বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলা : মার্কিন দূতাবাসের ‘তথ্য’ ও ‘পর্যবেক্ষণ’ চেয়ে ডিবির চিঠি

আগের সংবাদ

ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জে দেশের অর্থনীতি : রাজস্ব লক্ষ্য অর্জনে ঘাটতি, বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের ভারসাম্যে চাপ, মূল্যস্ফিতির চাপ

পরের সংবাদ

আমরা কি সঠিক পথে আছি?

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কথাটা হঠাৎ করেই মনে এলো। গত দুই বছরে একটিবারও ইলিশ মাছ কিনতে পারিনি। এটা শুনে অনেকেই হাসতে পারেন। কারণ হাসি তাদের রাজনৈতিক পেশা। কিন্তু আমার মতো সাধারণজন (গরিব চাষাদের চেয়ে কি আমি ভালা নেই, চাকরি নাইবা থাকল, তাতে কী?) দুই বছরের মধ্যে একবারও ইলিশ মাছ কেনার কথা ভাবতে পারিনি। অন্য মাছ কেনাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। ইলিশের দিকে মন যায়নি। নজর দিয়েছি খাবারের দিকে, ইলিশের একটি টুকরো যখন ২০০ টাকা পড়ে, তখন আর সেই ইলিশের সুগন্ধ উধাও হয়ে যায়, তা পরিণত হয় দুর্গন্ধে। আবার ডাক্তার বলেছিলেন, মাছ-মাংসের প্রতি আপনার লোভ কমান, মন দেন শাকসবজির দিকে। আপনার পেটও ভালো থাকবে, আর রক্তের শর্করাও কমে যাবে। এখন সেই চেষ্টাই করছি। কিন্তু মুশকিল হলো শাকসবজির দাম যে লাগামছাড়া ঘোড়ার মতোই কেশর ফুলিয়ে নাচছে, তাকে বাগে আনব কোন মন্ত্রবলে? সরকারি মন্ত্র তো কাজে আসছে না। বেসরকারি মানুষ তো কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক আবার কিছু মানুষ অরাজনৈতিক। তারা অসংগঠিত, তাই প্রতিবাদে সবজিওয়ালাদের উচ্চমূল্যের টুঁটি চেপে ধরতে পারছে না। তাদের নাভিশ্বাস উঠলেও তারা রাস্তায় নামছে না। প্রত্যেকেরই তো পৈতৃক প্রাণের ভয়টা আছে। আছে না? আপনারা হলফ করে বলুন তো আপনারা কি ভয়ের ভেতরে বাস করছেন না? একটি পরিসংখ্যান দিই ভোরের কাগজ থেকে, তাহলেই বুঝতে পারবেন মূল্যস্ফীতির লাগামটি কার হাতে বা কারা সেই টাট্টু ঘোড়ায় চেপে দেশ পরিদর্শনে বেরিয়েছেন।
অন্যদিকে সবজির খুচরা বাজারে প্রতি কেজি টমেটো ১৩০, আলু প্রতি কেজি ৪৫, কাঁচামরিচ ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি শসা ৫০, গাজর ১৭০, বরবটি ৭০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা, ঝিঙ্গা ৮০ টাকা, পটোল ৬০, মিষ্টি কুমড়া ৫০, কচুর লতি ৮০, ঢেঁড়শ ৬০ ও লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া মাছের বাজারে প্রতি কেজি ইলিশ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৮০০, পাবদা ৪৫০-৫০০, রূপচাঁদা আকারভেদে ৮০০ থেকে ১ হাজার, তেলাপিয়া ২৪০, পোয়া ৪৫০, রুই ২৫০ থেকে ৩০০, কাতল মাছ ৩০০ থেকে ৩৫০ ও পাঙাশ ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এই দামের রূপটি চট্টগ্রামের। ওই মহানগরটি আমাদের বাণিজ্যিক রাজধানী, তাই দাম বাড়তি থাকতেই পারে। এ রকমটাই মনে হতে পারে। কিন্তু গণরাজধানী মহানগর ঢাকার সবজির দাম কেমন? ২ সেপ্টেম্বর ধনিয়াপাতা কিনেছি ২০০ টাকা কেজি দরে। লতি ১০০ টাকা কেজি, টমেটো ১৮০ টাকা, কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, গাজর ২০০ টাকা। সবজির দামের এই গতি দেখলেই তো পায়ের রক্ত মাথায় ওঠে আসে। কিন্তু সরকারপ্রধান মূল্যস্ফীতি কমানোর নির্দেশ দিয়েই ক্ষান্ত। কিন্তু শাকসবজির দাম নিয়ন্ত্রণের যারা দায়িত্ব পেয়েছেন, তারা হিমশিম খাচ্ছেন। কোনোভাবেই দাম কমানোর তাদের তরিকাগুলো কাজে আসছে না। এখন তো মহামারি শব্দটি না লিখে বলি যে ডেঙ্গুতে এর মধ্যেই শত শত মানুষ মারা গেছে। লোকেরা বলে ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তি যদি নিয়মিত ডাবের পানি খান তা হলে নাকি তার রক্তের প্লাটিলেট বেড়ে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যান। তাই ডাবের এখন চড়া দাম। আমি তো একটি ডাবও কেনার সাহস পাইনি। যারা কিনেছেন, তারা বললেন ৫০ টাকার ডাব এখন ২০০ টাকা। ওই দামের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে বাজার নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ/ভোক্তা অধিকারের লোকজন/ ক্যাব এবং আরো কয়েকটি সক্রিয় সরকারি অফিসারগণ ডাব বিক্রেতাদের কাছে গিয়ে রসিদ চাইছেন, সেগুলো কত দিয়ে কেনা হয়েছে ইত্যাদি। জানি না তারা কেনার রসিদ রাখেন কিনা। আর কত টাকায় বিক্রি করছেন, তাইবা নিয়ন্ত্রকদের বলবেন কেন? বাজার তো চলছে লোভের ওপর। খুচরা দোকানিদের কয়জনকে আটকাবেন সরকারি নিয়ন্ত্রকরা? কিন্তু তারা কেন আড়তদারদের কাছে যান না? সেখানে নিয়ন্ত্রণ করলেই তো খুচরো দোকানিরা কম দামেই সব বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু তারা সেখানে যাবেন না। কারণ ওই আড়তদাররা, মানে মহাজন ব্যবসায়ীরা উঁচু মহলের মানুষ, তাদের রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক বা সামাজিক হাত অনেক লম্বা, ফলে তাদের কাছে গিয়ে কাঁচাবাজার/পাকাবাজার/আমদানিবাজার এবং লোভের বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা বলতে পারেন না। আবার বললেও উল্টো কথা বলবেন। এদেরই প্রতিনিধি রাজনৈতিক সরকারের মন্ত্রিসভায় আছেন কিংবা তারা সিন্ডিকেট করে বাজারের মূল্যস্ফীতিকে আরো একটু উঁচুতে উঠাতে চান। সেটাও তো ডেভেলপমেন্টই!
আমরা জানি, তাদের তহবিল থেকে তো অনেক চাঁদাই দিতে হয় নিয়মিত। তাই গলাটা জনগণের কাঁটা গেলে সেখানে কোনো হৈচৈ উঠবে না। বিএনপি বাজারমূল্য নিয়ে যতই হৈ এবং চৈ করুক না কেন, তো জনগণ চায় না। তাদের আন্দোলন হচ্ছে নিষ্ফল আন্দোলন। আর তারা তো প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় ‘মূর্খের দল’। সেখানে প্রজ্ঞাবান ও শিক্ষিতজনরা নেই। সব শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত মানুষ সরকারি দলে আছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে যেসব বিদেশি বিবৃতি দিয়েছেন, তারা নোবেল লরিয়েট হতে পারেন, তারা সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারেন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতে পারেন, প্রেসিডেন্সি নির্বাচনে হেরে যাওয়া নেত্রী হিলারি ক্লিনটনকে তো তার দেশের মানুষই ভোট দিয়ে জেতায়নি। (যদিও জেনেছি তিনি ট্রাম্পের চেয়ে ৩০ লাখ ভোট বেশি পেয়েছিলেন, কিন্তু মার্কিনি নির্বাচনী সিস্টেম তাকে জিততে দেয়নি) বিভিন্ন দেশের এসব প্রজ্ঞাবান মহারথিকে কে চেনে? আমরা কি হিলারি ক্লিনটনকে চিনি? না, চিনি না। নোবেল লরিয়েটদের কে মনে রাখে? ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পৃথিবীর জনগণ কি চেনে? তিনি তো সুদখোর ও কর ফাঁকিদাতা? এই প্রথম আমরা জানতে পারলাম সোনালী ব্যাংক নয়, জনতা বা অগ্রণীসহ সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো সুদের ব্যবসা করে না, করে গ্রামীণ ব্যাংক। কেউ বা কোনো দেশি বা বিদেশি বাণিজ্যিক সংস্থাই কর ফাঁকি দেয় না। শুধু একবার শুনেছিলাম যে একটি বিদেশি টেলিকম ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মাত্র দেড় হাজার কোটি টাকা কর দেয়নি। ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম কর ফাঁকি দিয়েছে, তাতে কোনো ভুল নেই। কিন্তু কথা হচ্ছে অন্য কর ফাঁকিদাতারা তো আর নোবেল লরিয়েট নন, তারা কর ফাঁকি দিলে তাতে কোনো সমস্যা হয় না, ম্যানেজ হয়ে যায় বা সরকার সেই কর রেয়াত দিয়ে মহানুভব সাজতে পারে। সরকার দুই বছরে (২০২১-২২) মাত্র ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার কর রেয়াত দিয়েছে কিছু শিল্পপতি ব্যবসায়ীকে। সেটা সরকারের অধিকার এবং ওইসব ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি সরকারের শর্ত মেনে পণ্যের দামও না কমিয়ে বরং কয়েক দফা বাড়িয়ে নিজেদের লোভের তহবিল পূর্ণ করে ফেলে তার কিয়দংশ বিদেশেও পাচার করেছেন। এসব নিয়ে আমরা কথা বলব না। কারণ আমরা সরকারি এখতিয়ার সম্পর্কে বলার কে? আমাদের কি সেসব বলা মানায় না অধিকার আছে? ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলাগুলো (মাত্র ১৪৮ নাকি ১৮৪টি) চলবে আইনের নিজস্ব গতিতে। আইন ও আদালত স্বাধীন। সেখানে হস্তক্ষেপ অন্যায়। তার ওপর সেই সব লোক যদি হয় ভিনদেশি, পাশের দেশের নাগরিক কিন্তু জন্মগতভাবে বাংলাদেশের মানিকগঞ্জের মানুষ অমর্ত্য সেন তো নোবেল লরিয়েট, তিনি তো ইউনূসের মামলার বন্ধের কথা বলেননি? ব্যবসা করলে তো মামলা খেতেই হবে। কর ফাঁকি দিলে তো তিনি ধরা খাবেনই। আমরা অবশ্যই কর ফাঁকির ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে একমত। অন্য সংস্থাগুলোর তো তিনিও সুদের ব্যবসা করেন বটে, তাতে তো সিস্টেম তাকে নিষেধ করেনি। তা হলে তিনি কেন অন্যায় করতে গেলেন? শিল্পপতিরা তো আমাদের অর্থনীতির চালিকাশক্তি (যদিও অর্থনীতির ৭০/৮০ ভাগের দখলদার বা দাবিদার হচ্ছে মুখচোরা চাষা, যারা মুখ বুজে কেবল ফসল ফলিয়েই নিজেদের ধন্য মনে করেন)। তাই তাদের জন্য নানারকম সুবিধা দিচ্ছে সরকার। তার মধ্যে একটি হচ্ছে ঋণখেলাপ করলেও সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংক বা ঋণদাতা ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে কচুটাও করে না, করতে পারে না। তারা তো টাকা পাচার করেন নিয়মিতই। দিন কয়েক আগের একটি রিপোর্ট থেকে জানলাম যারা রপ্তানি বাণিজ্য করেন, তাদের হিসাবে গোলমাল আছে। যে পরিমাণ টাকার পণ্য বিদেশে রপ্তানি করেছেন, সেই পরিমাণ টাকা ডলারে ফেরেনি। কেন ফেরেনি, তার দায় সংশ্লিষ্টদের। রপ্তানিকারকরা ভিনদেশে বৈদেশিক মুদ্রা জমাতে বেশ আরাম পান। (ঘুষখোর, ব্যাংকখোর ও ঋণীগণও টাকা পাচারে সিদ্ধহস্ত) তাই আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসের মতোই একটি রপ্তানির পথে ও ডলারে ফেরার পথে রাজনৈতিক ও এমন অর্থনৈতিক সিস্টেম তারা কায়েম করেছেন, ফলে তা তাদের সুফল দিচ্ছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসও কি ভিন দেশে টাকা জমান নাকি? তিনি কী করেছেন যে, তার বিরুদ্ধে মাত্র ১৪৮/১৮৪টি মামলা করতে হলো? সেগুলোর মধ্যে কত বিচিত্ররকম মামলা আছে কে জানে? তবে ফৌজদারি মামলার কারণ কী?
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ছাই দিয়ে ধরা উচিত, কেননা তিনি আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে খুবই জনপ্রিয়। তার এই জনপ্রিয়তার পেছনে নোবেল জয় যেমন দায়ী, তেমনি ‘হ্যাভন’ নারীদের আত্মনির্ভর করে তোলাও কিছুটা দায়ী। এ কাজতো রাজনীতিকদের, তিনি অধ্যাপক মানুষ, তার কি এ কাজ সাজে? নাকি মানানসই হলো! যিনি মানবেতর অসহায় বাংলাদেশে আশ্রয়ের জন্য এসেছিলেন, সেই রোহিঙ্গাদের যিনি আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়েছেন, সেই শেখ হাসিনাকেই তো পুরস্কৃত করা উচিত ছিল নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির। তারা ওই মানবিক ও নৈতিক কাজটি চোখে দেখেনি। এটাই হচ্ছে ইউরোপিয়ান এক চোখাদৈত্য ও দেবতাদের নীতি আদর্শ। আমরা তখনই এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম।
মন খারাপ হওয়ার মতো আরো বহু কথা আছে, তা লিখতে ক্ষান্ত দিলাম। কেবল বলি, যে জনগণের কাছে প্রধানমন্ত্রী ভোট চাইছেন, তারা তো ভোটই দিতে পারে না। আবার এখন শাকসবজির যা দাম উঠেছে, সেই দামের ঝাঁজের কারণেও তো তারা আর ভোট দিতে যাবে না। তাহলে উপায়? ওই বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় ১৫৩ জন? নাকি দিনের ভোট রাতে কিংবা আগের দিন সেরে বিজয় অর্জন করবে আওয়ামী লীগ! তাদের তো স্মার্ট ছাত্রলীগ আছেই। তারা স্মার্টলি ভোটের রাজনীতিটি সেরে দেবে। কোনো ভয় নেই। তদের মতো কর্মদক্ষ এ দেশে আর কেউ নেই। তারা ধ্বনি দিয়েছে আবারো শেখ হাসিনার জন্য ক্ষমতা দরকার।

ড. মাহবুব হাসান : সাংবাদিক ও কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়