পাগলায় মানববন্ধন : মন্দিরের জায়গা উদ্ধারের দাবি

আগের সংবাদ

স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবে না যুক্তরাষ্ট্র : মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর

পরের সংবাদ

সিলেট ও সুনামগঞ্জ : বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সুরক্ষিত হোক

প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পরপর দুই দফা বন্যার ভয়াবহতা মানুষ এখনো ভুলতে পারেনি। সে বছর হঠাৎ করে একদিনের কয়েক ঘণ্টার টানা বর্ষণে সিলেট এবং সুনামগঞ্জের যাতায়াতের রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ নেমে আসে। সিলেটের সঙ্গে সুনামগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থা কয়েক দিন বন্ধ ছিল। ইন্টারনেট সেবাও ব্যাহত হয়েছিল। সুনামগঞ্জের মানুষ কয়েক দিন বিদ্যুৎহীন অবস্থায় অন্ধকারে ছিল। মানুষের গরু, হাঁস, মুরগিসহ অনেক গৃহপালিত পশু বন্যার পানিতে ভেসে গিয়েছিল। সরকারি হিসাবে এ বন্যায় ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘরের আসবাবপত্র, গোলার ধান, মাছের খামার, গবাদি পশু ভেসে যায়। রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এ বছর টানা কয়েক দিন ধরে জ্যৈষ্ঠের খরতাপে পুড়েছে সারাদেশ। তীব্র গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। কয়েক দিন ধরে স্বস্তির বৃষ্টি হলেও গত ১৪ জুন সিলেটে সকাল থেকে টানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টি হয়। তাই সিলেট শহরের জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। অনেক স্থান হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়। শহরের চলাচলের রাস্তাসহ বিভিন্ন বিপণিবিতানে বৃষ্টির পানি ঢুকে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় নগরবাসীকে। ১৪ জুন থেকে প্রতিদিনই টানা বর্ষণ হচ্ছে। উজানের ঢলে নেমে আসা পানি এবং বৃষ্টিতে নদীর পানি বাড়তে থাকে। প্রতিদিনের বৃষ্টি এবং উজানের ঢলে নেমে আসা পানি দেখে মানুষের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে। ২০২২ সালেও এভাবেই অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ এবং সিলেট পানির নিচে নিমজ্জিত হয়। সেই শঙ্কা থেকে এখন নদ-নদীর পানি বাড়া দেখে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত। বর্তমানে সুরমা এবং কুশিয়ারা নদী পানিতে টইটুম্বর হয়ে আছে। এছাড়াও টাঙ্গুয়ারসহ বিভিন্ন হাওড় পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে যে কোনো সময় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা টানা ভারি বর্ষণে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা আরো প্রবল হচ্ছে। এছাড়াও ভাটি অঞ্চলে পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা স্ফীত হয়ে আসায় পানির স্বাভাবিক গতি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন বাঁধ নির্মাণ করায় পানি নিষ্কাশনে অসুবিধা দেখা দেয়। পাশাপাশি শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং ছোট ছোট খাল বা ছড়াগুলো দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নদীতীর ভেঙে যাওয়া এবং নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানির স্বাভাবিক গতিপথ বাধাপ্রাপ্ত হয়। সুরমা এবং কুশিয়ারা নদীর তলদেশ অনেকাংশ ভরাট হয়ে গেছে। নদীর বিভিন্ন অংশ দখল হয়ে জনবসতি কিংবা দোকানপাট গড়ে উঠেছে। ফলে নদীর আয়তন কমে পানি ধারণক্ষমতা কমে আসছে। ফলে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়।
তবে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় আগে থেকেই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বন্যার সময় পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ে। পয়ঃনিষ্কাশন এবং বন্যার পানি একাকার হয়ে রোগের প্রকোপ বাড়তে থাকে। এছাড়া বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দেয়। ফলে আমাশয়, ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া, জন্ডিসের মতো পানিবাহিত রোগবালাই বাড়তে থাকে। ঠাণ্ডাজনিত এবং মশা মাছির উপদ্রবে শিশুদের সর্দি, জ্বর, কাশি বেড়ে যায়। সেজন্য ওরস্যালাইন এবং পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট রাখা জরুরি। প্রয়োজনে শুকনো খাবার যতটুকু সম্ভব সঙ্গে রাখতে হবে। বন্যার আগাম প্রস্তুতির জন্য ঘরে খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে। শিশুখাদ্যের ব্যবস্থা, গবাদিপশুর খাদ্য সংরক্ষণ করে রাখা জরুরি। এছাড়াও নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করে রাখা, যাতে প্রয়োজনমতে সেখানে আশ্রয় নেয়া যায়। তবে শহরকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে শহর রক্ষাবাঁধ নির্মাণ করতে হবে, যা এখনো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
সুরমা ও কুশিয়ারা নদী খননে পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা খালগুলোতে (স্থানীয় ভাষায় ছড়া) পানির প্রবাহ নিশ্চিত করা জরুরি। বিশেষ করে সিলেটের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা মালনিছড়া, যোগিনীছড়া, গোয়ালীছড়া, কালীবাড়িছড়া, মঙ্গলীছড়া, হলদিছড়া, ভুবিছড়া, ধোপাছড়া ও গাভীয়ারছড়াগুলোর পানি প্রবাহ নিশ্চিত হলে শহরের মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে কিছুটা রক্ষা পাবে। পাশাপাশি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কার্যকরের ব্যবস্থা নিতে হবে। নদীর নাব্য বৃদ্ধির ব্যবস্থা যত তাড়াতাড়ি করা যাবে বন্যার আশঙ্কা তত কমে আসবে। আশার কথা, পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয় প্রশাসনকে প্রস্তুতি নিতে বলেছে প্রশাসন।

অঞ্জন কুমার রায় : ব্যাংক কর্মকর্তা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়