শিশুশ্রম নিরসনে সমন্বিত পদক্ষেপের আহ্বান

আগের সংবাদ

ভারত-আমেরিকার বৈচিত্র্যময় অংশীদারত্ব গড়ার প্রত্যয় : হোয়াইট হাউসে মোদি-বাইডেন বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণা

পরের সংবাদ

উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নদনদীর পানি বাড়ছে : দুর্ভোগে পড়ছে মানুষ

প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিভিন্ন নদনদীর পানি বেড়েছে। থেমে থেমে বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বিভিন্ন নদনদীর পানি ফুলে ফেঁপে উঠছে। গাইবান্ধায় গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ির তিস্তামুখ পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরে নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার, তিস্তার পানি সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার ও করতোয়ার পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালি পয়েন্টে ৩৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়।
কুড়িগ্রামের উপর দিয়ে প্রবাহিত নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ধীরগতিতে পানি বাড়লেও অধিকাংশ চরের নি¤œাঞ্চল জলমগ্ন হওয়ায় গবাদিপশু নিয়ে মানুষ দুর্ভোগের মুখে পড়েছে। টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুরমার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া জেলার তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত নদী রক্তি, যাদুকাটা, কুশিয়ারা ও ধোপাজানসহ জেলার সব নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এদিকে তিস্তায় পানি কমলেও কমেনি নীলফামারী জেলার জলঢাকা ও ডিমলা উপজেলার চরবর্তী বেশ কিছু এলাকায়। এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট-
নীলফামারী : গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ আর উজানের ঢলে তিস্তাবেষ্টিত নি¤œাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। তবে এখন তিস্তায় পানি কমলেও কমেনি জেলার জলঢাকা ও ডিমলা উপজেলার চরবর্তী বেশ কিছু এলাকায়। এমনকি গৃহপালিত পশুসহ পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগও কমেনি। চাল-ডাল আর জ্বালানির অভাবে চুলোয় হাঁড়ি তুলতে পারছেন না অনেকেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, ডালিয়া ডিভিশন অফিস সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে ৫২ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার পানির স্তর রেকর্ড করা হয়েছে।
সরজমিন জেলার ডিমলা উপজেলার বাইশপুকুর এলাকার পানিবন্দি আব্দুল আজিজ মিয়া (৩৫) বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই পানিবন্দি হয়ে আছি। এর মধ্যে বিশুদ্ধ পানি আর খাওয়ার সংকট তো নিত্যদিনের সঙ্গী। এমনকি, গৃহপালিত পশুদের খাবারও ব্যবস্থা করতে পারছি না। তবে স্থানীয় চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার আর পানির বোতল দিয়েছে।
একই এলাকার মৃত আব্দুর গফুরের ছেলে আব্দুল গণি (৪৮) বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই পানিবন্দি অবস্থায় আছি। এলাকাটি তিস্তা তীরবর্তী হওয়ায় ভাঙনের ফলে ইতোপূর্বে অনেকের বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের সব সময় শঙ্কা নিয়েই থাকতে হয়। একদিকে রাতে পোকামাকড়ের ভয়, অন্যদিকে ভাঙন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ উদ দৌলা বলেন, বর্তমানে তিস্তার পানি স্বাভাবিক রয়েছে। সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে ছিল ৫১ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার। তবে তিস্তার পানি কমতে শুরু করেছে।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ধীরগতিতে পানি বাড়লেও অধিকাংশ চরের নি¤œাঞ্চল জলমগ্ন হওয়ায় গবাদিপশু নিয়ে মানুষ দুর্ভোগের মুখে পড়েছে। তবে বৃহস্পতিবার দিনভর বৃষ্টিপাত না থাকায় এসব জলমগ্ন এলাকার মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা কমেছে।
এদিকে গত বুধবার রাত ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৫ ঘণ্টার ব্যবধানে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে দশমিক ৬ সেন্টিমিটার, ধরলা ব্রিজ পয়েন্টে দশমিক ১১ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের নুনখাওয়া পয়েন্টে দশমিক ৫ সেন্টিমিটার ও দুধকুমার পাটেশ্বরী পয়েন্টে দশমিক ১৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেলেও এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত সবগুলো নদীর পানি বিপৎসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
তবে বৃহস্পতিবার কুড়িগ্রাম অঞ্চলে বৃষ্টিপাত না থাকায় জেলার নদী অববাহিকাসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় মানুষের মাঝে স্বস্তি লক্ষ্য করা গেছে। কিছু কিছু এলাকায় নদীভাঙনের খবর পাওয়া গেছে। এসব নিচু এলাকার কোথাও কোথাও বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ার উপক্রম হয়েছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলগুলোতে কৃষকদের মরিচ, ঝিঙ্গা, পটল, ঢেড়সসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে কাঁচাবাজারে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে শুরু করেছে। উলিপুর উপজেলার সদরের বাজারে ৬০ টাকা দরের কাঁচা মরিচ একলাফে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এভাবে প্রতিটি সবজি কেজিতে ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
বন্যায় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির পাশাপাশি জ্বালানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে অনেকেই খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছে।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়ন বাসিন্দা মন্টু মিয়া বলেন, বৃহস্পতিবার বৃষ্টি না থাকায় ভালোই আছি, নদীতে একটু একটু করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানি যে কোনো সময় ঘরে উঠবে বলে তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। একই এলাকার সোহরাব আলী ও শমসের জ্বালানি সংকটের কারণে রান্নাবান্না বন্ধের কথা জানান।
কুড়িগ্রামের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা আশরাফ আলী জানান, কয়েকদিনের বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে তীব্র জলাবদ্ধতায় তার সব সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। নতুন করে পানি বৃদ্ধি না পেলেও সহসাই পানি কমছে না। এ অবস্থায় তারা বিপদে রয়েছেন বলে জানান তিনি। একই অবস্থা জেলার সবগুলো নদী অববাহিকায়।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ-আল-মামুন জানান, জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদনদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় সামান্য বৃদ্ধি পেলেও এখনো পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় বিভিন্ন নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। থেমে থেমে বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বিভিন্ন নদনদীর পানি ফুলে ফেঁপে উঠছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ির তিস্তামুখ পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরে নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার, তিস্তার পানি সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার ও করতোয়ার পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালি পয়েন্টে ৩৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়। গত বুধবার বিকাল ৩টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত এ পরিমাণ পানি বেড়েছে।
এদিকে নদীবেষ্টিত সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর, গাইবান্ধা সদর উপজেলার মোল্লারচর, কামারজানি, ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ি ও ফজলুপুর ইউনিয়নের ১২০টি চরের নি¤œাঞ্চলে পানি উঠেছে।
গতকাল বিকালে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক মুঠোফোনে বলেন, বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে কোনো নদীর পানিই বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৪৩ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদীর পানি ১০৯ সেন্টিমিটার, তিস্তার পানি ৭৩ সেন্টিমিটার ও করতোয়ার পানি ৪৮৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এদিকে পানি বৃদ্ধির কারণে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের খারজানি ও কুন্দেরপাড়া গ্রাম ভেঙে যাচ্ছে। পাশাপাশি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর খেয়াঘাটের অদূরে ভাঙন শুরু হয়েছে। গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ভাঙন রোধে ওই ইউনিয়নের কিছু এলাকায় নদীর তীরে জিও ব্যাগ স্থাপন করা হয়েছে। বাকি অংশেও ফেলা হবে।

সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি
বন্যার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে

সুনামগঞ্জ : টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুরমার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া জেলার তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত নদী রক্তি, যাদুকাটা, কুশিয়ারা ও ধোপাজানসহ জেলার সব নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে সুনামগঞ্জে বন্যার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি ১৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সুরমার পানি সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্ট দিয়ে বিপৎসীমার মাত্র ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার জানান, আগামী ২৪-৪৮ ঘণ্টা সুনামগঞ্জে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করে নি¤œাঞ্চলে স্বল্প মেয়াদি বন্যা সৃষ্টি হতে পারে। তবে বৃষ্টিপাত কমে গেলে দ্রুত পানি নেমে যেতে পারে।
জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় নগদ ২৫ লাখ টাকা, ৬০০ টন জি আর চাল, ১০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার মজুত রাখাসহ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখতে জেলার সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়