কংগ্রেসম্যানদের চিঠিকে ‘গুরুত্ব দিচ্ছে না’ সরকার

আগের সংবাদ

ছিটমহল বিনিময়ের অষ্টম বর্ষপূর্তি : দাশিয়ারছড়ার উন্নয়ন অব্যাহত থাকুক

পরের সংবাদ

হটকারী সিদ্ধান্তের খেসারত! : আপাতত জেলা ও মহানগর পর্যায়ে নতুন কর্মসূচি দেবে বিএনপি, দম নিয়ে ফের ঢাকাকেন্দ্রিক কর্মসূচি

প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ঢাকার প্রবেশমুখে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি পুলিশের বাধার মুখে পড়ার পর আন্দালনের নতুন কৌশল নিয়ে ভাবছে বিএনপি। পূর্ব পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও দিকনির্দেশনা ছাড়া এমন হটকারী কর্মসূচিতে ক্লান্ত-আতঙ্কিত দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তাছাড়া ওই কর্মসূচিতে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের আশানুরূপ অংশগ্রহণ না থাকা জন্ম দিয়েছে ভিন্ন আলোচনার। এই প্রেক্ষাপটে সরকারের পদত্যাগের এক দফার টানা কর্মসূচির বদলে আপাতত জেলা ও মহানগর পর্যায়ে গতানুগতিক কর্মসূচিতে ফিরে যাচ্ছে বিএনপি। কিছুদিন দম নিয়ে ফের ঢাকা কেন্দ্রিক নতুন কর্মসূচি নিয়ে ভাবছেন নীতিনির্ধারকরা।
বিএনপির সিনিয়র নেতারদের অনেকেই বলছেন, একটা বড় কর্মসূচির ব্যাপারে হটকারী সিদ্ধান্ত নিলে ফল আশানুরূপ আসে না। ২৯ জুলাইয়ের কর্মসূচি ঠিক তেমনই ছিল। এখন এর খেসারত দিতে হচ্ছে। ওই কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে নেতাকর্মীরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। তাছাড়া যে ৩৭টি দল যুগপৎ আন্দোলনে আছে, তাদের থেকেও প্রত্যাশিত সক্রিয় অংশগ্রহণ মিলছে না। হাতে সময় আছে- তাই এই মুহূর্তে খানিকটা বিরতি দরকার। দলটির নেতাদের মতে, সারাদেশে ফের ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আরো শক্তি সঞ্চয় করে ঢাকাকেন্দ্রিক আন্দোলন জোরদার করতে হবে। এমন বাস্তবতায় ৬ মাস পর কোনো কর্মসূচি ছাড়াই সোমবারের সমাবেশ শেষ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সূত্র জানিয়েছে, শোকের মাসে ঢাকায় বড় ধরনের কর্মসূচি দিতে চায় না বিএনপি। এই সময়টাতে জেলা ও মহনগর পর্যায়ে কর্মসূচি দিয়ে তৃণমূলে ফের কর্মীদের প্রস্তুত করা হবে। একইসঙ্গে সরকারের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন দলের শীর্ষ নেতারা। এরপর সেপ্টেম্বর থেকে আবার কঠোর কর্মসূচিতে ফিরবে বিএনপি।
শক্ত আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি করে কেনো বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে বিএনপি? এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোরের কাগজকে বলেন, পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। সেটা ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ফরমেটে আসে। তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিচ্ছি। এতে ফল পেয়েছি। আমাদের কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষ

যুক্ত হচ্ছে। এর মাধ্যমে একটি গণজোয়ার সৃষ্টি হবে এবং সরকারকে বিদায় নিতে হবে।
হটকারী সিদ্ধান্তে পাল্টে গেল আন্দোলনের গতিপথ : বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গত ২২ জুলাই ঢাকা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারুণ্যের সমাবেশ থেকেই বিএনপির আন্দোলনের টার্নিং পয়েন্ট শুরু হওয়ার কথা ছিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল- এরপর একের পর এক লাগাতার ঢাকাকেন্দ্রিক কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে বড় চাপে ফেলার। সেই কারণেই ২২ জুলাই তারুণ্যের সমাবেশের পাঁচ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার ঢাকায় মহাসমাশের কর্মসূচি দেয়া হয়। পরে সমাবেশ স্থলের অনুমতি না পেয়ে একদিন পর শুক্রবার নয়া পল্টনে তারা সমাবেশ করে। দুইটি কর্মসূচিতেই সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসেন।
বিএনপির হিসেবে সেদিন মহাসমাবেশে ১০-১২ লাখ লোকের উপস্থিতি ছিল। এই নেতাকর্মীদের রেখেই তাদের ঢাকাভিত্তিক আন্দোলনের পরিকল্পনা ছিল। ফলে তারা সমাবেশের পরদিনই শনিবার ঢাকার প্রবেশ মুখে অবস্থান কর্মসূচি দেয়। এই কর্মসূচির পরদিন তাদের সচিবালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেয়ার কথা ছিল বলে জানা গেছে। কিন্তু এখানে কর্মসূচির তারিখ নিয়ে দলের ভেতরেই নানা মত ও সমন্বয়হীনতা দেখা দেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী এক দিন হাতে রেখে ঢাকার প্রবেশ মুখে অবস্থানের কর্মসূচি দেয়ার কথা ছিল রবিবার। সেখান থেকে সোমবার সচিবালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেয়ার কথা ছিল। এটা একদিন এগিয়ে আনা হয় হাইকমান্ডের নির্দেশে।
চলমান কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নীতিনির্ধারক বলেন, আমরা ২০১৪-১৫ সালের মতো হঠকারী আন্দোলন করতে চাই না। আমাদের হাতে সময় আছে। বড় আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি করার জন্য সারাদেশে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে আমরা কর্মসূচি দিচ্ছি। আন্দোলনের পারদ একটু নেমে গেলেও উঠতে সময় লাগবে না।
কর্মসূচি পরিবর্তনের নেপথ্যে কি? : ২৮ জুলাই নয়াপলল্টনে মসাসমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতারা একে একে বক্তব্য শেষ করেন। এবার স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বক্তব্যের পালা। সব সময়ই সমাবেশে সবার শেষে বক্তব্য দেয়া নেতা নজরুল ইসলাম খান সবার আগে বক্তব্য দিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে যান। তার পরপরই আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীও বক্তব্য দিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে পড়েন। সূত্র জানায়, এইি দুই নেতা বক্তব্য দিয়েই চলে যান কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দোতলায়। সেখানে মহাসচিবের রুমে স্কাইপিতে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন লন্ডনে অবস্থারত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে। ওই বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন ভারতে অবস্থানরত আরেক নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ। কর্মসূচির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতেই এই দুই নেতাকে সমাবেশ মঞ্চ থেকে জরুরি ডেকে আনেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, লাখ লাখ নেতাকর্মীকে একসঙ্গে আবার জড়ো করা কঠিন হবে। একদিন বিলম্ব করার কোনো প্রয়োজন নেই। যেভাবে ধর-পাকড় হচ্ছে তাতে ১ দিন পর কর্মীদের মাঠে পাওয়া যাবে না। এ সময় নজরুল ইসলাম খান কর্মসূচির প্রস্তুতির ব্যাপারে কথা তুললে তাকে থামিয়ে দেন তারেক রহমান। তাতে সায় দিয়ে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, কর্মসূচি কাল দিলেই ভালো হবে। ফলে কর্মসূচির ব্যাপারে হটকারী এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফের সমাবেশ মঞ্চে ফিরে আসেন নজরুল ইসলাম খান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি ছাড়া এমন কর্মসূচি ঘোষণা দেয়ার আগে অনেকটাই হকচিত হয়ে পড়ের দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিছুটা উত্তেজিতও হয়ে পড়েন তিনি। তবুও ভারপ্রাপ্ত চেয়াম্যনের আদেশ অমান্য করতে না পেরে ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কর্মসূচিতে কোথায় ছিলেন নেতারা? : ১ দিন পর দিলে কর্মসূচি ফ্লপ করবে- এ যুক্তি দেখিয়ে তড়িঘড়ি অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণার সিদ্ধান্ত দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেই কর্মসূচিতে হাতে গোনা দুয়েকজন নেতা ছাড়া কাউকে মাঠে দেখা যায়নি কোনো- এ নিয়ে দলটির ভেতরে ও বাইরে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। ঢাকার প্রবেশ মুখের কর্মসূচিতে আমানউল্লাহ আমান ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ আরো দুয়েকজন সিনিয়র নেতা ছাড়া অন্যদের তেমন দেখা যায়নি। সূত্র জানায়, রাগ করেই সেদিনের কর্মসূচিতে অংশ নেননি মির্জা ফখরুল।
তাছাড়া কর্মসূচির স্পটে সমাবেশের মতো নেতাকর্মীদের উপস্থিতিও ছিল না। পুলিশ ওই কর্মসূচির অনুমতি না দেয়ায় ভালো প্রস্তুতিও ছিল না তাদের। ফলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হলে বিএনপির নেতাকর্মীরা অবস্থান বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি। এ নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন তৃণমূলের দায়িত্বশীল নেতারা। তারা বলছেন, কর্মীদের মাঠে নামিয়ে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে সিনিয়ররা ঘাপটি মেরে আড়ালে ছিলেন।
সন্দেহের তীর গয়েশ্বর-আমানের দিকে : সভা সমাবেশে পক্ষ নিয়ে বক্তব্য রাখলেও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের প্রতি সরকারের ‘নমনীয়তা’ কে দলে বিভেদ তৈরির কূটচাল হিসেবে দেখছে বিএনপি। এই দুই নেতার রহস্যজনক আচরণ বিভ্রান্ত করছে তৃণমূল নেতাকর্মীসহ সিনিয়র নেতাদেরও। এমন ঘটনায় মাঠের নেতাদের মূল্যায়ন- ‘সরকারের সঙ্গে আঁতাত রয়েছে শীর্ষ নেতাদের’।
এ নিয়ে বিএনপির এক সিনিয়র নেতা ভোরের কাগজকে বলেন, গণঅবস্থান কর্মসূচি থেকে যে গয়েশ্বর রায়কে রাস্তায় ফেলে সাপের মতো মারতে দেখলাম পুলিশকে; তিনি কীভাবে সুস্থ শরীরে পুলিশের সঙ্গে খাবার খান? তার মাথা ফেটে রক্ত ঝড়ছিল, কিন্তু ব্যান্ডেজ কই? ওই দিনই তো তিনি সুন্দরভাবে হেঁটে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এলেন। তিনি বলেন, বুকে ব্যথা অনুভব করা আমান উল্লাহ আমান ভর্তি হলেন হাসপাতালে; সেখানে তাকে ফলের জুস নিয়ে দেখতে আসলেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব। তাহলে কি সরকারের সঙ্গে এই দুই নেতার আঁতাত রয়েছে বলে যে গুজব উঠেছে তা সত্যি? এমন প্রশ্নের জবাবে মৃদু হেসে বিএনপির এই নেতা বলেন, অনেক প্রশ্ন মনে, কিন্তু উত্তর মেলে না।
আগামীর চ্যালেঞ্জ : বিএনপি এবং তাদের সমমনা দলগুলো মনে করছে, আন্দোলন ঢাকাকেন্দ্রিক করার ক্ষেত্রে তাদের সামনে এখন দুটি চ্যালেঞ্জ আছে। তা হলো- পুলিশ ও আওয়ামী লীগ। তারা মনে করছেন, শনিবারের কর্মসূচিতে স্পষ্ট হয়ে গেছে- সামনের দিনগুলোতে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আরো সক্রিয় হবে। আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে আরো শক্তি নিয়ে সমান্তরালভাবে মাঠে থাকবে। তাই তাদের এখন চিন্তা এইসব উপেক্ষা করে কীভাবে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন এগিয়ে নেয়া যায়।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান বলেন, আমরা একভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাব না। আন্দোলনের কৌশলে অবশ্যই পরিবর্তন আসবে। এর মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। রবিবার আওয়ামী লীগের কর্মসূচি থাকায় আমরা কর্মসূচি দেইনি। আমরা সোমবার ঢাকাসহ সারাদেশে সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছি। আমরা আমাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ রাখতে চাই। যদিও শনিবার আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে, শতাধিক গ্রেপ্তার করেছে। অনেক মামলা হয়েছে। আর পরিকল্পিতভাবে বাসে আগুন নিয়ে আমাদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, আমরা এখন আর সব কর্মসূচি একসঙ্গে প্রকাশ করব না। একটা কর্মসূচি শেষ হবে, সেখান থেকে আরেকটি কর্মসূচি দেয়া হবে। আমরা আরো কৌশলী হব। কারণ সরকার ও তার দল এবং পুলিশ আমাদের বিরুদ্ধে মাঠে আছে। আমরা সারাদেশে আরো কিছু কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে দেব। তার মাধ্যমেই ঢাকা কেন্দ্রিক কর্মসূচি আরো জোরদার করব। এর মাধ্যমেই সরকারের পতন হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়