বৈষম্য নিরসনের দাবি : কর্মবিরতিতে যাচ্ছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি

আগের সংবাদ

পুলিশের সামনে যত চ্যালেঞ্জ : দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কতটা প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

পরের সংবাদ

৩০ বছরেও শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছেনি থানচির দুর্গম অঞ্চলে

প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২, ২০২৩ , ১:২৮ পূর্বাহ্ণ

থানচি (বান্দরবান) প্রতিনিধি : থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউপি পর্যটন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বেশ খ্যাতি রয়েছে। ভ্রমণকারীদের জন্য এলাকাটি জনপ্রিয় হলেও ওই এলাকার ৬ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করে আসা শিশুরা শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত। গর্ভবতী মায়েরাও পান না চিকিৎসা। নৌপথ ছাড়া অন্য কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় শিশুরা ভিটামিন-এ ক্যাপসুল বা রোগ প্রতিরোধক টিকাও পায় না।
স্থানীয়রা জানান, থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউপির ৬ ও ৯ নম্বর দুই ওয়ার্ডে প্রায় গত ২০-৩০ বছর থেকে মেনহাত ম্রো পাড়া, বুলু পাড়া, থাংকোয়াই ম্রো পাড়া, কোয়াংক্ষ্যং পাড়া, ইয়ং ডং ম্রোক্ষ্যং পাড়া, চন্দ্র মোহন ত্রিপুরা পাড়া, ক্লুং ক্ষ্যং ম্রো পাড়া, রুইওয়াই ম্রো পাড়া, কংকং ত্রিপুরা পাড়া, ইয়ং ক্লাং ম্রো পাড়া, মালুমগ্যা পাড়া, সূর্য্যমনি ত্রিপুরা পাড়া, লাই পুং পাড়া, ইয়াংবং, মাংচাই, বাচি অং, মেথোয়াই পাড়া, মেনপ্রে ম্রো পাড়াসহ মোট ১৮-১৯টি পাড়া গড়ে উঠেছে। এসব পাড়ায় ৩০০ পরিবারের প্রায় ২ হাজারেরও বেশি ম্রো, ত্রিপুরা, মারমা পরিবারের বসবাস। যার মধ্যে অন্তত এক তৃতীয়াংশের বেশি শিশু-কিশোর রয়েছে। গত ২০-৩০ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস শুরু হলেও কোনোদিনও কোনো স্বাস্থ্যকর্মীরা পৌঁছায়নি এই পাড়াগুলোতে। তেমনি পায়নি কোনো প্রকার সরকারি বরাদ্ধের অতি প্রয়োজনীয় ভিটামিন-এ ক্যাপসুল বা রোগ প্রতিরোধক টিকা। গড়ে উঠেনি কোনো সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। ফলে শিক্ষার আলোহীন, শারীরিক অপুষ্টি জনিতসহ নানা রোগ-শোকের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা যেন তাদের নিয়তি। বিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও যেন কোনো এক আদিম যুগে বসবাস তাদের।
সরজমিন গেলে কথা হয় লইক্রি পাড়ার পাড়াপ্রধান ঙৈ তং ম্রো কারবারি জানান, প্রায় ২০ বছর আগে ২০ পরিবারের ১০০ জন সদস্য মিলে লইক্রি পাড়া এলাকায় বসতি গড়ে তুলেন। বর্তমানে ৩৭ পরিবারের প্রায় আড়াইশ জনের বসবাস। এই ২০ বছরের মধ্যে কোনো স্বাস্থ্যকর্মী তাদের পাড়াটিতে আসেনি এবং গত ১৯ বছরের মধ্যে কোনো স্কুলও ছিল না। কোনো স্বাস্থ্যকর্মী তাদের পাড়াটিতে না যাওয়ায় আজ পর্যন্ত কোনো শিশুই সরকারিভাবে দেয়া ভিটামিন-এ ক্যাপসুল বা রোগ প্রতিরোধক টিকা পায়নি। তিনি আরো জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে থানচি সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম মংওয়ে মাহাজনের ছেলে মংমংসিং হাতে গড়ার স্থানীয় এনজিও সংস্থা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের বাস্তবায়নে লইক্রি পাড়া এলাকায় চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চালু হলেও বাকি ১৭ পাড়ায় কোনো প্রকার শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ নেই শিশুদের।
রেমাক্রি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড ডলুঝিড়ি পাড়ার কারবারি (পাড়াপ্রধান) চন্দ্র মোহন ত্রিপুরা ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড পান ঝিড়ি (কোয়াইং ক্ষ্যং) ম্রো পাড়ার কারবারি পাড়াপ্রধান কাইং ওয়াই ম্রো জানান, ৬ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড মিলে আঠারোটির বেশি পাড়ায় প্রায় ২ হাজারের অধিক জনগণের বসবাস হলেও আজ পর্যন্ত তাদের পাড়ায় কোনো ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীরা আসেনি। ফলে পাড়ার শিশুরা যেমন কোনোদিন টিকা ও ভিটামিন-এ ক্যাপসুল পায়নি তেমনি গর্ভবতী মায়েরাও পায়নি স্বাস্থ্যসেবা বা ডাক্তারি পরামর্শ। এছাড়াও ওই এলাকায় কোনো স্কুল না থাকায় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। রেমাক্রি ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মানচং ম্রো জানান, এলাকাটি দুর্গম আর যাতায়াত ব্যবস্থা ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে স্বাস্থ্যকর্মীরা যেতে আগ্রহী নয়। যার কারণে ৬ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার শিশুরা কোনদিন ভিটামিন-এ ক্যাপসুল ও টিকা পায়নি। আগামীতে এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মী নিয়ে যাওয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করবেন বলে জানান তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বান্দরবান কার্যালয় হতে, জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি ও ভিটামিন-এ প্লাস ক্যাম্পেইন জেলায় শতভাগ শিশুকে টিকা বা ভিটামিন-এ প্রদানের কথা বলা হলেও রেমাক্রি ইউপি চেয়ারম্যান মুই শৈ থুই মারমা জানান, থানচি উপজেলার আয়তন ১০২০ বর্গকিলোমিটার। তারমধ্যে শুধু, রেমাক্রি ইউনিয়নের আয়তন ৪৯৭ বর্গকিলোমিটার। ২০২২ সালের জনশুমারি অনুসারে রেমাক্রি ইউনিয়নের জনসংখ্যা ৮ হাজার ৬শ দেখানো হলেও ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যমতে বর্তমানে এই ইউনিয়নে মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার। যার মধ্যে ইউনিয়নের ৬ নম্বর ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৩০০ পরিবারের প্রায় ২ হাজার জনগণের বসবাস হলেও এলাকাটি দুর্গম ও যোগাযোগেরমাধ্যম একমাত্র নৌপথ হওয়ার কারণে ওই এলাকার শিশুরা কখনো ভিটামিন-এ ক্যাপসুল ও টিকা দেয়ার সুযোগ হয়নি।
জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিও) মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, ওই অঞ্চলে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আগে জানতাম না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।
যোগাযোগ করা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান জানান, সব জনগণের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এই এলাকার কিছু কিছু বিষয় সম্পর্কে জানা নেই। যতটুকু শুনেছি ওই এলাকাগুলো বেশ দুর্গম। তবুও সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে রেমাক্রির ৬ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ওই দুর্গম এলাকাগুলোতে অন্তত প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর একটি ক্রাশ প্রোগ্রামের (বিশেষ ব্যবস্থায় স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম) মাধ্যমে সেবাদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়