সংসদে চুন্নু : সবাই বলে জাপা নাকি গৃহপালিত দল

আগের সংবাদ

অংশীদারত্ব বাড়ানোর প্রত্যয় > যুক্তরাষ্ট্রের চাপেও বাংলাদেশ স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি সমুন্নত রেখেছে : ল্যাভরভ

পরের সংবাদ

ঢাকাকে পাশে চায় মস্কো : প্রথমবারের মতো রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর > পর্যবেক্ষণ করছে পশ্চিমা দেশগুলো

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দুই দিনের সফরে আজ বৃহস্পতিবার বিকালে প্রথমবারের মতো ঢাকা আসছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পরাশক্তি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম বাংলাদেশ সফর ঘিরে নানা জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়েছে। এই সফর পশ্চিমা দেশগুলোও সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। সব মিলিয়ে মস্কো ঢাকাকে কী বার্তা দিতে পারে – তা নিয়ে নানা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ঢাকাকে পাশে চায় মস্কো। আজকের বৈঠকে এই বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশের পর রাশিয়ান কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এটাই প্রথম ঢাকা সফর। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে তার ঢাকা সফরের কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তা বাতিল হয়।
ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকার একটি হোটেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন। এর পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করবেন তারা। এদিকে, ঢাকার রাশিয়ান দূতাবাস এক্সে (টুইটার) লিখেছে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ আজ এবং কাল শুক্রবার বাংলাদেশ সফর করবেন। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়নের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হবে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে মতবিনিময় করবে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বর্তমান বিশ্বে নানা ধরনের হিসাব-নিকাশ শেষে রাশিয়া এই সময়ে বাংলাদেশকে পাশে পেতে চাইবে। আর বাংলাদেশও চাইবে কিছু সুবিধা নিতে। তবে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে এই সফরে নতুন খুব বেশি কিছু হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, আলোচনার মূল ফোকাস হতে পারে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, খাদ্য সহায়তা এবং ভূ-রাজনীতির হিসাব-নিকাশ।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে বৈশ্বিক রাজনীতিতে প্রবল চাপের মুখে ফেলার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। রাশিয়ার ওপর শত শত নিষেধাজ্ঞাও দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। আর এই অবস্থার মধ্যেই রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফরে আসছেন।
বাংলাদেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করছে রাশিয়া। এছাড়া রাশিয়া থেকে সামরিক সরঞ্জাম, খাদ্যশস্য ইত্যাদি আমদানি করে বাংলাদেশ। তবে রাশিয়ার অনেক জাহাজে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থাকায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম আনতে জটিলতা তৈরি হয়েছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরে মস্কোর পক্ষ থেকে বিষয়টি উত্থাপন করা হতে পারে। এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে বৈশ্বিক রাজনীতিতে পশ্চিমাদের চাপের মুখে থাকায় এই ইস্যুতে বাংলাদেশের সক্রিয় সমর্থন চাইতে পারেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের অনেক দিনের সম্পর্ক। স¤প্রতি আন্তর্জাতিক বিশ্বের যেসব জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে ইউক্রেন সংকটের পর থেকে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। আমরা রাশিয়াকে একটা অনুরোধ করতে পারি, দ্রুত যেন একটা

শান্তিপূর্ণ সমাধান বের করা যায়। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সক্রিয় সমর্থন, খাদ্য, সার ও জ্বালানির মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। আমরা আমাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরব।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার সক্রিয় সহযোগিতা ও সমর্থনের মাধ্যমে এই সম্পর্ক গড়ে ওঠেছে। তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার রাশিয়ার কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফরে আসেননি। সেদিক থেকে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উল্লেখ্য, আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন শেষে জাকার্তা থেকে ঢাকায় আসবেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একদিন অবস্থানের পর তিনি ঢাকা থেকে দিল্লি যাবেন। গত বছরের নভেম্বরে ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলোর সহযোগিতা জোট- আইওআরএর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেয়ার কথা ছিল রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। হঠাৎ করেই সেই সফর বাতিল হয়ে যায়। পরে পুনরায় এই সফর নির্ধারিত হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে এই সফরের পিছনে রাশিয়ার দিক থেকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। ইউক্রেনে হামলার পর থেকে রাশিয়া ক্রমেই একঘরে হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা ছাড়াও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভূ-রাজনীতির বিষয়েও কথা বলতে পারেন। এটা রাশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই সম্পর্ক তৈরি হয়। এটা ঐতিহাসিক সম্পর্ক। এই সম্পর্কের কখনো অবনতি হয়নি। তারপরও ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এখনকার ভূ-রাজনীতির কারণে তার সফর আলোচিত হচ্ছে, কৌতূহল আছে। বাংলাদেশ ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান চায়-এটা স্পষ্ট। রাশিয়া হয়তো আরো সমর্থন চাইতে পারে। আর রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ হলো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। সেখানে পেমেন্টের বিষয় আছে। ডলারের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যেতে পারে। সেটা উভয় দেশের জন্য উদ্বেগের। এখানে একটা উপায় খোঁজার চেষ্টা হতে পারে।
তিনি বলেন, রিফাইনারি নেই বলে বাংলাদেশ রাশিয়ার জ্বালানি তেল এখন নিতে পারছে না। কিন্তু এটা নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করা যায়। খাদ্য সংকটে রাশিয়ার খাদ্যশস্যেও বাংলাদেশের লাগতে পারে। রাশিয়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বাজার আরো বড় করা যায় কী না। এসব বিষয়ে কথা বলার সুযোগ আছে। তবে এজন্য বিকল্প মুদ্রার পথও বের করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাশিয়ার সমর্থন চায়। তবে সমর্থন কতটা পাওয়া যাবে? তা নিয়ে সন্দেহ আছে। বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক মূলত অস্ত্র বিক্রির। রাশিয়া এখন পর্যন্ত তাই রোহিঙ্গা ইস্যুতে কথা বলেনি। নতুন করে বলবে বলে আমার মনে হয় না।
তবে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে এই সফরের একটি গুরুত্ব আছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের সমর্থন হয়তো তারা চাইবে। বাংলাদেশ অধিকাংশ সময় ভোট দানে বিরত থেকেছে। একবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। তবে এই সফরে বাইরের সম্পর্কটা আরো বাড়ানোর সুযোগ আছে। তাদের কথায়, রাশিয়ার তেল যদি অন্য কোনো দেশে রিফাইন করে বাংলাদেশ ক্রেডিটে নিতে পারে তাহলে সেটা হবে অনেক বড় সুযোগ।
বাংলাদেশের একাধিক কূটনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া এখন ব্যাকফুটে আছে। তাই বাংলাদেশের সমর্থন তারা চাইবে। অন্য দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও এখানে থাকবেন। সেই সুযোগও রাশিয়া কাজে লাগাতে চাইবে। বাংলাদেশের অবস্থান রাশিয়া বোঝে। বাংলাদেশ সাধারণ পরিষদে তাদের পক্ষেও না, বিপক্ষেও না। তাদের চেষ্টা থাকবে বাংলাদেশকে তাদের একটু পক্ষে নেয়ার। তবে দুই দেশের এখন বড় কনসার্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়