‘রাজাকারদের জনসংখ্যা বেড়েছে’

আগের সংবাদ

চাপ কমলেও সতর্ক থাকবে আ.লীগ

পরের সংবাদ

গাইবান্ধা জেলা পরিষদের ৫২ একর ৪১ শতক জমি বেহাত

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ফেরদৌস জুয়েল, গাইবান্ধা থেকে : গাইবান্ধা জেলা পরিষদের মালিকানাধীন কয়েক কোটি কোটি টাকা মূল্যের ৫২ একর ৪১ শতক জমি বেহাত হয়ে গেছে। এর মধ্যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। এসব জমি এলাকার প্রভাবশালী ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভোগদখল করছেন। কিন্তু সরকারি জমি উদ্ধারে পরিষদের কোনো পদক্ষেপ নেই।
জেলা পরিষদ কার্যালয় সূত্র জানায়, এক সময় রংপুর জেলা বোর্ডের অধীনে থাকা গাইবান্ধা মহকুমা ১৯৮৪ সালে স্বতন্ত্র জেলায় রূপান্তরিত হয়। ১৯৮৮ সালের ৮ আগস্ট গাইবান্ধা জেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়। পরিষদের মোট জায়গা ১ হাজার ৯৪৫ একর ৭২ শতক। এর মধ্যে সড়কে রয়েছে ১ হাজার ৬৫২ একর ৮৬ শতক, ডাঙ্গা ৪৭ একর ৫৯ শতক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৯ একর ৭ শতক, নদী ১৯৬ একর ৮ শতক, পুকুর ১৯ একর ৪৫ শতক এবং ইন্দারা ৬৬ শতক।
পরিষদের করা দখলদারদের তালিকায় উল্লেখ করা হয়, পরিষদের মোট জায়গার মধ্যে প্রায় ৫২ একর ৪১ শতক বেহাত হয়ে গেছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১০ একর, পলাশবাড়ীতে ২ একর ৬০ শতক, গোবিন্দগঞ্জে ১৩ একর ২৬ শতক, সাঘাটায় ৩ একর ৭৯ শতক, সাদুল্লাপুরে ৯ একর ৩০ শতক, সুন্দরগঞ্জে ১৩ একর ৪১ শতক এবং ফুলছড়িতে ৫০ শতক।
তালিকায় বলা হয়, ১৯৮৮ সালের আগে গাইবান্ধা জেলা পরিষদ বৃহত্তর রংপুর জেলা পরিষদের আওতায় ছিল। সেখান থেকে পরিষদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা হতো। ওই সাল থেকেই পরিষদের জমি বেহাত হওয়া শুরু হয়। তবে ২০০৫ সাল থেকে বেহাত হওয়া বেড়ে যায়। কালক্রমে এ পর্যন্ত প্রায় ৫২ একর ৪১ শতক জমি বেহাত হয়ে গেছে। এসব জমিতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি মালিকাধীন বসতবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলা পরিষদের ক্যাম্পাসে ৩৫ শতক জায়গায় গাইবান্ধা এলজিইডির একটি ভবন রয়েছে। এছাড়া ৩ একর ৪৪ শতক জমিতে গোবিন্দগঞ্জ থানা (পুলিশ স্টেশন), ৪৭ শতক জমিতে পলাশবাড়ী সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, ৩৮ শতক জমিতে পলাশবাড়ী মহিলা কলেজ নির্মিত হয়েছে। গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি শামসুল আলম শাহ বলেন, আমি সদ্য যোগ দিয়েছি। এ বিষয়ে কিছু জানি না। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, জেলা পরিষদ ও থানা দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। তাই পুলিশ কার্যালয় থেকে জমিটি অধিগ্রহণ করে নেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। এই মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে এটির সমাধান করবেন।
পলাশবাড়ী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম ফয়েজ উদ্দিন বলেন, সিএস খতিয়ান মূলে জমিটি ছিল সাবেক রংপুর জেলা বোর্ডের। পরে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আসে। এসএ খতিয়ান ছিল বাংলাদেশ সরকারের নামে। ১৯৬২ সালে এক নম্বর খাস খতিয়ানে রেকর্ডভুক্ত হয়। ১৯৮৯ সালে এই জমি উপজেলা ভূমি অফিসকে ব্যবহার করতে দেয়া হয়। জেলা পরিষদ সিএস খতিয়ান বলে জায়গাটি দাবি করছে। তিনি বলেন, যেহেতু বিআরএস খতিয়ান চূড়ান্তভাবে প্রকাশ হয়নি, তাই রংপুর আঞ্চলিক সেটেলমেন্ট অফিসে আপত্তি দেয়া হয়েছে।
পলাশবাড়ী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকার বলেন, জেলা পরিষদের জমিটি কলেজের নামে ইজারা নেয়া ছিল। পরে আর নবায়ন করা হয়নি।
এদিকে অনেকে পরিষদের জমি নিজেদের নামে রেকর্ড করে নিয়েছেন বলেও তালিকায় উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে সাঘাটা উপজেলায় ৩ একর ৭৯ শতক জমির মধ্যে ১ একর ৯৬ শতক বেহাত হয়ে যায়। উপজেলার বোনারপাড়া এলাকায় মনজুর চৌধুরী ও তার লোকজন এ জায়গা ভোগদখল করছেন। মনজুর চৌধুরী বলেন, আমার চাচা তৎকালীন রংপুর জেলা বোর্ডের মেম্বর ছিলেন। ওই সময় তিনি জায়গাটি লিজ নেন। ১৯৬২ সালে আমাদের নামে রেকর্ড হয়। এ নিয়ে মামলা বিচারাধীন আছে।
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, জমি উদ্ধারে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। দখলদারদের দফায় দফায় চিঠি দেয়া হচ্ছে। উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসককে বলা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত কতিপয় দখলদার তিন একর ৭০ শতক জায়গা নিজের দাবি করে গাইবান্ধা জজ আদালতে চারটি মামলা দায়ের করেন। এসব মামলা বর্তমানে বিচারাধীন। এ ছাড়া রেকর্ড সংশোধনের জন্য রংপুর সেটেলমেন্ট অফিস ও জজ আদালতে শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা বিচারাধীন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়