নাটোর : ধর্ষণ মামলায় একজনের যাবজ্জীবন

আগের সংবাদ

রাজপথে ফের শক্তির মহড়া : বিএনপির ১২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণার পর দিনই টানা কর্মসূচি দিল আওয়ামী লীগ

পরের সংবাদ

প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়ুক শরতের শুভ্রতা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বর্ষার অবসানে রূপময় বাংলার ঋতু পরিক্রমায় স্নিগ্ধতা-কোমলতা নিয়ে আবির্ভূত হয় শরৎকাল। কালের ধারায় প্রকৃতি জগতে প্রাণের সজীবতা, রং, রূপ ও স্নিগ্ধতা নিয়ে এসেছে ঋতুর রানী শরৎ। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর কাশফুল দেখলেই আমরা সবাই বুঝি এসেছে শরৎ। কারণ কাশফুল শরতের আগমনের প্রতীক।
এ ঋতুর রয়েছে অনন্য কিছু বৈশিষ্ট্য। এ সময় মেঘমুক্ত আকাশে শিমুল তুলার মতো ভেসে চলে সাদা মেঘের খেয়া। চারদিক আমন ধানের সবুজ চারার ওপর ঢেউ খেলে যায় উদাসী হাওয়া। আদিগন্ত সবুজের সমারোহ। এ সময় ফোটে গগন শিরীষ, ছাতিম, বকফুল, মিনজিরি, শেফালি, শিউলি, কলিয়েন্ড্রা, কাশফুল ইত্যাদি। দূর্বা ঘাস ভিজে যায় হালকা শিশিরে। বিলের জলে নক্ষত্রের মতো ফুটে থাকে সাদা ও লাল শাপলা। এ সময় ফল হিসেবে পাওয়া যায় আমলকী, জলপাই, জগডুমুর, তাল, অরবরই, করমচা, চালতা, ডেউয়া ইত্যাদি। প্রকৃতিতে যখন শরৎকাল আসে তখন কাশফুলই জানিয়ে দেয় এর আগমনী বার্তা। এই ঋতুতে পালকের মতো নরম ও ধবধবে সাদা রঙের কাশফুল ফোটে। কাশফুলের অপরূপ সৌন্দর্য পুলকিত করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। ঋতুর রানী শরৎ এভাবেই খুশির তুফান জাগায় মানুষের প্রাণে। তাই তো চলতি পথেও ব্যস্ততা ভুলে পথিকের মন টানে প্রকৃতি। হিসাব-নিকাশের কঠিন জীবন থেকে কিছুটা সময় নীল আকাশে হারিয়ে যান অনেকে।
শরতের আকাশ, শরতের নদী, শরতের ফুল এই সবকিছুই কেমন যেন শান্ত-মায়াময়। শরতের এই শুভ্র রূপ পবিত্রতার প্রতীক। বিলের শাপলা, নদী তীরের কাশফুল, আঙিনার শিউলি- সবই কোমল এবং পবিত্র। যখন শিশিরের শব্দের মতো টুপটাপ শিউলি ঝরে তখন আসে অনুভবের শরৎ। কাশবনে দল বেঁধে আসে চড়ুই পাখিরা। শান্ত নদীতে দুকূল ছাপানো ঢেউয়ের বদলে দৃশ্যমান হয় কাশবনের ছোট ছোট রুপালি ঢেউ। শরতের স্নিগ্ধতাকে আরো মোহময় করে এ মৌসুমের বিচিত্র ফুলেরা। নদী কিংবা জলার ধারে ফোটে কাশ-কুশ, ঘরের আঙিনায় ফোটে শিউলি বা শেফালি, খাল-বিল-পুকুর-ডোবায় থাকে অসংখ্য জলজ ফুল। শরৎ মানেই শিউলির মধুগন্ধ ভেসে বেড়ানোর দিন। শিউলির আরেক নাম শেফালি। শিউলি বা শেফালি যাই বলি না কেন চমৎকার এ ফুল নিয়ে দুটি গ্রিক ও ভারতীয় উপকথা আছে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরণ্যক উপন্যাসে শিউলির বিশাল বন ও তার তীব্র ঘ্রাণের কথা বলা হয়েছে। সাহিত্যের পাতায় পাতায়ও আছে শরৎ বন্দনা। শরৎ ছোঁয়া কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখায়। জাগতিক মানব প্রেমের পাশাপাশি রয়েছে প্রকৃতির জয়গান। সাদা কাশফুল, শিউলি, দিনভর আলো-ছায়ার খেলা- এসব মিলেই তো শরৎ। এই রূপে মুগ্ধ হয়েই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলী, ছড়িয়ে মহামারি কেটে গেলো মোহন অঙ্গুলি।’
শরতের সাদা শুভ্রতা নিয়ে দিগন্তজুড়ে চোখ ধাঁধানো কাশফুলের সমাহার। শ্বেত শুভ্রতার কাশফুলের হাতছানিতে বিমোহিত ভ্রমণপিপাসুরা। কাশফুলের মাঠে ছেলেমেয়েরা মেতে উঠেছে আনন্দ উচ্ছ¡াসে। নদীর নির্মল বাতাসে শুভ্র সাদা কাশফুলের মন মাতানো দোল খাওয়া শিষ দেখতে তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সের লোকজন সকাল ও বিকাল ঘুরে বেড়াচ্ছেন কাশবনে। কাশফুলের শুভ্রতার সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি ভ্রমণ ও প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের সাক্ষী হতে নিজেদের ধরে রাখছেন ছবির ফ্রেমে। শরৎ জরা-জীর্ণতাকে পেছনে ফেলে নিরানন্দ প্রাণেও নতুন প্রেরণার সঞ্চার করে।
শরতে প্রাণবন্ত রূপ নিয়ে হেসে ওঠে গ্রাম বাংলার বিস্তৃত দিগন্ত। শিউলি ঝরার আনন্দ, কাশফুলের দুলুনি, মেঘমুক্ত আকাশে গাঢ় নীলের সমারোহ একসঙ্গে ধরা দেয় শুভ্রতার প্রতীক শরৎ ঋতুতেই। শরতের রূপের অপরূপ স্নিগ্ধতায় আসুন সবে মুগ্ধ হই। শরতের রঙে প্রকৃতির মতো নিজেরাও সেজেগুজে উঠি। প্রকৃতির আলিঙ্গনে থাকি- প্রকৃতিকে ভালোবাসি, ভালোবাসি মানুষকে। সবাইকে শরৎ শুভেচ্ছাসহ মানবতাকে আলিঙ্গন করার আহ্বান।

মো. আরফাতুর রহমান শাওন : লেখক ও শিক্ষক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়