্ব।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, বিগত দুটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আপনাদের রয়েছে। আমরা চাই কোনো রকম বিতর্ক ছাড়াই জাতিকে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে। আর আমরা সে শপথ নিয়ে এ দায়িত্ব পালনে ব্রতি হয়েছি। আপনাদের ওপরই সুষ্ঠু নির্বাচন নির্ভর করবে। ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম ও অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সিইসির এমন মন্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ ভোরের কাগজকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করা। তবে বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দল এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে আসবে না বলছে। অথচ ইসি কিন্তু তার আগে সবগুলো দলের সঙ্গে সংলাপে বসেছে, তাদের মতামত নিতে চেয়েছে। সেখানে বিএনপি আসেনি। আমি যতদুর জানি সিইসি তাদের ডিও লেটার দিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তাতেও তারা সাড়া দেয়নি। ইসির আর কি করার আছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সংবিধান অনুযায়ী তাদের নির্বাচন করতে হবে। সেখানে যদি বিএনপি বা দুয়েকটা দল না আসে- তাহলে ইসির তো কিছু করার থাকে না। যে কটা দল আসে তাদের নিয়ে নির্বাচনটা সময়মতো করতে তারা বাধ্য। তাই হয়তো সিইসি ডিসি এসপিদের নিয়ে আলোচনাকালে এ কথাই বলেছেন; এটা কোনো দোষের কিছু নয়। কোনো দল নির্বাচনে না এলে ইসি তো জোর করে আনতে পারে না বা তাদের কাজও এটা নয়।
এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে সিইসির কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়। তবে সিইসি যে বলেছেন- ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনা- সেটা যোক্তিক। ভোটারদের নির্বিঘেœ অংশগ্রহণ মূলক উপস্থিতি, আস্থার সঙ্গে উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য সবগুলো রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, সব দলকে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার পরিস্থিতি নিশ্চিত করা ইসির দায়িত্ব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়