নাজিরাবাজারে দুই দোকানে আগুন শর্টসার্কিটে

আগের সংবাদ

তিস্তায় জল গড়ানোর আশা! জি-২০ সম্মেলনের সাইডলাইনে হাসিনা-মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করবে বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

দক্ষিণ চট্টগ্রামের নতুন দুর্যোগ বন্যা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কয়েক দিন ধরে দক্ষিণ চট্টগ্রাম জেলার নতুন এক সমস্যা বন্যা। দক্ষিণের থানাগুলোতে আগে নদী-পার্শ্ববর্তী এলাকায় বন্যা নিয়মিত হলেও নতুন করে অনেক বেশি পরিমাণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে এমন এলাকা রয়েছে যেগুলো দুই-তিন পুরুষ ধরে অতিবন্যা বা বন্যার আওতার বাইরে ছিল। কিন্তু কী কী পরিবর্তনের কারণে- সম্পদের সুষমবণ্টন নাকি দুর্যোগের সুষমবণ্টন হলো তা নির্ণয়ের চেষ্টা চালায়। ১. প্রাকৃতিক পরিবেশে অবকাঠামোগত পরিবর্তন বা উন্নয়নের প্রভাব, ২. আবহাওয়া ও জলবায়ুর নতুনতর রূপ ও ৩. শিক্ষা খাতের গুণগত মানের উন্নয়নে অভাব।
এক. মানুষ নিয়মিতই পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনের ঝুঁকি হয় উন্নত না হয় অবনতির পথে বাড়ায়। কিন্তু পরিকল্পিত পরিবর্তন সবসময় উন্নতির পথেই চালিত করে। আমরা যে পরিবেশে বসবাস করি তাতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিনিয়ত বসবাসের জন্য অবকাঠামো তৈরি করছি। যেটি ব্যক্তিবিশেষ পরিকল্পিত কিন্তু সামগ্রিক নয়। আবার সামাজিকভাবেও কিছু অবকাঠামো তৈরি করছি, যা সুষ্ঠুভাবেই সামগ্রিক অর্থে অপরিকল্পিত। এবার সামগ্রিকভাবে অর্থাৎ সরকারের তৈরি অবকাঠামোর দিকে তাকানো যাক। সাধারণত এসব অবকাঠামো উন্নয়ন সুচারুরূপে পরিকল্পিত হয়ে থাকে। কিন্তু এ ৩ ধরনের অবকাঠামো পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের সহনশীলতা ধৈর্য ধরে পরিমাপ করি না বা প্রাকৃতিক পরিবেশে এর ভবিষ্যৎ প্রভাব কী হতে পারে তার সর্বাত্মক বিশ্লেষণ করি না। প্রতিটি অবকাঠামো প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্যের পরিবর্তন ঘটায়।
দুই. মানবসৃষ্ট অবকাঠামোই শুধু প্রাকৃতিক পরিবেশকে প্রভাবিত করে তা নয়। বরং মানবসৃষ্ট সবকিছুই এ পরিবেশের পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে পরিবর্তনে ভালোর চেয়ে মন্দের দিকটাই ভারি। অন্তত পুরনো ইতিহাস তাই বলে। এর সরাসরি ফলাফল অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন। বাংলাদেশের ঋতু পরিবর্তনও এর অংশ। তাই সব ঋতুতেই আবহাওয়ার ধরনে বড় পরিবর্তন এসেছে।
তিন. শিক্ষা সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, রাজনীতি, ধর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য, মানবসম্পদ ও প্রাকৃতিক পরিবেশের বর্তমান রূপের স্থপতি। সবক্ষেত্রে কাজের ফলাফলে প্রকৃত শিক্ষার স্বরূপ উন্মোচিত হয়। সুশিক্ষিত জাতি সব ধরনের কাজে সুস্পষ্ট ছাপ রেখে যায়। সুশিক্ষার অভাবে মানুষ তার নিজের, পরিবারের, সমাজের, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এমনকি প্রাকৃতিক পরিবেশেরও যোগ্য হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে না।
উপরের এই তিন কারণই হলো চট্টগ্রামের দক্ষিণ জেলার নতুনতর বন্যা পরিধির আকার বৃদ্ধির কারণ। সাতকানিয়ায় এমন এমন জায়গায় বন্যা দেখা দিয়েছে যা বিগত ৫০-৬০ বছরেও হয়নি। এর জন্য দায়ী অপরিকল্পিত অবকাঠামোগত পরিবর্তন ব্যক্তিগত ও সামগ্রিকভাবে, জলবায়ুর পরিবর্তন, মানুষের শিক্ষার অভাব। চট্টগ্রামজুড়ে অপরিকল্পিতভাবে ইটভাটা তৈরি, ছোট ছোট প্রায় সব খাল বিলীন বা ভরাট, পানি যাতায়াতের রাস্তা ভরাট প্রভৃতি সুশিক্ষার সুস্পষ্ট অভাবের উদাহরণ। দক্ষিণ চট্টগ্রাম রেললাইনের আওতায় আসবে তা আমাদেরও স্বপ্ন। তাই এই নতুন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যার থেকে নিস্তারের জন্য পানি নামার সঠিক পথ খুঁজে তা প্রশস্ত করা, ছোট ছোট খাল উদ্ধার করে প্রশস্ত করা, চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেললাইন প্রজেক্টের প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং সর্বোপরি সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে স্ব-স্ব বিশেষজ্ঞ আমাদের আলোর পথ দেখাতে পারে।

বিজয় কুমার ধর : কবি ও ব্যাংকার।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়