ময়মনসিংহে ট্রেনের ৩ বগি লাইনচ্যুত

আগের সংবাদ

তফসিলের আগে নাশকতার ছক : বিএনপি ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে ঢাকায় জমা করা হচ্ছে অবৈধ অত্যাধুনিক অস্ত্র

পরের সংবাদ

পেঁয়াজের বাজার যেন স্থিতিশীল থাকে

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পেঁয়াজের বাজার আবারো অস্থির হয়ে উঠছে। গত শনিবার ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এমন খবরে একদিনেই দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে শুধু নিম্নবিত্ত নয়, সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জীবনে প্রভাব পড়বে। সংশ্লিষ্টদের মতে- উৎপাদন ঘাটতি, হাতবদলের কারণে দাম বেড়ে যাওয়া ও আমদানি বন্ধ থাকাসহ নানা কারণে অস্থির হয়ে উঠে দেশের পেঁয়াজের বাজার। জানা গেছে, দেশে উৎপাদন বাড়লেও চাহিদা মেটাতে প্রতি বছরই পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। আমদানির সিংহভাগই হয় ভারত থেকে। তাই ভারতে রপ্তানি বন্ধ, মূল্যবৃদ্ধি কিংবা শুল্ক আরোপ- এ জাতীয় কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হলে সঙ্গে সঙ্গে দেশে এর প্রভাব পড়ে। ৪ বছর ধরে এর প্রভাব দেশের ভোক্তাদের বেশ ভুগিয়েছে, বিশেষ করে সেপ্টেম্বর মাস এলেই এ ধরনের পরিস্থিতি বেশি দেখা যায়। এর আগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় ওই বছর বেশ টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয় দেশের বাজারে। তখন পাকিস্তান, মিয়ানমার, তুরস্ক, চীন ও মিসর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছিল। নৌ ও স্থলপথের পাশাপাশি আকাশপথেও আমদানি হয়েছিল। এরপরও প্রায় ৩০০ টাকা ছুঁয়েছিল পেঁয়াজের দাম। এরপরের বছরও ঠিক একই সময়ে রপ্তানি বন্ধ রেখেছিল ভারত। সে বছরও ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে দাম। ২০২১ সালে ভারত রপ্তানি বন্ধ না করলেও নানা কারণে বাংলাদেশের বাজারে কমবেশি প্রভাব পড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি বছর দেশে যে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয় তা দিয়ে চাহিদা মেটে না। চাহিদার একটি বড় অংশ আমদানি করে মেটাতে হয়। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ভারতে বৃষ্টি হলে বা আমদানি বন্ধ হলে দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। এর পেছনে শক্তিশালী সিন্ডিকেট জড়িত। অতি মুনাফালোভী পাইকারি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মানুষকে জিম্মি করে পণ্যের দাম বাড়ানোর ঘটনা নতুন নয়। দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদা ২৬-২৮ লাখ টন। চলতি বছর পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। কিন্তু উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে বা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে ৩০-৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। সে হিসাবে প্রকৃত উৎপাদন দাঁড়ায় ২২-২৪ লাখ টন। চাহিদার তুলনায় কম হলেও এ সময়ে পেঁয়াজের তেমন ঘাটতি নেই। তাহলে ভারতের শুল্ক আরোপের সঙ্গে সঙ্গে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেন ২০-২৫ টাকা বাড়বে? এটা সিন্ডিকেটের কারসাজি ছাড়া কিছুই না। সিন্ডিকেট করে যারা পণ্যের দাম বাড়ায় তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে এখনই নজর দেয়া উচিত। পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হলে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। কাজেই নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতা দূর করার জন্য সময়মতো পদক্ষেপ নিতে হবে। পেঁয়াজের বাজার নিয়ে দেশবাসীর তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি ক্ষেত্রেই সিন্ডিকেটের আস্ফালন লক্ষণীয়। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা এ চক্রটি অত্যন্ত শক্তিশালী ও ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। এরা ইচ্ছামতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করে অনায়াসে অন্যায্যভাবে বিপুল মুনাফা লুটে নিচ্ছে। আমরা মনে করি, বাজার পরিস্থিতি পাল্টানোর জন্য সবার আগে প্রয়োজন বিক্রেতাদের মানসিকতার পরিবর্তন। ক্রেতাদেরও সজাগ থাকতে হবে। এই পরিবর্তন কবে ঘটবে তার জন্য অপেক্ষা করে নিষ্ক্রিয় বসে থাকলে চলবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়