প্রতিষ্ঠার ৪ দশক পর নেপ আইন অনুমোদন

আগের সংবাদ

ঢাকাকে পাশে চায় মস্কো : প্রথমবারের মতো রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর > পর্যবেক্ষণ করছে পশ্চিমা দেশগুলো

পরের সংবাদ

জন্মাষ্টমী ভাবনায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

হাজার হাজার বছর ধরে জন্মাষ্টমী পালন হয়ে আসছে। কৃষ্ণ চেতনায় নিজেকে ভাসিত করার মহাপ্রয়াস নিয়ে ভক্তবৃন্দ প্রিয় পরমের আরাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। সনাতন ধর্মানুসারীদের কাছে জন্মাষ্টমী একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই উৎসব নানাভাবে উদযাপন করা হয়।
এই দিন মানুষ শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভালোবাসা ব্যক্ত করার জন্য অভুক্ত থাকে, ধর্মীয় গান গায় এবং উপবাস পালন করে। শ্রীকৃষ্ণের জন্ম তিথিতে মধ্যরাতে তার ছোঁ ছোঁ মূর্তিকে স্নান করিয়ে কাপড় দিয়ে মোছা হয় এবং দোলনায় সাজানো হয়। তারপর উপাসকমণ্ডলী নিজেদের মধ্যে খাদ্য ও মিষ্টান্ন বিনিময় করে উপবাস ভঙ্গ করে। জন্মাষ্টমী বা কৃষ্ণজন্মাষ্টমী হিন্দুদের একটি ধর্মীয় উৎসব।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব তিথিকে কেন্দ্র করেই শুভ জন্মাষ্টমী পালন করা হয়। এই উপলক্ষে দেশে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন মন্দিরে কৃষ্ণপূজা, তারকব্রহ্ম হরিনাম সংকীর্তন, গীতাযজ্ঞ, পদাবলি কীর্তন এবং ঘরে ঘরে ভক্তরা উপবাস থেকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা ও পূজা করে থাকেন। এই সময় জন্মাষ্টমী মিছিল ও শোভাযাত্রা বের করা হয়। পূর্ণচন্দ্র যেভাবে পূর্বদিগন্তে উদিত হয়, ঠিক তেমনভাবেই পরমেশ্বর ভগবান আবির্ভূত হলেন। কেউ প্রশ্ন করতে পারেন যে, অষ্টমী তিথিতে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব হয়েছিল। তা হলে পূর্ণচন্দ্রের উদয় হলো কী করে? এর অর্থ উত্তরে বলা হয়েছে যে, শ্রীকৃষ্ণ চন্দ্রবংশে আবির্ভূত হয়েছিলেন, তাই চন্দ্র সেই রাতে অপূর্ণ থাকলেও সেই বংশে ভগবানের আবির্ভাবের জন্য আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে সেদিন উদিত হয়েছিল। তার জন্ম মাত্রই পুরো কারাগার আলোকিত হয়ে গিয়েছিল। তিনি তার চার হাতে শঙ্খ, চক্র, গদা এবং পদ্ম ধারণ করে আছেন। বক্ষে তার শ্রীবৎস চিহ্ন, কণ্ঠে তার কৌস্তভ শোভিত কণ্ঠহার, পরনে তার পীতবসন, উজ্জ্বল মেঘের মতো তার গায়ের রং, বৈদুর্য মণিভূষিত কিরিট তার মস্তকে শোভা পাচ্ছে, নানা রকম মহামূল্য মণি-রতœ শোভিত সমস্ত অলঙ্কার তার দিব্য দেহে শোভা পাচ্ছে, তার মাথা ভর্তি কুঞ্চিত কালো কেশরাশি। তিনি পৃথিবীর সব কলুষিত পরিবেশ ও কলুষিত বন্ধন দূর করার মধ্যে আত্মার বন্ধন সুদৃঢ় করেছেন। বাল্যকাল থেকেই কৃষ্ণ তার অলৌকিক শক্তির প্রমাণ দিয়েছিলেন পুতনাবধ, দামবন্ধন লীলা, কালীয়দমন, গোবর্ধন ধারণ প্রভৃতি কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে।
কালীয়দমন শ্রীকৃষ্ণ লীলার অন্যতম একটি লীলা। শ্রীকৃষ্ণ একদিন বলদেব ছাড়া অন্য বালকদের সঙ্গে যমুনাতীরে এসে উপস্থিত হলেন ও যমুনার জল পান করলেন। গরুগুলো বিষজল পান করে বিষের জ্বালায় অস্থির হয়ে তক্ষুণি মারা গেল। কৃষ্ণ তাদের বাঁচিয়ে তুলে একশ হাত উপরে লাফিয়ে কদম্বগাছে উঠে জলের মধ্যে সাপের ঘরে কেঁপ দিলেন। জলের মধ্যে মানুষ দেখে কালীয় সাপ তাকে গিলে ফেলল। কিন্তু ব্রহ্মতেজে উদ্বিগ্ন হয়ে বমি করে আবার বের করে দিল। রক্ত বমি করতে করতে অজ্ঞান হয়ে পড়ল। সাপের স্ত্রী সতী সুরলা হরির সামনে কাঁদতে লাগল। নাগেশ্বরী ভক্তিতে মাথা নিচু করে স্তব করে কৃষ্ণের পা জড়িয়ে ধরল। যে তিন সন্ধ্যায় নাগপতœীর করা স্তোত্র পাঠ করে, তার সব পাপ নাশ হয়। সে মৃত্যুর পরে হরিমন্দিরে যায় এবং ইহকালে হরিভক্তি লাভ করে ও পরে হরির দাসত্ব লাভ করে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদ্ভগবদ গীতার মাধ্যমে যে উপদেশ দিয়েছেন সেই উপদেশ অনুসারে চলব। আমরা যখন উন্নতির জন্য কঠোর পরিশ্রম করি তখন আমাদের মনে জন্ম নেয় গর্ব, কঠোর পরিশ্রমের পর যখন আমরা সফল হই, সেই সফলতা জন্ম দেয় অভিমানের। কিন্তু সমস্যার সৃষ্টি হয় তখন যখন সেই অভিমান থেকে অহংকারের জন্ম হয়। কারণ অহংকার কখনো মানুষকে উপরে তুলতে পারে না। আমরা অহংকে পরাজিত করে ধীরে ধীরে প্রকৃত মানুষ হওয়ার চেষ্টা করব। চোখ দিয়ে আমরা দেখি, কান দিয়ে শুনি। আমাদের দুটো কান, দুটো চোখ, দুটো নাসারন্ধ্র রয়েছে। এই কান দিয়ে ভালো কথা শুনব। চোখ দিয়ে সুন্দরের প্রতিচ্ছবি দেখব। আমাদের হাত দিয়ে ভালো কিছু করব যাতে সবার মঙ্গল হয়। শ্রীকৃষ্ণ তার দিব্য কর্মজীবনে যেসব শিক্ষা আমাদের শিখিয়ে গেছেন সেই অনুসারে চলার জন্য শতভাগ চেষ্টা করব।

রূপম চক্রবর্ত্তী : কলাম লেখক ও সনাতন ধর্মীয় বক্তা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়