জন্মদিনের শুভেচ্ছাপত্র

আগের সংবাদ

অদ্ভুদ আবাস!

পরের সংবাদ

আইন আইনের গতিতে চলতে হবে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

‘দুর্নীতির তথ্য পেলে গণমাধ্যম রিপোর্ট করবে সেটাই স্বাভাবিক। এখানে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার সুযোগ কোথায়? প্রকাশিত রিপোর্ট সত্য না মিথ্যা কিংবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিনা সেটা বিচার করার জন্য সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। গণমাধ্যম কী রিপোর্ট করবে, কী রিপোর্ট করবে না সে ক্ষেত্রে কি কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়া যায়? যায় না। তবে সবারই নীতিমালা মেনে চলা উচিত।’ (বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম)।
১৪ সেপ্টেম্বর এস আলম গ্রুপের অর্থ পাচারের সংবাদ প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদনের শুনানিতে এ মন্তব্য করেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। এস আলমের আবেদন গ্রহণ না করে নথিভুক্ত করা হয়েছে।
সর্বোচ্চ আদালতের এই পর্যবেক্ষণ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে আরো স্পষ্ট করে দিল। প্রসঙ্গক্রমে বলা যায়, বহুল আলোচিত এস আলম গ্রুপের অর্থপাচার নিয়ে গত ৪ আগস্ট একটি অনুসন্ধানমূলক রিপোর্ট প্রকাশ করে ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টার। ‘এস আলমের আলাদিনের চেরাগ’ শীর্ষক এই রিপোর্টে বলা হয়, এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম সিঙ্গাপুরে কমপক্ষে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যদিও বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি। দেশের বাইরে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিলেও সেই তালিকায় এস আলম গ্রুপের কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম নেই। অথচ সিঙ্গাপুরে এস আলম অন্তত দুটি হোটেল, দুটি বাড়ি, একটি বাণিজ্যিক স্পেস এবং অন্যান্য সম্পদ কিনেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এস আলম বিদেশে অর্থ পাঠানোর জন্য কোনো ধরনের অনুমতি নেয়নি। বাংলাদেশের মানিলন্ডারিং আইন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ছাড়পত্র ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ নিষিদ্ধ। এই অপরাধের শাস্তি ১২ বছরের কারাদণ্ড এবং যে পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছে তার দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
এস আলমের অর্থ পাচারের এই রিপোর্ট প্রকাশের পর হাইকোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চের নজরে আনলে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে অভিযোগের সত্যতা অনুসন্ধানের জন্য নির্দেশ দিয়ে ২ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে নির্দেশ দেন। আদালতের এই নির্দেশের পর নড়েচড়ে বসে দুদক।
কিন্তু এর মধ্যে এস আলমের পক্ষে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল আবেদন করা হয়। ২৩ আগস্ট আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের আদালতে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে হাইকোর্টের আদেশের ওপর আগামী বছরের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থিতাবস্থা জারি করেন। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে এস আলমের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার সংক্রান্ত কোনো অভিযোগের অনুসন্ধান তদন্ত কিছুই করা যাবে না। সর্বোচ্চ আদালতের এই আদেশের ফলে ধরেই নেয়া যায় অন্তত ৫ মাসের জন্য অভিযোগের অনুসন্ধান হিমাগারে চলে গেল। এ নিয়ে নানা সমালোচনা রয়েছে। তবে এর মধ্যে এস আলম গ্রুপ, তাদের অর্থপাচার সংক্রান্ত সব ধরনের খবরাখবর প্রচার ও প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করে। আবেদনটি যথারীতি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের আদালতে শুনানি হলে তিনি সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি স্মরণ করে আবেদনটি নথিভুক্ত করে দেন।
সংবাদ প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা না দেয়ার ফলে এস আলমের অর্থ পাচার সংক্রান্ত সংবাদ প্রচারে কোনো বাধা থাকল না এবং এর মাধ্যমে সাংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিলেন সর্বোচ্চ আদালত। আদালত তার পর্যবেক্ষণে সংবাদমাধ্যমের সীমারেখার কথাটিও বলে দিয়েছেন। এটা অবশ্যই সবার মেনে চলা উচিত। যা সত্য তা নির্মোহভাবে বলতে পারাই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা। যা খুশি তা বলার নাম স্বাধীনতা নয়।

দুই.
দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি শপথ গ্রহণ করেছেন। এর আগে গত ১২ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি তাকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন। অত্যন্ত সজ্জন ও মিডিয়াবান্ধব হিসেবে পরিচিত বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। আইনজীবী হিসেবেও তিনি ছিলেন দক্ষ।
নিয়োগ পাওয়ার পর সাংবাদিকদের কাছে প্রথম প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন দুর্নীতি ক্যান্সারের মতো ছেয়ে গেছে। এই ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়াই বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি আরো বলেন, বিচার বিভাগ রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না। নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্য অনেক গুরুত্ব বহন করে। বিচার বিভাগ মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। এর ওপর আস্থা হারিয়ে ফেললে মানুষের আর যাওয়ার জায়গা থাকে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো বিচার বিভাগের প্রতি আসলেই কি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলছে? দেশের আদালতগুলোতে ৪২ লাখ মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে ৩৫ লাখ মামলাই নিম্ন আদালতে। বছরের পর বছর ধরে মামলার ঘানি টানতে হচ্ছে বিচারপ্রার্থীদের। বিচারাঙ্গনের লোকজন মনে করে পর্যাপ্তসংখ্যক বিচারক না থাকায় মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এটা হয়তো একটা কারণ কিন্তু একমাত্র কারণ না। কী কী কারণে মামলা জটের সৃষ্টি হয়েছে সেটা বিচারক ও আইনজীবীরা ভালো করেই জানেন। বিচারপ্রার্থীরা বরং কম জানেন। আর দুর্নীতির বিষয়টিও সবার জানা। এ নিয়ে নতুন করেও কিছু বলার নেই। নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি যেটাকে ক্যান্সারের সঙ্গে তুলনা করেছেন সেটা কীভাবে নিরাময় করা যায় সেটা শুধু ভাবনা নয়, বাস্তবায়ন করা উচিত। কারণ ভাবতে ভাবতে সময় অনেক চলে গেছে।

তিন.
বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান ও পরিচালক নাসির উদ্দিন এলানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। ১৪ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত এই রায় ঘোষণা করেন। এই কারাদণ্ড নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন থেকে কারাদণ্ডের নিন্দা জানানো হচ্ছে। তাদের মুক্তি দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে, এটা মেনে নিতে হবে, আইন লঙ্ঘন করলে বিচার হওয়াই আইনের শাসন। তারা মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রিপোর্ট দিয়েছে, সরকার এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। এতে বেআইনি কিছু দেখি না।

শংকর মৈত্র : সাংবাদিক ও কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়