ডেঙ্গু পরিস্থিতি : ১৫ দিনে মৃত্যু হয়েছে ১৯৭ জনের

আগের সংবাদ

চিকিৎসার নামে লোক ঠকানো : অবৈধ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান আজ থেকে > অব্যাহত রাখলে জনগণ উপকৃত হবে

পরের সংবাদ

অভিজাত কিছু ব্র্যান্ড

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাদিকুর রহমান সাকিব

যুগ যুগ ধরে সমাদৃত হয়ে আসছে ফ্যাশনজগতের অভিজাত কিছু ব্র্যান্ড। সারা বিশ্বে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, ধারাবাহিকভাবে জনসংযোগ, ট্রেন্ডি ফটোশ্যুট এবং বিজ্ঞাপন ফ্যাশন লেবেলগুলোর ব্র্যান্ড ইমেজকে শক্তিশালী করেছে। দীর্ঘকাল ধরে মান ধরে রাখা, সেই সঙ্গে মৌলিক নকশায় মোড়া ব্র্যান্ডগুলো সব সময়ই জনপ্রিয়।

মাইকেল কোর্স
বিশ্ব ফ্যাশন বরাবরই নারী কেন্দ্রিক। যদিও বেশিরভাগ ডিজাইনারের পোশাকেই নারীর কমনীয় ও আবেদনময়ী রূপটিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এসকল ডিজাইনারদের মাঝে যারা দূরদর্শী ও দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন, তাদের মধ্যে মাইকেল কোর্স অন্যতম। নারীর কমনীয়তা ও আবেদনকে এতটুকুও ক্ষীন না করেও কীভাবে নারীর পোশাককে আধুনিক, সার্বজনীন এবং আকর্ষণীয় ও দৃঢ় ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক হিসেবে তৈরি করা যায়- নিজের ডিজাইনকৃত পোশাকের মাধ্যমে মাইকেল তা-ই উপস্থাপন করে আসছেন। মাইকেল কোর্স নিরীক্ষাধর্মী ডিজাইন ও সতন্ত্র অ্যাক্সেসরিজ কালেকশনের কল্যাণে বিশ্বজুড়ে ফ্যাশন সচেতন ব্যক্তিদের কাছে খুব দ্রুত সমাদৃত হয়ে উঠেছে। ব্র্যান্ডটিতে পোশাকের পাশাপাশি হ্যান্ডব্যাগ, জুতা, ঘড়ি, জুয়েলারি ইত্যাদি পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, ফ্যাশন জগতে মাইকেলের হাতেখড়ি হয়েছিল বেশ অল্প বয়সে; মায়ের দ্বিতীয় বিয়ের পোশাক ডিজাইনের মাধ্যমে। মা প্রাক্তন মডেল জোয়ান হ্যামবার্গার ও বাবা তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কার্ল এন্ডার্সন সিনিয়রের একমাত্র সন্তান কার্ল এন্ডার্সন জুনিয়র, মায়ের কথায় দ্বিতীয় স্বামী ব্যবসায়ী বিল কোর্সের নামের সাথে মিলিয়ে নতুন নাম ধারণ করেই হয়ে উঠেন মাইকেল ডেভিড কোর্স। ১৯৮১ সালে মাইকেল বার্জডর্ফে স্বনামে ‘মাইকেল কোর্স’ ব্র্যাণ্ড প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার ডিজাইনকৃত পোশাকের প্রথম কালেকশন উপস্থাপন করেন। উক্ত চুক্তি সাক্ষরের তিন বছরের মধ্যেই তার ডিজাইনকৃত পোশাকের কালেকশন নিম্যান মার্কাস, স্যাকস ফিফথ অ্যাভেন্যু, ব্লæমিংডেল সহ যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সকল উল্লেখযোগ্য বিলাসবহুল পণ্যের দোকানে ?বিক্রয় শুরু হয়। ১৯৮৪ সালে মাইকেল কোর্স ব্র্যাণ্ডের প্রথম রানওয়ে শো অনুষ্ঠিত হয়।

কেলভিন ক্লেইন
মার্কিন ব্র্যান্ড কেলভিন ক্লেইন ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। মার্কিন ফ্যাশন ডিজাইনার কেলভিন রিচার্ড ক্লেইন এটি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর নামেই এ ব্র্যান্ডের নাম। ক্যারিয়ারের শুরুতে প্রথমে কিছুদিন চাকরি করেন। পরে কিছুদিন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেছেন। একসময় গড়ে তোলেন কেলভিন ক্লেইন। পোশাক থেকে শুরু করে ডেনিম, সুগন্ধি, ঘড়ি, গয়নাসহ নানা ধরনের পণ্য তৈরি করে কেলভিন ক্লেইন। বর্তমানে কেলভিন ক্লেইনের গেøাবাল ব্র্যান্ড প্রেসিডেন্ট হিসাবে নিযুক্ত আছে ইভা সেরানো।

লুই ভিতোঁ
ফরাসি বিলাসবহুল লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড লুই ভিতোঁ। ফ্যাশনজগতে পুরুষ ও নারী উভয়ের ওপরই দুর্দান্ত প্রভাব তৈরি করেছে এই ব্র্যান্ড। লুই ভিতোঁর প্রতিষ্ঠাতা লুই ভুইতোঁ ছিলেন একজন ফরাসি উদ্যোক্তা ও ডিজাইনার। তার নামের দুই আদ্যক্ষর এলভি নিয়ে পরিচিতি পেয়েছে এই ব্র্যান্ড।
জীবনের শুরুটা কষ্টে কাটলেও তরুণ বয়স থেকেই সফলতা ধরা দিয়েছে তার কাছে। ১৮৫২ সালে যখন নেপোলিয়ন ফরাসি সম্রাটের খেতাব গ্রহণ করেন, তখন তার স্ত্রী লুই ভিতোঁকে ব্যক্তিগত বক্স নির্মাতা এবং প্যাকার হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। আর এর মাধ্যমেই অভিজাত ও রাজকীয় শ্রেণির মধ্যে প্রবেশ করেছিলেন লুই ভিতো। ১৮৫৪ সালে প্যারিসে নিজের ট্রাংক তৈরি ও প্যাকিংয়ের দোকান খোলেন লুই। সেই থেকে যাত্রা শুরু। বর্তমানে লুই ভুইতোঁর কর্ণধার বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী বারনার্ড আরনল্ট আর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে আছেন পিয়েত্রো বেকারি। নতুন খবর হলো সম্প্রতি ইতালিতে নতুন কারখানা খোলার পরিকল্পনা করছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিলাসবহুল পণ্য নির্মাতা কোম্পানি এলভিএমএইচ। কারখানাটিতে মূলত লুই ভিতোঁ ব্র্যান্ডের ব্যাগ ও অন্যান্য চামড়াজাত পণ্য তৈরি করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ছোট্ট শহর সিয়েসিতে কারখানাটি নির্মিত হলে এটি হবে এ অঞ্চলে কেবল লুই ভিতোঁর ব্যাগ তৈরির জন্য বিশেষায়িত স্থান।

নাইকি
খেলাধুলার সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি সমাদৃত নাইকি। ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্র্যান্ড ভ্যালু নাইকির। কোম্পানিটির ব্র্যান্ড ভ্যালু ৩৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পণ্য হলো জুতা। তবে মজার কথা, ১৯৬৪ সালে ব্লæ রিবন স্পোর্টস নামে যখন এই কোম্পানি প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন এটি জুতা তৈরি করত না। ব্লæ রিবন জাপানি কোম্পানির পণ্যের পরিবেশক হিসেবে কাজ করত। ১৯৭১ সালে ব্লæ রিবন স্পোর্টস নিজেরা জুতা তৈরি করা শুরু করে। ওই সময় কোম্পানির নামও পরিবর্তন করা হয়। ওই সময় কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ফিল নাইট ও বিল বাওয়ারম্যান নতুন নাম রাখেন নাইকি। প্রাচীন গ্রিসে জয়ের দেবী হলেন নাইকি। সেখান থেকেই এ নাম এসেছে। এখনো নাইকির এমিরেটস চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন ফিল নাইট। প্রধান নির্বাহী জন জোসেফ ডোনাহো। ৬১ বছর বয়সী ডোনাহো মার্কিন ব্যবসায়ী।

গুচি
গুচি বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ইতালিয়ান অভিজাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড। এটির নাম এখন কেবল উচ্চবিত্ত নয়, মধ্যবিত্তের মুখে মুখেও ছড়িয়ে পড়ছে। গুচির প্রতিষ্ঠাতা গুচিও গুচি ছিলেন ইতালির নামকরা ফ্যাশন ডিজাইনার ও ব্যবসায়ী। তার নামের পরের অংশ থেকেই এই ব্র্যান্ডের নাম রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে পৈতৃক সূত্রে গুচির মালিকানা পান গুচিও গুচির নাতি মরিৎসিও গুচি। মরিৎসিও গুচি বৈশ্বিক এ ব্র্যান্ডের আজকের এই অবস্থানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৩ সালে তিনি বাহরাইনভিত্তিক বিকল্প বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টকর্পের সঙ্গে তখনকার সময়ের ১৭ কোটি ডলারের একটি বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর দেড় বছর পর ১৯৯৫ সালে তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়।
হ্যান্ডব্যাগ, তৈরি পোশাক, জুতা, মেকআপ পণ্য, ঘড়ি, সুগন্ধিসহ নানা ধরনের পণ্য তৈরির জন্য বিখ্যাত এ ব্র্যান্ড। ২০২০ সাল শেষে এ কোম্পানির ব্র্যান্ড ভ্যালু দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৫ টাকা ধরে হিসাব করলে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় গুচি। বর্তমানে গুচির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্কো বিজারি।
গুচিও তার ব্র্যান্ড শুরু করেছিলেন চামড়ার পণ্য নিয়ে। পরবর্তী কয়েক দশক ধরে এটি একটি জেনেরিক ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত থাকলেও স্বীকৃতি লাভ করে ১৯৫৩ সালে। একই বছর মারা যান গুচিও। এরপর তার পরিবার ব্যবসার দায়িত্ব নেয়। ১৯৬১ সালে আমেরিকার ফার্স্ট লেডি জ্যাকলিন কেনেডিকে একটি গুচি ব্যাগ বহন করতে দেখা যায়। এরপর প্রতিষ্ঠানটি সেই ব্যাগের নাম পরিবর্তন করে রাখে ‘দ্য জ্যাকি’। ধীরে ধীরে, এই ব্র্যান্ডটি নামী সেলিব্রিটিদের সঙ্গে যুক্ত হতে শুরু করে।
তবে পরবর্তীতে ব্যবসা পরিচালনা কে করবে তা নিয়ে দ্ব›দ্ব শুরু হয় গুচিও পরিবারের মধ্যে। অবস্থা এমন হয়েছিল যে ব্র্যান্ডটি দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। এরপর ১৯৮১ সালে কোম্পানিটি পোশাক নিয়ে কাজ শুরু করে। সে সময় প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে নেওয়ার জন্য সাহায্য করে গেছেন ডিজাইনার টম ফোর্ড।

হুগো বস
১৯২৪ সালে জার্মান ফ্যাশন ডিজাইনার হুগো বস প্রতিষ্ঠা করেন ‘হুগো বস’। জার্মানির মেটজিনে দুজন অংশীদার নিয়ে শুরু করা এই কোম্পানি প্রথমে শার্ট, জ্যাকেট, কাজের পোশাক, স্পোর্টসওয়্যার ও রেইনকোট তৈরি করত। তবে সে সময় জার্মানির অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিল না। একসময় দেউলিয়া হয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। পরে ১৯৩১ সালে ঋণদাতাদের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছান হুগো বস। ছয়টি সেলাই মেশিন দিয়ে আবার শুরু করেন। বর্তমানে ১১০টি দেশে এক হাজারের বেশি স্টোর রয়েছে হুগো বসের। পোশাক, সুগন্ধি, জুতাসহ নানা ধরনের পণ্যের জন্য বিখ্যাত হুগো বস।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়