সাংবাদিকদের আবাসন সমস্যা সমাধানে সার্বিক সহযোগিতা করব : ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী

আগের সংবাদ

সাইডলাইন কূটনীতিতে বাজিমাত : সম্মানিত করেছে ভারত, চাপমুক্ত সরকার > পঞ্চবটীতে ভূ-রাজনীতির নতুন সমীকরণ

পরের সংবাদ

জ্বালানি নিরাপত্তায় অযান্ত্রিক যানকে গুরুত্ব দিন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে অযান্ত্রিক যান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। গত ৯ আগস্ট বাংলাদেশ সরকার জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস পালন করে। এই দিবসটি সম্পর্কে অনেকেরই হয়তো জানা নেই। ২০১০ সাল থেকে বর্তমান সরকার দিবসটি পালন করছে। দিবসটি পালন করার একটি বিশেষ তাৎপর্য আছে। ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহুজাতিক কোম্পানি শেল অয়েলের কাছ থেকে তিতাস, রশিদপুর, হবিগঞ্জ, বাখরাবাদ ও কৈলাসটিলা গ্যাসক্ষেত্র কিনে রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেন। ওই সময়ে সরকারের সিদ্ধান্ত এবং বর্তমান সরকারের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দিবস পালন উভয় ইতিবাচক হলেও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এখনো সরকারের অনেক কিছু করার আছে।
বাংলাদেশে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যার মাঝে আছে মাতারবাড়ীতে এলএমজি টার্মিনাল নির্মাণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, নতুন তেল-গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার করা এবং বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করা। প্রতিটি পরিকল্পনা যথেষ্ট বাস্তবসম্মত এবং সময়োপযোগী। কিন্তু জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাহিদা ও জোগানের মাঝে যে ভারসাম্য তৈরি করার প্রয়োজন সে বিষয়টির দিকে সরকার খুব বেশি মনোযোগ দিচ্ছে না। সুনির্দিষ্টভাবে বললে জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে।
২০২৩ সালের হিসাব মতে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ৫৪ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করবে। দেশে আমদানিকৃত জ্বালানি তেলের শতকরা ৬৩ ভাগই ব্যবহৃত হয়ে থাকে পরিবহনে। আর বাকি তেল ব্যবহার করা হয় কৃষি, শিল্প ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে প্রতি বছর আমদানিকৃত জ্বালানি তেলের ৭৩ শতাংশ হলো ডিজেল, ৫ শতাংশ পেট্রোল এবং ৪ শতাংশ হলো অকটেন। পরিসংখ্যান থেকে এটা স্পষ্ট যে, দেশে জ্বালানি তেলের একটা বড় অংশ ব্যবহার হয় যানবাহনে। আর এই চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের হিসাব মতে প্রতিদিন ৫৫টি করে নতুন ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তায় নামছে, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মোটরসাইকেল। রাইড শেয়ারিং সেবা, সস্তা এবং দ্রুততার সঙ্গে যাতায়াত ইত্যাদি কারণে মোটরসাইকেলের বিক্রি বাড়ছে। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের হিসেবে ২০২২ সালে ৩ লাখ ৭৫ হাজার মোটরসাইকেল নিবন্ধন নিয়েছে। বর্তমানে মোট ৪১ লাখের বেশি মোটরসাইকেল নিবন্ধিত আছে। গত ১০ বছরে আমাদের সড়ক ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। যার ফলে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করার জন্য ডিজেলচালিত বাস ট্রাকের ব্যবহার অনেক গুণ বেড়েছে। আর এসব কারণেই প্রতি বছর জ্বালানি তেল কেনার লক্ষ্যমাত্রা বাড়াতে হচ্ছে। কিন্তু আমরা যদি একটি টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই তাহলে আমাদের বিভিন্ন বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ বাস্তবায়ন করছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ৭-এর লক্ষ্যমাত্রা ৭.১-এ উল্লেখ করা হয়েছে (২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য মূল্যসাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য ও আধুনিক জ্বালানি সেবায় সার্বজনীন অধিকার নিশ্চিত করা)। আমরা যদি একটি টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই তাহলে আমাদের অন্য সব পরিকল্পনার পাশাপাশি যান্ত্রিকযানের ব্যবহার সীমিতকরণ এবং অযান্ত্রিক যানবাহনের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। বর্তমানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহর এমনকি গ্রামে যাতায়াত এবং হালকা মালামাল পরিবহনে যান্ত্রিক যানের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের অযান্ত্রিক যানবাহন ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যেমন মানুষ পরিবহনে রিকশা, সাইকেল ভ্যান ব্যবহার করত। অন্যদিকে মালামাল পরিবহনে ভ্যান, ঠেলাগাড়ির প্রচলন ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব অযান্ত্রিক যানবাহনের ব্যবহার ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং জ্বালানি তেলের চাহিদা সীমিত করতে আমাদের অযান্ত্রিক যানবাহন ব্যবহার করার ওপর আরো জোর দিতে হবে।

তালুকদার রিফাত পাশা : পলিসি কর্মকর্তা, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিং বাংলাদেশ।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়