গ্রেপ্তার ৩ : মাদকের টাকা যোগাড় করতে চুরি

আগের সংবাদ

সাহারার সেকাল একাল

পরের সংবাদ

উগ্রবাদই পথের কাঁটা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দুষ্কৃতকারীদের সংজ্ঞা বদলে গেছে ইতোমধ্যেই। তাদের প্রায় সবার গায়েই এখন নতুন জামা- রাজনৈতিক দলের জামা অথবা ধর্মীয় উগ্রবাদের জামা। তাই এহেন দোষ দূর করা বেশ শক্ত কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমান সময়ে। কারো গায়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন রাজনীতির জামা, কারো গায়ে উঠেছে প্রধান বিরোধী শক্তির জামা, কারো গায়ে উঠেছে উগ্র মৌলবাদের জামা। জামা পরা নেই- এমন দুষ্কৃতকারী সমাজ থেকে যেন হঠাৎই উধাও হয়ে গেল। রাজনীতি ভোটের রাজনীতি হবে, ধর্ম সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে হিসাব কষে হবে, প্রার্থীর পাঞ্জাবির দুই পকেটে মন্দির ও মসজিদের প্রতীকী দোয়া-আশীর্বাদ থাকবে প্রচারের স্বার্থে যেন যেখানে যেটা দরকার সেটা পকেট থেকে বের করা যায়; এসব কিছুই মেনে নেয়া যায়। এ সমাজে এমনটা কম-বেশি ছিল সবসময়ই। কিন্তু সেগুলো রাজনীতির মঞ্চে কখনো সম্প্রীতির মূল কাঠামোকে আঘাত করার চক্রান্তে ব্যবহৃত হয়নি। এমনটাই ছিল এ সমাজের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু তা আর বুঝি ধরে রাখা গেল না। যখন থেকে দুষ্কৃতকারীর নতুন পরিচয় হলো রাজনীতির চকচকে জামা পরে, ঠিক তখন থেকেই তারা হয়ে দাঁড়াল এ-দলের বা ও-দলের কিংবা আমাদের-ওদের কার্যকরী বিশেষ কর্মী। এ ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তা এবং পুলিশও কিন্তু কম যান না। সবাই জানে, সরকারের অফিসে এবং পুলিশ বাহিনীতে কোন অফিসার কোন দলের অনুগত। সবার ধারণা কতটা ঠিক বা কতটা ভুল সেটা হয়তো তর্কসাপেক্ষ। কিন্তু ধারণাটা জনমনে বাসা বেঁধে আছে। দুর্গাপূজা, ঈদ, মহররম, বড়দিনের মতো নানা ধর্মের উৎসব পালন যুগ যুগ ধরেই আমাদের সমাজে চলেছে। আগে কোনো উৎসবই কখনো মানুষের রক্তচাপ বাড়ায়নি। কিন্তু এখন বাড়ায়। দুর্গাপূজা আর ঈদ কিংবা রামনবমীর সময় মিলে গেলে এখন জল্পনা, গুজব হাওয়া ছড়াতে থাকে। দুর্বৃত্তদের দাপাদাপি বেড়ে যায়। কিন্তু কারো কিছুই করার নেই। দুর্বৃত্তদের গায়ে যে নতুন জামা। তাদের স্বার্থ দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকে অন্যান্য জামা গায়ে লাগানো ভ্রাতাগণ। আমরা যারা এ-বাংলায়, ও-বাংলায় থাকি, জন্মেচ্ছি, বড় হয়েছি- সবাই জানি হানাহানি ও বিভাজনের ক্ষত আমাদের কত বড় ক্ষতি করেছে। সেই আগুনে আমরা সবাই পুড়েছি। কিন্তু সেই বোধ তো আর দুর্বৃত্তদের কাছ থেকে আশা করা যায় না। তবে এ-দল, সে-দলের তকমা দিয়ে তাদের যারা মাঠে নামান- সেই রাজনীতির কারবারিদের ‘চৈতন্য’-ও কি আশা করা যায় না?
সৈয়দ মুজতবা আলীর কথা মনে আছে তো? সেই ১৯২৭ সালের কথা। তখন তার হাতে রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন থেকে পাওয়া এমএ পাসের সার্টিফিকেট, ব্রিটিশ প্রশাসনের কাছে যার কোনো স্বীকৃতি ছিল না তখন। তাই তরুণ মুজতবা আলী ছুটছেন আফগানিস্তানের পথে; সেখানে আধুনিক সংস্কারপন্থি শাসক আমানুল্লা খানের নতুন শিক্ষা দপ্তরে কাজে যোগ দিতে। সেখানে তিনি লিখলেন দেশে-বিদেশে। কারো কারো কাছে এটা ভ্রমণ কাহিনি মনে হতে পারে। কিন্তু ভ্রমণকে প্রাধান্য বিস্তার, ভ্রমণ সাহিত্যকে নৃতাত্ত্বিক সন্দর্ভ হিসেবে দেখার যে ঔপনিবেশিক অভ্যাস- আলী সাহেব হাসতে হাসতে সেখানে অন্তর্ঘাত ঘটিয়ে দিলেন। আফগানিস্তান-ব্রিটিশ ভারতের সীমান্তে ব্রিটিশের আইনি শাসন তখন চলে না। মুজতবা আলীর কাছে তা মুক্তির, যথেচ্ছ চলাচলের পরিসর। বাজার, আড্ডার প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরপুর পেশোয়ারে তিনি প্রথম পাঠান ও আফগান আতিথেয়তা ও বন্ধুত্বের স্বাদ পাচ্ছেন। ব্রিটিশ অভিযাত্রীদের ভ্রমণ কাহিনিতে এই গিরিপথের বর্ণনায় ফুটে উঠেছে পদে পদে বিপদ; পাহাড়ে লুকানো জনজাতির নিশানা। কিন্তু মুজতবা আলীর লেখায় এসব কথা একেবারেই নেই। তার কাবুল যাওয়া এক লক্কড়-ঝক্কড় বাসে, আপাদমস্তক পুরু টিন দিয়ে ঢাকা এবং নশ্বর ভঙ্গুর কাচ, হেডলাইট কানা-কাচের অবগুণ্ঠন নেই; দৈহিক কষ্ট আছে, উটের কাফেলার পেছনে বাসের বিরক্তিকর চলা আছে, সরাইখানার দুর্গন্ধ আছে। কিন্তু এসবই যাত্রীদের মধ্যে গড়ে তোলে সংহতি, বন্ধুত্ব। তার কাহিনিতে ফুটে উঠেছে সেই বন্ধুত্ব অনেক বড় করে। স্বপ্নমুখর এ পরবাস তার ভেঙে গিয়েছিল ১৯২৯ সালে। আমানুল্লা খানের সংস্কার আন্দোলনের বিরোধিতা, লুটতরাজ ও বিদ্রোহ শুরু করে ডাকাত বাচ্চা সগাও-এর ভাড়াটে সৈন্যরা। আলী সাহেব লিখলেন- ফরমান বেরোল। তার মূল বক্তব্য, আমানুল্লা কাফের। কারণ সে ছেলেদের অ্যালজেব্রা শেখাত, ভুগোল পড়াত- বলত পৃথিবী গোল। আলী সাহেবের মতো শত শত ভারতীয় আটকা পড়লে ব্রিটিশ দূতাবাসের স্যার ফ্রান্সিস হামফ্রেজ জানিয়ে দিলেন, কাবুলে আটকে পড়া ভারতীয়দের প্রতি তার কোনো দায়িত্ব নেই। আলী সাহেব লিখলেন- সাহস করে যদি এ জীবনে সত্যি কথা বলে ফেলতে পারি, তবে একবার স্বর্গদর্শন হলেও হতে পারে। বললুম- হাওয়াই জাহাজগুলো ভারতীয় পয়সায় কেনা, পাইলটরা ভারতীয় ৩ নখা পায়, পেশাওয়ারের বিমান ঘাঁটি ভারতের নিজস্ব; এ অবস্থায় আমাদের কি কোনো হক নেই? ব্রিটিশ লিগেসি যে ভারতীয় অর্থে তৈরি, সাহেব যে ভারতীয় নিমক খান- সে কথা আর ভদ্রতা করে বললুম না। সঙ্গে সঙ্গে ফল- অবরুদ্ধ কাবুল থেকে উড়ানে ফিরবেন যারা, সেই ভারতীয়দের তালিকা থেকে ফ্রান্সিস প্রতিবাদী মুজতবা আলীর নাম কেটে দিলেন। কিন্তু তারপরও সৈয়দ মুজতবা আলী যতদিন বেঁচেছিলেন, তার কলম স্রেফ ভ্রমণ কথা নয়, কলম দিয়ে তিনি শাসন ও নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতাই করে গেছেন।
বহুত্ববাদ যে আমাদের কতটা সফল করেছে, তার উদাহরণ আমরা প্রবাসে ভারতীয়দের সফলতার ইতিহাস টেনেই অনুধাবন করতে পারি। গত বছর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর আসনে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাকের অধিষ্ঠান বেশ বড় রকমের চমক ছিল। গায়ের রং বাদামি, গোমাতার পূজা করেন- এমন একজন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। এ ঘটনা মনে করিয়ে দেয়, পশ্চিম দুনিয়ার মানুষের মনে অন্যকে গ্রহণের ক্ষমতা কতটা বিস্ময়কর। ভারতে জন্ম, এ দেশে বড় হওয়া- এমন অনেকেই প্রথম সারির বহুজাতি সংস্থার কর্ণধার হয়েছেন। ভুবনজয়ী আমেরিকান কোম্পানিগুলোর অন্যতম পেপসি কোর ইন্দ্রা নুয়ি, মাইক্রোসফটের সত্য নাদেলা, গুগল প্রতিষ্ঠানের অ্যালফাবেটের সুন্দর পিচাই কিংবা বিশ্বব্যাংকের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে সম্প্রতি আমেরিকার মনোনয়নপ্রাপ্ত অজয় বঙ্গা অথবা ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন এন্ড ডেভেলপমেন্টের প্রধান হয়ে আসা শিখ, মাথায় যার পাগড়ি, যার কথাই বলি না কেন- ভারতীয় উদীয়মান এ প্রতিভাগুলো স্থান পেয়ে যাচ্ছেন বিশ্বসভার কেন্দ্রীয় আসনে। ফরচুন তালিকার ৫০০ কোম্পানির মধ্যে একটি-দুটি নয়, ৫৮টি কোম্পানির বর্তমান সিইও হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। বর্তমান ও সাম্প্রতিক ভারতীয় সিইওদের মধ্যে কয়েকজন হলেন- শান্তনু নারায়ণ (অ্যাডোব), অরবিন্দ কৃষ্ণ (আইবিএম), রাজীব সুরি (নোকিয়া), লক্ষণ নরসিংহ (স্টারবাকস), লীনা নায়রা (শ্যানেল)। বহুজাতিক সংস্থার বাইরে রাজনীতির ভুবনেও প্রসারিত ভারতীয় নাম। পর্তুগালে ২০১৫ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে আছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত আস্নোনিয়ো লুইস সান্তোস দা কস্তা, আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লিয়ো ভারাডকর। আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের মা ভারতীয়। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের অন্যতম সম্ভাব্য প্রার্থী নিকি হ্যালির মা-বাবা দুজনই ভারতীয়। স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নির্বাচিত হয়েছেন পাকিস্তান বংশোদ্ভূত হামজা ইউসুফ। যেসব সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানের শীর্ষপদে ভারতীয় বা পাকিস্তানি অধিষ্ঠিত হয়েছেন, সেগুলো পশ্চিমেই গঠিত। যে ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে তারা ওঠে এসেছেন, তাও সম্পূর্ণভাবে পশ্চিমা দুনিয়ারই। পশ্চিম দুনিয়াতেই স্থানীয় নাগরিকদের মধ্যে দক্ষতা বা প্রতিভার কোনো ঘাটতি নেই। তা সত্ত্বেও সেই পশ্চিমা সমাজ, পশ্চিমা মানুষ, পশ্চিমা সরকার এবং সংস্থা ভারতীয়দের প্রতিভাকে সম্মান জানাতে কুণ্ঠাবোধ করছে না। তারা এ বৈচিত্র্য এবং বহুত্বের ধারণা শুধু মুখে বলে না, অন্তরেও ধারণ করে। আর আজকের সংকীর্ণ হিন্দুত্ববাদী ভারত উগ্র জাতীয়তাবাদের আক্রমণে বিপন্ন হয়ে উগ্র মৌলবাদের পথে অগ্রসর হচ্ছে এবং হিন্দুত্ববাদের অভিশাপে জর্জরিত হচ্ছে।
ভারতের আজকের শাসকচক্র একেবারেই ভুলে গিয়েছে তাদেরই পূর্বসূরিদের বদান্যতার ইতিহাস। ২০০৬ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ি অসুস্থতার কারণে নিজে যেতে না পারায় তার হয়ে পবিত্র উরস উৎসবে আজমির শরিফে খাজা মঈনুদ্দিন চিস্তির দরগায় আশীর্বাদ প্রার্থনা করে চাদর চড়িয়েছিলেন তার দূত। একই সঙ্গে বিজেপির সভাপতি লালকৃষ্ণ আদবানির পক্ষ থেকে পাঠানো চাদর উৎসর্গ করেছিলেন বিজেপি নেতা কলরাজ মিশ্র। ২০১৮ সালে হাসপাতালে যখন অটলবিহারী বাজপেয়ি আশঙ্কাজনক অবস্থায়, তখন আজমির শরিফ দরগায় বিশেষ দর্শন ও প্রার্থনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল বাজপেয়ির সুস্থতা কামনা করে। যে কক্ষে স্বয়ং খাজা মইনুদ্দিন চিস্তিকে সমাধিস্থ করা হয়েছিল, সেই কক্ষই খুলে দেয়া হয়েছিল এ প্রার্থনার জন্য।
ভারতের এ সরকারের মৌলবাদী চরিত্রের কাতারে আরো অনেক কাহিনিই আছে। সম্প্রতি এনসিইআরটির দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সিলেবাস থেকে মুছে দেয়া হয়েছে মহাত্মা গান্ধীর ঘাতক নাথুরাম গডসের হিন্দুত্ববাদী পরিচয়। গান্ধী হত্যার পরবর্তীতে সাম্প্রদায়িকতার বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে তদানীন্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল যে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন, সে বিষয়টিও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বিদ্যালয়ের পড়–য়ারা ১৯৮৪ সালের শিখবিরোধী দাঙ্গার বিষয়ে অবগত হলেও ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার বিষয়ে একটি শব্দও পড়তে পারবে না, জানবে না। কারণ ওই মুসলমান নিধনযজ্ঞ বিজেপি; আরো স্পষ্ট করে বললে নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহর পক্ষে চরম অস্বস্তিকর বিষয়। সবশেষে, ইতিহাসের পাতা থেকে মোগল ইতিহাসটাই বাদ দেয়া হলো। এসব পড়লে বা পড়ানো হলে হিন্দুদের মুসলমান বিদ্বেষী করে তোলার প্রকল্প হোঁচট খেতে পারে। তাই পুরো মোগল ইতিহাসটাই বাদ।
ঠিক একই ধারায় চলছে বাংলাদেশের রাজনীতিও। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজ দক্ষিণপন্থি জাতীয়তাবাদের ভয়ংকর পদধ্বনি সর্বত্র। শাসক দলের শীর্ষ পর্যায়ে বহুত্ববাদের স্বপ্ন লালিত থাকলেও দলের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা সাম্প্রদায়িক শক্তির নড়াচড়াকে ঠেকানো যায়নি- ঠেকানো যাবেও না। কেননা বিষবৃক্ষের শিকড় গড়ে ফেলেছে। তাই তাকে উপড়ানো অতটা সহজ নয়। রাজনীতিতে ঘাপটি দিয়ে থাকা একটি অংশ সেই বিষবৃক্ষকে ক্রমাগত জল-হাওয়া জুগিয়ে লালন করে যাচ্ছে। কেউ প্রকাশ্যে, কেউ অন্য কোনো ছলে। তাই ওইরকম কোনো অশান্তির কারণে সাধারণ মানুষের বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেলে, দোকান ভাঙচুর হলে, সম্পত্তি দখল হয়ে গেলে এখন আগে খোঁজ নেয়া হয়- ওরা হিন্দু না মুসলিম। যেন সেটাই আঘাতের মাপকাঠি। উভয়ের বক্তব্যের রং যেন আলাদা। ‘মানুষ’ ভাবনাটাই সেখানে বিবেচ্য হয় না। আঘাতকারী নিয়ে ভাবতে বসার আগেই ভাবা হয়ে যায় ‘তার গায়ে কোন দলের জামা’। তার গায়ে উগ্রপন্থিদের জামা হলে তো আর কোনো কথাই নেই। পালিয়ে যায় সব বিবেচনা। তাদের গায়ে আঁচড় কাটার পথ নেই। ভয়ে শিহরে ওঠে চারদিক। যে গেছে, যার গেছে- সেটুকু নিয়ে শান্ত থাক বাবা। বাড়াবাড়ি করলে আরো আগুন জ্বলবে, আরো মুখ পুড়বে। তাই সব যেন শান্ত, কিছুই হয়নি কোথাও। আক্রমণ করার অভিযোগের মূলে পৌঁছা কিংবা সত্যাসত্য নির্ধারণ এবং ভবিষ্যতের জন্য শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির আগেই রাজনৈতিক আর সাম্প্রদায়িক কড়া ঢেউয়ে বিষয়টির মোড় ঘুরে যায়। তখন উদোর পিণ্ডি অন্য ঘাড়ে কিংবা চুপিসারে সব মিটমাট হয়ে যায়। যেন কোথাও কিছু হয়নি, কারো কোনো ক্ষতি হয়নি। তারপর একটি নীরবতা এবং ঠিক ক’দিন পর আবার হয়তো একই প্রকৃতির কিংবা ভিন্ন অজুহাতে, ভিন্ন স্থানে নতুন আঘাত হানার প্রস্তুতি। এই নিয়তিই এখন বাস্তবতা। চারদিক থমথমে, কেউ যেন কিচ্ছুটি জানে না। সৈয়দ মুজতবা আলীরাও যে নেই কোথাও ঠিক তেমন করে বলার, কলম দিয়ে এসব নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা করার। তাই তো কষ্ট পাই এসব দেখে- আমাদের সফলতা দিয়েছিল যে বহুত্ববাদ, আজ তা-ই বিপন্ন সবচেয়ে বেশি।

সুধীর সাহা : কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়