অর্ধকোটি টাকার জাল নোটসহ গ্রেপ্তার ৪

আগের সংবাদ

বহুমুখী বিশ্বের বাতিঘর ব্রিকস : ফ্রেন্ডস অব ব্রিকস লিডারস ডায়ালগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

পরের সংবাদ

আর কত শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার সাক্ষী হব আমরা!

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে শত স্বপ্ন আর আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে। ভর্তি পরীক্ষা নামক চরম প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়েই একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় নামক সম্ভাবনাময় অধ্যায়ে পা রাখে। শত স্বপ্ন ও আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আশা একজন শিক্ষার্থী কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়? কেন তারা আশা-আকাক্সক্ষা আর বাস্তবতার সঙ্গে সমন্বয় করতে পারছে না? সাম্প্রতিক দুটি ঘটনা বিশ্লেষণ করলেই আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাই। গত দুদিন দুটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। গত ২০ তারিখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ঋতু কর্মকার এবং ২১ তারিখ বাংলা বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী শেখ মঞ্জুরুল ইসলাম আত্মহত্যা করেছেন। উভয়েই ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশায় ভুগছিলেন। আর এই হতাশা চরম পর্যায়ে পৌঁছানোতেই আত্মহত্যার মতো পথে পা বাড়িয়েছেন তারা। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেসরকারি সামাজিক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে ২০২২ সালে দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮৬টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। আগের চার বছর যথাক্রমে ১০১, ৭৯, ১১, ১৯ জন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। এ সংখ্যা যেন ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এমন সম্ভাবনাময় পর্যায়ে এসে একজন শিক্ষার্থী কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশা থেকে এমন কাণ্ড ঘটায় সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীরা। আর এই হতাশার অন্যতম কারণ হচ্ছে শিক্ষার্থীদের সরকারি চাকরি আরো নির্দিষ্টভাবে বললে বিসিএসের প্রতি প্রবল মোহ। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেন বিসিএস তৈরির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা গবেষণা কিংবা দক্ষতা অর্জনের প্রতি নজর না দিয়ে গতানুগতিক ধারায় বিসিএস কিংবা অন্যান্য সরকারি চাকরির পেছনে ছুটছে। কিন্তু সবাই যদি একদিকে ছোটে তা হলে অধিকাংশের হতাশায় নিমজ্জিত হওয়াই তো অনিবার্য। কারণ আমরা এমনিতেই জনবহুল দেশ। শত শত চাকরি প্রার্থীর বিপরীতে আসন সংখ্যা অতি অল্প। তাই স্বাভাবিকভাবেই অধিকাংশকেই চাকরি না পেয়ে হতাশ হতে হচ্ছে। আর অন্যদিকে অনেক নামিদামি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দক্ষ জনশক্তি পাচ্ছে না। ভারত ও শ্রীলঙ্কার নাগরিকরা এ সব সেক্টরে আধিপত্য বিস্তার করছে। যার ফলে প্রতি বছর শত কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ২০১৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৫ লাখ ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে কাজ করেন। তারা তাদের দেশে এক বছরে ৩ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার সমান। আর আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা চাকরি না পেয়ে হতাশায় আত্মহত্যা করছে। এই দোষ কি শুধুই শিক্ষার্থীদের? আমাদের সমাজ ব্যবস্থার কি কোনো ত্রæটি নেই? অবশ্যই আছে। সরকারি চাকরিকে আমাদের সমাজে এত বেশি মূল্যায়ন করা হয়, যে কারণে সবাই এই সরকারি চাকরির পেছনেই দৌড়ায়। দিনশেষে অধিকাংশকেই হতাশ হয়ে ফিরতে হয়। আমাদের এই সরকারি চাকরির মোহ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করলে শিক্ষার্থীদের এমন হতাশায় নিমজ্জিত হতে হবে না। বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো দক্ষ জনবল পাচ্ছে না। এর মূল কারণ পর্যাপ্ত দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরো আধুনিক সরঞ্জাম জোগান দিতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নের পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। যাতে তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দক্ষ নাগরিক হয়ে বের হতে পারে। কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নের প্রতি নজর দিতে হবে। তা হলেই শিক্ষার্থীরা দক্ষ জনবলে পরিণত হবে এবং সহজেই কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে পারবে। উদ্যোক্তা তৈরিতে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রণোদনা কিংবা অন্যান্য সহায়তা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আর ঋতু কর্মকার কিংবা শেখ মঞ্জুরুল ইসলামের মতো মেধাবীদের আত্মহনন দেখতে চাই না। আমরা চাই একটি কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা, আমরা চাই দক্ষতা অর্জনের পর্যাপ্ত সুযোগ, আমরা চাই সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। আর এর মাধ্যমেই সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব।

মো. ইসমাইল হোসেন : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়