প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আগস্ট মাসে খাদ্যপণ্য মূল্যবৃদ্ধির রেকর্ড গড়েছে। চাল, ডাল, তেল, লবণ, মাছ, মাংস, সবজি, মসলা ও তামাকজাতীয় পণ্যের দাম বাড়ায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। ২০২০ সালে খাদ্য খাতে ১০০ টাকার পণ্যে ৫ টাকা ৫৬ পয়সা বৃদ্ধি হয়েছিল। একই পণ্যে ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে বেড়েছে ১২ টাকা ৫৪ পয়সা। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতিতে অসহায় অবস্থায় পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। গত ১৫ বছরে ক্ষুধা জয়ের ক্ষেত্রে অনন্য সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। মানুষের জীবনমান নিঃসন্দেহে বেড়েছে। তবে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মূল্যস্ফীতির যে ভয়াল দৈত্য দেশের মানুষের ওপর চেপে বসেছে তাতে ক্ষুধার জ্বালা না বাড়লেও জীবনমান কমছে। খাদ্যপণ্যের পেছনে গিয়ে অর্থ ব্যয় করতে গিয়ে অন্যান্য খাতের চাহিদা অপূরণ থাকছে। এমনকি চিকিৎসা ব্যয়ের ক্ষেত্রেও কৃচ্ছ্রসাধন চলছে। এ সংকটের সমাধান মূল্যস্ফীতিতে লাগাম টানা। সরকারের সুনামও যার সঙ্গে জড়িত।
দেশে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। মূল্যস্ফীতিটা খুব বিস্তৃত। আমদানি করা পণ্যে, দেশে উৎপাদিত পণ্যে কিংবা যেসব পণ্য বা সেবা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ঢোকে না, সব ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রেই মূল্যস্ফীতির লক্ষণ প্রবল। তাই এটি বলার সুযোগ নেই যে, শুধু আন্তর্জাতিক মূল্যবৃদ্ধিই আমাদের অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতির কারণ। মূল্যস্ফীতির জন্য একটি বড় কারণ হলো, অভ্যন্তরীণ চাহিদার একটি বড় ধরনের বৃদ্ধি হয়েছে। কেবল গরিব নয়, উচ্চবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারে ভোক্তা ব্যয় বেড়েছে। বাস্তবের মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব ফেলতে চাইলে অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে। সেজন্য ঋণ প্রদানের সুদহার (লেন্ডিং রেট) বাড়াতে হবে। অবশ্য এটি বাড়ানো হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, মূল্যস্ফীতি স্বাভাবিক স্তর বা ৫ শতাংশের নিচে না আসা পর্যন্ত গ্রাম ও শহরের গরিব বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য নগদ সহায়তা দিতে হবে।
কোনো নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে সেটি যত দ্রুত কমিয়ে আনার ওপর জোর দিতে হবে। দীর্ঘসূত্রতা বড় সংকটের সৃষ্টি করতে পারে। দাম বেশি হলেও সেটি নিয়ন্ত্রণে আছে- এমন বক্তব্যে অসাধু ব্যবসায়ীরাই প্রশ্রয় পায়। অনেকটা এ কারণেই বিশ্ববাজারের প্রভাবে আমাদের দেশে পণ্যের দাম যতটা বাড়ে, তার চেয়ে বেশি বাড়ে স্থানীয় বাজারের কারণে। ফলে প্রায়ই শোনা যায়, আমদানি পণ্যের দাম বৃদ্ধি না হয় বিশ্ববাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত; কিন্তু স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়ে কেন? সাধারণ মানুষ বিশেষ করে প্রান্তিক ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি ঠেকাতে অবশ্যই মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। পণ্যের আমদানি-রপ্তানি সরবরাহ ও মজুত তথ্যে যেন গরমিল না থাকে তাও নিশ্চিত করতে হবে। করোনায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তাদের জন্য আরেকটি সমস্যা। দেশে এত বড় বাজার, যা শুধু আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
সব কিছুর দাম বাড়ায় সংসার খরচ বেড়ে গেছে। যে কারণে আয়ের সিংহভাগ চলে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের পেছনে। চাহিদার সঙ্গে দাম যাতে না বাড়ে, সে জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো দৃশ্যত কিছু বিশেষ ব্যবস্থাও নিয়ে থাকে। তবে আমাদের অভিজ্ঞতায় আছে, এসব ব্যবস্থা বাজার নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক তেমন প্রভাব ফেলতে পারে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিপণন, বাজার মনিটরিং ইত্যাদি যেসব পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে এগুলো যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। পণ্য পরিবহন নির্বিঘœ রাখতে বিশেষ করে কৃষিপণ্যের সরবরাহে যাতে কোনো বাধার সৃষ্টি হতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদের।
আর কে চৌধুরী : মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, ঢাকা। [email protected]
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।