ঠিকানা নিয়ে ৩২ বার তদন্তে উষ্মা হাইকোর্টের

আগের সংবাদ

সেন্টমার্টিন দ্বীপ লিজ দিয়ে ক্ষমতায় বসবে না আ.লীগ > সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : অন্য দেশের সঙ্গেও অর্থ বিনিময়ের সুযোগে ব্রিকসে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত

পরের সংবাদ

স্বজন ও স্থানীয়দের দাবি : সাংবাদিক নাদিম হত্যার মাস্টারমাইন্ড শাহিনা

প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাইমুম সাব্বির শোভন, জামালপুর থেকে : নতুন মোড় নিতে শুরু করেছে সাংবাদিক নাদিম হত্যাকাণ্ড। স্বজন ও স্থানীয়দের দাবি, এই হত্যার মাস্টারমাইন্ড বকশিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগম।
নিহত সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমের মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাতের একটি ভিডিও বক্তব্য সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি মানববন্ধনে জান্নাত বলছেন, ‘বকশিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রাজাকারের সন্তান। এই বিষয় নিয়ে আমার বাবা একটি সংবাদ প্রকাশ করেন। এর কিছুদিন পরেই আমার বাবার ওপর হামলা হয়। তখন আমার বাবা একটি জিডি করেছিল। তারই জের ধরে শাহিনা বেগমের নির্দেশে আমার বাবার ওপর হামলা করে বাবু চেয়ারম্যান ও তার লোকজন।’
ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। তীব্র নিন্দা জানায় সমাজের সব শ্রেণি ও পেশার মানুষ। তারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
নিহত সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বলেন, আসামিদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। পুলিশের দায়িত্ব জিজ্ঞাসাবাদ ও অনুসন্ধান করে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা উচিত। এর অন্তরালে যে আছে তাকে আইনের আওতায় আনা উচিত।
নাদিমের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই বলে যাচ্ছি এই হত্যাকাণ্ডের একজন মাস্টারমাইন্ড রয়েছে। তাকে আইনের আওতায় আনা দরকার। জীবনের নিরাপত্তাহীনতার কারণে আমরা তার নাম বলতে পারছি না। পুলিশের এসব অনুসন্ধান করা দরকার।’
নাদিম হত্যাকাণ্ডের পর মুখ খুলতে শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য শাহিনা বেগমকে দায়ী করছেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বকশিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, ‘শাহিনা বেগমের কিছু ক্যাডার বাহিনী আছে যারা আওয়ামী লীগের অনুপ্রবেশকারী। তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।’
বকশিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মো. রাজন মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমকে থামাতে যতরকম কৌশল করা দরকার তারা সব ধরনের কৌশল করেছে। কিন্তু সফল হয়নি। সবশেষ তারা হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় এবং কাজটি করে।
এদিকে শাহিনা বেগমকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মজিবুর রহমান বলেন, বকশিগঞ্জ শহর থেকে সাধুরপাড়া ইউনিয়ন অনেক দূরে। এত দূর থেকে এসে সাংবাদিক নাদিমকে হত্যা করবে, তাও বাড়ির কাছে হত্যা করবে শেল্টার না থাকলে এই কাজ করা সম্ভব নয়। বাবু চেয়ারম্যানকে শাহিনা বেগম শেল্টার দিয়েছে। তার শেল্টার ছাড়া এই হত্যা করার সাহস বাবু চেয়ারম্যান পাবে না।
বকশিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ফজলুর রহমান কুদু বলেন, সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম একজন সাহসী সাংবাদিক ছিলেন। এই হত্যাকাণ্ডে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনার নাম বার বার আসছে। তাকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব সত্য বের হয়ে আসবে।
অভিযোগের বিষয়ে বকশিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগম মোবাইল ফোনে বলেন, আমি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ষড়যন্ত্র করে একটি মহল আমাকে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছে। আমার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) সীমা রানী সরকার বলেন, গ্রেপ্তার ১৩ জনকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং তদন্ত করে সাংবাদিক নাদিম হত্যায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। গত ১৪ জুন রাতে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে

জামালপুরের বকশীগঞ্জ বাজারের পাটহাটি এলাকায় বাংলা নিউজের জেলা প্রতিনিধি ও একাত্তর টিভির সংবাদ সংগ্রাহক সাংবাদিক নাদিমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। পরদিন বেলা ১১টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে তাকে ভর্তি করা হয়। সেখানে বিকাল পৌনে ৩টার দিকে তিনি মারা যান। হামলার কিছু অংশের ভিডিও ধরা পড়ে পৌরসভার সিসিটিভি ফুটেজে এবং তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
এই ঘটনায় ১৭ জুন নিহত নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বাদী হয়ে বকশিগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে প্রধান করে ২২ জনের নামে এবং অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলার ২য় আসামি বাবু চেয়ারম্যানের ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাত।
এই মামলায় প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম বাবুসহ মোট ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ১৩ জনকে জামালপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হলে মাহমুদুল আলম বাবু চেয়ারম্যানের ৫ দিন, ৬ আসামির ৪ দিন ও ৬ আসামির ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন বকশিগঞ্জ আমলী আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর আহমেদ। তারা বর্তমানে বকশিগঞ্জ থানায় রিমান্ডে রয়েছেন।
নাদিমের পরিবারের পাশে মানবিধকার কমিশন চেয়ারম্যান : জাতীয় মানবিধকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যা মামলায় ১০০ বারের মতো চেষ্টা করে তদন্ত প্রতিবেদন না দিতে পারলেও আমরা বিশ্বাস করি যে এক সময় এর প্রতিবেদন দেয়া হবে এবং বিচার হবে। তবে নাদিম হত্যা মামলার বিচার চলছে। অন্যান্য সাংবাদিক হত্যা মামলার চেয়ে এই ঘটনার ক্ষেত্রে অন্যায়কারীদের আটকের বিষয়ে সফলতা বেশি। তিনি আরো বলেন, এই ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ স্পষ্ট। ঘটনাপরবর্তী বক্তব্যগুলো সুস্পষ্ট। সেগুলো ইতিবাচক। সেই ধারাবাহিকতায় এখানে বিলম্ব হওয়ার সুযোগ নেই।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমের পরিবারের সঙ্গে নিলক্ষিয়ার গমেরচরের বাড়িতে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাতীয় মানবিধকার কমিশনের চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি নাদিমের পরিবারকে সমবেদনা জানান এবং পাশে থাকার প্রতিশ্রæতি দেন। এ সময় তার সঙ্গে জামালপুরের পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তার উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলা ডিবিতে : সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলাটি জামালপুর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে জামালপুর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরমান আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে সোমবার রাতে জামালপুর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে মামলাটি হস্তান্তর করা হয়।
আরমান আলী বলেন, এরই মধ্যে মামলাটির অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আশা করি বাকি আসামিদের দ্রুত সময়ের ভেতর আমরা গ্রেপ্তার করতে পারব। তিনি জানান, গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞেসাবাদ চলছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়