কাছেই ছিল বাবা-মা : হাতিরঝিলে ঝাঁপ দিয়ে কিশোরীর আত্মহত্যা

আগের সংবাদ

উত্তাপ উদ্বেগ অনিশ্চয়তা : বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সতর্ক সরকার, পাল্টা কর্মসূচি যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের

পরের সংবাদ

মারুফার উঠে আসার গল্প

প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

করোনাকালে বর্গাচাষি বাবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একটি মেয়ের কৃষিকাজের ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ছবিটি প্রশংসাও কুড়িয়েছে ব্যাপক। ছবির মেয়েটি আর কেউ নন, বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলের পেসার মারুফা আক্তার। যার হাত ধরেই ভারতের মেয়েদের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ইতিহাসের প্রথমবার জয় পায় টাইগ্রেসরা।
মারুফার জন্ম নীলফামারী সদর উপজেলার সংগলশী ইউনিয়নের ঢেলাপীর গ্রামে। বাবা আইমুল্লাহ হক বর্গাচাষি আর মা মর্জিনা বেগম গৃহিণী। মা-বাবা, চার ভাই-বোনসহ ছয়জনের বেশ বড় পরিবার। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করতেন মারুফা। পাশাপাশি বাঁচিয়ে রেখেছিলেন ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন। ক্রিকেটে তার হাতেখড়ি বড় ভাই আল-আমিনের কাছ থেকে। ছোট থেকেই খুব ভালো খেলতে পারায় তার আবদার সাধ্যমতো পূরণ করতেন বড় ভাই। বোনের জন্য ব্যাট, বল ও খেলার বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনে নিয়ে আসতেন। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় পাশের বাড়ির ভাইয়ের কাছে আবদার করেন সৈয়দপুর শহরে গিয়ে কোচ ইমরানের কাছে ক্রিকেট অনুশীলনের। এতে মা-বাবার চরম আপত্তি থাকলেও তা উপেক্ষা করে রেলওয়ে মাঠে অনুশীলন শুরু করেন মারুফা। বড় ভাই থাকার গুরুত্ব মারুফা বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারছেন। ভাইয়ের কল্যাণে তিনি দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বিশ্ব ক্রিকেটে। পাড়া-প্রতিবেশী থেকে শুরু করে নিজ পরিবারও যখন মারুফার ক্রিকেটকে ভালোভাবে দেখেনি, তখন ভাই আল-আমিন অনুপ্রেরণার দেয়াল হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন। মারুফাকে সাহায্য করেছেন ক্রিকেটার হয়ে উঠতে। আর সেই ভাইকে নিয়ে গর্ব করেন জাতীয় দলের এই ক্রিকেটার। মারুফার মতো বোন পেয়ে গর্বিত ভাইয়েরাও। তার খেলা দেখতে মিরপুরে নিয়মিত আসেন দুই ভাই। ভারতের বিপক্ষে ওডিআই সিরিজের শেষ ম্যাচ দেখতে এসের্ছিলেন মারুফার বড় দুই ভাই, বড় বোন ও বোন জামাই। সৈয়দপুরে অনুশীলন চলাকালীন ২০১৮ সালে প্রতিভা অন্বেষণ ক্যাম্পের মধ্য দিয়ে বিকেএসপির নজরে আসেন মারুফা। বিকেএসপিতে ২০১৮-১৯ সেশনে ভর্তির জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড় হলেও অর্থাভাবে ভর্তি হতে পারেননি তিনি। গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশ হলে এগিয়ে আসে বিসিবি। রতœ চিনতে ভুল করেনি প্রতিষ্ঠানটি। মেয়েদের ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে হয়েছিলেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের মুকুটও উঠেছিল তার মাথায়। ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক নৈপুণ্য দেখিয়ে ১৮ বছর বয়সেই ডাক পেয়ে যান জাতীয় দলে। ২০২২ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুযোগ পান তিনি। মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের জন্য ঘোষিত ১৫ জনের দলেও ডাক পান মারুফা। পরে দলের সঙ্গে মূলপর্বেও খেলার সুযোগ পান তিনি। সবকিছু ছাপিয়ে মারুফা নজর কাড়েন ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে। এর আগে ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের তিন ম্যাচেই খেলেছিলেন তিনি। যেখানে শিকার করেছিলেন ২টি উইকেট। তবে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ওয়ানডে ম্যাচে জয়ের দিন ৪টি উইকেট নিয়েছিলেন মারুফা। ওই ম্যাচে নিগার সুলতানা জ্যোতিদের জয়ের অন্যতম কারিগর ছিলেন ছিলেন তিনি। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও নেন ১টি উইকেট। আর শেষ ওয়ানডে তার বোলিং কারিশমায় নিশ্চিত হারতে বসা ম্যাচ ড্র করে বাংলাদেশ। শেষ বলে উইকেট নিয়ে সমতায় সিরিজ শেষ করেন মারুফা। এই সিরিজে বল হাতে সর্বোচ্চ ৭ উইকেট শিকার করেন ১৮ বছর বয়সি এই পেসার। ভারতের বিপক্ষে সিরিজে ব্যক্তিগত এমন পারফরম্যান্সের সুবাদে র‌্যাঙ্কিংয়ে সুখবর পেয়েছেন মারুফা। প্রথম ওয়ানডের পর আইসিসির সর্বশেষ হালনাগাদকৃত র‌্যাঙ্কিংয়ে ৩৩ ধাপ এগিয়ে প্রথমবারের মতো সেরা একশতে জায়গা করে নেন নারী দলের এই পেসার। ৩৩ ধাপ এগিয়ে ১৯১ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে মারুফার অবস্থান ঠিক ১০০তে।
ক্রিকেটে মারুফার ক্যারিয়ার মাত্র শুরু। জাতীয় দলে তার অভিষেক গত বছরের ডিসেম্বরে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। আর টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় এই বছরেই, ভারতের বিপক্ষে মিরপুরে। ওয়ানডেতে খেলেছেন মাত্র ৬টি ম্যাচে। যেখানে নিয়েছেন ৭টি উইকেট। সেরা বোলিং ২৯ রানে ৪ উইকেট। গড় ২৭.৫৭। আর টি-টোয়েন্টিতে ৯ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ৯টি উইকেট। সেরা বোলিং ২৩ রানে ৩ উইকেট। বোলিং গড় ২৫.১১।
মারুফার বোলিংয়ের প্রশংসা করেন বর্তমান সময়ের তারকা ব্যাটার ও ভারতীয় দলের সহ-অধিনায়ক স্মৃতি মান্ধানা। তিনি বলেন, ‘মারুফার বয়স কত, এটা কোনো ব্যাপার নয়। মাঠে যেভাবে সে নিজেকে উপস্থাপন করছে, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে যেভাবে সে নিজেকে মেলে ধরছে, তা অসাধারণ। তার ভেতরে ভালো ক্রিকেটার হয়ে ওঠার যে আগুন দেখেছি আমি নিশ্চিত, সামনের পথচলায় সে বাংলাদেশের জন্য অসাধারণ একজন ক্রিকেটার হয়ে উঠবে। তার অ্যাকশন একদমই আলাদা। সে যতটা জোরে বল করে, অ্যাকশনের কারণেই আরো দ্রুতগতির মনে হয়। তার রিলিজ পয়েন্ট থেকে আমাদের ধারণার চেয়ে আরেকটু বেশি স্কিড করে তার বল। তাই ব্যাটারদের আরেকটু বেশি প্রস্তুত থাকতে হয়। এ ধরনের উইকেট অবশ্যই তাকে খুব একটা সহায়তা করছে না। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় সে কেমন করে, দেখার অপেক্ষা থাকবে। সে খুব ভালো একজন ক্রিকেটার।
: আব্দুল্লাহ আল মুজাহিদ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়