গণপিটুনি থেকে বাঁচতে ৯৯৯-এ চোরের কল

আগের সংবাদ

পরিবারের আড়ালে তৎপর দল > খালেদার বিদেশযাত্রা : আলোচনায় জার্মানি > আশাবাদী দল ও পরিবার > অল্প সময়ে সিদ্ধান্ত

পরের সংবাদ

আপনি আজ আকাশ ছুঁয়েছেন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের মানুষের কাছে শেখ হাসিনা আজ এক মহান নেতা। বিশেষ করে গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার যেসব সুকর্ম পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের সমৃদ্ধ তালিকা তা তাকে বাংলাদেশের মানুষের কাছে এক মহান নেতার স্বীকৃতি এনে দিয়েছে। তার কর্মের সুবাতাস আজ প্রান্তিক জনগণের দুয়ারে দুয়ারে যেমন পৌঁছে গেছে তেমনি তিনি মহাকাশেও উড়িয়েছেন বাংলাদেশের পতাকা। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে করেছেন উন্নয়নের রোল মডেল। তাই আজ বিশ্বনেতারাও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। আজকাল নিত্যই বিশ্ব প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বোচ্চ কর্তা-ব্যক্তিরা নানা অভিধায় ভূষিত করছেন আমাদের শেখ হাসিনাকে। তাই আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের মৌলিক উপাদান, গুণাবলি এবং এর মাধ্যমে মহৎ যে অর্জন তা বিশ্লেষণের দাবি রাখে। একজন মানুষ হঠাৎ করে কোনো জাতির নেতা হয়ে বসতে পারেন না। নেতৃত্ব গঠনের বহু ক্যারিশমেটিক ধাপ পাড়ি দিয়ে এবং জাতির ক্রান্তিকালের প্রয়োজনে সঠিক সময়ে সঠিক কর্ম পরিকল্পনা ও কর্মচর্চার সফল বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে একজন নেতৃত্ব গড়ে ওঠে। এই যে গড়ে ওঠা, এতে প্রয়োজন অনেকগুলো গুণের সমন্বয়, যাকে আমরা নেতৃত্বের গুণাবলি বলি। আর নেতৃত্বের গুণাবলি চর্চার ক্ষেত্রে একটি জাতি গঠনের মৌলিক উপাদানগুলো ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। আমরা বলতে পারি জননেত্রী শেখ হাসিনার রাজনীতির পাঠ শুরু হয়েছিল একেবারে টুঙ্গিপাড়ার আঁতুড় ঘর থেকে বঙ্গবন্ধুর মতো মহান একজন রাজনৈতিক নেতার সন্তান হয়ে জন্ম নিয়ে। ঘর থেকে শুরু করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ হয়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হওয়া থেকে আজকের প্রধানমন্ত্রী, ইতিহাসের নানা পর্যায় ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আজকের মহান নেতা। এই ধাপগুলো কিন্তু মসৃণ ছিল না একেবারেই। তাই শেখ হাসিনার নেতৃত্ব গুণাবলি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনটি বিষয় সামনে চলে আসছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের মৌলিক উপাদান, গুণাবলি এবং অবদান। নিচের আলোচনায় আমরা দেখব যা খুবই স্বাভাবিক, আবশ্যিক, প্রয়োজনীয় এবং প্রায়োগিক।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ : বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির মূল দর্শন ছিল স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে বাঙালির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি অর্জন। তিনি রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে বেছে নিয়েছিলেন। এই আদর্শকে তিনি রাষ্ট্রীয় আদর্শেও পরিণত করেছিলেন। এরই আলোকে ১৯৭২-এর সংবিধানে রাষ্ট্রের চার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয় জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে। বাংলাদেশের মতো অনগ্রসর মুসলিম প্রধান দেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক আদর্শের এই স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে ছিল একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে নেই কিন্তু তার আদর্শ, তার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখেছেন তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। সংবিধানে চার মূলনীতিকে পুনঃস্থাপন করে বস্তুত বঙ্গবন্ধুর আদর্শকেই ফিরিয়ে এনেছেন শেখ হাসিনা। আদর্শ মানুষ হতে হলে সৎ, নিষ্ঠাবান, পরিশ্রমী, পরোপকারী, মানবদরদি, সহমর্মী, নির্লোভ, নিরহংকারী, সাহসী হতে হয়। বঙ্গবন্ধু ছিলেন আক্ষরিক অর্থেই একজন আদর্শ মানুষ, আদর্শ নেতা। বাংলার শোষিত, নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের মুক্তিই ছিল তার জীবনের মূল লক্ষ্য ও আদর্শ। যে লক্ষ্য বাস্তবায়নে তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। বাংলার মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বারবার জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। ঠিক তেমনি শেখ হাসিনাও জেল-জুলুম, বারবার হত্যা চেষ্টাসহ শত বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে একই আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে। অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন একটি ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার ব্রত নিয়ে। বঙ্গবন্ধুর মতো তিনিও সৎ, নিষ্ঠাবান, পরিশ্রমী, পরোপকারী, মানবদরদি, সহমর্মী, নির্লোভ এবং সাহসী। তাই বলা যায়, বঙ্গবন্ধুর আদর্শই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সব গুণাবলির মূল ভিত্তি।
বঙ্গবন্ধুর কন্যা : আমাদের কাছে শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় এবং কাছের পরিচয়টি হচ্ছে তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। এ উপাদানটি শেখ হাসিনার একটি শক্তিও বটে। বঙ্গবন্ধু তার সারাজীবনের আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে আমাদের একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন। তাই তিনিই আমাদের জাতির পিতা। বিগত হাজার বছরেও এমন মহান এবং শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর কোনো বাঙালি নেতৃত্বের দ্বারা ঘটেনি। তাই বঙ্গবন্ধুকে আমরা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বলে থাকি। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে তথা আস্থা রেখে এ দেশের জনগণ হানাদারদের বিরুদ্ধে জীবন বিলিয়ে দিয়েছিল অকাতরে। বঙ্গবন্ধুও তার জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন বাঙালিকে তিনি কতটা ভালোবাসতেন। বাংলার জনগণ বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে তাই শেখ হাসিনাকেও ভালোবাসে। ফলে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ওপরও বাংলাদেশের জনগণের সর্বোচ্চ আস্থা সৃষ্টি হয়েছে, যার প্রায়োগিক সফলতা স্পষ্টতই দৃশ্যমান। জনগণের অগাধ আস্থা আর ভালোবাসা নিয়েই বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু ছিলেন দৃঢ়চেতা ও সাহসী। বঙ্গবন্ধুকন্যাও সাহসী ও দৃঢ়চেতা। জনগণ বিশ্বাস করে বঙ্গবন্ধু পেরেছেন, তাই শেখ হাসিনাও পারবেন।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা : মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আমাদের জাতীয় জীবনে সবচেয়ে গৌরব ও অহঙ্কারের বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনে যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধন করছে। বাংলাদেশের জনগণের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে এমন একটি মূল্যবান বোধ, যাকে ধারণ করে বাঙালি মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। যার মূল বিষয়গুলো হচ্ছে বাংলাদেশ হবে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ, যার সমাজব্যবস্থা হবে শোষণমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক এবং উন্নত কল্যাণ রাষ্ট্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিনিয়ত মুক্তিযুদ্ধের মূল বোধকে হৃদয়ে ধারণ করে এবং লালন করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন।
বাঙালিয়ানা এবং সাংস্কৃতিক বোধ : প্রথমত শেখ হাসিনা চলনে, বলনে , কথনে একজন প্রকৃত বাঙালি এবং তিনি প্রকৃতই সংস্কৃতিবান, ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ঈঁষঃঁৎবফ। তিনি আজ বাঙালি সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক। তিনি আজ বাংলার মুখ, বাংলার প্রতিচ্ছবি। বাংলার আলো, বাতাস, জল, মাটিতে শেখ হাসিনার বেড়ে ওঠা। নদীমাতৃক বাংলাদেশে, ষড়ঋতুর বাংলাদেশে কখনো মাতৃরূপে, কখনো কন্যারূপে, কখনো বা দেবীরূপে মমতা-ভালোবাসা আর কর্ম দিয়ে শত সংকটের মাঝেও জনগণের হৃদয় জয় করার সামাজিক সূত্রগুলো শিখে নিয়েছেন পরিবার থেকেই। ি মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ, অতিথিপরায়ণতা হচ্ছে বাঙালির আদর্শ। শিক্ষিত সংস্কৃতিবান জনগণই হবে তার প্রধানতম শক্তি, যে শক্তি গতিময়, সৃষ্টিশীল, অপ্রতিরোধ্য। তাই বলা যায়, শেখ হাসিনার সব গুণাবলিতে বাঙালি সংস্কৃতির প্রভাব যথেষ্ট গভীর।
গভীর দেশপ্রেম : শেখ হাসিনা নিজ দেশের জন্য কোনো কাজ করতে গিয়ে অর্জিত যত গুণাবলির প্রয়োগ করে থাকেন না কেন তার আরো একটি মূল উপাদান হচ্ছে গভীর দেশপ্রেম। বিষয়টা এমন যে উনি সাহসী কারণ উনি দেশপ্রেমিক, উনি পরিশ্রমী কারণ উনি দেশপ্রেমিক। দেশপ্রেমিক না হলে তার নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্যে এতগুলো গুণের সমাহার দেখা যেত কিনা চিন্তার দাবি রাখে।
মানবিকতা : শেখ হাসিনার নেতৃত্ব গুণাবলির মধ্যে অনন্য একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মানবিকতা। এই গুণটি শেখ হাসিনাকে দিয়েছে স্বাতন্ত্র্যতা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় নিপীড়িত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের কথা। মানবিকতার এই মহৎ কর্মটি তাকে এনে দিয়েছে ‘গড়ঃযবৎ ড়ভ যঁসধহরঃু’ উপাধি। বিশ্বনেতারা আজ তাকে মানবতার নেত্রী বলে শ্রদ্ধা করছেন।
মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা : মানুষের সেবা করাই হচ্ছে একজন রাজনৈতিক নেতার শর্তহীন ব্রত। মানুষের প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসা না থাকলে, দায়িত্ববোধ না থাকলে এই মহৎ ব্রত পালন সম্ভব নয়। শেখ হাসিনার অনন্য গুণাবলিগুলোর আরো একটি মৌলিক উপাদান এবং ভিত্তি হচ্ছে তার মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা। ভালোবাসা থেকেই দায়িত্বের সৃষ্টি আর দায়িত্ব থেকে আসে পরিশ্রম আর কর্তব্যবোধ।
গুণাবলি ও অবদান : উপরোক্ত আলোচনায় যেসব মৌলিক উপাদান আলেচিত হয়েছে সে উপাদানগুলো থেকে উৎপন্ন ব্যক্তি শেখ হাসিনার এবং নেত্রী শেখ হাসিনার নানা বৈচিত্র্যময় গুণাবলির প্রকাশ আমরা দেখতে পাই। তার নেতৃত্বের এসব গুণাবলির সফল প্রয়োগের সুফল পাচ্ছে দেশের জনগণ। যেমন শেখ হাসিনা একজন সাহসী, দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক। নানা সংকট থাকা সত্ত্বেও তার সাহসিকতা আর দক্ষতায় আজ দেশের মানুষ পদ্মা সেতুর সুফল ভোগ করছে। কমিউনিটি ক্লিনিক, আশ্রয়ণ প্রকল্প, সর্বজনীন পেনশন স্কিম- এ তিনটি জনবান্ধব কর্মসূচির উদ্যোগ, পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন শেখ হাসিনাকে দেশের মানুষ শত বছর মনে রাখবে। বিভাগ থেকে বিভাগে হাজার কিলোমিটার চার লেনের প্রশস্ত রাস্তা, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, উড়াল সড়ক, নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে শুরু করে দেশের ডিজিটালাইজেশন সব কিছুই শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের অবদান। দেশে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা, বিদ্যালয়, হাজার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরিসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজে দেশের অর্থনীতি আজ বিশ্ব সূচকে অগ্রগামী। এ রকম অনেক উদাহরণে শেখ হাসিনার অবদানের বিষয়টি প্রমাণিত এবং স্বীকৃত। তিনি সৎ, তিনি নিষ্ঠাবান, তিনি সর্বদা কর্মতৎপর পরিশ্রমী। মেধা, শ্রম আর সৃজনশীলতা শেখ হাসিনার চারিত্র্যিক দৃঢ়তার এক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। তিনি শিক্ষিতা, উন্নত চরিত্রের অধিকারী। তিনি বিনয়ী, তিনি নম্র, তিনি সংস্কৃতিবান। শেখ হাসিনা উৎপাদনশীলতায় দেশকে করেছেন উন্নয়নের রোল মডেল।
শুভ জন্মদিন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আপনি আজ আকাশ ছুঁয়েছেন।

আশফাক রহমান : কবি ও কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়