ডেঙ্গু প্রতিরোধে লিফলেট বিতরণ করবে বিএনপি

আগের সংবাদ

সাইবার নিরাপত্তা বিল পাস : বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার > মিথ্যা মামলায় সমপরিমাণ সাজা > অজামিনযোগ্য ধারা ১৭, ১৯, ২৭, ৩৩

পরের সংবাদ

কেমন নিরাপত্তার আশ্বাস ছিল?

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অ্যাটর্নি জেনারেল ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদ আমরা এমনটাই জানি। বিচারিক প্রক্রিয়ায় সরকারের পক্ষে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হয়, দায়িত্ব পালন করতে হয়। রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থ রক্ষায় তারা উভয়ই সরকারের পক্ষে আইনানুগ ভূমিকা রাখেন। বাইরে থেকে যতটুকু জানা সম্ভব হয় যে, অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহযোগীরা সরকারকে সংবিধান, সাধারণ আইন, আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইনগত পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সরকারের পক্ষে তারা আদালতে প্রতিনিধিত্ব করেন, উপস্থিত থাকেন। এক কথায়, অ্যাটর্নি জেনারেল ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সরকারের আইনগত পরামর্শক। আমরা বিভিন্ন সময়ে দেখি যে, বিচারিক প্রক্রিয়ায় থেকে তারা সরকারকে সমর্থন করেন, রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করার কৌশল অবলম্বন করেন। নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ। অন্য আর ১০টি মানুষের মতো যা ইচ্ছে তাই বলতে পারেন না। তাদের সংবিধানসম্মতভাবে আইনের পথ অনুসরণ করে চলতে হয় ও কথা বলতে হয়। নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা ও মর্যাদা এবং অবস্থান রক্ষার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে।
এটা ঠিক যে, আমাদের দেশে অনেক দায়িত্বশীল ব্যক্তি তার পেশার মান, মর্যাদা ও গুরুত্ব রক্ষা করতে পারেন না। কিংবা জানেন না যে, কীভাবে তার দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল। কিংবা জেনেও হয়তো অন্য কোনো কারণে তথা উদ্দেশ্য হাসিলে তিনি বা তারা অর্পিত দায়িত্বের কথা ভুলে যান। পদমর্যাদা ও পদকে ব্যক্তি-গোষ্ঠী স্বার্থে অপব্যবহার করেন। এতে পদের যে বিধিমালা, নিয়ম, শৃঙ্খলাজনিত আইনকানুন সব লঙ্ঘিত হয়। সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। সমাজে সংশয় তৈরি হয়। পদ থেকে যে ভালোর প্রত্যাশা, তা আর কেউ পায় না। কমবেশি সবাই আশাহত হয়। পদ, পদ হয়েই থাকে। দায় বোঝে না। দায় নেয় না। অনেকে মনে করেন, ছোট বড় প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে এমন সংস্কৃতি চর্চা প্রচলিত এবং সেটা রাজনীতির কারণেই হয়। দেশপ্রেমহীন রাজনীতির ছোবল সবার চেতনাকে, মূল্যবোধকে বিপন্ন করে। ব্যক্তিপ্রেমকে জাগ্রত করে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার চেতনাকে নিষ্প্রভ করে কিংবা জাগ্রত হতে বাধাগ্রস্ত করে। এমনকি দেশের স্বার্থ রক্ষায় ঐকমত্যে পৌঁছাতে প্রবল বাধা দেয়।
কতজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আছেন, জানা নেই। তবে একজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়াকে চেনা সম্ভব হলো এবং সেটা তার কার্যকলাপে। সম্প্রতি তিনি বেশ আলোচিত ও সমালোচিত। তিনি নিয়ম ভঙ্গ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। অভিযোগ হলো, তিনি ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেননি। উপরন্তু তিনি ড. ইউনূসের পক্ষে কথা বলেছেন, যা বিচারিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। উল্লেখ্য, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে মামলা চলছে। তার প্রতিষ্ঠান থেকে যেসব কর্মকর্তা ও কর্মচারী তাদের ন্যায্য পাওনা পাননি, তারাই তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বলে জানা যায়। বিচারিক ভাষায়, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ তার পেশাগত শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে মিডিয়ায় এ বিষয়ে ড. ইউনূসের পক্ষে কথা বলেছেন।
একজন ব্যক্তির তার নিজস্ব রাজনৈতিক মতামত বা আদর্শ থাকতে পারে। পছন্দ বা অপছন্দ থাকতে পারে। এটা তার ব্যক্তিগত অধিকার। কারোর সেটা নিয়ে কিছু বলার নেই। কিন্তু ব্যক্তি যখন রাষ্ট্রীয় একটা গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন, বিশেষ করে বিচার ও আইন পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনার মতো একটি জায়গায়, তখন তার ব্যক্তিগত অভিমত প্রকাশের কোনো সুযোগ থাকে না, সুযোগ রাখা হয় না। কারণ এতে বিচারিক প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। তাকে কথা বলতে হয় বিধি মেনে। ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করাটা আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ সেই পদটির বলে বিজ্ঞজনেরা মনে করেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য অনুযায়ী, মিডিয়ায় কথা বলার জন্য ঊর্ধ্বতনের অনুমতি লাগে। যাহোক, ড. ইউনূস শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন এবং ক্ষুদ্রঋণের একজন প্রবক্তা হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনাম কুড়িয়েছেন, কথাগুলো সত্য এবং দৃশ্যমান। যদিও তিনি কীভাবে নোবেলজয়ী হয়েছেন কিংবা ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা হিসেবে কতজন মানুষের জীবনমান পরিবর্তন করতে পেরেছেন, নিজেদেরই বা কতটা লাভ হয়েছে ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে লোকমুখে পক্ষে ও বিপক্ষে প্রচুর কথা রয়েছে। একইভাবে তার প্রতিষ্ঠানে তার বিরুদ্ধে অভিযোগও রয়েছে। এই অভিযোগে শ্রম আদালতে মামলা হয়েছে। এতবড় একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে শ্রমিক ‘ঠকানোর’ মামলা হয়েছে। অভিযোগকারীরা বলছেন, একজন ড. ইউনূস বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে তাদের পাওনা থেকে বঞ্চিত করে অবিচার করেছেন। এ মামলার বিষয়টিও কিন্তু সত্যি। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ এখন বিচার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এমন এক অবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. ইউনূসের পক্ষে যে বক্তব্য দিলেন, তা বিচার ব্যবস্থায় স্ববিরোধিতার বীজ বপন করে কি না? অনেকের মতে, স্ববিরোধিতার বীজ বপনে সহায়ক হয়েছে। কেউ কেউ এই বিষয়টির ভেতর রাজনৈতিক কারণ অনুসন্ধানে মাঠে নেমে পড়েছেন। বলছেন, এই কাজটি কোনো দল বা ব্যক্তিকে খুশি করার জন্যই করা হয়েছে। তাকে ঘুপটি মেরে থাকা বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধি বলা হচ্ছে। একজন এমরান আহম্মদ কোন দলীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত, সেটা দেখার প্রয়োজন কারোর আছে বলে মনে করি না। তবে একজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রের আইন ও বিচার প্রক্রিয়াকে কতটা সুরক্ষিত হতে সহায়তা করছেন, সেটা অবশ্যই দেখার ও জানার বিষয় এবং সেটা দেখা ও জানার অধিকার সবার আছে।
গত শুক্রবার এমরান আহম্মদ যে ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা যেন ভয়ংকর রকম বিস্ময়ের। পরিবারের সব সদস্যকে নিয়ে সরাসরি চলে যান ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসে। এমনটি জানা যায় যে, তিনি নাকি নিরাপত্তাহীনতা বোধ করে মার্কিন দূতাবাসে গেছেন। সেখানে সাড়ে তিন ঘণ্টা অবস্থান করার পর নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়ে বাসায় ফেরেন। তিনি বলেছেন, নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়ে তিনি বাসায় ফিরেছেন। ভালো কথা। তবে কি তার কথায় ধরে নেয়া যায় যে, মার্কিন দূতাবাস তাকে নিরাপত্তা দিয়েছে? খুব কৌতূহল বোধ করছি জানার জন্য যে, নিরাপত্তার আশ্বাসটাই বা কী এবং কেমন?
একজন দিনমজুর বলছিলেন, ‘ঘরে একখান টিভি আছে। পুরনো টিভি। কিনছিলাম মহল্লার মেকানিকের কাছ থন। খবরে দেখি, প্রতিদিন আমেরিকায় বন্দুক হামলায় হেঁই দ্যাশের মানুষ মরে। শিশু, বড় কেহই বাদ যায় না। তারা নিজের মাইনষ্যের নিরাপত্তা দিবার পারে না। তারা কী করে হেগো নিরাপত্তা দিব? আজব লাগতাছে! আজবই বটে।’ এমরান আহম্মদ কী ধরনের নিরাপত্তাহীনতার আশ্বাস পেয়েছেন, তা কিন্তু বলেননি। কিংবা বলেছেন কিনা জানা নেই। অনেকে কৌতুক করে বলছেন, তিনি সম্ভবত মার্কিন দূতাবাস থেকেই আমেরিকায় যাওয়ার প্ল্যান করেছিলেন। কেউ হয়তো তার পেছনে থেকে তাকে বুদ্ধি দিচ্ছেন, বলছেন মার্কিন দূতাবাস থেকেই উড়াল দাও। কেউ আবার প্রশ্ন রাখছেন, এত এত দূতাবাস থাকতে তিনি কেন কেবল মার্কিন দূতাবাসে আশ্রয়ের জন্য গেলেন? আগের কোনো যোগসূত্র ছিল? নাকি তিনি আমেরিকার এজেন্ট? তাকে ঘিরে অনেক ধরনের ধারণা এখন চালু হয়ে গেছে। বাংলাদেশের একটা শ্রেণি-গোষ্ঠী রয়েছে, যারা আমেরিকাকে বর্তমান সরকারের পেছনে লেলিয়ে দিয়েছেন, দিচ্ছেন, তিনি কী সেই চক্রের এমন কেউ, এমন প্রশ্নও কিন্তু অনেকের মনে। যাহোক, মার্কিন দূতাবাসে নিরাপত্তার অজুহাতে যাওয়াটা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, দিতেই পারে। অনুমানে চলা মানুষগুলো কিন্তু বসে থাকে না। অনুমান করে নানা গল্পের জন্ম দেয়। তবে তিনি কেমন হুমকি পেয়েছেন বা পাচ্ছেন যে, তাকে সপরিবারে মার্কিন দূতাবাসেই যেতে হলো। এটা খোলাসা করলে ভালো ছিল।
একজন সচেতন নাগরিক বলছিলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল বা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ কীভাবে, কী দেখে কিংবা বিচার বিশ্লেষণে দেয়া হয়, সেটা দেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ড. ইউনূসের ওপর মামলার ভার। তিনি প্রমাণ করুক, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বানোয়াট। তিনি প্রমাণ করুক, তিনি তার শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করেছেন, তিনি নির্দোষ। বাংলাদেশে চলমান কোনো মামলার ওপর অন্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের বক্তব্য, বিবৃতি বা প্রভাব ফেলার চেষ্টা, নেহায়তই ধৃষ্টতা। বাংলাদেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ করার শামিল। প্রতিটি নাগরিকের উচিত রাষ্ট্রের স্বার্থ দেখা। হয়তো একজন এমরান আহম্মদ পরবর্তী সময়ে সপরিবারে আমেরিকায় আশ্রয় পাবেন, ওটা কিন্তু স্বাধীন জীবন হবে না। পরাধীন আর পরগাছার মতো হবে।

স্বপ্না রেজা : কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়