পাগলায় মানববন্ধন : মন্দিরের জায়গা উদ্ধারের দাবি

আগের সংবাদ

স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবে না যুক্তরাষ্ট্র : মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর

পরের সংবাদ

ডিআইজি মিজানের ১৪ বছর কারাদণ্ড > এ রায় অপরাধীদের জন্য বার্তা : রাষ্ট্রপক্ষ

প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পুলিশের বরখাস্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া তার স্ত্রী, ছোট ভাই ও ভাগনেকে ৭ বছরে করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক মঞ্জুরুল ইমাম এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ের আদেশে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন-২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় আসামি মিজানুর রহমানকে ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, একই আইনের ২৭(১) ধারায় ৬ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ডসহ অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হলো। এছাড়া মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪(২) ও (৩) ধারাসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারার মিজানুরকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হলো।
এদিকে দুদক আইন-২০০৪ এর ২৬ (২) ধারায় মিজানের স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রতœা, ছোট ভাই মাহবুর রহমান ও ভাগনে সাবেক এসআই মো. মাহামুদুল হাসানকে ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডসহ অনাদায়ে আরো ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এছাড়া মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২) ও ৪(৩) ধারাসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় আসামি রতœা, মাহবুবুর রহমান ও মাহামুদুল হাসানের ৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
আসামিদের সব ধারার সাজা একত্রে চলবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। তাই ডিআইজি মিজানকে এ মামলায় ৬ বছর কারাভোগ করতে হবে। বাকি তিন আসামিকে ৫ বছর কারাভোগ করতে হবে। এছাড়া আসামিদের হাজতবাস মূল দণ্ডাদেশ থেকে বিধি মোতাবেক বাদ যাবে। সব আসামির দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত ও গোপনকৃত সম্পদ ৩ কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫ টাকার দ্বিগুণ অর্থাৎ ৬ কোটি ৫৭ লাখ ৩৬ হাজার ১০ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে।
রায় ঘোষণার সময় কারাগারে থাকা ডিআইজি মিজানকে আদালতে হাজির করা হয়। এছাড়া জামিনে থাকা তার ছোট ভাই ও ভাগনে আদালতে হাজির হন। রায় ঘোষণা শেষে ৩ জনকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে মিজানের স্ত্রী রতœা পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
রায় ঘোষণার পর ডিআইজি মিজান এজলাসের বেঞ্চে বসেছিলেন। অপেক্ষা করছিলেন কারাগারে পাঠানোর পরোয়ানার

জন্য। কাঠগড়ায় ছিলেন তার ভাই ও ভাগনে। এ সময় মিজানের স্বজনরা এজলাসে কান্নাকাটি করতে থাকেন। তবে মিজান সবাইকে শান্ত হতে বলেন। তিনি দাঁড়িয়ে বলেন, ‘দ্রুত ছাড়া পেয়ে যাব। কেউ কোনো কান্নাকাটি করবে না। পরবর্তী সময়ে আবার বেঞ্চে বসলে চোখ ছলছল করছিল মিজানের। তবে কারাগারে যাওয়ার সময় তাকে স্বাভাবিক দেখা যায়।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, পুলিশের একজন বড় কর্মকর্তা হয়েও, আইন-কানুন জেনেও ডিআইজি মিজান অপরাধকাণ্ডে জড়িত হয়েছেন। মানিলন্ডারিং করেছেন। আইন সবার জন্য সমান। এ রায় দৃষ্টান্তমূলক হয়ে থাকবে। অপরাধীদের জন্য এ রায় এক ধরনের বার্তা। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ অপরাধ প্রমাণ করতে পারেনি। আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট নই। আমরা পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেব।
মামলার সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৪ জুন দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) দুদকের পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ বাদী হয়ে ডিআইজি মিজানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ৩ কোটি ৭ লাখ ৫ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। এরপর ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ আদালতে এ মামলার চার্জশিট দাখিল করেন। একই বছরের ২০ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু করেন আদালত। পরে মামলাটিতে ৩৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৭ জন সাক্ষ্য দেন।
তবে শুধু এ মামলাটিতেই নয়, ডিআইজি মিজান আরো এক মামলায় কারাভোগ করছেন। ২০২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি অবৈধভাবে তথ্যপাচার ও ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে পৃথক মামলায় তাকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত।
উল্লেখ্য, আসামি মিজানুর রহমান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করানোর অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া এক সংবাদ পাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়। পরে নারী নির্যাতনের অভিযোগে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদরদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। এরপর দুদক কর্মকর্তার সঙ্গে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি সামনে আসার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ডিআইজি মিজানকে সাময়িক বরখাস্তের একটি প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। ওই বছরের ২৫ জুন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার প্রস্তাবে অনুমোদন দেন রাষ্ট্রপতি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়