মানবতাবিরোধী অপরাধ : মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি খান রোকনুজ্জামান গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

ঝুঁকি প্রবল, প্রস্তুতি কম > বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা > মৃত্যুকূপ হবে রাজধানী > দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা নিয়ে সংশয়

পরের সংবাদ

অক্টোবরে ভর কোন ভরসায়?

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এবার আর ঈদের পরে নয়, জানুয়ারিতে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষাও নয়। এর আগে অক্টোবরেই এসপার-ওসপারের গুঞ্জন-গুজব বেশ জোরদার। আলোচনাও জমেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ বিষয়ক কথামালা বেশি, মেইনস্ট্রিমের মিডিয়ায়ও কম নয়। নতুন কী হয়েছে বা আর কী হওয়ার বাকি আছে? এ প্রশ্নের কিন্তু দিশা বা নিশানা নেই। সুনির্দিষ্ট তথ্যও নেই। তথ্য ও প্রশ্ন নিষ্পত্তিহীন রেখেই অক্টোবরবিষয়ক বাজার গরম। বিএনপি যারপরনাই পুলকিত। এর বিপরীতে সরকারও চাঙ্গা। ভীত না হয়ে ফ্রন্টে আগোয়ান। বিএনপিকে উচিত শিক্ষা দেয়াসহ দেশকে আর পেছনে ফিরে যেতে দেয়া হবে না বলে ঘোষণা তাদের। দুদলেরই আবার পরস্পরকে ‘পালাতে দেয়া হবে না’, ‘পালানোর পথ পাবে না’- মর্মে কড়া বার্তা।
দুদলের একটিও পালাতে চায় বা পালানোর চিন্তা করছে- এমন কোনো তথ্য নেই কারো কাছে। কোনো গণমাধ্যমেও কোনো দল বা দলের কারো পালানোর চেষ্টার তথ্য আসেনি। বরং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতাহীন বিএনপি দুদলই তাদের সাংগঠনিক শক্তির জানান দিচ্ছে। মাসজুড়ে তাদের শক্তির মহড়া বা শোডাউনের কর্মসূচিও চলছে। তাই বলে অক্টোবরেই ফয়সালা হয়ে যাবে? নির্বাচনের জন্য জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না? নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল এবং জানুয়ারিতে নির্বাচনের খসড়া তফসিল এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে। বিএনপির দিক থেকে বলা হয়েছে- কেবল নির্বাচন নয়, একতরফা তফসিল ঘোষণা করলেও পরিণতি ভালো হবে না। সেই তফসিল ঘোষণাও অবশ্যই অক্টোবরে নয়, নভেম্বরে। তাহলে অক্টোবরে কেন এসপার-ওসপারের আশা? অন্যদিকে তফসিল ও নির্বাচন পর্যন্ত নির্বিঘে থাকতে অক্টোবরে বিএনপিকে মোকাবিলায় আগের চেয়েও বেশি অ্যাক্টিভ থাকতে কর্মীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে। তাদের এ নির্দেশনার মাঝেও ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে অক্টোবরের কথা। এতে দুদিকেই অক্টোবরের ভর ওপেন সিক্রেট। এর মধ্য দিয়ে তারা সাধারণ মানুষকে চিন্তিত-শঙ্কিত করে তুলেছেন।
দুদলই পরস্পরের হাঁড়ির খবর কম-বেশি জানে। একে-অন্যের দৌড়ের সীমানাও তাদের জানার বাইরে নয়। ক্ষমতাসীনরা বিএনপি না এলেও নির্বাচন তুলে আনতে চায়। তারা জানেন, বিএনপি তা রোখার চেষ্টা করবে। ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করবে। আর সেই ক্ষেত্রে বিএনপির ভরসা যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। আরো স্যাংশন-নিষেধাজ্ঞার ঝামেলাও আসতে পারে। এর জেরে সরকারকে নড়বড়ে করে ফেলার উচ্ছ¡াস বিএনপিসহ আন্দোলনকারীদের মধ্যে। তাদের এ আশা সফল হতে না দেয়ার যাবতীয় প্রস্তুতি রয়েছে সরকার তথা আওয়ামী লীগের। কর্মীদের কাছ থেকে ওয়াদা আদায় করা হয়েছে অক্টোবরজুড়ে আরো শক্তিতে মাঠে থাকার। মাসটির প্রায় প্রতিদিনই ঢাকাসহ সারাদেশে সভা-সমাবেশসহ মাঠের কর্মসূচি রাখা হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকার রাজপথ যেন কিছুতেই দখলে নিতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে ওয়ার্ম আপে রাখা হচ্ছে কর্মীদের। বিএনপির দিক থেকেও পুরো অক্টোবরে কর্মীদের মাঠে রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দুদলের এ অবস্থান অক্টোবরকে ঘিরে প্রশ্নের ঝাঁজ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। যা মাসটিতে চূড়ান্ত ফয়সালা না হলেও নিকট ভবিষ্যতের গতি-প্রকৃতি, পরিণতি নির্ধারণ করে দিতে পারে বলে ধারণা অনেকের। সেই দৃষ্টে কিছু আভাস রয়েছে। পর্দার আড়ালের রাজনীতি-কূটনীতির বিচ্ছিন্ন তথ্যও ঘুরছে। তার ওপর যোগ হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থার ক্রমাবনতি ও বিদেশে চিকিৎসার ইস্যু।
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মনোভাব, অর্থনৈতিক ও মুদ্রা পরিস্থিতিসহ আরো কিছু উপাদানও যোগ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী মিশনও ঢাকামুখী। এতে থাকছেন ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট-আইআরআই এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট-এনডিআই কর্মকর্তারা। সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে তারা কিছু প্রেসক্রিপশন দিতে পারেন বলে খবর চাউর হয়েছে। এবার ২০১৪ বা ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন হচ্ছে না- সেই বার্তা সবার কাছেই পরিষ্কার। সম্ভাব্য নতুন ধারা বা ধরনও এখন পর্যন্ত ধারণার বাইরে। মুখে মুখে নানান হুঙ্কার দিলেও রাজপথে দৃশ্যত বিএনপি মারমুখী নয়। ৫ অক্টোবর চলমান কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর তারা রাজপথের অবস্থান শক্ত করার আয়োজনে ব্যস্ত। নিচ্ছে মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগের সুযোগকে কাজে লাগানোর নানা কায়দা-কৌশল। আরো নিষেধাজ্ঞা আসার আগাম তথ্যও প্রচার করছে তারা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ, ফটোসেশন, সেলফি ভাইরালের ঘটনার পর এখন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির প্রয়োগের পদক্ষেপ ক্ষমতাসীনদের মধ্যে হতাশা ভর করেছে বলে নিশ্চিত তারা। এর জেরে সরকারি দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্তরে টানাপড়েন আরো স্পষ্ট হলে মধ্য অক্টোবরে একটা ঝাঁকুনি দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। নির্বাচন নাও হতে পারে- এমন একটি ধারণার কচলানি চলছে বিএনপির অভ্যন্তরে। এরও প্রেক্ষিত আছে। কারণ ইসি সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে থাকলেও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে বিরোধের ফয়সালা এখনো বাকি। বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এবং বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন না করার অবস্থানে অটল। নির্বাচনের পদ্ধতি প্রশ্নে সরকারও নাছাড়।
এমন আবহে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনিশ্চিত। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নির্বাচন বর্জন বা হতে না দেয়ার ঘোষণা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউর পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্ত, তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নির্বাচন কমিশনের জন্যও বিব্রতকর। এটি তাদের বিষয় না হলেও এড়িয়ে যাওয়ার অবস্থা নেই। এর মাঝে আকস্মিক বাড়তি যন্ত্রণার জোগান দিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিতে গণমাধ্যমও যুক্ত হবে মর্মে মন্তব্য করে তিনি নতুন সাবজেক্ট দিয়েছেন। বলেছেন- সরকার, বিরোধী দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর আগামীতে গণমাধ্যমও যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিতে যুক্ত হবে। এ নিয়ে একটি মিথস্ক্রিয়া চলতে থাকার মধ্যে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানান, বাংলাদেশে সুষ্ঠু-অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা। এর আওতায় গণমাধ্যমকর্মী নন, থাকবেন সরকারি-বিরোধী দলের রাজনীতিবিদ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বাংলাদেশে ভিসানীতির প্রয়োগ এবং এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা নিষেধাজ্ঞা দেয়া সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জানিয়ে দেবে ওয়াশিংটন। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলেও জবাব দেননি মার্কিন মুখপাত্র।
বাংলাদেশে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর ভিসানীতির প্রয়োগ হবে কিনা আর হলেও সেটা মানবাধিকার বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থি কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মিলার জানান, নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্র। মিলারের এমন সবিস্তার বক্তব্যের দুদিন পর ব্যাখ্যাপর্ব মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের। নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তার গণমাধ্যম সম্পর্কিত বক্তব্যের ক্ল্যারিফিকেশন চেয়ে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনামের দেয়া চিঠির জবাবে তিনি বলেন, যে কোনো সরকারের সমালোচনাকে স্বাগত জানায় তার দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো নীতির ব্যাপারে জনসাধারণের মতামতকেও স্বাগত জানায় তারা। বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বক্তব্যে পরিষ্কার ছিল যে, ভিসানীতি যে কোনো বাংলাদেশির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যাকে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে দুর্বল করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে হবে। কেউ মিডিয়াকে তার মতপ্রকাশে বাধা দিলে তিনিও এর অন্তর্ভুক্ত হবেন। ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, সুশীল সমাজ এবং মিডিয়াকে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখতে দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ়ভাবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং বিশ্বব্যাপী সাংবাদিক ও মিডিয়া হাউসের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার রক্ষা করে। এমন ব্যাখ্যার মাঝে তিনি তার আগের বক্তব্য স্পষ্ট করেননি। গণমাধ্যম নিষেধাজ্ঞায় পড়বে বা পড়বে না, তার আগের বক্তব্য সঠিক না বেঠিক তাও খোলাসা করেননি।
বলার অপেক্ষা রাখছে না, যুক্তরাষ্ট্র ছাই বা সাঁড়াশি দিয়ে ধরার মতো ধরে বসেছে বাংলাদেশকে। এ ধরাধরিতে অক্টোবরে যুক্তরাজ্য-কানাডাসহ পশ্চিমা আরো কয়েকটি রাষ্ট্র শামিল হবে বলে জোর প্রচার-প্রচারণা আছে। যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের গণতন্ত্রের একটি রসায়ন চলমান বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশে রয়েছে প্রতিবেশী ভারতীয় গণতন্ত্রের কিছু মিশেলও। দেশটির সঙ্গে এখন চলছে কানাডার কূটকাইজ্জা। এর তাপে ভারত এবার আগের মতো বাংলাদেশ নিয়ে অ্যাটেনশন দিতে পারবে না বলে একটি নিজস্ব সমীকরণ রয়েছে বিএনপির। তাদের জন্য এটি আশীর্বাদের। এ রকম সময়েই বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের। গোটা পরিস্থিতিটি বিএনপির জন্য তালিয়া বাজানোর মতো। যেন এই ভিসানীতি তাদেরই অর্জন। এর মাঝে টানা ১৫ বছর আন্দোলন-সংগ্রামের বরকত দেখছে তারা। এই পুলক ধরে রাখতে পারছেন না বিএনপির কোনো কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। আগামী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচনের আগে এ বছরের অক্টোবরেই ক্ষমতায় চলে আসার মাস্তি তাদের মধ্যে। দুপক্ষের এমন অক্টোবরের ভরে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে সেরের ওপর সোয়া সের ভাব। তাদের তবলায় সামনের দফায়ও ক্ষমতার তাল। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাষায় : আওয়ামী লীগ এই অক্টোবরে ক্ষমতায় আছে, আগামী অক্টোবরেও থাকবে।

মোস্তফা কামাল : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়