গণপিটুনি থেকে বাঁচতে ৯৯৯-এ চোরের কল

আগের সংবাদ

পরিবারের আড়ালে তৎপর দল > খালেদার বিদেশযাত্রা : আলোচনায় জার্মানি > আশাবাদী দল ও পরিবার > অল্প সময়ে সিদ্ধান্ত

পরের সংবাদ

বাঙালির স্বাধীনতা মুক্তির স্বপ্ন ও শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি রাজনীতির ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত সরকার যে বিরাট গঠনমূলক ভূমিকা রেখেছে তাও অসীম প্রশংসার দাবিদার; বিশেষত জাতীয় সংসদকে গতিশীল ও জবাবদিহিমূলক করার ক্ষেত্রে। যে কোনো প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রে সংসদীয় কমিটিগুলোর ভূমিকা অপরিসীম। নির্বাহী বিভাগের কর্মকাণ্ডে সংসদ তথা সংসদীয় কমিটির নিয়ন্ত্রণ না থাকলে তা প্রায়শই স্বেচ্ছাচারী ও স্বৈরাচারী রূপ নেয়। আমলাতন্ত্রের যথেচ্ছাচার ঠেকিয়ে রেখে কাক্সিক্ষত ও পরিকল্পিত পথে পরিচালনার জন্য সংসদীয় কমিটিগুলোর ন্যায়ভিত্তিক, বলিষ্ঠ ভূমিকার কোনো বিকল্প নেই। দেশে যথার্থ আইনের শাসন ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন প্রতিষ্ঠার জন্যও তা অপরিহার্য। শেখ হাসিনাই গণতন্ত্রের ভিত বা কাঠামোকে জোরালো করতে সংসদীয় কমিটিগুলোকে ক্ষমতায়িত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমানে যে সংসদ গঠিত হয়েছে, সেই সংসদের সংসদীয় কমিটিগুলোকে আরো বেগবান ও চলিষ্ণু করার জন্য বিভিন্ন দলের সাংসদদের মধ্য থেকে কমিটিগুলোর চেয়ারম্যান ও সদস্য নেয়া হয়েছে। এছাড়া তিনিই প্রথম বিভিন্ন অগ্রসর-গণতান্ত্রিক দেশে প্রচলিত প্রথার অনুসরণে জাতীয় সংসদে ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব’-এর সূচনা করেছিলেন। তিনি আন্তরিকভাবেই চেয়েছেন পার্লামেন্টকে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠানে রূপায়িত করতে; যদিও তার এ উদ্যোগ এখনো পূর্ণতা পায়নি বিভিন্ন কায়েমি-স্বার্থবাদী সামাজিক শক্তির (ঝড়পরধষ ঋড়ৎপবং) উপস্থিতির কারণে।
শেখ হাসিনার (১৯৯৬-২০০১) সরকারের সবচেয়ে বড় দুটি সাফল্য বা অর্জন হলো পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি এবং ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি। আমাদের এখানে অনেকের হয়তো জানা নেই, হিমালয়ে বরফ জমার প্রান্তরেখা অনেক উপরে ওঠে যাওয়ায় অর্থাৎ আগে যেখানে বরফ পড়ত ও জমত, তার থেকে অনেক ওপরে এখন বরফ জমায় (এই বরফ গলা জলই গঙ্গার পানিপ্রবাহের প্রধান উৎস), গঙ্গার পানিপ্রবাহ উজানের দেশ (টঢ়ঢ়বৎ জরঢ়ধৎরধহ ঝঃধঃব) ভারতেই অনেক কমে গেছে। তাই গঙ্গার পানিচুক্তির মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে যেটুকু পানিপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা ভারত থেকে আমরা আদায় করতে পেরেছি, তার গুরুত্ব কম নয়। এই চুক্তি যেহেতু একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি, এর শর্ত বা ধারাগুলো অমান্য করার অধিকার বা ক্ষমতা উজানের দেশ ভারতের নেই। চারদলীয় সরকারও স্বীকার করেছে, ভারত এই পানিচুক্তির ধারাগুলো মোটামুটি মেনেই চলেছে। এই চুক্তির মাধ্যমে আমরা আমাদের (শুষ্ক মৌসুমে অতি জরুরি) ন্যূনতম ৪০ হাজার কিউসেক পানিপ্রাপ্তি নিশ্চিত করেছি। কৃষিভিত্তিক আমাদের দেশের জন্য এটা একটা বড় অর্জন। আরো অনেক নদী ভারত থেকে এসে আমাদের দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সাগরে মিশেছে। ‘গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি’ আমাদের এই আইনি ও নৈতিক ভিত্তি দিয়েছে যে অন্যান্য আন্তর্জাতিক নদীর পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ভারতকে আমাদের পানির ন্যায্য হিস্সা নিশ্চিত করতে হবে।
পার্বত্য শান্তিচুক্তি তো একটি অনন্যসাধারণ চুক্তি; যা দেশের এক-দশমাংশ ভূখণ্ডজুড়ে প্রায় দুই দশক ধরে চলমান প্রচণ্ড অশান্তি ও যুদ্ধাবস্থার অবসান ঘটিয়েছে। দেশের জন্য একটা স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর উল্লেখযোগ্য এক অংশকে নিয়মিত মোতায়েন রাখতে যে বিরাট ব্যয়ভার রাষ্ট্রকে বহন করতে হতো, শান্তিচুক্তির ফলে কেবল যে সে অর্থই সাশ্রয় হচ্ছে তা নয়; সামরিক-বেসামরিক বহু প্রাণেরও অর্থহীন মৃত্যুরও এতে পরিসমাপ্তি ঘটেছে।
পার্বত্য শান্তিচুক্তির কয়েক মাস পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ চুক্তি নিয়ে একটি আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ। অন্যতম বক্তা ছিলাম আমি। সে সভায় অনেক বিদগ্ধ ব্যক্তি ও সচিব উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, আমার বন্ধু ড. সামাদ, ড. মশিউর রহমান, ওয়ালিউল ইসলাম ছিলেন বলে মনে পড়ছে। পেছনের দিকে ড. কামাল সিদ্দিকীকেও দেখেছিলাম। আদিবাসীদের অধিকার, সাধারণত উন্নয়নকামী ও উন্নত দেশগুলোর রাষ্ট্রশক্তি ও সমতলে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ স্বীকার করতে বা মেনে নিতে চায় না। এই চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রশক্তি কর্তৃক তা মেনে নেয়ার এক অনন্য ও অসাধারণ উদাহরণ স্থাপিত হলো। একই সঙ্গে একটি বিস্তীর্ণ-বিক্ষুব্ধ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠারও সূচনা হয়েছে। উন্নত দেশগুলো এখন আদিবাসীদের বিভিন্ন অধিকার নিয়ে বেশ সোচ্চার; যেমন : উত্তর আমেরিকা, অস্ট্র্রেলিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ; কিন্তু এরাই যখন উত্তর আমেরিকা ও অস্ট্র্রেলিয়ায় বসতি স্থাপন ও উপনিবেশ সম্প্রসারণ করছিল, তখন সেখানকার আদিবাসীদের সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। আজকের আমেরিকায় আদিবাসীদের দেখতে হলে ‘রিজার্ভ’-এ যেতে হয়। তারা প্রায় বিলীন হয়েছে। আমি আরো বলেছিলাম, উন্নত-উন্নয়নশীল নির্বিশেষে যেসব দেশেই জাতিগত দ্ব›দ্ব রয়েছে, তারা দ্ব›দ্ব নিরসনের একটি মডেল হিসেবে পার্বত্য শান্তিচুক্তিকে গ্রহণ করতে পারে। শান্তিপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এটি একটি অভূতপূর্ব ও বিরল মডেল। আমি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছিলাম, ‘নোবেল একাডেমি’ অনেক তুচ্ছ বিষয়ে অনেক ব্যক্তিকে ‘নোবেল শান্তি পুরস্কারে’ ভূষিত করেছে। প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়নি; তবু যুযুধান পক্ষগুলোর নেতাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। শেখ হাসিনা এই পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হতে পারেন; কারণ ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি’ স্বাক্ষরের মাধ্যমে তিনি কেবল ‘বিচক্ষণতা’রই পরিচয় দেননি, বিরাট সাহসেরও পরিচয় দিয়েছেন; কারণ বিভিন্ন মহলের অপপ্রচার ও অজ্ঞতার কারণে আমাদের মতো সমতলবাসীর অনেকে ভেবে বসেছিল, ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তি’ হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বুঝি বাংলাদেশের বাইরে চলে যাবে।

দুই.
স্বাধীনতা-উত্তর, বিশেষত পঁচাত্তর-উত্তর বাংলাদেশে যে কয়টি সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে সার্বিকভাবে তাদের অর্জন (অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে) বিবেচনা করলে শেখ হাসিনা সরকারই (১৯৯৬-২০০১) সবচেয়ে বেশি সাফল্যের অধিকারী। বঙ্গবন্ধু সরকারের অর্জন এখানে বিবেচনায় নেয়া হয়নি; কারণ বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক ধ্বংস করা বিধ্বস্ত একটি দেশ পেয়েছিলেন। সেই বিধ্বস্ত দেশকে তিনি যে নতুন প্রাণদান করতে পেরেছিলেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মাত্র সাড়ে ৩ বছরে কয়েক হাজার কালভার্ট, কয়েকটি বিশাল ব্রিজ পুনর্নির্মাণ করে দেশের যোগাযোগব্যবস্থা স্বাভাবিক করা হয়েছিল। দেশে ফিরে আসা এক কোটি শরণার্থীকে পুনর্বাসিত করা হয়েছিল। ১১ মাসের মধ্যে অসাধারণ একটি সংবিধান রচনা করে দেশবাসীর হাতে অর্পণ করেছিলেন তিনি। দেশের অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনার জন্য একটি তুলনাহীন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, যে পরিকল্পনাকে রূপদানেরও সূচনা হয়েছিল। ১৯৭৩ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় বাংলাদেশজুড়ে যে সর্বগ্রাসী মারাত্মক বন্যা হয়, তার ফলে আউশ-আমন প্রায় পুরোটাই নষ্ট হয়ে যায়; ফলে দেশব্যাপী খাদ্য সংকট দেখা দেয়। এই খাদ্য সংকটে কোনো খাদ্য সাহায্য পাওয়া যায়নি; কারণ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের বিরোধিতা করেছিল। তদুপরি কিউবার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কও মার্কিন প্রশাসনকে রুষ্ট করে; তাই বাংলাদেশ অভিমুখী খাদ্য জাহাজকে তারা সমুদ্রপথ থেকেই ফিরিয়ে নেয় বলে জানা যায়। এছাড়া ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে আরব দেশগুলো ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম হঠাৎ করেই প্রায় এক ডলার থেকে ১৬-১৭ ডলারে উন্নীত করে। তাদের এই পদক্ষেপ যে অযৌক্তিক ছিল তা নয়; কিন্তু তা বিশ্ব অর্থনীতিকে বিপুলভাবে নাড়া দেয়, বিশ্বজুড়ে মন্দা মূল্য উল্লম্ফন বা ঝঃধমভষধঃরড়হ দেখা দেয়; আমি সে সময় উত্তর আমেরিকায় পিএইচডি করছিলাম; দেখেছি যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডার মতো উন্নত অর্থনীতিকেও একই সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতি ও মন্দা কীভাবে আঘাত হেনেছিল, পর্যুদস্ত করেছিল। বাংলাদেশ তখন সবেমাত্র যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতির ধাক্কা কাটিয়ে উঠছিল। শিল্প ও সেবা খাতে প্রবৃদ্ধির সূচনা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল অর্থনীতির ওপর ঝঃধমভষধঃরড়হ-এর আঘাত খুবই বড়ভাবে পড়েছিল। জিনিসপত্রের দাম হঠাৎ করেই গগনচুম্বী হয়। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের বিরোধী শক্তি, পরাজিত শক্তি এর সুযোগ নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। বাংলাদেশের আলোকোজ্জ্বল ইতিহাসে হঠাৎ অমানিশা নেমে আসে। বঙ্গবন্ধু কৃষি উন্নয়নে যে বিশাল উদ্যোগ নিয়েছিলেন তার ফলে ’৭৫-এ কৃষির বিশেষত খাদ্যশস্যের বিপুল বা বাম্পার ফলন হয়েছিল; এর ফলভাগী হয়েছিল জিয়া সরকার। জিয়া সরকার এই সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতিকে যথার্থ উন্নয়নের খাতে প্রবাহিত করতে ব্যর্থ হয়। গড়হবু রং হড় ঢ়ৎড়নষবস বলে তিনি যে এক ঋণখেলাপি অর্থনীতির সূচনা করেছিলেন তা বাংলাদেশকে প্রকৃত শিল্পায়নের পথে এগিয়ে নেয়ার পরিবর্তে বাংলাদেশের ব্যাংকসমূহে সঞ্চিত জনগণের অর্থ লুণ্ঠনের মাধ্যমে এক লুটেরা অর্থনীতির জন্ম দেয়; যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এই অর্থনীতিতে দরিদ্র জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি; অর্থনীতিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার বিন্দুমাত্র প্রয়াসও এতে ছিল না।
১৯৯৬ সালে দীর্ঘ দুই দশক পরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যখন জনগণের যথার্থ একটি সরকার প্রতিষ্ঠিত হলো, তখন তার সামনে যে প্রাথমিক দায়িত্ব খুব জোরালোভাবে দেখা দিয়েছিল তা হলো দীর্ঘকাল সঞ্চিত আর্থসামাজিক জঞ্জাল পরিষ্কার করে দেশকে দারিদ্র্যের নাগপাশ থেকে মুক্ত করে প্রকৃত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাওয়া; দেশের প্রতিটি মানুষকে তার মনুষ্যত্বকে বিকশিত ও প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ দেয়া। উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায়, এই ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার অর্জন ন্যূন নয়; বস্তুত ১৯৭৫-এর পরে এ পর্যন্ত যত সরকার ক্ষমতাসীন হয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারই তার মধ্যে সবচেয়ে সার্থক। কেন সার্থক, তা ইতোমধ্যে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

তিন.
অবশ্য এখানে বলা প্রয়োজন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে শেখ হাসিনার পরিপূর্ণ মূল্যায়নের সময় এখনো আসেনি; কারণ এখনো তিনি রাজনীতির মধ্যা?হ্ন-গগনে রয়েছেন, দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনায় আসীন হয়েছেন। তবে একটি কথা নিঃসন্দেহে বলা চলে, ১৯৮০-এর দশকে তাকে যখন আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ অলংকৃত করতে নিয়ে আসা হয়েছিল, তখন সে উদ্যোগের পেছনে যারা ছিলেন, তারা ভেবেছিলেন, তিনি একটি অলংকারই থাকবেন। তাকে সামনে রেখে তারাই আওয়ামী লীগকে পরিচালনা করবেন এবং আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদার হলে তারাই প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী হবেন। শেখ হাসিনা প্রথম দিকে তাদের যথেষ্ট মান্য করলেও, তাদের কথামতো চললেও, যখন বুঝতে পারলেন, এরা তাকে ক্রীড়নক হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে, তখন তিনি আর তাদের মেনে চলতে পারেননি। এই বন্ধনপাশ ছিন্ন করতে একপর্যায়ে যখন তিনি বাধ্য হলেন, তখন থেকেই তিনি আওয়ামী লীগের প্রকৃত কাণ্ডারি হয়েছেন। এরপর থেকে তিন দশক ধরে গণতন্ত্রের জন্য যে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম চলেছে, তার প্রকৃত বা প্রধান নেতৃত্বে তিনিই ছিলেন এবং আজো আছেন। তাকে ঘিরেই এখনো আবর্তিত হচ্ছে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, সাধারণ মানুষের সাধারণ স্বপ্ন- স্বাধীনতার পরম আকাক্সক্ষা, নিজের মনুষ্যত্বকে পূর্ণতা দেয়ার পরম আর্তি।
তার পিতার মতো শেখ হাসিনার মধ্যে জনগণের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার এক অদম্য বাসনা দেখা যায়। তিনি বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থে যে কোনো বিপদের সম্মুখীন হতে ভয় পান না; তার পিতার মতোই বিপদকে মোকাবিলা করেন দুই হাত বাড়িয়ে। বাংলাদেশের জনগণের কাছে তিনি দু-দুবার ফিরে এসেছেন মৃত্যুভয়কে, কারাগারের ভয়কে তুচ্ছ করে : একবার ১৯৮১-তে, আরেকবার ২০০৮-এ। তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষের কল্যাণচিন্তাই অনির্বাণ। সর্বশেষ নির্বাচনে সাধারণ জনগণ বিশেষভাবে নতুন প্রজন্ম তাকে তাদেরই ভেবে, গণতন্ত্রের দীপ্তশিখা হিসেবে, মানুষের কল্যাণদাত্রী হিসেবে বিপুলভাবে বিজয়ী করেছে, বরণ করে নিয়েছে। এই বিজয়কে সার্থক করার, পূর্ণতা দেয়ার দায়িত্ব কেবল তার একার নয়; তার মন্ত্রিসভার, তার দলের; এককথায়, মানুষের মনুষ্যত্বে বিশ্বাসী সব নাগরিকের, সব মানুষের।

ড. অনুপম সেন : শিক্ষাবিদ। উপাচার্য, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়