প্রস্তুতি ম্যাচ : ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টাইগারদের হার

আগের সংবাদ

রাজনীতিতে সমঝোতার উদ্যোগ! : বৈরিতার পারদ নিম্নমুখী, আ.লীগের ৫ সদস্যের কমিটি, প্রতিনিধি দল গঠন করছে বিএনপি

পরের সংবাদ

শিরোপা দৌড়ে এগিয়ে যারা

প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সারা বিশ্বে দিনে দিনে ত্রিকেটের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ১৯৭৫ সালে যখন প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেট মাঠে গড়ায় তখন মুষ্টিমেয় কয়েকটি দেশ ক্রিকেট খেলত। ফুটবল বিশ্বকাপের আসর যেখানে ২২টি শেষ হয়েছে সেখানে ৫ অক্টোবর ভারতে শুরু হচ্ছে ক্রিকেট বিশ্বকাপের ১৩তম আসর। ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৩০ সালে শুরু হলেও বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪২ এবং ১৯৪৬ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হয়নি। ফুটবল বিশ্বকাপের ৪৫ বছর পর ক্রিকেট বিশ্বকাপের আর্বিভাব হলেও জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে ক্রিকেট। ইউরোপ-ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে হু হু করে বাড়ছে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা। ম্যারাডোনা-পেলের আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলও এখন ক্রিকেটে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছে। ইউরোপের নেদারল্যান্ডস তো এবার ভারত বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখছে। বিশ্বকাপে আগের ১২ বারের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া সর্বোচ্চ ৫ বার, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারত ২ বার করে এবং পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ড ১ বার করে বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করেছে। এবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশসহ ১০টি দল অংশ নিচ্ছে। ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামবে সাকিববাহিনী। ১০ অক্টোবর বাংলাদেশ খেলবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, এরপর ১৩ অক্টোবর নিউজিল্যান্ড, ১৯ অক্টোবর ভারত, ২৪ অক্টোবর দক্ষিণ আফ্রিকা, ২৮ অক্টোবর নেদারল্যান্ডস, ৩১ অক্টোবর পাকিস্তান, ৬ নভেম্বর শ্রীলঙ্কা এবং ১২ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার মোকাবিলা করবে। টুর্নামেন্টের সবকটি ম্যাচ রাউন্ড রবিন ফরম্যাটে খেলা হবে। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা ৪টি দল পা রাখবে সেমিফাইনালে। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো রাউন্ড রবিন ফরম্যাটে হচ্ছে বিশ্বকাপ। ১৯৯২ আসরে প্রথম এই পদ্ধতিতে খেলা হয়েছিল।
রাউন্ড রবিন নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি দলই ৯টি করে ম্যাচ খেলবে। গ্রুপপর্ব শেষে শীর্ষে থাকা দল টেবিলের চতুর্থ দলের সঙ্গে এবং দুই ও তিনে থাকা দল দুটি সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে। এরপর জয়ী দুদল ফাইনাল খেলবে। ১৯ নভেম্বর আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে শেষ হাসি হাসবে কোন দল? রোহিত শর্মা, বাবর আজম, প্যাট কামিন্স, জস বাটলার… কোন অধিনায়কের হাতে উঠবে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ট্রফি? বেশির ভাগ সাবেক ক্রিকেটার ও বিশ্লেষক বেছে নিচ্ছেন চার সেমিফাইনালিস্ট। ঘুরেফিরে আসছে চার-পাঁচটি দলের নাম; ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে এবার ভারতকে ফেবারিট মানছেন অনেক বিশ্লেষক। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে তারা দারুণ মোমেন্টামও পেয়েছে। অন্য দলগুলোর তুলনায় ভারতের প্রস্তুতি বেশ মসৃণভাবে হয়েছে। টিম ইন্ডিয়ার বড় চ্যালেঞ্জ হবে একাদশ বাছাইয়ে। রোহিতরা কী বেশি স্পিনার নিয়ে খেলবে নাকি অলরাউন্ডার বেশি খেলাবে, সেটিই হবে দেখার বিষয়। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, ঘরের মাঠে ফেবারিট হওয়ার চাপ তারা কীভাবে সামলাবে, সেটি দেখা। এর আগে ২০১১ সালে ঘরের মাঠে শিরোপা জিতে সেটা করে দেখিয়েছে ভারত। ৫ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে অনেকে ফেবারিট তালিকায় রেখেছে। ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড গত আসরের ফাইনালিস্ট তারা এবারো শিরোপা জয়ের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে। এশিয়া কাপে ভালো না করতে পারায় পাকিস্তানকে নিয়ে বাজি ধরতে নারাজ অনেকে। ভারত, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে শিরোপার রেসে এগিয়ে রেখেছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। ১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রফিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বপ্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। তবে ওই টুর্নামেন্টে খেলা বাংলাদেশের ম্যাচগুলোকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। টাইগাররা প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ। এশিয়া কাপের ওই ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। সব দলেরই স্বপ্ন থাকে বিশ্বকাপে খেলার। টাইগারদের সে স্বপ্ন পূরণ হয় ১৯৯৯ সালে। ওই বছর চতুর্থবারের মতো ইংল্যান্ডে বসেছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর। ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পুরস্কার হিসেবে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় বাংলাদেশ। এরপরের সবকটি বিশ্বকাপ আসরেই খেলেছে টাইগাররা। অংশ নেয়া ৬টি আসরের মধ্যে সবচেয়ে হতাশার ছিল ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ওই বিশ্বকাপে কোনো জয় পায়নি বাংলাদেশ দল। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ১৪টি ম্যাচে জয় পেয়েছে টাইগার বাহিনী। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সাকিব আল হাসান ২৯ ম্যাচে মাঠে নেমে ১১৪৬ রান সংগ্রহ করেছেন। সর্বোচ্চ ১২৪ রান। হাফসেঞ্চুরি ১০টি, সেঞ্চুরি ২টি। বিশ্বকাপে টাইগার অধিনায়ক ১০৭টি চার এবং ৮টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। এরপর মুশফিকুর রহমান ২৯ ম্যাচের ২৮ ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে রান করেছেন ৮৭৭। সর্বোচ্চ ১০২। হাফসেঞ্চুরি ৬টি, সেঞ্চুরি ১টি। বিশ্বকাপে তিনি ৭১টি চার এবং ১০টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন।
বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে তামিম ইকবাল ২৯ ম্যাচে ব্যাট করে ৭১৮ রান সংগ্রহ করেছেন। সর্বোচ্চ ৯৫ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। হাফসেঞ্চুরি করেছেন ৪ ম্যাচে। বিশ্বকাপে তিনি ৮৩টি চার এবং ৪টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন।
সাকিব আল হাসান বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে বিশ্বকাপে ২৯ ম্যাচে ২৩৮.৫ ওভার বল করে ১২২২ রান দিয়ে তুলে নিয়েছেন ৩৪ উইকেট। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন কাটারমাস্টারখ্যাত মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি ৮ ম্যাচে তুলে নিয়েছে ২০ উইকেট। স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক ১৫ ম্যাচে মাঠে নেমে সংগ্রহ করেছেন ২০ উইকেট।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে মাশরাফি বিন মর্তুজা ২৪ ম্যাচে অংশ নিয়ে সংগ্রহ করেছেন ১৯ উইকেট। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৬টি বিশ্বকাপের ৪২ ম্যাচে অংশ নিয়ে টাইগাররা জিতেছে ১৪ ম্যাচে।

হেরেছে ২৫ ম্যাচে। পরিত্যক্ত হয়েছে ৩টি ম্যাচ।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রথম আসর ১৯৭৫ সালে আয়োজিত হলেও টুর্নামেন্টকে ঘিরে থিম সংয়ের ধারা শুরু হয় ১৯৯২ সালে। এরপর থেকে ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় আসরটি আয়োজিত হয়েছে আরো সাতবার। প্রতিটি আসরেই আয়োজক দেশের পক্ষ থেকে ‘থিম সং’ বানানো হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আসন্ন বিশ্বকাপ নিয়েও ভারত ‘দিল জশন বলে’ নামে একটি থিম সং তৈরি করেছে। বিশ্বকাপের ১৩তম আসর উপলক্ষে ভারতের তৈরি করা ‘দিল জশন বলে’ থিম সংটি গত ২০ সেপ্টেম্বর আইসিসির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে মুক্ত করা হয়। ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়াতে গানটির ভাষা হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে হিন্দিকেই। গানটির বাংলা অর্থ অনেকটা এমন- ‘হৃদয় উদযাপন করে’। ৩ মিনিট ২১ সেকেন্ডের গানটির সুর করেছেন ভারতের জনপ্রিয় সংগীত পরিচালক প্রিতম। গানটিতে পারফর্ম করেছেন বলিউড সুপারস্টার রনবীর সিং।
এবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে ক্রিকেটে ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন শরফুদ্দৌলা সৈকত। ভারতে আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপের জন্য আইসিসি গত ৮ সেপ্টেম্বর ১৬ জন আম্পায়ার ও ৪ জন ম্যাচ অফিশিয়ালের নাম ঘোষণা করে। এর মধ্যে শরফুদ্দৌলার নামও রয়েছে।
ত্রয়োদশ ওয়ানডে বিশ্বকাপের মোট প্রাইজমানি ১ কোটি ডলার (১০৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা)। এই আসরে চ্যাম্পিয়ন দল পাবে ৪০ লাখ ডলার (প্রায় ৪৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা)। আগামী ১৯ নভেম্বর আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠেয় ফাইনালে যে দলটি পরাজিত হবে তারাও ২০ লাখ ডলার নিয়ে দেশে ফিরবে।
গ্রুপপর্বেও থাকছে ভালো অঙ্কের প্রাইজমানির হাতছানি। প্রতিটি জয়ের জন্য দলগুলো পাবে ৪০ হাজার ডলার করে। আর রাউন্ড রবিন লিগ পর্ব শেষে যে দলগুলো নকআউট পর্বে উঠতে ব্যর্থ হবে তারা প্রতেকেই পাবে ১ লাখ ডলার করে।
সেমিফাইনালে পরাজিত দুদল প্রত্যেকেই পাবে ৮ লাখ ডলারে করে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়