শিশুশ্রম নিরসনে সমন্বিত পদক্ষেপের আহ্বান

আগের সংবাদ

ভারত-আমেরিকার বৈচিত্র্যময় অংশীদারত্ব গড়ার প্রত্যয় : হোয়াইট হাউসে মোদি-বাইডেন বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণা

পরের সংবাদ

সমীক্ষার তথ্য : ৭২ শতাংশ কন্যাশিশু বাল্যবিয়ের শিকার

প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেশের ৮ বিভাগের ৩৭ জেলা এবং সিটি করপোরেশন, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, থানা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ২০৬০ জনের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে ‘বাল্যবিয়ের কারণ ও সামাজিক অভিঘাত’ শীর্ষক সমীক্ষার তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনের আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে সমীক্ষার তথ্য নীতি নির্ধারক ও অন্য অংশীদারদের কাছে উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. আব্দুল আজিজ, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী এবং অ্যাম্বাসি অব সুইডেন, বাংলাদেশের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার রেহানা খান। আলোচক ছিলেন বিআইজিডির প্রাকটিস এন্ড হেড অব জেন্ডার এন্ড সোশ্যাল ট্রান্সফরমেশন ক্লাস্টারের সিনিয়র ফেলো মাহিন সুলতান, রওনক জাহান, জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাসিমা আক্তার জলি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। সমীক্ষার প্রেক্ষাপট আলোচনা করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম ও এডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম। সমীক্ষার তথ্য উপস্থাপন করেন মহিলা পরিষদের এডভোকেসি ও লবি পরিচালক জনা গোস্বামী ও আইনজীবী এড. ফাতেমা খাতুন। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।
তথ্য বিশ্লেষণ করে সংগঠনটি জানায়, বাল্যবিয়ে দেয়া পরিবারগুলোর মধ্যে নি¤œবিত্তের হার সবচেয়ে বেশি। তবে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতেও বাল্যবিয়ের হার প্রায় এক চতুর্থাংশ, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাও এ ক্ষেত্রে বড় প্রভাব বিস্তার করে।
সমীক্ষায় আরো বলা হয়, বাল্যবিয়ে দেয়া অভিভাবকদের মধ্যে প্রায় ৩১ শতাংশ (২৬০ জন) নিরক্ষর, ৪১ শতাংশ (৩৪৭ জন) অক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন, ২৬ শতাংশ (২১৭ জন) স্বল্প শিক্ষিত এবং শিক্ষিত ৪ শতাংশ (৩৩ জন)। এই জরিপের অভিভাবকদের দেয়া তথ্যে দেখা গেছে ১৩-১৫ বছর বয়সি কন্যাশিশুরা বাল্যবিয়ের শিকার হয়, যা মোট বাল্যবিয়ের ৭২ শতাংশ। অন্যদিকে বাল্য বিয়ের শিকার ৫৭ শতাংশ কন্যাশিশুর বিয়ে ১২ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে হয়েছে।
জরিপে প্রাপ্ত তথ্যে আরো দেখা গেছে, ৫৬ শতাংশ অভিভাবক বাল্যবিয়ের আইন সম্পর্কে অবগত হয়েও আইন অমান্য করে নানাভাবে তাদের কন্যাশিশুর বিয়ে দিয়েছেন। এ বিয়েগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ অর্থাৎ ৫৮ শতাংশ বিয়েই রেজিস্ট্রি ছাড়া সম্পন্ন করা হয়েছে এবং বিয়ের সময় কাজীকে জন্মসনদ দেয়ার কথা থাকলেও শতকরা ৫৪ শতাংশ অভিভাবক কাজীকে তার মেয়ের জন্মসনদ দেননি। জরিপকালে ৩৬ শতাংশ ম্যারেজ রেজিস্ট্রার জানিয়েছেন সমাজে বাল্য বিয়ের হার মাত্র ১০ শতাংশ। মাত্র ৩ শতাংশ ম্যারেজ রেজিস্ট্রার বলেছেন দেশে বাল্য বিয়ের হার ৫০ শতাংশ।
সমীক্ষায় বাল্যবিয়ের কারণ ও সামাজিক অভিঘাত হিসেবে নারীর প্রতি পুরুষতান্ত্রিক অধঃস্তন গৎবাঁধা দৃষ্টিভঙ্গি যেমন- কন্যা সন্তানকে বোঝা মনে করা, বিয়ে দেয়ার মাধ্যমে কন্যার প্রতিদায়িত্ব পালন; বাল্যবিয়ের ফলে কন্যাশিশুর ওপর আসা অভিঘাত সারাজীবন বয়ে বেড়ানো, মৌলিক অধিকার শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়া, স্বাস্থ্য অধিকার ক্ষুণ্ন এবং জীবনভর নির্যাতনের শিকার হতে থাকা, বাল্যবিয়েবিষয়ক তথ্যের অভাব এবং বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কাজের পরিবীক্ষণ না করা মিথ্যা সনদপত্র দেয়া, বাল্যবিয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দায়িত্বহীনতা এবং জবাবদিহিতা সর্বোপরি সুশাসনের অভাবসহ বেশ কিছু সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মো. আব্দুল আজিজ বলেন, অনেক আইন থাকলেও বাস্তব অবস্থার কারণে তা প্রয়োগ করা যায় না। গ্রামে অত্যন্ত দরিদ্রদের মধ্যে বাল্যবিয়ের প্রবণতা বেশি।
বংশানুক্রমে কাজীর ছেলে কাজী হয়, এটা বন্ধ করা গেলে বাল্যবিয়ে বন্ধে সুফল আসত। রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, বাল্যবিয়ের প্রবণতায় জেলাভিত্তিক কোনো পার্থক্য আছে কিনা এটা মূল রিপোর্টে আনা যেতে পারে, পালিয়ে বিয়ে করায় বাল্যবিয়ে বাড়ছে, এটাকে জনপ্রতিনিধিদের অজুহাত হিসেবে দেখানো বন্ধ করতে হবে। বাল্যবিয়ে দিলে কন্যা উপবৃত্তি পাবে না এমন শর্ত আরোপ করা যেতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়