প্রধানমন্ত্রী ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছেছেন

আগের সংবাদ

ব্যাখ্যা চায় ক্ষুব্ধ গণমাধ্যম : গণমাধ্যমের বিরুদ্ধেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকির প্রতিক্রিয়া

পরের সংবাদ

ছাত্রলীগ বদলাবে যদি আওয়ামী লীগ বদলায়

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের কী কী ক্ষতি করে গিয়েছিলেন, তা দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে দেশ ও জাতির সামনে। তিনি সত্যি সত্যি রাজনীতিকদের জন্য রাজনীতিকে এতই জটিল করে দিয়ে গিয়েছিলেন, সে অভিশাপ থেকে, সে কুপ্রভাব থেকে দেশ ও জাতি এখনো মুক্ত হতে পারছে না। আমাদের জাতীয়তাবাদী চেতনায় গোঁজামিল ঢুকিয়ে দেয়া, রাজনীতিতে একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে পুনর্বাসিত করা, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চালু করা, দেশের সংবিধান থেকে মূল চারনীতিকে অপসারণ করা, রাষ্ট্রের মৌলিক আদর্শ বদলে ফেলা, পার্বত্য চট্টগ্রামে সমতল ভূমির মানুষদের নিয়ে গিয়ে সেখানে জোর করে পুনর্বাসিত করা এবং রাজনীতির সঙ্গে সঙ্গে এ দেশের ঐতিহ্যবাহী সংগ্রামী ছাত্র রাজনীতিকে আদর্শহীন ও বিপথগামী করে তোলা।
আজ দেশে যে সাম্প্রদায়িকতার উত্থান, মৌলবাদ ও ধর্মীয় রাজনীতির প্রাধান্য এর জন্য দায়ী জিয়াউর রহমান। আজ দেশের ছাত্ররাজনীতিতে যে অবক্ষয়, নীতিহীনতা এবং রাজনৈতিক দলে লেজুড়বৃত্তি সে ধারাও তৈরি করেছিলেন জিয়াউর রহমান। কাজেই বাংলাদেশে এসব সমস্যা যতদিন থাকবে, ততদিন এর জন্য দায়ী জেনারেল জিয়া ও তার সৃষ্ট রাজনৈতিক ধারার কথা আলোচিত না থেকে পারে না। ‘হিজবুল বাহার’ জাহাজে মেধাবী শিক্ষার্থীদের সিঙ্গাপুরে প্রমোদভ্রমণে নিয়ে গিয়ে তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে এবং পরবর্তী সময়ে অর্থ, সমর্থন ও সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে তিনি তার দলের ছাত্র সংগঠন গঠন করেছিলেন। বহুদলীয় গণতন্ত্রের দাবিদার এই জেনারেল শুধু স্বাধীনতাবিরোধীদেরই রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেননি, তিনি রাজনীতিরও বড় ক্ষতি করেছিলেন, কোনো রাজনৈতিক দলে ছাত্র সংগঠন হিসেবে রেজিস্ট্রি করার নিয়ম চালু করে। তার আগে বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠনগুলো কোনো রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন হিসেবে ছিল না। ছাত্র সংগঠনগুলোর আলাদা রাজনীতি করার সুযোগ ছিল। জিয়াউর রহমান মোনায়েম খানের পাঁচ পাত্তুর মতো অভি-নীরুদের সৃষ্টি করেছিলেন। ছাত্ররাজনীতিকে কলুষিত করার ধারা সেই যে শুরু হয়েছিল, তার চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করেছিল নব্বইয়ের গণআন্দোলনের পরপরই।
মুজিববাদী ছাত্রলীগকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকা নগরী থেকে বিতাড়নের লক্ষ্যে জিয়া ছাত্ররাজনীতিতে অর্থ ও অস্ত্রের অবাধ সরবরাহ বৃদ্ধি করেছিলেন। সে উপাখ্যান বড় দীর্ঘ। তা আজ আলোচনার অবসর নেই। তবে নব্বইয়ের আন্দোলন কীভাবে আবার ছাত্ররাজনীতির ক্ষতি করেছিল, তা কিছুটা তুলে ধরি।
সরকারি অর্থ-সুযোগ-সুবিধা ও সমর্থনে তিনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল গড়ে তুললেও তার সুফল বেশিদিন ভোগ করতে পারেননি। ১৯৮১ সালে এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানে তিনি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে মৃত্যুবরণ করেন। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর প্রায় একই কায়দায় ক্ষমতা দখল করেন আরেক জেনারেল এরশাদ। এরশাদ যেহেতু বিএনপির হাত থেকেই ক্ষমতা কেড়ে নেন সেহেতু পরবর্তী সময়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের মতো ছাত্রলীগকেও তাদের অস্তিত্ব রক্ষার তীব্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হয়েছিল। ৭০ দশকের শেষে এবং ৮০ দশকের শুরুতে এ দেশে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের রাজনীতি করা ছিল অনেকটা দুরূহ-কঠিন। শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণের পর থেকে দল সংগঠিত ও চাঙ্গা হয়ে উঠতে থাকে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগের উজ্জ্বল ভূমিকা রাখার সুযোগ তৈরি হয়। এরশাদবিরোধী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদে ছাত্রলীগ গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব প্রদান করে। ’৯০-এর ৬ ডিসেম্বর এরশাদের পতন হলে সে সময় আন্দোলনরত ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতারা ‘স্বৈরাচারের দোসর’ নামে এরশাদের আনুকূল্য পাওয়া দেশের ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, সরকারি আমলাদের ‘কালো তালিকা’ প্রকাশ করতে থাকে। ছাত্রনেতাদের এমন উদ্যোগে এরশাদের অনুগ্রহভাজন ও সুবিধাপ্রাপ্ত তথা এরশাদের দালালদের অনেকেই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এদের মধ্যে অনেকেই তখন নব্বইয়ের গণআন্দোলনের ছাত্রনেতাদের কাউকে কাউকে ধরে অর্থের বিনিময়ে সেই কালো তালিকা থেকে নিজেদের নাম বাদ দেয়ার চেষ্টা চালায়। ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো দেশের অনেক স্থানে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দলমত নির্বিশেষে ছাত্রনেতারা টাকার বিনিময়ে নীতি-নৈতিকতাকে বিসর্জন দেয়ার নজির স্থাপন করে এবং রাতারাতি অনেক ছাত্রনেতা লাখপতিতে পরিণত হন। বাংলাদেশে সংগ্রামী ছাত্ররাজনীতির ঐতিহ্যে ধস নামে মূলত সে সময় থেকে। এরপর থেকে ছাত্ররাজনীতি ক্ষমতা ও অর্থের বলয়ে থাকতে চেয়ে পঙ্কিলতার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে শুধু।
দুই.
কোন্দল-মারামারি-গ্রুপিংসহ নানা কারণে বেপরোয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটিকে শেষ পর্যন্ত বিলুপ্ত ঘোষণা করতে বাধ্য হলো কেন্দ্রীয় কমিটি। একের পর এক নিন্দনীয় কাজের জন্ম দেয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সর্বশেষ গত রবিবার সাংবাদিক পিটিয়ে আবারো আলোচনায় এসেছে। এ ছাড়া গত কিছুদিন ধরে লাগাতার সংঘর্ষের কারণে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
গত রবিবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড পেজে দেয়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই চবি ছাত্রলীগের দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটিতে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের রেজাউল হক রুবেলকে সভাপতি ও মার্কেটিং বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের ইকবাল হোসেন টিপুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কমিটি হওয়ার আড়াই বছর পর বিলুপ্ত করা হলো।
কমিটি গঠনের পর দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন, বগি রাজনীতির সংস্কৃতি বন্ধ করে হলভিত্তিক রাজনীতি চালু করা, অনুষদ কমিটি গঠনসহ নানা প্রতিশ্রæতি দেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। তবে এসব প্রতিশ্রæতি পূরণ করতে না পারলেও এ কমিটি বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে বছরজুড়ে।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সাড়ে ৩ বছরে একটি বর্ধিত সভা করতে পারেনি এই কমিটি। হল ও অনুষদ কমিটির আশ্বাস দিয়ে পার করেছে বছরের পর বছর। কখনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে গিয়ে আন্দোলন, কখনো নিজেদের কমিটির জন্য ক্যাম্পাস অবরুদ্ধ, কখনো আবার নিজেদের গ্রুপ-উপগ্রুপের কোন্দলে সংঘাত- এ নিয়েই চলছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের এ ধরনের আচরণে শঙ্কিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
তুচ্ছ ঘটনায় কয়েক দিন ধরে সাতবার সংঘাতে জড়িয়ে আবারো আলোচনায় এসেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত ১৪ বছরে শৃঙ্খলাভঙ্গ ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকায় ছাত্রলীগের অন্তত ১৯০ জনকে বহিষ্কার করেছে, যদিও তাতে অপরাধ থামেনি।
এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরা সময়ের দাবি বলে মত প্রকাশ করেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। গত শুক্রবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের মোবাইল ফোনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘর্ষের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান সুজন।
এ সময় সুজন বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ছাত্রলীগের সে গৌরবময় ইতিহাসকে ভূলুণ্ঠিত করছে কতিপয় ছাত্রনেতা। তুচ্ছ কারণে কয়দিন পর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলছে তারা। বছরের পর বছর ধরে পড়ালেখার নামে ক্যাম্পাসে অবস্থান করে ক্যাম্পাসকে তাদের স্বার্থ হাসিলের ঠিকানা হিসেবে পরিণত করেছে। তাদের এহেন আচরণে দল ও সরকার চরমভাবে বিব্রত।’ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শুধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নয় সারাদেশে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত ত্যক্ত-বিরক্ত।
তিন.
তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে ছাত্রলীগ বা অন্য ছাত্র সংগঠনের এই অবক্ষয়ের জন্য শুধু তাদের ঘাড়ে দোষ চাপাতে রাজি নই। আমি মনে করি, বর্তমানে আমাদের মূল রাজনীতির যে দশা তা থেকে মুক্ত বা বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে না ছাত্র রাজনীতি। ছাত্র রাজনীতির বর্তমান অবস্থা বদলাতে হলে, বিশেষ করে বলি ছাত্রলীগের এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে মূল দল আওয়ামী লীগকেই পরিবর্তিত হতে হবে। অনেক আগে আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ বদলালে বাংলাদেশ বদলাবে।’ তার এই উক্তিটি অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ। শুধু ছাত্রলীগ নয়, আমিও বিশ্বাস করি বাংলাদেশকে বদলাতে হলে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে তা আওয়ামী লীগকেই করতে হবে। যেটি বিএনপি-জামায়াত বা অন্য দলের পক্ষে সম্ভব নয় এবং সেটি তারা চাইবেও না। মূল দলে নেতাদের মধ্যে অধিকাংশের ভাবমূর্তি ভালো না থাকলে, স্বচ্ছ না থাকলে, অনুকরণীয় না থাকলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কাকে অনুসরণ করবে? তাদের সামনে সৎ, ত্যাগী, দেশপ্রেমিক এবং দল ও দলনেতার প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মানবোধসম্পন্ন নেতা না দেখলে তারা কার কাছ থেকে, কোথা থেকে শিক্ষা নেবে-দীক্ষা নেবে।
বাংলাদেশের দীর্ঘ মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং এই দেশের সব সফল সংগ্রামের ইতিহাস ছাত্রলীগকে বাদ দিয়ে লেখা যাবে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজের গড়া এই ছাত্র সংগঠনের অতীত ইতিহাস বড় উজ্জ্বল। কিন্তু ১৫ বছর ধরে এই সংগঠনটি একের পর এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। নিজেরা নিজেদের মেরেছে আর সব ধরনের অনৈতিক কাজে নিজেদের জড়িয়েছে এবং এভাবে বছরের পর বছর নানা অপকর্ম করে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে এবং অনেক সাফল্যকে ¤øান করে দিয়েছে। কেন্দ্র থেকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এখন নিজেদের মধ্যে কোন্দল মারামারি ছাড়া ভালো কোনো কাজ, গঠনমূলক কোনো কাজে তাদের অধিকাংশই জড়িত নয়। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করায় এখন কোথাও ছাত্রলীগের কর্মীরা ভালো কিছু করলেও তার স্বীকৃতি ও মর্যাদা তারা পায় না। উপরন্তু ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের শিকার হতে হয় তাদের।
এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের পথ বের করতে হবে এবং তা করতে হলে সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপও নিতে হবে। এর মধ্যে সংগঠনটিকে স্বাধীনভাবে চলতে দিতে হবে। কাউন্সিলের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেতা নির্বাচনের সুযোগ করে দিতে হবে। মুরব্বি সংগঠনের কারো কারো মাতব্বরি বন্ধ করতে হবে। তাদের হাতে নির্দিষ্ট কর্মসূচিভিত্তিক কাজ দিতে হবে। এখন এই সংগঠনের লাখ লাখ কর্মীর মূলত কোনো কাজ নেই। বড় ভাইদের সন্তুষ্ট করা, তাদের সঙ্গে সেলফি তোলা আর তাদের ছবি দিয়ে ব্যানার ফেস্টুন করা ছাড়া ছাত্রলীগ কর্মীদের মূলত কোনো কাজ নেই, কোনো কর্মসূচি নেই। তাদের রাজনৈতিক শিক্ষা নেই। ক্লাস নেই। তাদের ভেতর সংস্কৃতিচর্চা নেই। তাদের কেউ সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়। সামাজিক কাজেও নয়। ফলে এদের সঙ্গে সামাজিক বন্ধনটাও দৃঢ় নয়। তাদের কাজ দিতে হবে, সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি দিতে হবে। ৬০ এর দশকে সংগঠনটি স্বাধিকার ও স্বাধীনতার জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছে। ’৯০ পর্যন্ত স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর খুনি এবং একাত্তরের ঘাতকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। এখন তেমন কোনো কর্মসূচি নেই তাদের সামনে। ফলে তারা নানা অপকর্মে জড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতি বদলাবে যদি এই ব্যাপক ছাত্রশক্তিকে দেশের ইতিবাচক কোনো কাজে, সংগ্রামে-আন্দোলনে ব্যস্ত রাখা যেত।
মূল কাজটি করতে না পারলে প্রতিবার কমিটি পরিবর্তন করে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে না। বড়রা ঠিক হয়ে গেলে ছোটরাও ঠিক হতে বাধ্য।
যে জাতির পিতা একজন মহৎ, সৎ মানুষ ছিলেন। যে জাতির পিতা অত্যন্ত সাধারণভাবে জীবনযাপন করতেন, যে দলের সভানেত্রী একজন সৎ মানুষ, যিনিও অত্যন্ত সাধারণভাবে জীবনযাপন করেন সে দেশের, সে দলের মন্ত্রী-এমপি এবং সরকারি কর্মকর্তারা কেন দুর্নীতি করেন, জৌলুসপূর্ণ জীবনযাপন করেন তার কোনো ব্যাখ্যা আমি খুঁজে পাই না।

কামরুল হাসান বাদল : কবি ও সাংবাদিক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়