শিশুশ্রম নিরসনে সমন্বিত পদক্ষেপের আহ্বান

আগের সংবাদ

ভারত-আমেরিকার বৈচিত্র্যময় অংশীদারত্ব গড়ার প্রত্যয় : হোয়াইট হাউসে মোদি-বাইডেন বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণা

পরের সংবাদ

সংসদে চুন্নু : নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে জাতীয় পার্টি

প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জাতীয় পার্টির ভূমিকার কথা তুলে ধরে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, জাতীয় পার্টি চার চারবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে সহায়তা করেছে। সেই দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের সম্পর্কে সংসদে বিরূপ মন্তব্য করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে এ দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করে সবার সমালোচনার জবাব দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন চুন্নু।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের ওপর আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন নির্বাচন হয় তখন আওয়ামী লীগ ১৫১টি আসন পায়নি। সরকার গঠন করতে কিছু সমস্যা ছিল। তখন বিএনপি সরকার, বেগম জিয়া জেল কোড ভঙ্গ করে আমাদের ৪ জন নেতাকে জেল খানায় পাঠিয়েছিল এরশাদ সাহেবের কাছে প্রস্তাব নিয়ে। সেদিন তারা প্রস্তাব দেন রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রী হবেন, আমরা আর জামায়াত আপনাদের সাপোর্ট দেব। আপনারা সরকার গঠন করেন। সেদিন জি এম কাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাপ করে বলেছিলেন, না বিএনপিকে ক্ষমতায় আনা যাবে না, সাপোর্ট দেয়া যাবে না, তারা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পক্ষের মূল শক্তি, তাদের আমরা সাপোর্ট দেব, ক্ষমতায় আনব। আমরা তাই করেছিলাম। যে দল (বিএনপি) এরশাদ সাহেবকে চিকিৎসার জন্য পিজি হাসপাতালে আনেনি, যে দল এরশাদ সাহেবের সঙ্গে মিসবিহেব করেছিল তাদের আমরা সাপোর্ট দিতে পারি না।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, এর পরে ২০০৮ সালে আমরা মহাজোট করলাম, বিপুল ভোটে ক্ষমতায় আনলাম। পরে ২০১৪ সালে এরশাদ সাহেব তো নির্বাচন করবেনই না, বিএনপিও নির্বাচন করবে না। কেউ করবে না ডিক্লেয়ার করেছিল। সে সময় একটা অগণতান্ত্রিক সরকার আসার সম্ভাবনা ছিল। তখন আমরা কতিপয় সদস্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে আমাদের নেতার কথা না শুনে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে নির্বাচন করি। আওয়ামী লীগের অনেক বর্ষীয়ান নেতা তখন বলেছিলেন, তোমাদের কি মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। দেখছো না কি পরিবেশ? তার পরেও আমরা নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে একত্রে সরকার গঠন করি। ২০১৮ সালেও আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশকে অগণতান্ত্রিক পরিস্থিতি থেকে বাঁচাইনি? চার চারবার এভাবে সহায়তা করেছি আওয়ামী লীগকে, তার পরে এসব কথা আমাদের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নামে কেন বলবেন। এ সময় তিনি বলেন, এই পার্লামেন্টে আপনারাই বিএনপির নাম বলে বলে বিএনপিকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আমরা তো বিরোধী দল, আমরা তো সরকারের বিরোধিতা করব। আবার অনেকে বলছেন, কী ব্যাপার আপনারা যেভাবে সরকারের সমালোচনা করছেন, আপনারা কী বিএনপিতে চলে গেছেন। আমরা কারো সঙ্গে যেতে চাই না। জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনেই নির্বাচন করবে। কারো পক্ষে বিপক্ষে যেতে চাই না।
প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট সম্পর্কে চুন্নু বলেন, এ বাজেটের সঙ্গে বাস্তবতার মিল খুব কম। ৭ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার বাজেটের ৬৬ শতাংশ সঙ্কুলান হবে রাজস্ব আয় থেকে, আর ৩৪ শতাংশ ঘাটতি পূরণের কথা বলা হয়েছে। যার মধ্যে ২০ শতাংশ ব্যাংক ঋণ সঞ্চয় পত্র ইত্যাদি থেকে, আর বাকি ১৪ শতাংশ বিদেশি ঋণ থেকে। তিনি বলেন, ঋণ প্রবণতার এই বাজেট চলতে থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ঘাড়ে বহু ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হবে।
তিনি অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, কেন ব্যাংক লোন বন্ধ না (খেলাপি ঋণ আদায় না করে) করে জনগণের টাকা থেকে ভর্তুকি দেয়া হবে। কেন কতিপয় গোষ্ঠীর বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হবে? কেন ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সব চেয়ে বেশি ঋণখেলাপি, কেন বাংলাদেশে সড়ক নির্মাণ ব্যয় সবচেয়ে বেশি, কেন ঋণ নেওয়ার কোনো নিয়ম কানুন না মেনে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে।
চুন্নু বলেন, আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধা সম্মুখ সমরে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধি ধারণ করি, আর যারা দেশ-বিদেশে বসে সমর্থন করেছেন তারাও বীর মুক্তিযোদ্ধা লিখবে, এটা আমরা মেনে নিতে পারি না।
সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে একটি স্মার্ট ও টেকসই উন্নয়নের বাজেট বলে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, কিন্তু যারা দেশের উন্নয়ন দেখে না তারা এ বাজেটকে ঘাটতি বাজেট, উচ্চাভিলাসী ইত্যাদি বলে চলেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারই এত বড় বাজেট দিতে পারে এবং তা বাস্তবায়ন করতে পারে।
গুম ও খুনের রাজনীতি জিয়াউর রহমান শুরু করেছেন বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শাহজাহান খান। তিনি বলেন, বিএনপি সব সময়ই দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক ভূমিকা রেখেছে। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে সারাদেশে হত্যা-সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এখন তাদের মুখে গুম, খুনের অভিযোগ শুনতে হয়। এটা খুবই লজ্জার।
গতকাল বাজেটের ওপর আরো আলোচনা করেন এমপি সাগুফতা ইয়াসমনি, হুইপ আতিউর রহমান আতিক, নাহিদ ইজাহার খান, এইচ এন আশিকুর রহমান, আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী, সাহাদারা মান্নান, মকবুল হোসেন, রাগেবুল আহসান রিপু, আব্দুল মমিন মণ্ডল, বাসন্তী চাকমা, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, মাহমুদ হাসান, আফরোজা হক, সাইমুন সরওয়ার কমল, হোসনে আরা, আছলাম হোসেন সওদাগর, বেগম ফরিদা খানম প্রমুখ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়