হেরোইন উদ্ধার মামলা : পাকিস্তানি নাগরিকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

আগের সংবাদ

রাজনৈতিক সমঝোতার লক্ষণ নেই, নির্বাচনের প্রস্তুতি ইসির : ডিসি এসপিদের নিয়ে ইসির বৈঠক > ভোটের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কায় মাঠ প্রশাসন

পরের সংবাদ

নিশ্চিত নির্বাচন ঘিরে অনিশ্চয়তায় বিএনপি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আসছে হয়তো পরিবর্তন। নির্বাচনকে ঘিরে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। প্রধান দল দুটো নানা আলোচনা নিয়ে আসছে। কিন্তু মূলত কোন আলোচনা। আওয়ামী লীগ অর্থাৎ সরকার তার উন্নয়নের ফিরিস্তিগুলো তুলে ধরছে। এমনকি শেষ না হওয়া উন্নয়নও উদ্বোধন করছে। এটা কোনো অনৈতিক প্রচারণা নয়। কারণ মেগা প্রজেক্টগুলোর পরিসমাপ্তিও যে তারাই করতে পারে, তার একটা সরাসরি আভাস দেয়া হচ্ছে এতে। আওয়ামী লীগ তার বিগত সময়ে উন্নয়নমূলক কাজ কম করেনি এবং এটা শুধু রাজধানীতেই নয়, জেলা-উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও তা লক্ষণীয়। বলতে হবে, এক ধরনের বড় পরিবর্তন এনেছে অবকাঠামোগত উন্নয়নে। কিন্তু পাশাপাশি কি দুর্বৃত্তায়ন ঠেকাতে পেরেছে। অবৈধ উপায়ে উপার্জিত হাজার হাজার কোটি টাকা পৃথিবীর দেশে দেশে পাচার করা হয়েছে এ সময়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ধনিক শ্রেণির একটা অংশ দুর্নীতি করে লুট করা অর্থ আমেরিকা-ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করে; কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাংক লুট (২০১৫) পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্থ পাচার হিসেবে এমনকি আমেরিকায় একটা ফিল্ম (বিলিয়ন ডলার হেইস্ট) তৈরি করা হয়েছে। এসব দায় সরকারের ওপরই পড়েছে। অথচ দুর্বৃত্তায়ন ঠেকানোর জন্য কার্যত বড় ধরনের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত নয়। আর এ কারণেই বিদেশিরাও যেন অযাচিত নাক গলানো শুরু করেছে।
কিন্তু এ সময়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি কী করতে পেরেছে। অতীতে তাদের আন্দোলনের এক বিরাট অংশজুড়েই আছে আগুন সন্ত্রাসের কালিমা। এখন রাজনৈতিক পরিপক্বতায় কিছুটা হলেও আন্দোলন জনমুখী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ইস্যুটা বিএনপি কর্মীদের হৃদয়ের গভীর থেকেই চাওয়া এবং এটা জনগণকে কিছুটা হলেও স্পর্শ করছে। কিন্তু শুধু খালেদা জিয়ার মুক্তি আর তারেক জিয়ার স্বদেশ ফেরার আন্দোলন সাধারণ মানুষকে কোনোই আশা দেখাতে পারছে না, পারবেও না। এতে জনগণের সম্পৃক্ততা কতটুকু? একটা উদাহরণ দিই। গত মাসে ব্রিটেনে একটা বিশাল জনসমাবেশ করল বিএনপি। এই সমাবেশ আয়োজনের প্রধান নির্দেশক অবশ্যই তারেক জিয়া। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, ওই বিশাল জমায়েতে তারেক জিয়া জনসমক্ষে আসেননি। শুধু কি তাই, তারেক জিয়া যুক্তরাজ্যে এক যুগের বেশি সময়কাল অবস্থানকালীন কোনো শহরেই রাজনৈতিক সফর করেননি। একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’-এর ধোয়া তোলেন তিনি, অথচ বাংলাদেশকে ‘টেক ব্যাক’ বলতে কী বোঝাতে চাইছেন তিনি। আওয়ামী শাসনের পূর্বাবস্থার নাম অর্থাৎ বিএনপি-জামায়াত আমলের নাম-ই কি ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’। যদি তা-ই হয়, সেই বাংলাদেশ এখন বিএনপি-জামায়াত ছাড়া কোনো মানুষই চাইবে না, এমনকি এই সরকারের বিরুদ্ধে অন্য যারা রাস্তায় আছে, এই সরকারের পতন চাইছে, তাদের কাছেও বিএনপি-জামায়াত আমল কাক্সিক্ষত নয়। এছাড়া যদি অন্য কোনো টেক ব্যাক করতে হয় তাহলে নিয়ে যেতে হবে পঁচাত্তর-পরবর্তী শাসনের দিকে। কোনটি চান তারেক জিয়া? না-কি একটা ইংরেজি শব্দ তার প্রয়োজন ছিল, না-কি সত্যিই তিনি সেসব দিনে নিতে চান বাংলাদেশকে। সহজ কথা তারেক জিয়া জনসমক্ষে না গিয়ে জনগণের নেতা হতে চাইছেন, তার অনেক নেতাকর্মী তাকে হয়তো বাংলাদেশের কাণ্ডারি হিসেবে দেখতে চাইছেন।
বাংলাদেশকে এখন ফিরিয়ে নেয়ার কোনো কথা আসা মানেই পেছনের দিকে টানা। অনেক ব্যর্থতার মাঝেও দেশটাতে আছে এখন আলোর ঝিলিক, এ ঝিলিকে বাংলাদেশ উন্নয়নমুখী। কিন্তু যেটা আগে উল্লেখ করেছি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন যতটা দৃশ্যমান হয়েছে, এই উন্নয়নকে কেন্দ্র করে অনেক বেশি উৎপাদিত হয়েছে বাংলাদেশে লুটেরা শ্রেণির। সেজন্যই এই লুট-পাচার রোধ করে একটা গণতান্ত্রিক কাঠামোর দিকেই আগাতে হবে দেশটাকে, তবেই হয়তো উন্নয়ন দৃঢ় হবে, স্বস্তি ফিরে আসবে জনমনে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দুর্বৃত্তায়নমুক্ত বাংলাদেশের নামই হতে পারে নতুন কোনো বাংলাদেশ। আর সেজন্যই বলি জনগণ টেইক ব্যাক বাংলাদেশ চায় না। যে নেতা তার হাজার হাজার কর্মীর সামনে আসতে ভয় পান, সে নেতা দেশের দায়িত্বভার নেয়ার স্বপ্ন দেখেন কীভাবে। অবশ্য তিনি জনসমক্ষে আসুন আর না আসুন, বাংলাদেশের সরকারের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যকে জানান দিতে তার ডাক সার্থক হয়েছে। যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপ-আমেরিকাতো তা-ই চায়, কারণ ব্যর্থতা থাকলে মোড়ল হওয়া যায়। কিন্তু আগামীর নির্বাচন নিয়ে বিএনপিতো কোনোই বার্তা দিতে পারছে না। বিদেশি শক্তির ওপর ভরসা করে নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়ার অনিশ্চয়তা তো তারা কেটে উঠতে পারবে না বলেই মনে হচ্ছে।
দুই.
একটা অস্বস্তি আছে দেশের উপরের স্তরে। মার্কিনিরা ভিসানীতি দিয়েছে বাংলাদেশে। কারা সেই মুল্লুকে যেতে পারবে না, তা নিয়ে। সরকারি পক্ষ থেকে এটাকে জনসমক্ষে যদিও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না, কিন্তু এ নিয়ে যে অস্বস্তি আছে তা তো বোঝাই যায়। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সেলফি তোলার ছবি যতটুকু ভাইরাল হয়েছে, তার চেয়ে বেশি বলেছেন এ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এমনকি হালে তিনি বলেছেন ‘ভারত ঠিক আমেরিকা ঠিক’ তলে তলে আপস হয়ে গেছে। এ কথাগুলো কিন্তু একটা অস্বস্তি থেকেই উচ্চারিত হচ্ছে। কারণ দেশের জনগণের চেয়ে অন্যান্য সেক্টরের মানুষের জন্য এরকম উচ্চারণ একটা আশাবাদ বটে। এ সময়ে যারা আমেরিকার স্থায়ী-অস্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন, বানিয়েছেন বাড়ি-গাড়ি-সম্পদ, তাদের সংখ্যা হয়তো কম নয়। সরকার কিংবা বিরোধী দলের নেতাকর্মী কিংবা দেশের অন্যন্য শীর্ষ পর্যায়ে থাকা মানুষও এতে আছেন, আছেন তাদের পরিবার কিংবা স্বজন। আর এজন্যই একটা ক্ষোভ থাকতে পারে।
তাছাড়া ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশই আমেরিকার সঙ্গে ব্যবসা করে যাচ্ছে। গণমাধ্যমের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলো থেকে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানির চেয়ে রপ্তানি সাড়ে তিনগুণ বেশি। এতে বোঝা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বাড়ছে বেশি, আমদানি বাড়ছে কম। ফলে বাণিজ্য পরিস্থিতি বাংলাদেশের অনুকূলে থাকার প্রবণতাও বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
গত অর্থবছর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৮৩ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যা দেশের মোট আমদানির ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। একই অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৭৪০ কোটি ডলারের পণ্য। এটা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১৯ দশমিক ২ শতাংশ। স্বাভাবিকভাবেই এর একটা প্রভাব বাণিজ্যে পড়বেই। ভিসানীতি নিয়ে সেজন্য ক্ষোভ তো থাকবেই। তাছাড়া এমনিতে আমেরিকা বাংলাদেশি মানুষগুলোর জন্য একটা স্বপ্নের জায়গাও বটে।
তিন.
এদিকে আমেরিকা যে শুধুই নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার লক্ষ্যে এ ভিসানীতি প্রয়োগ করেছে, তা হয়তো নয়। আমেরিকার আন্তর্জাতিক রাজনীতিরই স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাপার এটা নিঃসন্দেহে। একটা জনমুখী দাবিকেই তারা উপলক্ষ করেছে মাত্র। আমেরিকা যা-ই করুক, বাংলাদেশের ‘টেক ব্যাক’-এর প্রয়োজন নেই, প্রতিক্রিয়াশীলতার দিকে ব্যাক করারও কোনো প্রশ্নই উঠে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মতো আমরাও প্রত্যাশা রাখতে চাই ‘তলে তলে’ই একটা কিছু হোক। লক্ষ্য হওয়া উচিত উন্নয়নের ধারাকে দুর্বৃত্তায়নমুক্ত করা। তারেক জিয়া কিংবা তার ‘টেইক ব্যাকে’ বিএনপি আস্থা রাখতে পারে, তবে বাংলাদেশ অতীতের দিকে ফিরে যাবে না, কারণ তাদের ক্ষমতাকালীন সময় অনেক রক্তক্ষয়ের কথাই মনে করায়, মনে করিয়ে দেয় বোমা হামলা আর বাংলা ভাইদের উত্থানের নৃশংস সময়গুলোর কথা।

ফারুক যোশী : কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়