ভূমি আইন ভঙ্গে এক লাখ টাকা জরিমানা : নাটোরে ড. ওয়াজেদ মিয়ার নামে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নারী আসনে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন

আগের সংবাদ

ফের আলোচনায় ড. ইউনূস : হতে চান তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান > জাতীয় দুর্যোগে নেই জাতির পাশে

পরের সংবাদ

ব্রিকস ও বাংলাদেশ প্রসঙ্গ

প্রকাশিত: আগস্ট ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে সম্প্রতি ব্রিকস সম্মেলন হয়ে গেল, যাতে পুতিন ছাড়া ব্রিকসের ৫ সদস্য রাষ্ট্রে, রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানরা যোগ দিয়েছিলেন। তদুপরি এশিয়া, আফ্রিকার বেশ ক’জন রাষ্ট্র কিংবা সরকারপ্রধানও যোগ দিয়েছিলেন। আমন্ত্রিত হয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। জেনেছিলাম এবারে এ সম্মেলনে ব্রিকসের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হবে। আরো জেনেছিলাম যে বাংলাদেশ তার সদস্য হচ্ছে না। তাই শেখ হাসিনা হাত চিত করে ব্রিকস সম্মেলনে যাননি; অবস্থান অবলোকন করতে গিয়েছিলেন কিংবা বিশ্ব অঙ্গনে বাংলাদেশের উত্তরোত্তর ভাবমূর্তির উন্নয়নে গিয়েছিলেন। তবু নিন্দুকরা বলছে জোহানেসবার্গ থেকে শেখ হাসিনা খালি হাতে ফিরেছেন বা বাংলাদেশের আশা ভঙ্গ হয়েছে। শূন্য হাতে ফেরার প্রসঙ্গটি যেমন অবান্তর বা বাংলাদেশের আশা ভঙ্গের প্রসঙ্গটিও ভিত্তিহীন। সদস্য পদ না পাওয়াটাই আমাদের মঙ্গলকর হয়েছে, যাকে বলা যায় শাপে বর। কারণগুলো একটু বিস্তারিত আলোচনা করছি।
ব্রিকস এখনো একটি বিতর্কিত হাঁটি-হাঁটি পা-পা করা সংগঠন- ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া ও চীন সমন্বয়ে ব্রিক প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৬ সালে। ৪ প্রতিষ্ঠাতা দেশের নামের আদ্যক্ষর দিয়ে তার নামকরণ হয় ব্রিক। ২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে অন্তর্ভুক্তির পর তার নাম হয়েছে ব্রিকস অর্থাৎ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও সাউথ আফ্রিকার আদ্যক্ষর দিয়ে নামকরণটি হয়। ব্রিকসে সদস্যভুক্তির ধীরগতি প্রথম থেকে লক্ষণীয়। প্রতিষ্ঠার তিন বছর পর সাউথ আফ্রিকা আর ১৭ বছর পর এবারে ৬টি রাষ্ট্র ব্রিকসের সদস্য পদ লাভ করেছে। আগামী বছরের প্রথম থেকে এসব দেশের মধ্যে অন্তর্ভুক্তি কার্যকর হবে। যদিও ব্রিকস সদস্যদের ভৌগোলিক কিংবা মনস্তাত্ত্বিক ভিন্নতা আজো দূর হয়নি বা হওয়ার নয়। অন্তত দুটি বড় সদস্য যার, একটি সম্প্রতি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে রোবটবাহী রকেট পাঠিয়েছে, আর একটি বিশ্বের এক নম্বর অর্থনীতির স্বপ্ন দেখছে, তাদের সাপে-নেউলে সম্পর্কে ছিল বা আছে। তবুও দুটি দেশ অন্তত লাদাখ সমস্যা সমাধানের কথা বলেছে এবং হয়তো এ কারণে বিশ্বব্যাপী ব্রিকসের প্রতি সমর্থনের গ্রাফ চাঙ্গা হচ্ছে।
এই সম্মেলনে অপর অর্জনটি হচ্ছে ব্রিকসের অর্থ ও উদ্দেশ্য নিয়ে বিশ্ব পরিমণ্ডলে ইতিবাচক তার সূচনা হ্রাস। ব্রিকস যে শুধু বিশ্বকে ডলারের প্রভাব মুক্ত করতে কিংবা পশ্চিমা শক্তিকে আর্থিক বা রাজনৈতিকভাবে টেক্কা মারার একটি সংগঠন নয় প্রমাণিত হয়েছে। এসব ছিল পর্যবেক্ষণের বিষয়। তবে আজতক ব্রিকসের বড় অর্জন হচ্ছে বহু আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ব্যাংক, যার সদস্য ও উপকার বাংলাদেশ পাচ্ছে।
ব্রিকসের নতুন সদস্য দেশগুলো হলো আর্জেন্টিনা, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, মিসর ও ইথোপিয়া। ইথোপিয়া আমাদেরকে উৎরে গেছে বলে আত্ম-দহনের কারণ নেই। এই সিদ্ধান্তে বৈশ্বিক সমস্যা ও প্রভাব বলয় বিস্তারের অভিপ্রায়ও থাকতে পারে। বহু আগে তার চেয়ে বিস্ময়কর ছিল সাউথ আফ্রিকার সদস্যভুক্তি।
বাংলাদেশ সদস্য হতে যে কম আগ্রহী ছিল তা অনেক কারণেই অনুমিত। বাংলাদেশের বাণিজ্য নির্ভরতা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সীমাংসিত মিত্র জাপান ও পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে। ভারসাম্যের প্রশ্নে আমরা পিছিয়ে। তাদের বিমুখ করা হতে পারত আত্মঘাতী। শেখ হাসিনা নীতিগতভাবে ঋৎরবহফংযরঢ় ঃড় ধষষ, সধষরপব ঃড় হড়হব জাতীয় বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী ও নিবেদিত বলে বলেই দিবাস্বপ্ন দেখতে নারাজ। আজ থেকে হোক, কাল থেকে হোক বহুমুখী বিশ্বে একটি বাতিঘর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্রিকসে বাংলাদেশের প্রবেশ নিশ্চিত হবেই।
অচিরে বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বহুমুখীকরণে সামর্থ্য অর্জন করেই ব্রিকসে প্রবেশ করবে। নির্বাচনের আগে কোনো প্রকার চুক্তিতে আবদ্ধ হতে অনীহার কারণেও ব্রিকস থেকে দূরে থাকার কামনা আমাদের ছিল। ব্রিকসের এই সম্মেলনে দেশটি সদস্যভুক্ত না হওয়ায় মানুষ এক ধরনের স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পেরেছে। এখানে কুল রাখি কি শ্যাম রাখির ব্যাপারটা ছিল। বাংলাদেশের সদস্য পদ না পাওয়াটাকে শাপেবর হয়েছে বলব।
সবকিছুর বিবেচনায় শেখ হাসিনা কোনো প্রত্যাশা নিয়ে যাননি, তাতে শূন্য বা ভরা হাতের প্রসঙ্গটি গৌণ। এই জাতীয় উক্তি আমাদের দেশের রাজনীতির মধ্যে আছে। তাদের অনুসারীরাও চোখ বন্ধ করে এমনটি মেনে নেন। আশ্চর্য হই যখন তার সঙ্গে সুশীলরা যুক্ত হন, যে সুশীলদের আমি ‘ধামড়া’ বলি। ধামড়া শব্দটি অভিধানে মিলে না। আঞ্চলিক ভাষায় তা হলো রূপান্তরিত ষাঁড় কিংবা শিং ভেঙে বাচুরে রূপান্তরের স্বপ্ন। ১৯৭১ সালে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধে যারা যোগ দেয়নি বা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধাচারী ছিল আমি তাদের ‘ধামড়া’ বলি। আমাদের যেসব বুদ্ধিজীবীর বক্তৃতা-বিবৃতি কিংবা বিদেশিদের হয়ে আস্ফালনে লিপ্ত তাদের অধিকাংশই মুক্তিযুদ্ধের কালে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি। তারা এখনো ধামড়া, কারণ তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নয়। বঙ্গবন্ধু হত্যায় তারা আগে-পরে কোনো প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করেনি। ট্রিগার চালক ও নেপথ্যের কুশীলবদের ব্যাপারে চুপচাপ। শিশু রাসেল হত্যার মাঝেও তার গণতন্ত্রের দ্বার খুলে যেতে দেখেন। তারা দেশের মানুষকে বুঝিয়েছিল এ বলে যে, বাসন্তী শাড়ি না পেয়ে জাল পরে ছিল, যখন একটি জালের দামে ৬-৭টি বাসন্তীদের শাড়ি কেনা যেত। তারা বুঝিয়ে দিয়েছিল রাষ্ট্রপতির সন্তান খালি হাতে সুরক্ষিত ব্যাংকের বোল্ট ভেঙে ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়েছিল। তারা বুঝিয়েছিল শেখ মুজিব বিপদে পড়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন আর স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছিলেন। তারা বুঝিয়েছিল যে শেখ মুজিব বড় মাপের বিরোধীদলীয় নেতা হতে পারেন, তিনি জাতির পিতা হতে পারেন না, তিনি সংস্কারবাদী হতে পারেন, জনকল্যাণমুখী পদক্ষেপ নিতে পারেন না, নিজের শাসনামলে দেশের চেহারা বদলিয়ে এবং বিশ্বব্যাপী শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিয়ে মহান রাষ্ট্রনায়ক হতে পারেন না। তারা গণহত্যা, মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিলেও বঙ্গবন্ধু হত্যার পর একটা বিবৃতি দিতে পারেন না, ৪ নেতার অপঘাতে মৃত্যুর পরও শোক জানাতে পারেন না, দেশে সব কিছু পদদলিত হলেও বিদেশি প্রভুদের পরামর্শ ও পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এদিক-সেদিক কিছু করেন না। বাংলাদেশের খোলনলচে বদলকারীদের ব্যাপারে তাদের জিহ্বা আড়ষ্ট, তারা জঙ্গিদের ব্যাপারে সহনশীল, ২১ আগস্টের মতো ঘটনায়ও বিচলিত হন না। এই জাতীয় মানুষ ব্রিকস বা শেখ হাসিনাকে নিয়ে অঙ্গুলি তুললেও কেউ তাতে কান দেবে না বলেই আমাদের ধারণা।

অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী : বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ; উপাচার্য, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়