জাবিতে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত

আগের সংবাদ

বাজারের পারদ চড়ছেই : নির্ধারিত দামের ধারেকাছেও নেই তিন পণ্য, আমদানির ডিম দেশে আসেনি এখনো

পরের সংবাদ

নির্যাতন-নিপীড়নের খড়গে পুড়ছে ফিলিস্তিন

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১২, ২০২৩ , ১২:৩৪ পূর্বাহ্ণ

ধুঁকে ধুঁকে মরার চেয়ে একবারে মরা ভালো। সমগ্র ফিলিস্তিনি সে পথেই হাঁটছে। নিজভূমে অধিকার বঞ্চিত ফিলিস্তিনিদের কাছে এর চেয়ে উত্তম বিকল্প আর কী ছিল? অপরাধের শত বছর, অন্যায়ের ৮০ বছর এবং পাপের ৬৯ বছরে ফিলিস্তিনের প্রত্যেক নাগরিকের ঘামের চেয়ে রক্ত ঝরেছে বেশি। প্রত্যেক মুহূর্ত কেটেছে শঙ্কায়। স্বস্তির ঘুম, শান্তির বিশ্রাম এসব শব্দ ফিলিস্তিনের গৃহে ধরা দেয়নি। বীর মায়েরাও যুগে যুগে সেখানে বারুদ জন্ম দিয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকাকে ভাজা ভাজা করেছে। আকসায় সেজদারত হাজার মুসল্লিকে গুলি, লাথি, পিটুনি দিয়ে হত্যা করেছে, জখম করেছে, বের করে দিয়েছে। মুসলিমদের আকসার চত্বরে কপাল স্পর্শ থেকে বঞ্চিত করেছে বহুকাল।
স্বার্থবাদী পশ্চিমাদের মদদে উড়ে এসে জুড়ে বসা ইহুদিদের কাছে নির্যাতন-নিপীড়নের খড়গে পুড়ছে স্বভূমের ফিলিস্তিন। কোণঠাসা করতে পেরেছে বটে কিন্তু স্বাধীনতার তৃষ্ণা থেকে পবিত্র ভূমির তরুণদের বিরত রাখা যায়নি। ইতিহাসে রক্ত দিয়েছে অথচ স্বাধিকার ফিরে পায়নি এমন নজির বিরল। অপেক্ষা হয়তো এটুকু দীর্ঘ হবে যে, এক প্রজন্ম আত্মাহুতি দেবে এবং পরের প্রজন্ম এর ফলভোগ করবে। আরবের বিষফোঁড়া হিসেবে ইসরায়েল মানবতা, শান্তি-সমৃদ্ধিতে যে পচন ধরিয়েছে তা গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে ভোগাছে, পোড়াচ্ছে। ইসরায়েলের অমানবিক আচরণে মদদ দিচ্ছে আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বের বহু দেশ।
আমেরিকা পৃথিবীর যেথায় যেথায় হস্তক্ষেপ করেছে সেখানেই অশান্তির পতাকা উড়িয়েছে। নিজেদের স্বার্থে করতে পারে না এমন কোনো হীন কাজ নেই যা তারা করতে পারে না। সর্বশেষ ইসরায়েলকে রক্ষার জন্য এবং গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার জন্য রণতরী পাঠিয়েছে। গাজায় খাদ্যপানীয় প্রবেশের পথ রুদ্ধ করে নারী, বৃদ্ধ এবং শিশুদের মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। অথচ এখানে তাদের মানবতার বুলি নেই। কালে কালে আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিধি লঙ্ঘনের এমন বহু ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। নয়তো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানের মতো বর্বর গোষ্ঠীকে সাপোর্ট করতে পারে! ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে যে আচরণ করেছে সেই আচরণ যুগ যুগ ধরে ফিলিস্তিনের সঙ্গে করছে। গাজায় একটি প্রাণীকেও ওরা হয়তো বাঁচতে দেবে না।
স্থাপনাগুলোকে বোমার আঘাতে ছাইভস্মে পরিণত করবে। অথচ ওরা ভুলে যাচ্ছে, স্বাধীনতার জন্য লড়াইকারীদের প্রেরণা এবং শক্তির উৎস এই ছাই। ছাইতেই পূর্বপুরুষের বীরবেশে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার ছাপ আছে। তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তিও এই পোড়ামাটি। সব অভিযোগ, সব অত্যাচার, সব নিপীড়ন একদিন উল্টো করে ফিরিয়ে দেয়া হবে। আরবের মুসলিম সম্প্রদায়গুলো যদি শিরদাঁড়া উঁচু করে দাঁড়াত, তেল-বাণিজ্য বন্ধের হুমকি দিত তবে ইসরায়েলের তথাকথিত বাপদের জিহ্বা আরবের মরুভূমির বালু চাটতে বাধ্য হতো। ফিলিস্তিনের মুসলমানদের ওপর যে অন্যায়-অবিচার যুগ-যুগান্তর জুড়ে চলছে তার জন্য আরব বিশ্বের অনৈক্য বহুলাংশে দায়ী।
একদিন সমগ্র গাজা, আল আকসা, জেরুজালেম ফিলিস্তিনিদের হবে। একজন হিটলারের অপেক্ষায় থাকতে হবে। হামাসের উত্থান আশা জাগিয়েছে। শত বছরের ইতিহাসে হামাসের এই জাগরণ আশাবাদী করেছে। যদিও জীবন-মালের বহু খেসারত দিতে হবে তবুও অধিকার অর্জনের শেষ ধাপে পা না রাখা পর্যন্ত রক্তবিন্দু জমিনে ঢালতে হবে এবং অশ্রæবিন্দু আকাশে পাঠাতে হবে। সমগ্র বিশ্বের সংগ্রাম করে স্বাধীনতা অর্জনকারীরা ফিলিস্তিনিদের বেদনার ভার বোঝে। কাজেই চূড়ান্ত ইন্তিফাদার জন্য সর্বযুগেই অনেক মানুষ ফিলিস্তিনের হৃতাধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য কথা বলবে, রাস্তায় নামবে। যে কিশোর কেবল ঢিল ছুড়তে শিখেছে সেও ফিলিস্তিনের সীমানায় দাঁড়িয়ে ইসরায়েলের বুকে ঘৃণার এক প্রস্তর পাথর ছুড়বে।
একদিন ফিলিস্তিনের সব সংগ্রাম শেষ হবে। বৃদ্ধ বীরযোদ্ধা বায়তুল আকসায় আসরের নামাজ আদায়ের শেষে বিস্তৃত প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে স্বাধীন কিশোরদের দৌড়ঝাঁপ দেখবেন। পরাধীনতার ব্যথা জন্মসূত্রে স্বাধীনতা প্রাপ্তরা বুঝবে না, অনুধাবন করতেও পারবে না। আমাদের প্রার্থনা হোক ফিলিস্তিনের জন্য। যদি কোনোভাবে বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে ইসরায়েলকে সামান্য পরিমাণেও দুর্বল করে দেয়া যায়; তা থেকে যেন নিজেদের বিরত না রাখি। প্রত্যেক প্রার্থনায় ফিলিস্তিনের যুদ্ধাহত শিশু, নির্যাতিত মা এবং যোদ্ধা পুরুষদের জন্য যেন কল্যাণ কামনা করি। আকসার প্রাঙ্গণে আল্লাহু আকবার ধ্বনি আরো জোরালোভাবে উচ্চারিত হোক- সে প্রার্থনায়।

রাজু আহমেদ : লেখক, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়