এন রায় রাজা : আসন্ন শীত, কয়েকটি নতুন ট্রেন চালু এবং ঢাকা থেকে ৬টি ট্রেন পদ্মা সেতু দিয়ে যাতায়াত শুরুর কারণে বেশ কিছু ট্রেনের সময়সূচিতে পরিবর্তন আসছে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। গতকাল শনিবার ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, আগামী ১ নভেম্বর থেকে নতুন সূচি কার্যকর হবে। রেলমন্ত্রী আরো বলেন, আগামী ১০ অক্টোবর ঢাকা-ভাঙ্গা, ৯ নভেম্বর খুলনা-মোংলা এবং ১২ নভেম্বর দোহাজারী-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করার জন্য সময় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রেলওয়ের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, শীতকালে যাত্রীদের চলাচলে সুবিধা নিশ্চিত করা, নতুন ট্রেন পরিচালনা এবং আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে আগামী নভেম্বর থেকে নতুন সময়সূচি নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, সূবর্ণ ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের রেক দিয়ে রাত্রিকালীন সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে একটি নতুন ননস্টপ আন্তঃনগর ট্রেন চলবে। তবে ওই ট্রেনের নাম এবং সময়সূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ঢাকা-সিলেট রুটে একটি নতুন ননস্টপ ট্রেন চলবে নতুন কোরিয়ান রেক দিয়ে। ওই ট্রেনটি ঢাকা ছাড়বে সকাল সাড়ে ৯টায়, সিলেট পৌঁছাবে বিকাল ৩টা ১৫ মিনিটে। ফিরতি যাত্রায় সিলেট ছাড়বে বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটে এবং ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ১১টায়। ঢাকা থেকে উপবন এক্সপ্রেস রাত ৮টা ৩০ এর পরিবর্তে রাত ১০টায় সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।
আগামী ১২ নভেম্বর দোহাজারী-কক্সবাজার রুট উদ্বোধনের পর ঢাকা-কক্সবাজার রুটে একটি নতুন আন্তঃনগর ট্রেন চলবে নতুন কোরিয়ান কোচ দিয়ে। ট্রেনটি রাত ৮টা ১৫ মিনিটে ঢাকা থেকে ছেড়ে কক্সবাজার পৌঁছাবে ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে। ফিরতি যাত্রায় কক্সবাজার ছাড়বে সকাল ১০টায় এবং ঢাকা পৌঁছাবে রাত ৭টা ১৫ মিনিটে। ওয়াশপিট ও অফডে সার্ভিসিং হবে কক্সবাজারে।
চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী ও তূর্ণা এক্সপ্রেস রুট বর্ধিত করে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে চলবে। এরমধ্যে মহানগর প্রভাতী সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা থেকে ছেড়ে কক্সবাজার পৌঁছাবে বিকাল ৪টায়। ফিরতি যাত্রায় কক্সবাজার থেকে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে ঢাকা পৌঁছাবে সকাল ৬টায়। আর তূর্ণা এক্সপ্রেস রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে কক্সবাজার পৌঁছাবে সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে। ফিরতি যাত্রায় দুপুর ১২টায় কক্সবাজার থেকে ছেড়ে ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ৮টা ১০ মিনিটে।
আন্তঃনগর চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ইনকা ১০০ এমজি লটের কোচ দিয়ে একটি রেকের মাধ্যমে চলবে। চট্টগ্রাম ছাড়বে সকাল ৬টায়, ঢাকা পৌঁছাবে বেলা ১২টায়। ফিরতি যাত্রায় ঢাকা ছাড়বে দুপুর ২টায়, চট্টগ্রাম পৌঁছাবে রাত সাড়ে ৮টায়। ঢাকা-নোয়াখালী রুটে একটি নতুন আন্তঃনগর ট্রেন চলবে চট্টলার অবমুক্ত একটি রেক দিয়ে। ওই ট্রেনটি ঢাকা ছাড়বে সকাল ৮টায়, নোয়াখালী পৌঁছাবে দুপুর দেড়টায়। নোয়াখালী ছাড়বে দুপুর আড়াইটায়, ঢাকা পৌঁছাবে রাত ৮টায়। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নতুন আন্তঃনগর ট্রেন চালু হবে

চট্টলার অবমুক্ত আরেকটি রেক দিয়ে। ডাবল ট্রিপের ওই ট্রেনটি প্রথম ট্রিপে চট্টগ্রাম ছাড়বে সকাল সাড়ে ৬টায়, কক্সবাজার পৌঁছাবে ১০টায়। কক্সবাজার ছাড়বে সকাল সাড়ে ১০টায়, চট্টগ্রাম পৌঁছাবে দুপুর আড়াইটায়। দ্বিতীয় ট্রিপে দুপুর সোয়া ৩টায় চট্টগ্রাম ছেড়ে কক্সবাজার পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৭টায়। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কক্সবাজার থেকে ছেড়ে চট্টগ্রাম পৌঁছাবে রাত ১১টায়।
ট্যুরিস্ট কোচ পাওয়া সাপেক্ষে কক্সবাজারগামী নতুন দুটো আন্তঃনগর ট্রেনের সময়সূচি চূড়ান্ত করে রাখা হচ্ছে। আপাতত ‘ঢাকা-কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ নাম দিয়ে রাখা ওই ট্রেনটি ঢাকা ছাড়বে সকাল ১০টায়, কক্সবাজার পৌঁছাবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। ফিরতি যাত্রায় কক্সবাজার ছাড়বে রাত ১০টায় এবং ঢাকা পৌঁছাবে সকাল ৭টায়। অন্যদিকে ‘সিলেট-কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ সকাল সাড়ে ৭টায় সিলেট থেকে ছেড়ে কক্সবাজার পৌঁছাবে বিকাল ৫টায়। ফিরতি যাত্রায় কক্সবাজার ছাড়বে রাত ৮টায়, সিলেট পৌঁছাবে ভোর সাড়ে ৫টায়।
চট্টগ্রাম-দোহাজারীর লোকাল ট্রেনটি শোভন শ্রেণির কোচ দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচল করবে। দোহাজারী কমিউটার কক্সবাজার থেকে ছাড়বে সকাল ৫টায়, চট্টগ্রাম পৌঁছাবে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে। ফিরতি যাত্রায় চট্টগ্রাম ছাড়বে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে এবং কক্সবাজার পৌঁছাবে রাত ১১টায়। কক্সবাজার কমিউটার সকাল সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে কক্সবাজার পৌঁছাবে দুপুর ১টায়। ফিরতি যাত্রায় দুপুর দেড়টায় কক্সবাজার থেকে ছেড়ে চট্টগ্রাম পৌঁছাবে বিকাল ৫টায়।
ঢাকা-ঈশ্বরদী-পাবনা রুটে নতুন একটি আন্তঃনগর ট্রেন চলবে। ওই ট্রেনটি সকাল ৮টায় পাবনা থেকে ছেড়ে ঢাকা পৌঁছাবে দুপুর ২টায়। ফিরতি যাত্রায় ঢাকা ছাড়বে ৩টা ২৫ মিনিটে এবং পাবনা পৌঁছাবে রাত ৯টা ৪০ মিনিটে। ঢাকা-বুড়িমারী নতুন আন্তঃনগর ট্রেনসহ লালমনি এক্সপ্রেসের জন্য বুড়িমারী-লালমনিরহাট রুটে কানেকটিং শাটল ট্রেন চলবে। বিজয় এক্সপ্রেসের রুট বর্ধিত হবে জামালপুর পর্যন্ত। ট্রেনটি চট্টগ্রাম ছাড়বে সকাল ৯টায়, জামালপুর পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৬টায়। ফিরতি যাত্রায় জামারপুর ছাড়বে সন্ধ্যা ৭টায়, চট্টগ্রাম পৌঁছাবে সকাল ৪টা ২০ মিনিটে। মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি রুট বর্ধিত করে চাঁদপুর-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলবে।
সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও বেনাপোল এক্সপ্রেস পদ্মা সেতু হয়ে চলবে। চিত্রা এক্সপ্রেস আগের রুটে অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে চলবে। সুন্দরবন ও বেনাপোল এক্সপ্রেসের নতুন স্টপেজ হবে কুষ্টিয়া কোর্ট, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও ভাঙ্গা জংশন। নকশিকাঁথা কমিউটার রুট বর্ধিত করে খুলনা-গোয়ালন্দের পরিবর্তে পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা-ঢাকা রুটে চলাচল করবে। ট্রেনটি খুলনা থেকে রাত ১২টায় ছেড়ে ঢাকা পৌঁছাবে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে। ফিরতিযাত্রায় ঢাকা থেকে সকাল সাড়ে ১১টায় ছেড়ে খুলনা পৌঁছাবে রাত ৯টা ২০ মিনিটে। পাবনা-রাজশাহী রুটের ঢালারচর এক্সপ্রেস রুট বর্ধিত করে চাপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত চলবে। আন্তঃনগর মধুমতি এক্সপ্রেস রুট বর্ধিত করে রাজশাহী-ভাঙ্গার পরিবর্তে পদ্মা সেতু হয়ে রাজশাহী-ঢাকা রুটে চলাচল করবে। নতুন স্টপেজ হবে ভাঙ্গা জংশন, পদ্মা, মাওয়া, পুকুরিয়া ও শিবচর।
এ বিষয়ে রেলের মহাপরিচালক কামরুল আহসান বলেছেন, আপাতত রেলের শীতকালীন সিডিউলে কিছু নতুন ট্রেন চালু ও কিছু ট্রেনের সিডিউল পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে এটা ১ নভেম্বর থেকে কতটা কার্যকর করা যাবে তা এখন বলা যাচ্ছে না।