ইসলামী আন্দোলন : নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের রূপরেখা ঘোষণা

আগের সংবাদ

কুরবানির পশুর দাম বেশি যে কারণে > আফতাবনগর হাট : এখনো জমেনি হাট গরুও উঠেছে কম

পরের সংবাদ

বিএনপির টার্গেট ঢাকায় ১২ লাখ লোক জমায়েত : মিত্ররা না এলেও মাঠ ছাড়বে না

প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : ‘বাংলাদেশ যাবে কোন পথে; ফয়সালা হবে রাজপথে’ এই স্লোগানকে মূলমন্ত্র ধরে সরকার পতনের ‘একদফার’ চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু করবে বিএনপি। জুলাই মাসের মধ্যভাগে ঢাকা সমাবেশ ডেকে ১২ লাখ মানুষের জমায়েত ঘটিয়ে এ আন্দোলনের ঘোষণা দেবে দলটি। এবারের আন্দোলনকে ‘বাঁচা-মরার’ লড়াই হিসেবে বিবেচনায় নিয়েই রাজপথে লড়তে প্রস্তুত করা হয়েছে নেতাকর্মীদের। দলটির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, এবারের আন্দোলনের কোনো ‘টাইমফ্রেম’ থাকবে না। মামলা হামলার মোকাবিলা করে রাজপথের এ আন্দোলন এমন রূপ নেবে, যা হবে সরকারকে দেয়া শেষ ধাক্কা।
আজকাল দলীয় কর্মসূচিতে বিএনপির সিনিয়র নেতারদের হুঙ্কার দেখলেই বোঝা যায়, আন্দোলন প্রশ্নে বিএনপি এখন ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’। পিছু হটলেই পড়তে হবে অস্তিত্ব সংকটে। তাই বদলে গেছে কর্মীদেরও ‘বডিল্যাঙ্গুয়েজ’। মামলা হামলার ভয় উপেক্ষা করে তারা সরব থাকছেন রাজপথে। কেউ বলছেন, ‘ছাড় দেয়ার আর সময় নেই, যেখানেই আঘাত সেখানেই প্রতিরোধ’। কেউবা দিচ্ছেন সরকার পতনের হুঙ্কার। দলটির নীতি-নির্ধারকদের এখন এক কথা, এক দাবি- এই সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়। সংলাপ, সমঝোতাও নয়-দাবি আদায়ে রাজপথই একমাত্র সমাধান।
শেষ পর্বের একদফার আন্দোলনে ঢাকাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে কর্মসূচি প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচি প্রণয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তারা বলছেন, সর্বশক্তি নিয়ে রাজপথে নামাতে সাংগঠনিক নানা প্রস্তুতি চলছে। আন্দোলন সফলে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের দেয়া হয়েছে কঠোর নির্দেশনা। কর্মীদের চাঙা রাখতে তত্ত্বাবধায়কসহ ১০ দফা দাবিতে বাড়ানো হয়েছে মহানগরকেন্দ্রিক কর্মসূচি। অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনকে সমন্বয় করে প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে।
একদফার আন্দোলনে তরুণদের সামনে রাখতে ঢাকাসহ দেশের ছয়টি বড় শহরে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করছে দলটির প্রধান তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। বিএনপির হাইকমান্ডের লক্ষ্য- ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ১০ ডিসেম্বরের আগের সেই মরিয়া মনোভাব ফিরিয়ে আনা।
দাবি আদায়ে আন্দোলনই শেষ সিদ্ধান্ত কিনা? জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোরের কাগজকে বলেন, আন্দোলনের বিকল্প ভাবছি না। কারণ, আমরা নিজেদের দাবির কথা বারবারই বলছি; সরকার যদি না শোনে তবে অবশ্যই দাবি আদায়ে রাজপথই হবে সমাধান। এক্ষেত্রে রুটিন কর্মসূচির বাইরে ধাপে ধাপে সুনির্দিষ্ট এমন কর্মসূচি আসবে যেখানে জনগণের সম্পূর্ণ সম্পৃক্ততার মধ্যে দিয়ে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হবে।
আন্দোলনের ফরমেট কেমন হবে? এমন প্রশ্নে বিএনপির মহাসচিবের জবাব – আন্দোলন কথাটার অর্থই তো নড়াচড়া করা। কিন্তু জনগণের বিরুদ্ধে যখন কোনো সরকার দাঁড়িয়ে যায় তখন কেবল নড়াচড়া না ভূমিকম্প হয়। সেটা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফর্মে আসে। কখনো সেটা

প্রতিবাদ সমাবেশ, সমাবেশ কিংবা ধর্মঘট অবরোধের মধ্যে দিয়ে আসে। সুতরাং ভবিষ্যৎ পরিস্থিতিই বলে দেবে কোন ফর্মে সেই আন্দোলন আসবে।
হাতে-কলমে আন্দোলনের ছক : বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা আভাস দিয়েছেন, এবারের আন্দোলনে তৃণমূল নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে আসা প্রস্তাবের ভিত্তিতে এর মধ্যেই একটি গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে থাকছে- কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্ট্র্যাটেজি নির্ধারণ, সুনির্দিষ্ট গ্রুপভিত্তিক তথ্য আদান-প্রদান, সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের যেকোনো নেতিবাচক কর্মকান্ড তুলে ধরে সার্বক্ষণিক সচল থাকা। সারাদেশে নেতাকর্মীদের তাৎক্ষনিক বার্তা পৌঁছানো ও অল্প সময়ের মধ্যে কর্মসূচিস্থলে কর্মী জড়ো করার কৌশল। পাশাপাশি ছক কেটে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং সময় সুযোগের হিসেব নিকেশ করে কর্মসূচির ধরন পরিবর্তন।
সূত্র জানায়, জুলাই থেকে বিএনপির একদফার ভিত্তিতে লাগাতার যুগপৎ আন্দোলন শুরুর পর প্রথম ধাপে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক কর্মসূচিই থাকবে। পরিস্তিতি বুঝেই হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেবে দলটি। তৃণমূল ও কেন্দ্রে ঘুরেফিরে ফের গণসমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, পদযাত্রা, গণঅবস্থান, মানববন্ধন, গণমিছিলের মতো কর্মসূচি পালিত হবে। চূড়ান্ত ঢাকামুখী আন্দোলনে- ‘চলো চলো ঢাকা চলো’, ঢাকা ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাও, ঢাকায় জমায়েতের মতো কর্মসূচি আসবে। দলটির সেই আন্দোলনের ব্যাপ্তি স্বল্প সময়ের হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা যেখানে এসে দাঁড়িয়েছি এ মুহূর্তে, এখান থেকে ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। শেখ হাসিনাকে বিদায়ের ফয়সালা রাজপথে করতে হবে। সংবিধানের দোহাই দিয়ে আবারো ভোট চুরি করে ক্ষমতায় যাওয়ার এবার সুযোগ নেই। সবকিছুর একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। বিএনপির গণজাগরণ শুরু হয়েছে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য।
একদফায় যে দাবিগুলো থাকবে : চূড়ান্ত হওয়া গণআন্দোলনের অভিন্ন এক দফায় ৭/৮টি দাবি রয়েছে। সেগুলো হলো- সরকারের পদত্যাগ ও বিদ্যমান ‘অবৈধ’ সংসদের বিলুপ্তি; নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা; বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তি; মিথ্যা-গায়েবি মামলা প্রত্যাহার; ফরমায়েশি সাজা বাতিল; নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন এবং সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি।
সতর্ক থেকেই কর্মসূচি পালন: ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বিএনপি জোটের আন্দোলনে দেশজুড়ে হয় চরম সংহিংসতা। হরতাল অবরোধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দেশ। ২০১৫ সালে টানা ৯৩ দিনের টানা হরতালে ফের রাজপথ উত্তাল করে বিএনপি। সে সময়ে আগুন সন্ত্রাসের তকমা লাগে দলটির গায়ে। এজন্য দলের নগর কমিটির নেতাদের দায়ী করেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। ফলে গত ৮ বছর আগের সেই দাগ মুছে এবার জনগণকে আস্থায় এনে গণঅভ্যুথানের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ব্যাপক জনসমাগম ঘটাতে চায় বিএনপি।
দলটির নেতারা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির কারনে- বিএনপির আন্দোলনে সরকার সুযোগ খুঁজবে। নিজেরা সহিংসতা করে দায় চাপাবে বিএনপির ওপর। তাই সরকারের কোনো উসকানিতে পা না দিতে প্রতিনিয়ত নেতাকর্মীদের সর্বাতœক সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শীর্ষনেতারা বলছেন, আগামী দিনগুলো সতর্কতার সঙ্গে চলতে হবে। সরকারের চাইবে সহিংসতা করে এর দায় বিএনপির ওপর চাপাতে। ফলে আন্তর্জাতিক মহলে বিএনপি ফের গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।
মিত্রদের ওপর নির্ভর নয় : মধ্য জুলাইয়ের অলআউট আন্দোলনে আগে দফা ও যৌথ রূপরেখা নিয়ে মিত্রদের সঙ্গে মতানৈক্য এখনো শেষ হয়নি বিএনপির। তবে এ ইস্যুতে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে সৃষ্ট মতানৈক্য দূর করতে চান নীতিনির্ধারকরা। তবে ঘোষণাপত্র নিয়ে শেষ পর্যন্ত ঐকমত্য না হলে দলটি তার নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম থেকেও একদফার আন্দোলন ঘোষণা করবে। এক্ষেত্রে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় অন্তর্বরতীকালীন সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের এক দফা দাবিতেই চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচির ঘোষণা করবে।
সূত্র জানায়, চূড়ান্ত আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার আগেই মিত্র দলগুলো তাদের হিসাব বুঝে চায়, এসব নিয়ে দেন-দরবার করতে গিয়ে চরম বিরক্ত বিএনপির সিনিয়র নেতারা। গত একাদশ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বিএনপির নেতারা বলছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে যাদের সঙ্গে জোট করা হয়েছিল তাদের অনেকে গোপনে বেঈমানি করেছে। নির্বাচনের পরে জোটের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সংসদে যোগ দেয়ায় তা স্পষ্ট হয়েছে। তাই বেশ কিছু দিক বিবেচনায়-সঙ্গত কারণে আন্দোলন ও নির্বাচনসহ রাজনৈতিক মাঠের নেতৃত্ব এবার বিএনপির কাছেই রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
একদফার আন্দোলনে জোটের অবস্থান কী হবে? জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যারা ভাগাভাগি লাভ-লোকসান নিয়ে সার্বক্ষণিক পড়ে আছে তাদের নিয়ে আন্দোলন এগোবে না। কারন অর্জনের আগে ভাগ হয় না। সবাই আগে ভাগ চায়, পরে আন্দোলন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়