সংবাদ সম্মেলনে ছেলের দাবি : হত্যা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যানকে ফাঁসানো হয়েছে

আগের সংবাদ

কুরবানি ঘিরে চাঙা অর্থনীতি : ৭০ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হওয়ার সম্ভাবনা, রেমিট্যান্স প্রবাহে রেকর্ড

পরের সংবাদ

বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমলেও দেশে বাড়ছে কেন?

প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেলে দেশের বাজারে মূল্যবৃদ্ধির একটা যুক্তি থাকতে পারে। কিন্তু যখন বিশ্ববাজারে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম কমতির দিকে, তখন দেশীয় বাজারে দাম বেড়ে যাওয়া, কিংবা বিশ্ববাজারের কাছাকাছি হারেও না কমা শুধু অস্বাভাবিক নয়, উদ্বেগজনকও বটে। দুর্ভাগ্য হলো আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি কিংবা বাজার- কোনোটিই যুক্তির ধার ধারে না। সবখানে জোর-জবরদস্তি চলছে। যে যখন যেখান থেকে পারে ফাও মুনাফা কামিয়ে নিচ্ছে। আর পকেট কাটা যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা-সংক্রান্ত টাস্কফোর্স’-এর বৈঠকে আটটি নিত্যপণ্যের বিষয়ে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) উত্থাপিত একটি প্রতিবেদনে যেসব তথ্য ও পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে, তা স্বস্তিদায়ক নয়। পণ্যগুলো হলো- গম (আটা), চিনি, সয়াবিন তেল, পাম তেল, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, রসুন ও আদা। সংস্থাটি এক বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বলেছে, বিশ্ববাজারে কিছু কিছু নিত্যপণ্যের দাম যে হারে বেড়েছে, দেশের বাজারে বেড়েছে তার চেয়ে বেশি। আবার বিশ্ববাজারে কিছু পণ্যের দাম যে হারে কমেছে, দেশের বাজারে সে হারে কমেনি। দু-একটি পণ্যের ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশে বাড়তি। দেশীয় বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য সরকারের নীতিনির্ধারকরা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিচ্ছেন। সেটাই যদি হবে, তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় বাজারে কমে না কেন? বিটিটিসির পর্যবেক্ষণে বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, প্রতিযোগিতার অভাব, নিয়মিত বাজার তদারকি না করা, সময়মতো পণ্য বন্দর থেকে খালাস না হওয়াকে চিহ্নিত করেছে। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, দেশীয় বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ ডলার-সংকট ও ডলারের বিপরীতে টাকার প্রায় ২৫ শতাংশ অবমূল্যায়ন। সরকারের মন্ত্রীরা নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য বাজার ‘সিন্ডিকেটে’র কথা বলেন। কিন্তু সেই ‘সিন্ডিকেটে’র আকার ও রূপ কী, সেটা কখনো আমরা জানতে পারি না। সম্প্রতি সরকার সয়াবিন ও পাম তেলের দাম লিটারপ্রতি যথাক্রমে ১০ টাকা ও ২ টাকা কমিয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে এই দুটি পণ্যের দাম এর চেয়ে অনেক বেশি কমেছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে এক বছরে গমের দাম কমেছে প্রতি টনে ৩৫ শতাংশ। অথচ দেশের বাজারে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটার দাম ২৫ শতাংশ এবং খোলা আটার দাম ১৩ শতাংশ বেড়েছে। আবার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যকার সমন্বয়হীনতার কারণেও পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়ার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়ার দুই সপ্তাহ পর তারা আমদানির পক্ষে সিদ্ধান্ত দিয়েছে। ইতোমধ্যে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়ে যায়। আমদানি শুরু হয়েছে। তবে দাম খুব বেশি কমেনি।
জীবনযাত্রার পদে পদে খরচ বেড়েছে। সংকট আর ভোগান্তিতে মানুষ। মধ্যবিত্তের নতুন লড়াই শুরু হয়েছে। দফায় দফায় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে অবধারিতভাবে। চাল, ডাল, তেল, লবণের পাশাপাশি যাতায়াত, পোশাক, খাতা-কলমসহ নানা ধরনের খাদ্যবহির্ভূত পণ্য ও সেবার দাম বেড়েছে। আয় না বাড়লেও খাবার-দাবারসহ ভোগ কমিয়ে সংসারের বাজেট মেলাতে হচ্ছে। আয়ের সঙ্গে সংগতিহীন, লাগামহীন খরচে দারিদ্র্যসীমার কিছুটা ওপরে থাকা লাখ লাখ পরিবারকে আবারও গরিব হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলেছে। জ¦ালানি তেলের কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়লে তা বড়লোকের জন্য শুধু বিরক্তির ব্যাপার। কিন্তু গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষের কাছে তা জীবিকার সংকট তৈরি করে। কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য সব খাতেই খরচ বেড়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, মূল্যস্ফীতির তথ্যে এর প্রভাব আসছে কিনা, জানি না। তবে মানুষ বাজারে গিয়ে ঠিকই টের পাচ্ছে। কারণ বাজারের জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির তথ্য লুকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। কয়েক মাস ধরেই মূল্যস্ফীতি ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলছে। নানামুখী চাপে আজ অস্তিত্ব সংকটে সাধারণ মানুষ। দিশাহারা অবস্থা বলা চলে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে মধ্যবিত্ত শ্রেণির অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে তারা আর আগের মতো সমাজে বিশেষ ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারছে না। এক ধরনের উন্নাসিকতা, গাছাড়া ভাব নিয়ে কোনোভাবে দিন পার করছে যখন তারা। নানামুখী চাপে পিষ্ট, বিপর্যস্ত, নাকাল মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষগুলো ধীরে ধীরে মুক্ত চিন্তা চেতনার পথ থেকে সরে ভিন্ন পথের অনুসারী হচ্ছে। এটা গোটা সমাজকাঠামোতে প্রতিক্রিয়াশীলতার বিকাশ ঘটাতে সহায়ক হয়ে উঠেছে, যা কোনোভাবেই কাম্য কিংবা প্রত্যাশিত হতে পারে না। অতএব সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি চলমান রাখার স্বার্থে মধ্যবিত্ত শ্রেণির ঘাড় থেকে যাবতীয় চাপের বোঝা হালকা করার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে। এ নিয়ে অবহেলা কিংবা এড়িয়ে যাওয়ার ফলাফল খারাপ হবে নিঃসন্দেহে। গত কয়েক মাসের উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে সীমিত আয় ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জীবনে ভোগান্তি বেড়েছে। অনেকে আশায় ছিলেন বাজেটে তাদের ভোগান্তি কমাতে কোনো কিছু থাকবে। কিন্তু আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ কমানোর তেমন উদ্যোগ নেই, বরং বাজেটের কিছু কর প্রস্তাব তাদের বাড়তি চাপে ফেলতে পারে। এতে পদে পদে ভোগান্তি বাড়বে, খরচও বাড়বে। শুল্ক-কর বাড়ানোর ফলে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়বে, যা খরচ বাড়াতে বাধ্য করবে। এই মুহূর্তে সবার প্রধান সমস্যা হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি। তাদের একটু স্বস্তি দিতে বাজেটে কিছু নেই, বরং তাদের অতিরিক্ত চাপের মধ্যে ফেলা হয়েছে। কিছু অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যে বাড়তি শুল্ক-কর আরোপ করার ফলে তাদের খরচ বাড়বে। বাজেট দেখে মনে হয়েছে, সাধারণ মানুষের বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় আনা হয়নি। মূল্যস্ফীতিকে শুধু স্বীকার করা হয়েছে, সমাধান নেই। সব মিলিয়ে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি চাপে থাকবে। মানুষ এখন ত্রিমুখী আক্রমণের শিকার। এগুলো হলো বৈষম্যমূলক বাজেটীয় পদক্ষেপ, আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এসব আক্রমণে মধ্যবিত্তের জীবন কঠিন হয়ে পড়েছে। বাজেটে ধনীদের বেশি সুযোগ দেয়া হয়েছে।
বিশ্ববাজারে কিছু কিছু নিত্যপণ্যের দাম যে হারে বেড়েছে, দেশের বাজারে বেড়েছে তার চেয়ে বেশি। আবার বিশ্ববাজারে কিছু পণ্যের দাম যে হারে কমেছে, দেশের বাজারে সে হারে কমেনি। দু-একটি পণ্যের ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশে বাড়তি। ‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা-সংক্রান্ত টাস্কফোর্স’-এর সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে আটটি পণ্যের বিষয়ে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ জন্য দায়ী মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও ডলার-সংকট। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় শিল্প সুরক্ষায় চিনি আমদানিতে উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যদিও দেশে পণ্যটির উৎপাদন চাহিদার মাত্র ১ শতাংশ। আর দেশের পেঁয়াজ চাষিদের সুরক্ষা দিতে কৃষি মন্ত্রণালয় পণ্যটি আমদানির অনুমতিপত্র (আইপি) দিতে দেরি করেছে, যার সুযোগ নিয়েছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। দেশে পণ্যবাজার ব্যবস্থাপনার কাঠামোগত ও নীতিগত দুর্বলতা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে এক বছরে গমের দাম কমেছে প্রতি টনে ৩৫ শতাংশ। অথচ দেশের বাজারে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটার দাম ২৫ শতাংশ এবং খোলা আটার দাম ১৩ শতাংশ বেড়েছে। পেঁয়াজের ক্ষেত্রে চিত্রটি একই। মসুর ডালের দাম বিশ্ববাজারের চেয়ে কম হারে কমেছে দেশে। অপরিশোধিত চিনির দাম বিশ্ববাজারে বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। কিন্তু দেশের বাজারে বাড়ার হার দ্বিগুণের কাছাকাছি- ৫৮ শতাংশ। আদার দাম বিশ্ববাজারে ১৭২ শতাংশ বাড়লেও দেশের বাজারে বেড়েছে ২২২ থেকে ২৪৫ শতাংশ পর্যন্ত। ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম ৪৪ শতাংশ কমলেও দেশের বাজারে খোলা তেলের দর কমেছে ২ শতাংশ। আর পাম তেলের দাম বিশ্ববাজারে ৪৯ শতাংশ। দেশে পণ্যবাজার ব্যবস্থাপনার কাঠামোগত ও নীতিগত দুর্বলতা রয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজার তদারকিতে ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করলেও জনবলের ঘাটতি থাকায় দেশব্যাপী তদারক কার্যক্রম করা যাচ্ছে না। আর বিভিন্ন পর্যায়ে কেনাবেচার কোনো নথি (রেকর্ড) সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। বাজারে রয়েছে যথাযথ প্রতিযোগিতার ঘাটতি। এ ছাড়া বাজার কমিটি ও ব্যবসায়ীদের সমিতির আরও কার্যকর ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। নিম্নআয়ের মানুষের কাছে ভর্তুকি মূল্যে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) যে তেল, চিনি ও মসুর ডাল বিক্রি করছে, তা আন্তর্জাতিক উৎসের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেও সংগ্রহ করা হচ্ছে। এটা মোট মজুতে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করছে না। এ কার্যক্রম সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ভূমিকা রাখলেও তা প্রভাব তৈরি করতে পারছে না বাজারে। বাণিজ্যিক সংস্থা হিসেবে টিসিবির সক্ষমতারও ঘাটতি রয়েছে। সরকারের নীতি হচ্ছে ব্যবসায়ীদের নীতি সহায়তা দেয়া। দিচ্ছেও। কিন্তু মুষ্টিমেয় লোকের হাতে নিত্যপণ্যের বাজার। তারা বাজারকে কুক্ষিগত করার ক্ষমতা অর্জন করেছেন। আমদানিকারকরা ঋণপত্র (এলসি) খোলার সময় তারা চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাননি। আবার সংকটের কারণে সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। ফলে বেড়ে যাচ্ছে তাদের উৎপাদন ব্যয়। শতভাগ এলসি মার্জিনের (ঋণপত্র খোলার সময় টাকা জমার হার) কারণেও ব্যবসার খরচ বেড়ে যাচ্ছে। জাহাজ থেকে যথাসময়ে পণ্য খালাস করতে না পারা এবং খালাস দেরিতে হওয়ার কারণে পণ্য সরবরাহ বিঘিœত হওয়াকেও দায়ী করা যায়। বিশ্ববাজারে দাম কমলেও শুল্ক কর্তৃপক্ষ শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে সেটা বিবেচনায় নিচ্ছে না। বরং প্রকৃত মূল্যের চেয়ে বেশি দরে শুল্কায়ন করছে। এতে আমদানিকারকদের ক্ষতি হচ্ছে। এক বছরে আমদানি ব্যয় পরিশোধে বৈদেশিক মুদ্রার দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। মূল সমস্যা ডলারের দাম। ১১৬ টাকা দরে ডলার কিনতে হচ্ছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে নিত্যপণ্যের বাজারের জন্য তা খারাপ খবরই হবে। ২০২২ সালের জুলাই থেকে গত মে ২০২৩ পর্যন্ত ১১ মাসে আট পণ্যের চাহিদা, উৎপাদন, আমদানি এবং উদ্বৃত্ত বা ঘাটতির তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এর মধ্যে ভোজ্যতেল, রসুন, মসুর ডাল ও পেঁয়াজের সরবরাহ চাহিদার চেয়ে বেশি। ঘাটতি রয়েছে চিনি, আদা ও গমের। তবে গম ছাড়া অন্য দুই পণ্যের ঘাটতির পরিমাণ বেশি নয়। গমের বার্ষিক চাহিদা ৭০ লাখ টন ধরে ১১ মাসের চাহিদা দাঁড়ায় ৬৪ লাখ ১৬ হাজার টন। এ সময়ে ১০ লাখ টন গম উৎপাদিত হয়েছে দেশে। আর আমদানি হয়েছে ৩০ লাখ টন। ফলে সরবরাহ হয়েছে ৪০ লাখ টন। আর ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৪ লাখ ১১ হাজার টন। আদার ঘাটতি ৭৭ হাজার টন। চীন আদা রপ্তানি বন্ধ রেখেছে। চিনি আমদানি কম হয়েছে ৭২ হাজার টনের মতো। সব দোষ যুদ্ধের ওপর চাপানোর সময়টা পার হয়ে গেছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে শুধু বাংলাদেশই অসুবিধায় পড়েনি। অন্যান্য দেশে এখন মূল্যস্ফীতি কমছে, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে, প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। তাহলে বাংলাদেশ কেন পারছে না। এ জন্য সমস্যার মূল কারণগুলোকে স্বীকৃতি দিয়ে দ্রুত সেগুলো সমাধান করতে হবে। যুদ্ধের ওপর দায় চাপানোর কৌশল থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সরকারের নীতি-পরিকল্পনা ব্যবসায়ীদের পক্ষে। ফলে মুষ্টিমেয় মানুষ লাভবান হচ্ছে। মুষ্টিমেয় মানুষকে লাভবান করতে সরকার বৃহত্তর জনগণকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে না। ডলার-সংকট মোকাবিলায়ও সরকারকে অগ্রাধিকার পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। অতি প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সরকার ডলারের জোগান দিতে পারে না। অথচ মন্ত্রী-কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের নামে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করা হয়। এখনই বাজারের লাগাম টানতে না পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

রেজাউল করিম খোকন : সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ও কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়