ইরানে থানায় হামলা, ৬ জন নিহত

আগের সংবাদ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু আতঙ্ক : অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপেক্ষিত ৫ দফা নির্দেশনা, নজরদারি কম, উদ্বেগে অভিভাবকরা

পরের সংবাদ

পাঁচ চ্যালেঞ্জে আওয়ামী লীগ : বিদেশিদের তৎপরতা > বিরোধীদের আন্দোলন > মূল্যস্ফীতি > অভ্যন্তরীণ কোন্দল > সরকারবিরোধী অপপ্রচার

প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ৬ মাস। তিন মাস পরই গঠিত হবে নির্বাচনকালীন সরকার। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থাকবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেভাবেই নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। নির্বাচন কমিশনও প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন আয়োজনের। কিন্তু এই নির্বাচন নিয়ে নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে সরকারকে। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে; বিদেশিদের তৎপরতা, বিরোধীদের আন্দোলন, মূল্যস্ফীতি, নিজ দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং গুজব বা অপপ্রচার মোকাবিলা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় এসব চ্যালেঞ্জের কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এসব চ্যালেঞ্জ কিভাবে মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে করণীয়ও ঠিক করেছে দলটি। নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দিতে রাজপথে সক্রিয় আছে আওয়ামী লীগ। লক্ষ্য দেশি-বিদেশি চাপসহ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ২০০৯ সালের শুরুতে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এরপর থেকে টানা তিন মেয়াদে দাপটের সঙ্গেই সরকার পরিচালনা করছে দলটি। দেশের ভেতরে ও বাইরের যে কোনো পরিস্থিতি সামালও দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা বলছেন, এবারো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করবে আওয়ামী লীগ।
বৈদেশিক চাপ : নির্বাচন ঘিরে শুরু হয়েছে বিদেশিদের তৎপরতা। দফায় দফায় বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন তারা। বর্তমান সরকারকে হঠাতে বিএনপি বিদেশিদের দ্বারস্থ হচ্ছেন বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগের। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। নির্বাচনে কোনো বাধা সৃষ্টি হলে সংশ্লিষ্টদের জন্য ভিসা না দেয়ার নীতি ঘোষণা করেছে দেশটি। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন কংগ্রেসম্যানও তৎপর। আওয়ামী লীগের অভিযোগ বিএনপি বিদেশে লবিষ্ট নিয়োগ করে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে। ফলে বিদেশিরা তৎপর নির্বাচন নিয়ে। কিন্তু আওয়ামী

লীগ সেগুলো খুব একটা আমলে নিচ্ছে না বলে জানিয়েছেন
দলটির নেতারা। তাদের মতে, বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও সেভাবেই নির্বাচন হবে। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকার প্রধানই থাকবেন নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ‘দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র’ হচ্ছে। এটা মোকাবিলা করা আমাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন বন্ধের জন্য ‘চক্রান্ত’ হচ্ছে। বিরোধী দল বিএনপি এই চক্রান্ত করছে। এই ষড়যন্ত্র কিভাবে মোকাবিলা করবে আওয়ামী লীগ- জানতে চাইলে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা সবসময়ই চ্যালেঞ্জিং ছিল। নির্বাচন সামনে রেখে দেশে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টির গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। এরসঙ্গে দেশি-বিদেশি চক্র জড়িত। আশার কথা হচ্ছে, দেশের মানুষ কখনো অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্রয় দেয় না। এসব অপতৎরতা দেশের জনগণই মোকাবিলা করবে। আর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপি কখনোই গণতান্ত্রিক ধারা পছন্দ করে না। তারা ক্ষমতায় যেতে সবসময় চক্রান্তের পথ বেঁছে নেয়। জনগণের ভোট তাদের প্রয়োজন হয় না। এ কারণেই তারা বিদেশিদের কাছে ধরনা দেয়, দেশের বিরুদ্ধে কথা বলে, মিথ্যাচার করে। তারা মনে করে- বিদেশিরা তাদের ক্ষমতায় বসাবে। কিন্তু নির্বাচনে অংশ না নিলে তারা কি জোর করে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে পারবে? বিএনপি যতই চেষ্টা করুক, তাদের সেই খায়েস পূরণ হবে না।
বিরোধীদের আন্দোলন : বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা ছোট ছোট কয়েকটি রাজনৈতিক দল বর্তমানে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন আয়োজনে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। সেই হিসেবে নির্বাচনের ৯০ দিন পূর্বে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করবে দলটি। সেই সরকারের প্রধান থাকবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। অপরদিকে বিএনপি চায় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দলটি। এমনকি সেই নির্বাচন হতে না দেয়ার বিষয়েও নিজেদের কঠোর অবস্থানের কথা বলে আসছেন দলটির নেতারা। এজন্য গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছে দলটি। চলতি মাসেই সরকারের পতনের এক দফা আন্দোলন শুরুর টার্গেট রয়েছে তাদের। এজন্য নিজেদের প্রস্তুতির কথাও জানিয়ে আসছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। তাদের আন্দোলন মোকাবিলা করতে সরকারি দলও রয়েছে মাঠে। বিরোধী দল কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করলে আওয়ামী লীগও শান্তি সমাবেশ পালন করে। কিন্তু এক দফা আন্দোলন কেমন হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিরোধীদের আন্দোলন নিয়ে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এটা তাদের ফাঁকা আওয়াজ। তাদের আন্দোলনের গল্প কথা এখন অল্প কথায় পরিণত হয়েছে। এসব ঘোষণা দিয়ে তারা মানুষকে ভয়, আতঙ্কের ভেতরে রেখে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়। বিএনপির ব্যর্থতা শেষ নেই। তারা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। এবারো ব্যর্থ হবে।
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ : সা¤প্রতিক সময়ে দেশে নিত্য পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এ বিষয়টি তাদের জন্য একটি চিন্তার বিষয়। গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে মূল্যস্ফীতি সরকারি হিসেবেই আট শতাংশের উপরে এসেছে। বাস্তবে বাজারের চিত্র আরো দুঃসহ। অর্থনৈতিক নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও মানুষের দৈনন্দিন জীবনে স্বস্তির ছাপ এখনো তেমন নেই। আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী মনে করেন, জিনিসপত্রের দামের লাগাম টানতে না পারলে তার জন্য রাজনৈতিক মূল্য দিতে হতে পারে। তবে বিষয়টি তারা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করতে চান না। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এই পরিস্থিতির জন্য কোভিড মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করে আসছেন। আওয়ামী লীগের অন্য নেতারাও একই কথা বলছেন। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে সরকারে উচ্চ মহল থেকে বারবার বলা হচ্ছে। কিন্তু কোনোভাবেই বাজার সিন্ডিকেটের কবল থেকে রেহাই পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। তারা একের পর এক পণ্য মজুত রেখে হঠাৎ করেই দাম বাড়িয়ে দেয়। এর আগে তারা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল। পরে সরকার ভারত থেকে আমদানির অনুমতি দিলে তা কমতে শুরু করে। বর্তমানে কাঁচা মরিচের দামও হঠাৎ করেই বাড়িয়ে দিয়েছে এই সিন্ডিকেট। ভারত থেকে মরিচ আমদানি করার পর দাম কমতে শুরু করলেও ফের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যা সরকারের জন্য অনেকটা চ্যালেঞ্জ।
অভ্যন্তরীণ কোন্দল : আওয়ামী লীগের তৃণমূলে নেতাকর্মীদের মধ্যে কোন্দল এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে। নেতায় নেতায় বিভক্ত গড়িয়েছে কর্মীতে কর্মীতে। বিশেষ করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ঘিরে এই কোন্দল আরো প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছিল। ক্ষমতাসীন দলটির নেতাকর্মীরা নিজেরা নিজেদের মধ্যে কোন্দলের জেরে মারামারি এমনকি খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়ে। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে বেশ কয়েকজনকে জীবনও দিতে হয়েছে। নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে মামলা পাল্টা মামলা দিয়ে একে অপরকে হয়রানির মতো ঘটনাও কম নয়। অনেক জায়গায় সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের সঙ্গে একই দলের মনোনীত উপজেলা চেয়ারম্যানদের বিরোধও তুঙ্গে। এ নিয়ে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়েও অভিযোগের পাহাড় জমে আছে। দলটির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের রিপোর্টেও উঠে এসেছে তৃণমুলে কোন্দলের ভয়াবহ চিত্র। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন দলটির হাই কমান্ড। তবে দলটি নির্বাচনের আগেই তৃণমূলের সব কোন্দল মেটাতে উদ্যোগী হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্তদের আশা, সব ভেদাভেদ ভুলে জাতীয় নির্বাচনে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মতাদর্শ ধারণ করে না এমন অনেকে আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়েছে। যারা দলের জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ। এ বিষয়ে এডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় একটি রাজনৈতিক দল। এখানে কিছু কিছু সমস্যা থাকে। তবে বন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাই ঐক্যবদ্ধ। তৃণমূলে যেসব সমস্যা আছে, নির্বাচনের পূর্বে তা সমাধান হয়ে যাবে। সবাই মিলে দল মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কাজ করবে।
গুজব প্রতিরোধ : নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো গুজব প্রতিরোধ। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশে-বিদেশে সরকার বিরোধীরা তৎপর। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে সেগুলো সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার করা হচ্ছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, এই অপতৎপরতা ততই বেড়ে চলেছে। সরকারের সর্বোচ্চ মহল পর্যন্ত এমনকি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা, বিভিন্ন এমপি ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটানো হচ্ছে। সেগুলো ইউটিউব বা রিলস আকারে ছড়ানো হচ্ছে। এই অপতৎরতার সঙ্গে জড়িত বিদেশে অবস্থানরত কিছু ব্যক্তি। যারা বাংলাদেশ থেকে পাড়ি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ পশ্চিমের বিভিন্ন রাষ্ট্রে। এছাড়া দেশের ভেতরেই জামায়াত শিবিরসহ বিভিন্ন মৌলবাদ গোষ্ঠী ও বিএনপির সাইবার টিমও সক্রিয় রয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। এসব বিষয়ে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, গুজব ছড়িয়ে মানুষকে মিথ্যাচারের ভেতরে নিপতিত করে বিএনপি অসত্যকেই প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করে। কিন্তু সেটা তো বাস্তবে কখনোই প্রতিষ্ঠিত হয় না। মিথ্যা মিথ্যাই, গুজব গুজবই। মানুষ এখন অনেক সচেতন, দায়িত্বশীল। এগুলো করে বিএনপি রাজনৈতিক ফায়দা লুটার যে চেষ্টা করছে- দেশের মানুষ এগুলোর জবাব দেয়া শুরু করেছে। আগামী দিনেও এর জবাব তারা দেবে। এখন গুজব ছড়িয়ে কিছু হয় না, হবেও না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়