সৌদি ভিসা প্রসেসিং কেন্দ্র : ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে না পারায় বিক্ষোভ

আগের সংবাদ

অস্থিরতার মূলে ডলার সংকট : ডলার মিলছে না ব্যাংক কিংবা খোলাবাজারে, দামে লাগাম টানতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক

পরের সংবাদ

হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ : দালালচক্রের হাতে জিম্মি জমির মালিকরা

প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

হেলাল উদ্দিন, সিরাজগঞ্জ থেকে : উত্তরবঙ্গের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নে হাটিকুমরুল গোল চত্বরে তৈরি হচ্ছে ইন্টারচেঞ্জ। এজন্য সরকারের সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২ এর অধীনে এই অঞ্চলে প্রায় ১৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করে। আর এসব জমির মালিকরা তাদের জমির ন্যায্যমূল্য পেতে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এই জমি অধিগ্রহণকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বড় একটি দালালচক্রের সিন্ডিকেট। আর এই চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন অসহায় জমির মালিকরা। দালালদের এই চক্রের খবর প্রশাসন জানলেও প্রভাবশালী হওয়ায় নিতে পারছে না কোনো ব্যবস্থা। তবে বিষয়টি তদন্ত করে চক্রের বিরুদ্ধে এবার ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস প্রশাসনের। সরজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে জানা যায়, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল গোলচত্বর মহাসড়কই বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র পথ। সরকারের নতুন পরিকল্পনায় সড়ক ব্যবস্থাপনা আধূনিকায়নের জন্য ইন্টারচেঞ্জ তৈরির জন্য ইতোমধ্যেই ভেঙে ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি। কোলাহলযুক্ত এলাকা ক্রমেই নীরব হয়ে পড়ছে। সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২ এর কাজ চলমান থাকলেও এখনো অধিগ্রহণের টাকা পাননি সিংহভাগ জমি ও ভবনের মালিকরা।
এই জমি অধিগ্রহণকে ঘিরে গড়ে উঠেছে জাল দলিল তৈরির দালাল চক্রের এক বড় সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা জমির মূল মালিক যখন ভূমি অধিগ্রহণ অফিস থেকে ৭ ধারা বা ৮ ধারা নোটিস হাতে পান ঠিক সেই সময় ওই জমির ভুয়া বা জাল দলিল অথবা ভুয়া ওয়ারিশ দিয়ে অভিযোগ করেন মূল মালিকের বিরুদ্ধে। এরপর আটকে যায় মূল মালিকের পাওনা চেক। তখন থেকেই মূল মালিক বছরের পর বছর ঘুরতে থাকেন জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায়। এক পর্যায়ে এই চক্রের সঙ্গে সমঝোতায় বসতে হয় মূল মালিকদের। মূল মালিককে তার পাওনা টাকার একটি অংশ দিতে হয় এই চক্রের সদস্যদের। না দিলে অভিযোগের পর অভিযোগ শুনানিতে ঘুরতে হয় মূল মালিকদের। তবে এই সব চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে কথা বললেও কোনো প্রতিকার হয় না। তাই জিম্মি হয়ে পড়েছেন জমির মালিকরা। এখন তাদের জমিতে ইন্টারচেঞ্জের কাজ চলমান থাকায় কোনো কূল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। একদিকে বন্ধ রয়েছে ফসল উৎপাদন অন্য দিকে পাচ্ছেন না ক্ষতিপূরণের টাকা।
ভুক্তভোগী জমির মালিক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নুরুল হুদা বলেন, আমরা তিন ভাই বাবার সম্পত্তিগুলো সমান ভাগে ভাগ করে ও বাটোয়ারা দলিল করে নিয়ে প্রায় ৪০ বছর ধরে ভোগ দখল করে আসছি। আমার মোট ৭৬ ডিসিমাল জমি ইন্টারচেঞ্জের অধিগ্রহণে চলে যায়। আমি ৭ ধারা ও ৮ ধারার নোটিস পাই ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে। আমি যখন টাকা উত্তোলন করার জন্য সিরাজগঞ্জ ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় যাই তখন জানতে পারি যে ওই সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য আমার চাচাতো ভাই ফেরদৌস জামান জর্জ আমার জমির মালিকানা দাবি করে একটি অভিযোগ দাখিল করেছে। আমাকে শুনানির তারিখ দেন এলএ শাখার কর্মকর্তারা। দফায় দফায় আমার কাগজ যাচাই বাছাই করে রায় দেয় আমার পক্ষেই। প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েছি। এর পর আবার অভিযোগ আর অভিযোগ। মাসের পর মাস চলছে শুনানি। চক্রের সদস্যরা প্রতিনিয়ত প্রস্তাব দেয় মীমাংসার জন্য। আর জজকে সব ভুয়া কাগজ তৈরি করে দেয় হাটিকুমরুল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সাবেক ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হাসান আলী। আমি বৃদ্ধ মানুষ ডিসি অফিসের এলএ শাখায় ঘুরতে ঘুরতে আজ আমি ক্লান্ত। আমি আমার সু বিচার চাই।
আরেক ভুক্তভোগী সাইদুর রহমান বলেন, আমার ২০২০ সালে ক্রয়কৃত সম্পত্তি ৭১ ডিসিমাল জমি খাজনা খারিজ করে ভোগ দখলে আছি। হঠাৎ অধিগ্রহণে চলে যাওয়ার পর এলএ শাখা থেকে ৭ ও ৮ ধারার নোটিশ পাওয়ার পর এলএ শাখায় গিয়ে জানতে পারি আমার জমির নাকি ওয়ারিশিয়ান আছে। এর পর কিছু পাবনার ও তাড়াশের জাল দলিল দাখিল করেছে তারা। বছর খানেক ধরে এই জমির টাকার জন্য প্রতিনিয়ত ঘুরতে হচ্ছে ডিসি অফিসের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায়। আর এখন আমাকে এই চক্রের প্রধান প্রফেসর আনিসুর রহমান প্রস্তাব করছেন তাদের সঙ্গে মীমাংসা করার জন্য। কিন্তু আমি কখনই এই চক্রের সঙ্গে মীমাংসা করব না। শিক্ষক নুরুল হুদা, সাইদুর রহমান, আলম হোসেন, নেজাব আলী ও তোফাজ্জল হোসেনের মতো শতাধিক জমির মালিক আজ জিম্মি হয়ে আছে এই চক্রের হাতে। উল্লাপাড়া ভূমি অফিসের সাবেক ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হাসান আলী বলেন, আমার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাওয়ার পর উল্লাপাড়া থেকে বদলি করে দেয়া হয়েছে সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। আমি এই চক্রের সঙ্গে জড়িত না। আমি সরকারি চাকরি করি। আমি কোনো চক্রের সঙ্গে থাকতে পারিনা।
এই চক্রের অন্যতম সদস্য প্রফেসর আনিসুর রহমান বলেন, আমি শিক্ষকতা করি। আমি কখনোই কোনো চক্রের সঙ্গে নেই। তবে এলাকায় দরবার সালিশের জন্য দুই একটা কাজ করতে হয়।
উল্লাপাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) খাদিজা খাতুন বলেন, বড় একটি চক্র আছে আমরা জানি। আমাদের কাছে একই জমির দুই রকম দলিল আছে, দুই রকম লেখা। আমরা যাচাই বাছাই করেই রায় দেই। তবে আমি মনে করি এই চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। কারণ এই চক্রের জন্য আমাদের অনেক হয়রান হতে হয়। কিছু ভুয়া দলিল আছে যা যাচাই বাছাই করার জন্য পাবনায় পাঠাতে হয়। সেখানে নানা জটিলতা দেখা দেয়। যার কারণে সাধারণ জমির মালিকদের ঘুরতে হয় অনেক দিন। উল্লপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. উজ্জল হোসেন বলেন, ভূমি অপরাধ নামে নতুন একটি আইন তৈরি হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে এই চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাবে। তবে আমাদের ভূমি অফিসের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিষয়টি খতিয়ে দেখে এই দালালচক্রের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন- এমটাই প্রত্যাশা ভুক্তভোগী ভূমি মালিকদের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়