পাগলায় মানববন্ধন : মন্দিরের জায়গা উদ্ধারের দাবি

আগের সংবাদ

স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবে না যুক্তরাষ্ট্র : মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর

পরের সংবাদ

বিড়ম্বনাহীন কুরবানির হাট

প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশ ঈদুল আজহায় কুরবানির পশুর জন্য ভারত, মিয়ানমার ও নেপালের ওপর নির্ভর করত। কিন্তু ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পর ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু আসা অনেকটাই কমে গেছে। প্রথমবারের মতো ২০১৪ সালে বাংলাদেশে কুরবানির পশু নিয়ে ব্যাপক সংকট তৈরি হয়েছিল। মূলত তখন থেকেই বাংলাদেশ সরকার এবং খামারিরা উপলব্ধি করেন যে দেশের ভেতরেই গবাদিপশুর সংখ্যা বাড়াতে হবে। সেই তখন থেকেই প্রাণিসম্পদ খাতে সরকারের প্রচেষ্টা ও খামারি এবং গবেষকদের অবদানের জন্যই আজ বাংলাদেশে কুরবানির পশুর জন্য পরনির্ভরশীলতা কমে এসেছে, এমনকি গত কয়েক বছর ধরে কুরবানির পশু উদ্বৃত্ত থাকছে।
ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজাকরণের প্রবণতা বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাণীদেহে স্টেরয়েড বা ওষুধের কার্যকারিতা শুরু হতে ৫-৬ ঘণ্টা সময় লাগে। তবে এসব ওষুধ ছাড়া বৈজ্ঞানিক উপায়ে গরু মোটাতাজা করতে হলে কমপক্ষে ৯০-১২০ দিন আগে থেকে গরুর লালন-পালন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। ভোক্তাদের মাঝে ভেজালমুক্ত কুরবানির পশু সরবরাহ করতে সরকারি পর্যায়ে ইতোমধ্যে বিভাগীয়, জেলা এবং উপজেলায় কর্মরত কর্মকর্তারা খামারিদের নিরাপদ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্টকরণ প্রশিক্ষণে স্টেরয়েড/হরমোন অপপ্রয়োগের কুফল সম্পর্কে অবহিত করেছেন এবং খামারিরা তদানুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছেন। উল্লেখ্য, চলতি বছরে ৭২ হাজার ৫৬৩ জন খামারিকে গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্টকরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
তাছাড়াও অন্যান্য বছরের মতো এবারো মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ ধরনের ভেজাল (ক্ষতিকর উপায়ে মোটাতাজাকরণ) পশু নির্ধারণ করতে ও অন্যান্য সেবা দিতে সারাদেশে ৩ হাজার ১৯৫টি কুরবানির পশুর হাট বসবে। বিশেষ করে রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১৯টি অস্থায়ী ও ২টি স্থায়ী হাট মিলে মোট ২১টি হাট বসবে। এসব হাটে দায়িত্ব পালন করার জন্য ১ হাজার ৬২৩টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের সেবা প্রদানের সঙ্গে জড়িত কর্মীদের জন্য এপ্রোন, মাস্ক চেয়ার-টেবিল, বালতি, মগ ইত্যাদি সরবরাহ করাসহ নিরাপদ খাদ্য/মাংস সম্পর্কিত সেøাগান সংবলিত টি-শার্ট, ক্যাপ, পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুনসহ ভেটেরিনারি ক্যাম্প সুসজ্জিতকরণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়া ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিম এবং বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করা হয়েছে। বিশেষ করে কুরবানির পশুর হাট ব্যবস্থাপনার জন্য ৬টি মনিটরিং টিম ও কন্ট্রোল রুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কুরবানিযোগ্য পর্যাপ্ত পশু থাকলেও একশ্রেণির অসাধু, অতি মুনাফালোভী কারবারি নানাভাবে পশুর কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করে। এতে ভোক্তা পর্যায়ের সাধারণ মানুষ নানা ভোগান্তির শিকার হয়। অন্যদিকে সাধারণ ছোট ছোট খামারিরাও ক্ষতির সম্মুখীন হন। এসব ক্ষতির হাত থেকে খামারিদের রক্ষা করতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এসব উদ্যোগের একটি হলো অন্যান্য বছরের মতো এবারো রেলে কুরবানির গবাদিপশু পরিবহন করা হবে। যে অঞ্চলে গবাদিপশুর উৎপাদন বেশি সে অঞ্চল থেকে যে অঞ্চলে উৎপাদন কম সে অঞ্চলে রেলের মাধ্যমে পশু পরিবহন করা যাবে। এক্ষেত্রে রেল বিশেষ সুযোগ দেবে। কম খরচে পশু পরিবহনের সুযোগ করে দেবে। তাছাড়া খামারিরা যাতে পছন্দ অনুযায়ী হাটে কুরবানির পশু বিক্রি করতে পারে এবং জোর করে কেউ পথে পশু নামাতে না পারে সেজন্য খামারিরা চাইলে ৯৯৯-এ যোগাযোগ করতে পারবে। স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এবার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে, কেউ খামারে পশু বিক্রি করলে তার কাছ থেকে হাসিল আদায় করা যাবে না। কোনো খামারি নিজ বাড়ি থেকে পশু বিক্রি করলেও তাকে হাসিল দিতে হবে না। হাটে আনার পথে কেউ পশু বিক্রি করলে তার কাছ থেকে ইজারাদার জোর করে চাঁদা বা হাসিল আদায় করতে পারবে না। পশুর যেন কৃত্রিম সংকট না হয়, সেজন্য হাটে আনার পথে, বাড়িতেও পশু বিক্রি করা যাবে। তবে রাস্তায় হাট বসানো যাবে না। এছাড়া ডিজিটাল হাটের মাধ্যমেও পশু বিক্রি করা যাবে। সব সিটি করপোরেশন ডেইরি ফার্মার্স এসোসিয়েশন এবং ই-কমার্স এসোসিয়েশন/গ্রুপের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে অনলাইন গবাদিপশু বেচা-কেনার উদ্যোগে সহযোগিতা প্রদান করবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। তাছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে ও কুরবানির পশুর চামড়ার মান বজায় রাখতে সরকারিভাবে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে গবাদিপশু কুরবানির জন্য এবং চামড়া ছাড়ানো ও সংরক্ষণ বিষয়ে ইতোমধ্যে ১৫ হাজার ১৩২ জন পেশাদার কসাই এবং ১৬ হাজার ৬৬৭ জন মৌসুমি কসাইসহ সর্বমোট ৩১ হাজার ৭৯৯ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন উপলক্ষে সড়কের ওপরে যত্রতত্র কুরবানির পশু জবাই না করে যথাসম্ভব নির্ধারিত স্থানে কুরবানি করার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি নাড়িভুঁড়িসহ অন্যান্য বর্জ্য যথাযথভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে পরিবেশ সুরক্ষার জন্য নিজ উদ্যোগে পরিষ্কার করার জন্য সিটি করপোরেশনসহ জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্তৃক ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সর্বোপরি কুরবানি উপলক্ষে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের ভেজালমুক্ত কুরবানির পশু ও বিড়ম্বনাহীন পশুর হাট উপহার দেয়ার এ উদ্যোগ সফল হোক।

সামছুল আলম : গণযোগাযোগ কর্মকর্তা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়