প্রিপেইড মিটার স্থাপনে আর্থিক লেনদেন না করার আহ্বান

আগের সংবাদ

হাটে পর্যাপ্ত গরু, দাম চড়া : কেনাবেচা আজ থেকে > শর্ত মানছেন না ইজারাদার > ট্রাক নিয়ে টানাটানি

পরের সংবাদ

আমলার চোখে এরশাদ শাসনকাল-১

প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিরোধীরা শক্তিশালী হলেও এরশাদ শাসন বেশ ভালোই চলেছে। ১৯ জুন ১৯৮৭ অর্থমন্ত্রী সাইদুজ্জামান পার্লামেন্টে বাজেট পেশ করলেন। তার আগে ছিল কেবিনেট মিটিং। পরিকল্পনা কমিশন সদস্য কাজী ফজলুর রহমান তার ডায়েরিতে লিখেছেন : ‘হুকুম এসেছিল এই সভায় অংশগ্রহণকারীদের চৎরহপব ঈড়ধঃ পরে যেতে হবে। এই জিনিসটি আমার নেই। স্যুট পরেই গেলাম। ভেবেছিলাম ঢুকতে না দিলে ফিরে আসব। তবে কেউ আপত্তি করল না। দেখলাম, আমার মতো আরো দু-চারজন আছেন। রাষ্ট্রপতি প্রিন্স কোটকে জাতীয় পোশাক করে ফেললেন?’
৪ জুলাই জোর গুজব- তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিব মুজিবুল হকের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। তিনি লিখেছেন, আগামী মাসে মুজিবুল হক বিদায় নেবেন। জ্যেষ্ঠতায় তারপরই তিনি। ‘পদটি’র মূল কাজ যেন এখন অনেকটা প্রটোকল অফিসারের মতো। পদের নামটি আছে মর্যাদা নেই। কিন্তু নানা মিটিংয়ে হাজিরা দিতে হয়। দিনরাত রাষ্ট্রপতির আসা-যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে থাকতে হয়। …এটা পদোন্নতি হিসেবে বিবেচিত হলেও আমার এর জন্য কোনো আগ্রহ নেই।
১৩ জুলাই ১৯৮৭ কেবল একটানা ৩২ ঘণ্টার ধর্মঘট শেষ হলো… সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে আর সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী পাসের শরিকদার হয়ে আওয়ামী লীগ এরশাদের সামরিক শাসনকে আইনসিদ্ধ করাতে সাহায্য করেছে। এখন এত প্রতিবাদ- তাই হাস্যকর মনে হওয়াটা বিচিত্র নয়। … তবে এও মনে হচ্ছে, এরশাদ রাজত্বের শেষ অধ্যায়টা যেন শুরু হয়েছে। গুজব উত্তরপাড়ার তার মূল ঈড়ংঃরঃঁবহপু-এর কিছু অংশের সমর্থন তার জন্য আগের মতো এত জোরালো নয়।
তিনি ২১ জুলাই ১৯৮৭ লিখেছেন : দেশের এই দুরবস্থায় আমার মন্ত্রী এ কে খন্দকার সাহেব মর্মাহত। নিঃসন্দেহে তিনি একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক, সৎ ব্যক্তি। …মন্ত্রিপরিষদে তার অনেক সহকর্মীর নানাবিধ অনৈতিক কার্যকলাপে তিনি ক্ষুব্ধ, ব্যথিত। দুঃখ করে একদিন বললেন, এর জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম?
ধর্মঘট চলছে। ২২ জুলাই ১৯৮৭-এর একটি বর্ণনা : ‘১১টায় দুই মন্ত্রী (অর্থ ও পরিকল্পনা) আর পরিকল্পনা কমিশনের তিন সদস্য একযোগে যুদ্ধযাত্রার মতোই সেক্রেটারিয়েটের পথে রওনা হলাম। সামনে-পেছনে সশস্ত্র বিডিআরের গাড়ি, মাঝে সাত-আটটা সরকারি কর্মকর্তার গাড়ির কনভয়। উদ্দেশ্য ঊঈঘঊঈ মিটিংয়ে যোগ দেয়া।’
সেদিনের মন্তব্য : সরকার ও সরকারি দলের বিপুল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ধর্মঘট সফল।
২৩ জুলাই লিখলেন : এক বিচারে এখনো এরশাদের কোনো বিকল্প নেই। হাসিনা ও খালেদার দলবলের শাসন এরশাদের চেয়ে বেশি ভালো হবে, এ আশা বোধহয় করা যায় না। আর এরশাদের পতন হলে তাদের মধ্যে মারামারি শুরু হয়ে যাবে ক্ষমতা দখলের জন্য।
১২ নভেম্বর ১৯৮৭ : সারাদেশে উত্তেজনা, সংঘর্ষ, গোলাগুলি। বিরোধী দলের এক দাবি- এরশাদের পদত্যাগ। সরকার নিজেই বাইরে থেকে সব যানবাহন ঢাকা আসা বন্ধ করে দিয়েছিল। পরে রাষ্ট্রপতি এরশাদ বলেছেন, ‘কই- তারা বলেছিল ৫০ লাখ লোক দিয়ে ঢাকা অবরোধ করবে। হয়েছে মাত্র ১৫ হাজার বড়জোর।…
‘অবস্থাটা অনেকটা ১৯৬৯-এর মতো। তার জেনারেল ও কর্নেলরা যদি তাকে ত্যাগ না করে নিজে থেকে এরশাদ গদি ছাড়বেন না। আর তার গদি ছাড়লেই সমাধান হবে? তারপর শুরু হবে ত্রিপক্ষীয় লড়াই- খালেদা, হাসিনা ও জামায়াতের মধ্যে।
১৫ নভেম্বর ১৯৮৭ : অনেক কথার মধ্যে লিখেছেন- এরশাদের অপসারণের পর অন্তর্বর্তীকালের জন্য তার সাময়িক উত্তরাধিকারী হিসেবে আমার মন্ত্রী এ কে খন্দকার সাহেবের নাম শোনা যাচ্ছে। তিনি অবশ্য এ বিষয়টি যতেœর সঙ্গেই এড়িয়ে চলেছেন। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক। তবে এ রকম কিছু হলেও এমন দায়িত্বের জন্য তিনিই সর্বোত্তম হতেন নিঃসন্দেহে। তিনি একজন সৎ, খাঁটি মুক্তিযোদ্ধা ও দেশপ্রেমিক।
১৭ নভেম্বর ১৯৮৭ সচিবদের সভায় প্রেসিডেন্ট শোনালেন, “কেউ যদি আশা করে থাকে, সেনাবাহিনীর মধ্য থেকে ‘ক্যু’ করে তাকে অপসারণ করা হবে, তা ভুল হবে। প্রত্যেক সৈনিক তার সন্তানের মতো।” তিনি শক্ত হয়েই বসেছেন। ২৮ নভেম্বর ১৯৮৭ দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে। অনানুষ্ঠানিকভাবে বললে এটা যে ভিন্ন লেবাসে ‘সামরিক আইন’ তাতে সন্দেহ নেই। কাজী ফজলুর রহমান ডায়েরিতে লিখেছেন, ‘এখন প্রশ্ন হলো- যারা দেশের আসল ক্ষমতার অধিকারী, তারা এরশাদকে গদিতে রাখবে, না তাদের পছন্দমতো অন্য কাউকে বসাবে?’ পরদিন জাতির উদ্দেশে ভাষণে রাষ্ট্রপতি বললেন, ‘তিনি সংবিধানের বাইরে কারো দাবিতে পদ ছাড়বেন না। তিনি তার শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত দিয়ে জাতির সেবা করে যাবেন।’ দেশে হরতাল-কারফিউ সবই যুগপৎ চলছে।’ জাতির সেবার নমে বলপূর্বক ক্ষমতা ধরে রাখার প্রবণতাটি বেশ পুরনো।
২৮ ডিসেম্বর ১৯৮৭ তিনি লিখেছেন : আমার মনে হয় এখন আর এসব হরতাল আর কর্মসূচি অর্থহীন। এতে অকারণে সাধারণ মানুষের কষ্টই বাড়ছে। এরশাদের ঘুঁটির চালে হাসিনা-খালেদা হেরে গেছেন। এরশাদ গদি ছাড়বে না ও মিলিটারি তাকে সরাবে না। মাঝে কিছু লোক মারা গেল, দেশের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হলো আর মিলিটারিরা দেশের চূড়ান্ত নিয়ামক হয়ে গেল।
পণ্ডশ্রম ধরে নিয়ে শিক্ষা কমিশনের কাজে তাকে যথেষ্ট সময় ও শ্রম দিতে হচ্ছে। ১৭ জানুয়ারি ১৯৮৮ ডায়েরিতে তিনি লিখেছেন : স্বাধীনতা-পূর্ব কমিটি কমিশনের কথা ছেড়েই দিলাম, স্বাধীনতার পর এটা বোধহয় পঞ্চম কি ষষ্ঠ শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিশন/কমিটি। আগের সব রিপোর্ট পোকায় কাটছে। এই রিপোর্টের যে একই ভাগ্য হবে, সে বিষয়ে মোটামুটি নিশ্চয়তা দেয়া যায়।
প্রথা অনুযায়ী মন্ত্রিপরিষদ সচিব বাদে প্রশাসন ক্যাডারের জ্যেষ্ঠতম সদস্যই বিসিএস (প্রশাসন) সমিতির সদস্য হয়ে থাকেন- ‘দৈবচলে’ জ্যেষ্ঠতম হওয়ার সুবাদে কাজী ফজলুর রহমান সভাপতি। তারই ভাষ্য- ‘আসলে এই সমিতিটাই জগাখিচুড়ি। এদের ভেতরেই নানা দলের কোন্দল, যাদের স্বার্থ এক নয়। যথা- সাবেক সিএসপি, সাবেক ইপিসিএস, সাবেক সেক্রেটারিয়েট সার্ভিস- কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক, স্বাধীনতার পর বিভিন্ন পদ্ধতিতে নিয়োগপ্রাপ্ত কয়েকটি গোষ্ঠী। অন্যান্য প্রতিটি ক্যাডারে যে অন্তর্নিহিত ঐক্য ও একান্ত বন্ধন আছে, তা এখানে অনুপস্থিত। কিন্তু এবার তারই সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় তারা ঐকমত্য পোষণ করে দাবি জানিয়েছে, প্রশাসন ক্যাডারের পদে শতকরা ১০ ভাগ সামরিক পেশার লোক নিয়োগের সিদ্ধান্ত প্রতিহত করা হবে। বিবৃতিতে স্বাক্ষরদাতা সমিতির সভাপতি; সব পত্রিকায় ছাপানোর জন্য বিবৃতি পাঠানো হলো। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ফোন করে তাকে জানালেন, পত্রিকায় পাঠানো বিবৃতি দেখে প্রেসিডেন্ট মর্মাহত হয়েছেন। এই বিবৃতি প্রত্যাহার করা হলে তিনি সমিতির সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত রয়েছেন এবং তাদের দাবিও মেনে নেবেন। শেষ পর্যন্ত অপ্রকাশিত বিবৃতি প্রত্যাহার করা হলেও একটি কপি বিবিসির কাছে পৌঁছে গেছে।
রাষ্ট্রপতি বললেন, ক্যাডার সার্ভিসে সেনাবাহিনীর কোটা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কাজী ফজলুর রহমান লিখেছেন : ‘বক্তব্যটি অসত্য, সিদ্ধান্ত হয়েছিল, কেবল প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়নি।’ শেষ পর্যন্ত এরশাদ সরকার সে পথে এগোয়নি। বিবিসি জানিয়েছে, বিসিএস প্রশাসন সমিতি শাসনযন্ত্রকে সামরিকীকরণের প্রচেষ্টার জোর প্রতিবাদ জানিয়েছে। প্রশাসন সমিতির নিজেদের মধ্যে ঐক্য না থাকলে সামরিকীকরণ ঠেকানোর প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ।
আগের দিন ২৪ জানুয়ারি ১৯৮৮ চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার জনসভায় গুলি চালানো হয়েছে। সরকারি ভাষ্য, ৫ জন এবং ভয়েস অব আমেরিকার ভাষ্যে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। ২৯ জানুয়ারি রোম-ফেরত প্রেসিডেন্ট চট্টগ্রাম হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশে এমন সব ঘটনা হয়েই থাকে। আর ডায়েরিতে কাজী লিখেছেন, ‘মুখে মুখে জোর গুজব- মার্শাল ল’ জারি হতে যাচ্ছে যে কোনো দিন। অনেকের মতে, চট্টগ্রামের হত্যাকাণ্ড পরিকল্পনা করেই করা হয়েছে মার্শাল ল’র জমি তৈরি করার জন্য। এখন সবার প্রশ্ন- মার্শাল ল’ হলে তা কি এরশাদকে নিয়ে, নাকি বাদ দিয়ে।’ তার মনে হয়েছে, এত বড় ঝাপটার মধ্যেও এরশাদ অবিচল।
৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮, দিনের পুরো লেখাটাই তুলে ধরছি : আবার হরতাল। এ ধরনের হরতাল একটা অর্থহীন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে শুধু কষ্ট হচ্ছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের। এরশাদ বা তার সাঙ্গোপাঙ্গদের গাত্রস্পর্শও করছে না, তাদের কোনো ক্ষতি-বৃদ্ধি নেই। তার বদলে বিরোধী নেতৃত্বের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বই এ রকম হরতালে প্রমাণিত হতে যাচ্ছে। আবার নাকি ১৩ ও ১৪ তারিখ একটানা হরতাল হবে।
১১ ফেব্রুয়ারি লিখলেন, “আমার মনে হচ্ছে- এরশাদ শেষ পর্যন্ত এ যাত্রায় টিকে গেলেন। হয়তো বিরোধী দলের ‘আশা’ ছিল, মিলিটারিরা এরশাদকে হটিয়ে দিয়ে সরাসরি ক্ষমতা দখল করে অন্তত তাদের মুখরক্ষা করবে।” কিন্তু এ ধরনের কোনো আলামত দৃশ্যমান নয়। ২১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গভবনে একুশের কবিতা উৎসব। তিনি লিখেছেন, ‘কবি’ হোসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সৈয়দ আলী আহসান, আবুল খায়েল মুসলেহউদ্দীনসহ কয়েকজন সরকারি ও ইসলামিক কবির কবিতা পাঠ শুনলাম’- আমন্ত্রিত সচিব জেনারেল ব্রিগেডিয়াররা স্কুল-কলেজে পাঠ্য কবিতার বাইরে অন্য কোনো কবিতা পড়ে কখন কাব্যরসিক হয়ে উঠেছে বলা কঠিন।
১৯৮৮-এর বন্যার অজুহাতে তিনি দেখলেন প্রচুর চাল আমদানি করা হয়েছে, তা যতটা না জনস্বার্থে, তার চেয়ে বেশি আমদানিকারক ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের স্বার্থে। রাষ্ট্রপতি ‘আজেবাজে প্রকল্প’ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ঢোকানো বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে প্যারেড গ্রাউন্ড, মন্ত্রীর বাড়ি, অডিটোরিয়াম আর হকির মাঠের অ্যাস্ট্রো টার্ফ করার হুকুম দিলেন। তিনি লিখেছেন, ‘সত্য বলতে গেলে তার মুখে এ কথাটা মানায় না। উন্নয়নের নামে সরকারি অর্থ অপচয় অনেক ক্ষেত্রে তার নির্দেশেই হচ্ছে।’
৪ মার্চ প্রহসনের সংসদীয় নির্বাচন হলো। সরকারি দলের বিরুদ্ধে প্রতিদ্ব›দ্বী আ স ম আবদুর রবের ‘৭৩’ দল আর কর্নেল ফারুক-রশীদের ফ্রিডম পার্টি। শতকরা ৯০ ভাগ আসনই পেয়েছে প্রেসিডেন্টের জাতীয় পার্টি। বাকি ১০ ভাগ স্বতন্ত্রসহ দুই দলকে দেয়া হয়েছে। কাজী লিখেছেন, ‘দেশে এ পর্যন্ত কোনো নির্বাচনই সর্বাঙ্গীণ নিখুঁত হয়নি, তবে এত বড় রাহাজানি এই প্রথম।’ রাষ্ট্রপতি এদিনই আফসোস করেছেন, ১০ কোটি মুসলমানের দেশ অথচ এ দেশে রাষ্ট্রীয় ধর্ম বলে কিছু নেই। ২৬ এপ্রিল ১৯৮৮ নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বিচারপতি বি এ সিদ্দিকীর সঙ্গে দেখা করতে এসে কাজী ফজলুর রহমান বুঝতে পারলেন, তিনি অথর্ব হয়ে গেছেন, আসল কর্তা-ব্যক্তি তার ডেপুটি মহিউদ্দিন, তিনি প্রেসিডেন্ট-পতœীর ভাই। জাস্টিস সাহেব অবহেলিত। অফিস ডেপুটির নির্দেশে চলে, এমনকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দূর থেকে প্রভাব খাটান। এই ডেপুটি অফিসে ঢোকার সময় এবং বেরোনোর সময় কর্মকর্তারা প্রতিদিন লাইন ধরে দাঁড়িয়ে তাকে যথাক্রমে স্বাগত জানায় এবং বিদায় দেয়। সেখানে দেখা হয়, তার ব্যাচমেট ও এরশাদের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে। তিনি বাংলাদেশের সংবাদপত্র পড়তে মাঝে মাঝে এখানে আসেন। কিন্তু তার আগমন ডেপুটি পছন্দ করেন না। ২৬ মে যোগাযোগমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সড়ক বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন সদস্য কাজী ফজলুর রহমানের অফিস কক্ষে এলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ কম ধরা হয়েছে, বাড়িয়ে দিতে হবে। দেশের অবস্থা নিয়েও মন্ত্রী বললেন, ‘মন্ত্রী, এমপি, ডিসি নামেই আছে- প্রকৃত ক্ষমতার কেন্দ্র অন্যত্র এবং তা জেলা, উপজেলা পর্যন্ত ব্যপ্ত। বন্যার ত্রাণ কার্যকলাপের সময় তা অতি প্রকটভাবে দেখা যায়।’ তার ব্যাচের সিএসপিদের মধ্যে সর্বশেষ শপথ নেয়া মন্ত্রী গোলাম মোস্তফার বাড়িতে ডিনার ৩১ মে ১৯৮৮। আবুল মাল আবদুল মুহিত, সাইদুজ্জামানের পর মোস্তফা- ‘মনে হচ্ছে আরো অনেকে এই জন্য তৈরি হচ্ছেন।’
৬ জুন ১৯৮৮ লিখেছেন : বিরোধী দলের বিশেষ করে আওয়ামী লীগের আন্দোলন মিইয়ে গেছে। ‘ফাঁকিভরা হলেও একটা সাধারণ নির্বাচন করে এরশাদ সাহেব গদিতে বেশ শক্ত হয়েই বসেছিলেন। অবশ্য তার টিকে থাকার অন্যতম প্রধান কারণ, তার পেছনে সেনাবাহিনীর সমর্থন।’
৭ জুন ১৯৮৮ রাতে শাসনতন্ত্রের অষ্টম সংশোধনী পাসের মধ্য দিয়ে ইসলাম সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ধর্ম ঘোষিত হলো- প্রেসিডেন্টের ‘বহুদিনের স্বপ্ন’ পূরণ হয়েছে। কাজী ৯ জুন ১৯৮৮ ডায়েরিতে লিখেছেন : সংশোধন হতে হতে বাংলাদেশের মূল শাসনতন্ত্রের এখন খোলসটা ছাড়া আর কিছুই নেই। প্রথমে শেখ সাহেবের ইচ্ছায়, পরে বিভিন্ন ‘সামরিক শাসনের প্রয়োজনে।
(উৎস : কাজী ফজলুর রহমানের আমলার দিনলিপি শেষ পর্ব ১৯৮৭-৯০ প্রকাশকাল ২০০৬। এই লেখাটিতে ১৯৮৭ এবং ১৯৮৮-এর প্রথম অংশের কিছু নির্বাচিত পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে।)

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়